পুনর্ভবা পর্ব :- ১
পুনর্ভবা পর্ব :- ১
সাতোরে এসেছিলো খুকু তার ঠাকুমার সাথে। সেই সাত সকালে গরুর গাড়ি করে ওরা এসেছে বীরগন্জ থেকে। শামুক শাহের মাজারে মাটির ঘোড়া, মোমবাতি ও ধূপকাঠি দিয়ে পূজো করেছে ঠাকুমা।
মাজারের পাশেই রয়েছে জ্যান্ত পীরের দিঘীর টলটলে শীতল জল। ওখানেই দূপুরের স্নান সেরে নেয় ওরা।
ইঁদারার থেকে জল তুলে চিড়ে ভিজিয়েছে কম্মা।
খুকু তার ঠাকুমাকে ঐ বলেই ডাকে।
সাথে আছে পঞ্চগড়ের গামছা বাঁধা দই আর মর্তমান কলা। সবরি কলা পাওয়া যায়নি বলে লালমোহন কাকার ওপরে কম্মা গজগজ করছিলো বেশ!
খুকুর অবশ্য মর্তমান কলা দারুণ ভালো লাগে।
একটু জলজলে যদিও! কিন্তু কি মিষ্টি, আর কি সুন্দর গন্ধ!
____আচ্ছা কম্মা, গামছা বাঁন্ধা দইটা তো দেখতাছি হাঁড়িতেই রইছে, গামছা দিয়া তো বাঁন্ধা নাই। তাইলে লালমোহন কাকা "গামছা বাঁন্ধা দই" কইলো কেন্?
অনুপমা দেবী নদীয়ার শান্তিপুরের জগৎবন্ধু দারোগার মেয়ে। নাতনীর মুখে এরকম ভাষা শুনে স্বভাবতই ওনার মুখটা গম্ভীর হয়ে ওঠে। মনেমনে গজগজ করে ওঠেন।
"কতবার মানুষটাকে কতবার বললাম খোকার বিয়েটা বাঙালের মেয়ের সাথে দিওনা। তা শুনলে আমার কথা!"
কোথায় কোন অজ পাড়াগাঁয়ের তালুকদারের বাড়ি! কি, না ময়মনসিংহের বনেদি বাড়ির মেয়ে। রান্নার হাত ওদের ভালো হতে বাধ্য। লোভী বুড়ো কোথাকার! অবশ্য বৌমা রাঁধেন ভালোই। নিন্দা করবার উপায় নেই। শিক্ষে দিক্ষেও আছে। কিন্তু যত ভালো ব্যবহার ই করুক না কেন ঐ বাঙাল ভাষা শুনলেই তো পিত্তি জ্বলে ওঠে। ওনার আর কি! দিব্যি ড্যাং ড্যাং করে স্বর্গে চলে গেলেন। আর এদিকে যে নাতনি চোখের সামনে এরকম অভব্য ভাষায় কথা বলে, কেমন লাগে!
বৌমা আবার সন্তানসম্ভবা। সেই কারণেই তো এই জ্যান্ত পীর শামুক শাহের থানে আসা। যেন পীরের দয়ায় এবার নাতির মুখ দেখতে পাই। মরার আগে আমার এই একটিই সাধ পীরবাবা!
যুক্ত কর তিনবার কপালে ঠেকান উনি।
______ও কম্মা, রাও করনা ক্যারে?
_____খুকু দিদিভাই! ওরকম করে কথা বললে লোকে নিন্দে করবে যে! সোনা দিদি কে না এনে আমি তোমাকেই কেন এনেছি সাথে বলতো?
কারণ আমি তো জানি, তুমি ইচ্ছে করলেই ভালো করে, সুন্দর করে কথা বলতে পারো!
_____ও বুঝছি। তুমি রাগ করছো? আর কমুনা।
_____না। বলতে হয়, ও বুঝেছি। তুমি রাগ করেছো? আর বলবো না।
খুকু কিছুক্ষণ তাঁর ষাটোর্ধ সুন্দরী সুঠাম ফর্সা ঠাকুমার দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে বলে "দইটাকে গামছা বাঁধা দই বলে কেন?"
রঙটা একটু চাঁপা হলেও ভারী মিষ্টি স্বভাব খুকুর। অনুপমা দেবী তাঁর আদরের নাতনী প্রতীমা কে কোলের কাছে জড়িয়ে বলেন,
_____ আসলে এই দইটা এত ঘন যে কেউ ইচ্ছে হলে গামছায় পুটুলি করেও নিয়ে যেতে পারে, আসলে অবশ্য কেউ অমন নেয় না। তাই শুধু ওরকম নামে ডাকে সকলে। যেমন তোমার নাম প্রতিমা হলেও সবাই তোমাকে খুকুমণি বলে তেমনি।
