STORYMIRROR

Paula Bhowmik

Drama Tragedy Inspirational

4  

Paula Bhowmik

Drama Tragedy Inspirational

পুনর্ভবা পর্ব :-২

পুনর্ভবা পর্ব :-২

2 mins
438

নিখিলেশ নন্দি বীরগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকরিটা পেয়ে পাকাপাকি ভাবে বীরগন্জের বাসিন্দা হয়ে পড়েছেন। শিবরামপুর গ্রামে ওনাদের প্রচুর জমিজমা থাকলেও বাড়িটি কিন্তু মাটির। ভাই অখিলেশ নন্দিও বাংলায় এম. এ । পণ করেছে কোনও চাকরি বাকরি করবেনা।

জমিজমা দেখাশোনা তাহলে করবে কে? বাবা তো ওদের ছোটোবেলাতেই ওদের ছেড়ে চলে গেছেন। এরপর মা ই ওদের পড়তে সাহায্য করতে নিজে জমির দায়িত্ব মাথায় তুলে নিয়েছিলেন। ছোটো ভাই তো জমি আঁকড়ে গ্রামের বাড়িতেই থেকে গেল। পুকুরের তাজা মাছ, বাগানের ফলমূল, সব্জি, আর ওখানকার শিবপুর হাটের টানে নিখিলেশ এখনও যান কখনও সখনো । মাকেও দেখে আসা হয়। তবে এখন এই পথটুকু যাওয়া আসার জন্য নানা সরকারি বাধা, ভিসা পাসপোর্টের ঝামেলা থাকায় খুশী মতো যখন তখন যাওয়া যায় না। 

কয়েকদিনের জন্য বীরগন্জের বাড়িতে এসেছেন মা।

তাতেই হাঁপিয়ে উঠেছেন গ্রামের ফেরার জন্যে।

পাকা বাড়িতে ওনার নাকি দম বন্ধ হয়ে আসে।

আর সুলতা ঠিক তার উল্টো। শিবরামপুর গিয়ে থাকতে চায়না মোটে। ছোটো মেয়েকে খুকুকে নিয়ে মা গিয়েছেন সাতোরে শামুক শাহ পীরবাবা'র থানে। ফিরতে হয়তো বিকেল হবে। শিবরামপুর থেকে লালমোহনও সঙ্গে এসেছে তাই নিশ্চিন্তে আছেন নিখিলেশ বাবু। ওর ভরসাতেই তো শিবরামপুরের বাড়ির চিন্তা ওনাকে করতে হয়না। কখন কোন কাজ করা দরকার তা বলে দিতে হয়না ওকে। কেমন করে নিজেই বুঝে নেয়।

সোনা চা এনেছে। ইশারায় কথা বলে ও। খুব শান্ত মেয়ে। শুধু কোনো কারনে বকলে কেঁদে ফেলে। তার মানে সবার কথাই বোঝে ও, শুধু বলতে পারেনা। কেন যে এমন হলো! নাহয় সুলতার মতো বাঙাল ভাষাতেই কথা বলতো! তবু তো কথা বলতো। সোনার মাথার চুলগুলো নেড়ে দেন আলতো করে। সুলতার ভাষা মা একদম পছন্দ করেননা। জানেন অখিলেশ বাবু। আর সুলতাও কেন যে নিজেকে একটুও পাল্টাতে পারলোনা। এসব কারনেই শাশুড়ি - বৌমার ঠিক বনিবনা হলোনা। তাইবলে অবশ্য কেউই ঝগড়া ঝাঁটি কখনও করেন না। দুজনেরই প্রচন্ড আত্মসম্মানবোধ। অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।

তেলের কাঁচের বাটিতে নারকোল তেল, চিরুনি, সরু কালো ফিতে আর লাল শার্টিনের ফিতে নিয়ে মাদুর পেতে বসে সুলতা। সোনাকে ডাকে____

_______কাছে আইয়া ব, তর চুলডি বাঁইন্দা দেই।

সোনা হাসিমুখে গিয়ে মায়ের সামনে বসে পড়ে। খুকুর রঙটা একটু চাঁপা হলেও সুলতার মতোই চাঁপা ফুলের রঙ পেয়েছে সোনা। শুধু কথাটাই যা বলতে পারেনা। পরম যত্নে চুলে তেল দিয়ে আঁচড়ে কলাবিনুনী বেঁধে দেন সুলতা। দুদিকে শিং এর মতো দুটো লাল ফুল। বেশ লাগে! 

_______তাকা দেহি।

গোধূলি বেলায় আকাশের রঙের সাথে একাকার হয়ে অপূর্ব দেখায় সোনার মুখখানা। ঠিক যেন চাঁদ। ওর বাবার রাখা "পূর্ণিমা" নামটা সার্থক। শুধু চাঁদের মতো বোবা হবার কলঙ্ক টা যদি না থাকতো! থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে সেই হাত নিজেই চুমু খায় সুলতা।

_____বাম হাতডা দেহি।

এই বলে সোনার বাঁ হাতের কড়ে আঙুলে ছোট্ট করে একটু কামড়ে দেয় সুলতা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama