পুট্টুসের বইমেলা
পুট্টুসের বইমেলা


পুপলি দিদির কথা শুনে পুট্টুস হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না ।
গ্ৰামে সে কত্তো মেলা দেখেছে ! চরকের মেলা , শীতলা পুজোর মেলা, রথের মেলা । তাদের দু'গাঁ পরে রাস পূর্ণীমায় যে মেলা হয় , সেটা তাদের এলাকার সবচেয়ে বড় মেলা । বহু দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এই মেলায় আসে ।
দোকানগুলো রকমারি পসার নিয়ে বসে । কিনা পাওয়া যায় সেখানে ! হাঁড়ি , কড়াই , তালপাতার পাখা , কাঁচের চুড়ি , কানের দুল , বাচ্চাদের খেলনা । গত রাসের মেলা থেকেই তো তাকে তার বাবা আলো জ্বালা লাল রঙের গাড়িটা কিনে দিল । বাচ্চু যদি খেলার সময় সেটাকে ভেঙে না ফেলত তাহলে সেই গাড়ি আজও পুট্টুসের কাছে থাকার কথা।
পুপলি দিদি যে মেলার কথা বলছে সেরকম কোন মেলায় সে আগে কোনো দিন যায় তো নিই , এরকম কোন মেলা হয় বলেও শোনেনি । তাই পুট্টুসের ঘোর কাটছে না ।
এর মধ্যে পুপলি দিদিকে নানান প্রশ্ন করে সে জানতে পেরেছে যে এই মেল
ার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে বই । লাল-নীল-হলুদ রঙের মলাটের মধ্যে ছোট-বড়ো , চ্যাপ্টা-মোটা হরেক রকমের বই এর পসরা সাজিয়ে রাখা থাকে । বই ইচ্ছেমতো দেখ , আর পছন্দ মতো কোনো ।বিকেল বেলায় পুপলি দিদি তার বাবা-মার সাথে ঢাউস একখানা গাড়ি করে বেড়িয়ে গেছে । যাওয়ার আগে বলে গেছে তার জন্য একটা নতুন বই নিয়ে আসবে । গল্পের বই । সেই থেকে পুট্টুসের মনটা চঞ্চল হয়ে আছে । বই পড়তে যে তার খুব ভালো লাগে । গতবছর ক্লাস টু থেকে থ্রী তে ওঠার সময় সে ক্লাসে তৃতীয় হয়েছে । আর অঙ্কতে সবার চাইতে বেশি নম্বর পেয়েছিল । তার সফলতার জন্য সে স্কুল থেকে সুকুমার রায়ের দুটো বই পুরস্কার স্বরূপ পেয়েছিল । সেগুলো কবেই পড়া হয়ে গেছে । এখন অপেক্ষা পুপলি দিদি কি বই নিয়ে আসে ?
গাড়িটা যখন কম্পাউন্ডের মধ্যে ঢুকছে পুট্টুস নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনি । এক ছুট্টে গাড়ির কাছে । গাড়ি থেকে নেমে পুপলি কাগজের মোড়কে মোড়া বই খানা এগিয়ে দিতেই পুট্টুস মোড়কের খোসা ছাড়িয়ে লাল রঙের 'ঠাকুমার ঝুলি' বইটা বুকের মধ্যে জাপটে ধরে অনাবিল আনন্দে চোখ বুজে ফেলে । ছুঁয়ে থাকা বই এর কালো অক্ষর গুলোর অলিগলি পেড়িয়ে দারোয়ানের ছেলে পুট্টুস পৌঁছে যায় আলো ঝলমলে বইমেলার মাঠে । কানে ভেসে আসে… ওগো বই নেবে গো…..বই...এখানে হরেক রকমের বই পাওয়া যায় ! যা ইচ্ছে নেবে তাই…..