পুনর্ভবা পর্ব :- ৬
পুনর্ভবা পর্ব :- ৬
সুলতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিখিলেশ বলে ওঠে,
সাবধানে থাকবে। পুঁথির মাকে দিয়ে বাজার করাবে
দই আর সবরি কলা রোজ খাবে। আমরা থাকছিনা বলে মাছ না খেয়ে থাকবেনা। ওখানে শিবরামপুরে পুকুরে জাল ফেলিয়ে মাছ ধরা হবে। তুমি যদি এখানে না খাও তাহলে কি আমি ওখানে খেয়ে আনন্দ পাবো?
_____হ, বুঝছি। কিন্তু আমার যে একা থাকতে ভালা লাগে না।
_____একা কোথায়? সোনা তো রইলো । খুকুকে নিয়ে যাচ্ছি বলে তোমার কি মন খারাপ?
_____ না, না। মা আওনে কয়দিন বাড়িডা ভরা হইয়া
আছিল। অহন এক্কেরে ফাঁকা লাগবো। আর খুকু?
বাবারে বাবা! অর লগে অত বকবক করতে আমি পারিনা। এত কথা কয় ছেরিডা!
হাসেন নিখিলেশ। আসলে সোনার সাথে থেকে থেকেই এমন হয়েছে। সোনা কথা বলেনা বলে খুকু বোধহয় দুজনের মাপের কথা একাই বলে। অনেক পর্যবেক্ষণ শক্তি মেয়েটার। আর যতক্ষণ না ঘুমোয় সামনে কথা বলার কাউকে পেলে ওর প্রশ্ন যেন শেষ ই হয়না।
_____তা যা বলেছো। আমাকেও নাজেহাল করে মাঝেমধ্যে। আজকেও ওর একটাপ্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে।
____ক্যান, কি এমুন জিগাইছিলো?
____হা হা, বলে কি না জিন্দাপীরের নাম শামুক কেন?
মুচকি হেসে সুলতা জিজ্ঞেস করে
_____কি কইলা?
______কি আর বলবো! বললাম যে হয়তো ওটা ওনার আসল নাম নয়। মা বাবার দেওয়া নামটাও সন্ন্যাসী ও ফকির মানুষেরা ত্যাগ করেন। ফকির বিদ্রোহের সময় বিপদ বুঝলে হয়তো নিজেকে শামুক এর খোলের মধ্যে গুটিয়ে নেবার মতো করে আত্মরক্ষা করতেন। শামুক এর যেমন এ্যান্টেনা থাকে যা দিয়ে ওরা আগাম বিপদ বুঝতে পারে তেমনি উনিও হয়তো আগাম অনুমান করতে পারতেন আপদ-বিপদের কথা। সবাইকে এভাবেই হয়তো সাবধান করে দিতে পারতেন, সুপরামর্শ দিতে পারতেন।
_____বাবাঃ, এত্ত কথা কইলা? তুমি পারোও! মাইয়াডাও তুমার লাখান ই হইছে।
______আমার মেয়ে তো আমার মতোই হবে। এ আর এমন কি কথা! নাও এখন ঘুমোও। আর কথা বলবো না।
_____ঘুম আইতাছে না।
_____তাই? আসলে কি বলতো? আমরা কেউ কাউকে ছেড়ে থাকতে চাই না। সেজন্যেই তোমার আজ ঘুম পাচ্ছে না। আমারও পাচ্ছে না। আমি না ঘুমোলে অত কিছু এসে যায় না। কিন্তু তোমার মধ্যে যে বেড়ে উঠছে তার জন্যেই তোমার ঠিক সময়ে খাওয়া, ঘুম এসব দরকার। ওষুধ মনে করে খেও। ভুলে যেওনা। মনে রেখো আমার অর্ধেক মন আমি তোমার কাছে রেখে যাচ্ছি। আমার কথা ভেবে নিজেকে খাবার ও ওষুধের কথা মনে করাবে। ভয় নেই তোমার মনটাও নিয়েছি সঙ্গে করে। নিজের যত্ন করবো। শুধুই টো টো করে ঘুরবো না। অযথা চিন্তা করো না। তিন চার দিনের তো ব্যাপার। ঠিক দেখো কেটে যাবে সময়টা।
হঠাৎ কোথায় যেন একটা কোকিল এই রাতের বেলা কুহু কুহু কুহু কুহু করে ওঠে। দুজনেই হেসে ফেলে।
_____পাগলা কোকিলটা আবার আইয়া পড়ছে।
____ওর মনের কষ্ট তুমি কি বুঝবে? ও কি আর আগে এরকম পাগোল ছিল? প্রেমে পড়ে পাগোল হয়ে গেছে। অনেকটা যেমন তোমার প্রেমে আমার মতোই অবস্থা, রাতে না ঘুমিয়ে বকবক করে চলেছি।
সুলতা গুম গুম করে কয়েকটা ঘুসি মারে নিখিলেশ এর বুকে। এই রাতেও বেশ জোরেই হেসে ওঠে নিখিলেশ। এবারে ওর মুখ দু হাতে চেপে ধরে সুলতা।
সুলতার মুখ খুশি ও লজ্জ্বায় এই আধো অন্ধকারেও
উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।