"বেখেয়ালী কলম"

Romance Classics

4.5  

"বেখেয়ালী কলম"

Romance Classics

"অনুরক্তি"

"অনুরক্তি"

5 mins
558



  পর্ব_২


বাঁশরী নিজের রুমে আজকের ডান্সের প্র্যাক্টিসেই ব্যস্ত ছিলো এতক্ষন۔۔ প্র্যাক্টিস শেষ করে রুম থেকে বেড়িয়ে হিয়াকে দেখে জিজ্ঞাসা করে۔۔


বাঁশরী: কি রে তু্ই এখনো বেরোসনি?


বিরক্ত হিয়া বলে: দেখ না, সেই কখন থেকে ক্যাব বুক করার চেষ্টা করছি, হচ্ছেই না۔۔ এমনিতেই দেরি হয়ে গেছে۔۔ ধুর বাবা ভালো লাগেনা۔۔


বাঁশরী চিন্তিত হয়ে বলে: আর লেট করিসনা۔۔۔ মোড়ের মাথায় কখনো সখনো ট্যাক্সি পাওয়া যায়۔۔ তু্ই যা আর এদিকে আমি দেখি যদি ক্যাব বুক করতে পারি۔۔


হিয়া বিরক্তি সহকারে পার্স আর ফোন নিয়ে বেড়িয়ে পরে۔۔ হিয়া বিল্ডিং এর নীচে আসামাত্র একটা ট্যাক্সি দেখতে পায়۔۔ ও ছুটে গিয়ে ট্যাক্সিটা দাঁড় করাতে যায়, কিন্তু ততক্ষনে একজন প্রৌঢ়া ট্যাক্সি পর্যন্ত পৌঁছে যান۔۔ হিয়া প্রৌঢ়াকে অনুনয় করে বলে۔۔


হিয়া: আমার ভীষণ দরকার, আমি এই ট্যাক্সিটা নিই প্লিজ۔۔ আপনি একটা অন্য ট্যাক্সি দেখে নেবেন?


প্রৌঢ়া হিয়ার কথার উত্তর না দিয়ে মাথা নেড়ে সম্মতি দেন۔۔ হিয়া কোনোরকমে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে ট্যাক্সিতে উঠে গন্তব্যস্থলের ঠিকানা দেয় ট্যাক্সিওলাকে۔۔ ট্যাক্সি একটু এগিয়ে গেলে হিয়া জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে দেখে প্রৌঢ়া ওখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছছেন۔۔ এমনিতেই ওনার দাঁড় করানো ট্যাক্সিটা একপ্রকার জোর করেই হিয়া নিয়ে নেয়, কিন্তু তারপর থেকেই বিবেক দংশন শুরু হয় ওর۔۔ একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে হিয়া বুঝতে পারে ভদ্রমহিলাকে কেমন যেন অসুস্থ দেখাচ্ছে۔۔ এই রোদ মাথায় করে ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করতে করতে আরো যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন? কিন্তু ওর পৌঁছনোটাও তো ভীষণ জরুরি۔۔ তাহলে? মন ও মস্তিষ্কের খেলায় শেষ পর্যন্ত মনই জয়ী হয় হিয়ার۔۔ তারপর "যা হবে দেখা যাবে" বলে মাথাকে শান্ত করে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে আবার প্রৌঢ়ার কাছে ফিরে যেতে নির্দেশ দেয় হিয়া۔۔


বাসবী মেয়েটিকে ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিয়েছিলো۔۔ তার মনে হয়েছিল মেয়েটি ভীষণ রকম ছটফট করছিলো কোথাও পৌঁছনোর জন্য۔۔ এই সময় লোকে সাধারণত কাজেই বেড়োয়۔۔ মেয়েটিরও নিশ্চয় খুব দরকার۔۔ ট্যাক্সিটা ছেড়ে দিয়ে অন্য ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে বাসবী۔۔ প্রেসারটা কয়েকদিন হলো একটু বেড়েছে۔۔ শরীরের অস্থিরতা জানান দিচ্ছে সেকথা۔۔ আজ যে কি হয়েছে, একটিও ক্যাব বুক করতে পারেনি বাসবী۔۔ শাড়ির আঁচল দিয়েই ঘাম মুছতে থাকে۔۔ মনে মনে একটু ভয়ও পায়, যদি ছেলেটা জানতে পারে যে এই শরীরে বাসবী একা বেরিয়েছে, তার উপর গাড়ি ছাড়া۔۔۔۔۔۔কি যে কপালে আছে ওর۔۔ মনে মনে নিজের ইষ্টদেবকে স্মরণ করে বাসবী۔۔ হঠাৎই ট্যাক্সিটা আবার ওর কাছে ফিরে আসায় বাসবী ভীষণরকম অবাক হয়۔۔


হিয়া ট্যাক্সি থেকে নেমে বলে: আপনাকে অসুস্থ দেখাচ্ছে۔۔ আপনি বরং এই ট্যাক্সিতে চলে যান۔۔ আমি অন্য কিছু ব্যবস্থা করে নেবো۔۔


অবাক বাসবী প্রশ্ন করে: কিন্তু তোমার কোথাও যাবার তাড়া আছে বলছিলে না? তোমার দেরি হলে অসুবিধে নেই?


