#রাগে_অনুরাগে_৩
#রাগে_অনুরাগে_৩
উজানের গেস্টরুম:;:
উজান:আপনার অযৌত্তিক প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নয় মিস মিত্র।অার আপনার প্রশ্নের উত্তর আমি ২বছর আগেই আপনাকে দিয়ে দিয়েছি।
হিয়া:হুম উজান স্যার আমি জানি।আসলে ভুলটা আমার আমি আপনার দয়া কে আমার প্রতি আপনার ভালোবাসা ভেবে ছিলাম।এই জন্যই ২বছর আগে নির্লজ্জের মতো আপনার জন্মদিনে আমার মনের কথা আপনাকে বলেছিলাম।কিন্তু আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলন।অাপনি ফিরিয়ে দেওয়ার পর কিন্তু স্যার আমি আপনার থেকে দুরে যাওয়ার সাহস পাই নি??কেন জানেন কারণ আজও আমি আপনাকেই ভালোবাসি♥।কেন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সেদিন উজান স্যার এর উত্তরটা কিন্তু আমার আজও অজানা?
উজান:Disgusting..।আপনি দুবছরের পুরোনো কথা আবার তুলেছেন?চুপ করবেন মিস মিত্র এসব কথা বাদ দিন তো এখন।এই নিন আপনি ও চিকেন স্টু আর বাটার স্যাডউইস টা খেয়ে নিন।আমিও খেয়ে নিচ্ছি।
হিয়া:ওকে স্যার।
(হিয়া খেতে শুরু করে আর উজান টেবিলে খেতে বসে।)
উজান:কি করছেন মিস মিত্র অাপনি মিশকার স্টু টা খাচ্ছেন কেন??
হিয়া:কেন স্যার খেলে কি হবে এটাও তো খাবার।
উজান:আপনার এই খাবারটা আপনার জন্য না।কারণ এই চিকেন স্টুতে পেঁয়াজ আছে।আর আপনার যে পেঁয়াজে এ্যালার্জি আছে।সেটাই আপনি ভুলে গেলেন...ridiculous।
হিয়া:Opps sorry sir।আমার মনেই ছিলো না।
উজান:নিজের ব্যাপারে কিছুই মনে থাকে না।অন্য সবার ব্যাপারে তো আপনার ঠিকই মনে থাকে...এই নিন এই বাটিতে পেঁয়াজ ছাড়া স্টু করে আলাদা করে রেখেছি।আপনি খেয়ে নিন।
হিয়া:ওকে স্যার।আপনিও খেয়ে নিন।তারপর তো আবার রান্না করবেন?
মিশকা:দাদাভাই এত কিছুর পরও শিকার করবে না যে সে হিয়া দি কে ভালোবাসে।কত্ত খেয়াল যে হিয়া দির পেঁয়াজে এ্যালার্জি আছে বলে আলাদা করে চিকেন স্টু রান্না করে রেখেছে।
উজান:হুম।মিশকা তুই বলছিস আস্তে আস্তে??
মিশকা:(এই রে সব শুনলো নাকি)না..না..।কিছু বলছি না।তুমি কি রান্না করবে সেইটা ভাবছি??
উজান:আমি ভেবেছি..লেবু কাচালঙ্কা চিকেন,বাসান্তী পোলাও,তোপসে মাছ ফ্রাই,নলেন গুড়ের পায়েস এসব রান্না করবো।
হিয়া:ও স্যার আপনি তো এসব বাঙালি খাবার পছন্দ করেন না?তাহলে আজ কেন এসব রান্না করছেন?
উজান:আপনি এখন আমার রান্না নিয়ে ও গবেষনা শুরু করবেন..ridiculous।
মিশকা:আরে হিয়া দি আমাদের হিটলার চ্যাটার্জী আজ হয়তো নিজের মুখের স্বাদ বদল করবে এজন্য এসব রান্না করবে কি তাই তো ।
উজান:মিশকাআআআ...তুই আবার আমায় হিটলার বললি..disgusting।আচ্ছা মিস মিত্র এই নামটায় কি আপানি খুঁজে পেয়েছিলেন আমাকে দেওয়ার জন্য?
হিয়া:না মানে...হ্যাঁ..।স্যার অাপনি সবসময় তো হিটলারের মতো কাজকর্ম করেন।ক্লাসেও তো সবাই আপনার ভয়ে চুপ করে থাকে।তাই আপনার জন্য এই নামটাই আমার perfect মনে হয়েছে।
উজান:যত্তসব পাগলের কান্ড।আর আপনাদের মতো দুটো তারছেড়াঁ মানুষ আমার কপালেই জুটেছে।
মিশকা:দাদাভাই আমরা তারছেড়াঁ পাগল না।তুমি তারছেড়াঁ পাগল।তাই নিজের ভালোটা বুঝো না।
উজান:মিশকা তুই আবার বাজে বকা শুরু করে দিয়েছিস।দিনে দিনে তোর সাহস বেড়েই যাচ্ছে।
হিয়া:স্যার প্লিজ মিশকা কে বকবেন না।
মিশকা:হিয়া দি উচিত কথা বলেছি তো।তাই dr.chattejee র সেন্টিমেন্টে লেগেছে।তাই অযথা রাগ দেখাচ্ছে।
হিয়া:মিশকা প্লিজ তুই চুপ কর।যে মানুষ নিজের ভালো বোঝেই না।তাকে বুঝিয়ে কোনো লাভ নেই।
উজান:disgusting...।আমার খাওয়া শেষ আমি উঠছি।আর আপনার খাওয়া হলে দয়া করে উঠুন।আমাকে রান্নাঘরে এসে হেল্প করুন।
হিয়া:ওকে স্যার আসছি।
উজান:হুম..আসুন তো।তার আগে মিশকা শর্তটা পূরণ করুক।আমরা আগে মিশকার গান শুনবো?
মিশকা:কি গান শুনবে বলো?
হিয়া:সুরে ও বাঁধনে।(রবীন্দ্রসঙ্গীত)
উজান:না...।মিশকা আমার পছন্দের গান গাইবে।আপনার পছন্দের গান গাইবে না।নদীর ভরা ঢেউ(Indian folk song)এই গান তোর কণ্ঠে অসাধারন লাগে।
মিশকা:Wait।আমি দুইটা গানই শোনাব।আগে দাদাভাইয়ের পছন্দের গানটা গাই।তারপর তোমার পছন্দের রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইব।তবে অনেকদিন হলো গান করার Practise টা নেই।জানি না কেমন হবে?
হিয়া:ওকে।উজান স্যার বলেছিল তুই দোতারা-গিটার বাজাতে পারিস।মিশকা তোকে দোতারা টা এনে দিই।এটা বাজিয়ে গান কর।আমিও শুনি তুই কেমন দোতারা গানটা করিস।
মিশকা:আচ্ছা হিয়া দি।কিন্তু গিটার দাদাভাই বাজাবে। তাহলেই আমি দোতারা বাজাবো।(হিয়া দোতারা আনার জন্য ভেতরে যায়)
উজান:আচ্ছা বাজাবো।তবে পরের গানে।
হিয়া:মিশকা এই নে তোর দোতারা আর তোর গানের ডাইয়েরী।
মিশকা:হুম দাও।(মিশকা দোতারা ঠিক করে নিয়ে দোতারা তে শুরু তুলতে করে।)
নদী ভরা ঢেউ,বোঝো না তো কেউ।।
কেন তরী নিজে,বাউ বাউ বাউ রে।।
নদী ভরা ঢেউ
ভরসা করি হে ভব কাণ্ডারি।।
হাল টি ছাড়িয়া তারে দাও দাও দাও রে
নদী ভরা ঢেউ,বোঝো না তো কেউ।।
কেন তরী নিজে,বাউ বাউ বাউ রে।।
নদী ভরা ঢেউ
বাইতে জানো না কেন ধরো হাল।।।
মন মাঝিটা তাই,হলো রে মাতাল।।।
বুঝিয়ে বলো তারে,যেতে হবে পারে।।
অবেলার বেলা পানে,চাও চাও চাও রে।।
নদী ভরা ঢেউ,বোঝো না তো কেউ।।
কেন তরী নিজে,বাউ বাউ বাউ রে।।
নদী ভরা ঢেউ
বাইতে ছিল তরী পাগলা ভবা।।।
ভাঙ্গা তরীতে চলে,ওরে ডুবা রে ডুবা।।।
এখন চুবানি খেয়ে,ধরেছো পায়ে।।
ও হে কাণ্ডারি আমায় বাচাঁও বাচাঁও রে।
নদী ভরা ঢেউ,বোঝো না তো কেউ।।
কেন তরী নিজ,বাউ বাউ রে।।
নদী ভরা ঢেউ.....।
হিয়া:অসাধারন মিশকা।উজান স্যার তো ঠিকই বলেছিল।তোর কণ্ঠে এই গানটা সুন্দর মানিয়েছে
মিশকা:অতটাও ভালো হয় নি।তুমি প্রথম শুনলে তো তাই তোমার ভালো লেগেছে।আর তোমার পছন্দের গানটা রাতে খাওয়ার পর শুনাবো তোমাকে কেমন!!?
হিয়া:আচ্ছা..।না রে সোনা তুই সত্যি ভাল গেয়েছিস।উজান স্যার মিশকা কিন্তু Practise ছাড়াই যথেষ্ট ভালো গেয়েছে তাই না??
উজান:হুম।রাতে কিন্তু মিশকার সাথে আপনাকেও সুর মেলাতে হবে?আমি জানি আপনি গান শিখেছেন?তাছাড়া টিউলিপের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তো আপনি গান করেছেন??রাতে আমার গিটারের সঙ্গে সুর মেলাবেন তো মিস মিত্র??
বাকিটা.....পরের পর্বে
NB:আজ লেখার কল্যাণে অনেক দিন পর আমিও গানটা গাইলাম।এসব করার সময় বাস্তবের উজান-হিয়া সঙ্গে কাটানো সুন্দর দিনগুলি মনে পড়ে গেল।আজও তাদের সঙ্গে কাটানো সময় গুলো আমি বড্ড মিস করি।