হিয়া করুন মুখে বলে: আছে তো, কিন্তু আপনাকে এইভাবে ফেলে যাই কি করে? আপনি অসুস্থ, আপনি আগে যান۔۔ (একটু হেসে) যদিও ট্যাক্সিটার উপর আপনার অধিকার আমার থেকে বেশি۔۔ আপনিই তো দাঁড় করলেন ট্যাক্সিটা۔۔


বাসবী কিছুক্ষন অবাক হয়ে হিয়াকে দেখে, তারপর বলে: তুমি কোথায় যাবে?


হিয়া: ক্যামাক স্ট্রিট۔۔


বাসবী খুশি হয়ে বলে: এক কাজ করো۔۔۔ তুমি আমার সাথেই চলো۔۔ আমাকে মিন্টো পার্কে নামিয়ে দিয়ে তুমি ক্যামাক স্ট্রিট বেড়িয়ে যেতে পারবে۔۔ একই রাস্তায় পড়বে۔۔


এতক্ষনে হিয়া প্রান ফিরে পায়۔۔ সব সমস্যার যেন হঠাৎ করেই সমাধান হয়ে যায়۔۔ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে۔۔


হিয়া: বাঁচালেন۔۔


বাসবী আর হিয়া ট্যাক্সিতে উঠে বসলে ট্যাক্সি নিজস্ব গতিতে ধেয়ে চলে۔۔ হিয়া বাঁশরীকে ফোনে জানিয়ে দেয় ট্যাক্সি পাওয়ার কথা۔۔ যেতে যেতে কথোপকথন শুরু হয়, শুরুটা অবশ্য বাসবীই করে۔۔


বাসবী: তোমার নামটা জানা হোলো না তো?


হিয়া হেসে: হিয়া۔۔۔হিয়া মিত্র


বাসবী: আমি বাসবী চ্যাটার্জী۔۔ তুমি কি করো? 


হিয়া: আমি একটা ইভেন্ট অর্গানাইজেশন ফার্মের সাথে এসোসিয়েটেড۔۔


বাসবী: ইভেন্ট অর্গানাইজেশন? কি ধরণের ইভেন্ট? সোশ্যাল অর কর্পোরেটস ?


হিয়া: কর্পোরেটস۔۔۔۔۔۔বড় বড় ইভেন্ট হোস্ট করি আমরা۔۔ যেমন ধরুন কনফারেন্স, ফেস্টিভ্যালস, সেরেমনি, কনসার্ট, কনভোকেশন এইসব۔۔


বাসবী: বাহ۔۔۔ তোমাদের কোম্পানীর নাম কি?


হিয়া: টিউলিপ۔۔


বাসবী: ভারী মিষ্টি নাম তো? ঠিক তোমার নামের মতো۔۔ তা তোমরা কি শুধু কলকাতাতেই কাজ করো নাকি বাইরেও?


হিয়া: আমরা ডোমেস্টিক, ইন্টারন্যাশনাল দুটোই করি۔۔


হিয়া পার্স থেকে কার্ড হোল্ডারটা বার করে নিজের একটা ভিজিটিং কার্ড বাসবীকে দেয়۔۔ বাসবী মন দিয়ে কার্ডটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নিজের পার্শে যত্ন করে রেখে দেয়۔۔


বাসবী: আমরা যেখান থেকে ট্যাক্সিতে উঠলাম তুমি কি ওখানেই থাকো?


হিয়া: হ্যাঁ۔۔ আমি আর আমার দিদি থাকি۔۔ টাওয়ার 6...


এরপর আরো বেশ কিছু কথোপকথনের মধ্যেই একসময় ট্যাক্সি এসে থামে বাসবীর ঠিকানায়۔۔ বাসবী ট্যাক্সি থেকে নেমে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে একটা পাঁচশ টাকার নোট দিয়ে বলে হিয়াকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে۔۔ হিয়া আপত্তি করেছিল, কিন্তু বাসবীর সাথে কথায় পেরে ওঠে না۔۔ শেষে নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে নিজের পরাজয় স্বীকার করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়۔۔ ঘড়িতে ততক্ষনে এপয়েন্টমেন্টের সময় পার হয়ে গেছে বেশ অনেকক্ষন আগেই۔۔


ট্যাক্সি থেকে নেমে, সিকিউরিটি ফর্মালিটিজ সেরে হিয়া প্রায় দৌড়ে যখন লিফটের সামনে পৌঁছোয় দেখে লিফটের টেলিস্কোপিক ডোর বন্ধ হচ্ছে۔۔ অসামান্য গতিতে হিয়া দরজা বন্ধ হবার আগেই নিজেকে একপ্রকার ছুঁড়ে দেয় লিফ্টের মধ্যে۔۔ তখন ওর গতি ঠিক কি ছিলো, সেটা বোধহয় হিয়া নিজেও জানেনা۔۔ এদিকে হিয়াকে ওই লিফ্টের দিকে দৌড়োতে দেখে সিকিউরিটি দৌড়ে আসে হিয়াকে আটকানোর জন্য۔۔ কিন্তু ততক্ষনে দরজা বন্ধ হয়ে গিয়ে লিফ্ট চলতে শুরু করে۔۔ নির্দিষ্ট ফ্লোরের বাটন প্রেস করে একটু চোখ বন্ধ করে হাঁপাতে থাকে۔۔ কয়েক সেকেন্ড পর চোখ খোলে হিয়া۔۔ এতক্ষনে হিয়া লক্ষ্য করে লিফটের মধ্যে ওর সহযাত্রীটিকে۔۔ সহযাত্রীটি ভ্রু কুঁচকে লিফ্টের দরজার দিকে তাকিয়ে আছে۔۔


এমনসময় হঠাৎ করেই লিফ্ট থেমে যায়, ভেতরটা অন্ধকার হয়ে যায়۔۔ কেমন এক অজানা আশংকা ঘিরে ধরে হিয়াকে۔۔ তখনই সহযাত্রীটি মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করে লিফ্টের এমার্জেন্সি বাটন প্রেস করে۔۔ লিফ্টের মধ্যে একটা তীক্ষ্ণ সাদা আলো জ্বলে ওঠে۔۔ এই হঠাৎ আলোর তীব্রতায় হিয়া অজান্তেই একটু সরে আসে সহযাত্রীটির দিকে۔۔ বোধহয় সেটা লক্ষ্য করেই সহযাত্রীটি একটু তফাতে সরে যায়۔۔ হিয়া নিজের মনেই বক বক করতে থাকে۔۔


হিয়া: জানতাম۔۔۔۔সকাল থেকে যা শুরু হয়েছে, তাতে করে আমি জানতাম যে আজ আমি কোনোমতেই প্রেজেন্টেশন দিতে পারবোনা۔۔ এই ডিলটা আমার ভাগ্যেই নেই۔۔ স্যারকে কি জবাব দেব আমি?


এবার হিয়া তার সহযাত্রীটিকে উদ্দেশ্য করে বলে۔۔


হিয়া: আচ্ছা হঠাৎ কি হলো বলুনতো?


সহযাত্রী নির্লিপ্তভাবে উত্তর দেয়: পাওয়ার কাট হয়েছে মনে হচ্ছে۔۔


হিয়া: পাওয়ার কাট? আচ্ছা এখানে ডিজি ব্যাক-আপ নেই?


সহযাত্রী: আছে۔۔


হিয়া: আছে তো এখনো লিফ্ট কেন আটকে আছে?


সহযাত্রী: এমার্জেন্সি বাটন প্রেস করেছি۔۔ ওদের কাজ করতে একটু তো সময় লাগবে۔۔ 


হিয়া: তাও ঠিক۔۔۔ আসলে আমার সাফোকেশন হচ্ছে۔۔ হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে۔۔


সহযাত্রী: আপনি বেশিই ভয় পাচ্ছেন۔۔


হিয়া: আচ্ছা এখানে কি প্রায়শই এরকম লিফ্ট মাঝপথে আটকে থাকে?


এবার আর সহযাত্রীটি কোনো উত্তর দেয়না۔۔


হিয়া একটু চুপ থেকে বলে: আমিও না সত্যি۔۔ নিজের টেনশনের চোটে কি তখন থেকে বক বক করে চলেছি۔۔ আচ্ছা আপনি কি চ্যাটার্জী গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজে জব করেন?


এবারও সহযাত্রীটি নিরুত্তর থাকেন۔۔ এরইমধ্যে লিফ্টের স্বাভাবিক আলো আবার জ্বলে উঠে লিফ্ট সচল হয়۔۔۔ পুরো ঘটনাটা হয়তো খুব বেশি হলে 30-40 সেকেন্ডের۔۔ কিন্তু হিয়ার মনে হয় যেন ও এক ঘন্টা বন্ধ লিফ্টের মধ্যে আটকা পড়েছিল۔۔ নির্দিষ্ট ফ্লোরে লিফ্ট থামতেই হিয়া ওর সহযাত্রীকে "বাই" বলে লিফ্ট থেকে বেড়িয়ে যায়۔۔ সহযাত্রীটি এবারেও নিরুত্তর থেকে হিয়াকে ভ্রু কুঁচকে দেখতে থাকে, লিফ্টের টেলিস্কোপিক ডোর আবার ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়।।


দেখা যাক হিয়ার জীবনে অচেনা সহযাত্রী কি ভূমিকা পালন করে!!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance