SHUBHAMOY MONDAL

Drama Tragedy Crime

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Tragedy Crime

প্রথম রিপু - তৃতীয় পর্ব

প্রথম রিপু - তৃতীয় পর্ব

4 mins
220



মৌসুমী বাড়িতে ঢুকতেই, তাকে বললো - ফুকোটে যখন আমাকে বাড়ি ছাড়তে এসেছিস আগ বাড়িয়ে, খুব তাড়াতাড়ি তো রেহাই দিবি বলে মনে হয় না। দাঁড়া, আগে খাবার অর্ডারটা দিয়ে দিই। হীরু কথা না বাড়িয়ে তার পিছু পিছু ঢুকলো তার ঘরে।


মৌসুমী - শোন, তোর কথা পরে শুনছি। কাল সারা রাত, আজ পুরো দিন ডিউটি করে ফিরছি। তারওপর শালা ঐ জঙ্গল, এঁদো ডোবা, হাসপাতাল সব ঘুরতে হয়েছে - আগে স্নানটা সেরে নি। তুই বরং ততক্ষণ একটা সিগারেট ফুঁকে নে। আমি বেরোলে আর কিন্তু খাবি না - ঐ ড্রয়ারে আছে দেখ।


হীরু - তুই সিগারেট খাচ্ছিস নাকি আজকাল? আমি তো কবেই ছেড়ে দিয়েছি। যাক গে, বলছিস যখন তবে একটা টানি তাহলে।


মৌসুমী - একটা গাঁট্টা মারবো, পাজী কোথাকার। ওটা আমার বরের সিগারেট, গাধা। আর শোন, কৃষ্ণদা বলছিলো, তুই ঐ গোয়েলের বৌয়ের কেসটার ব্যাপারে জানবার জন্য আসবি। একটা ডায়েরী আছে আমার ব্যাগে, ওটাও দেখতে পারিস ততক্ষণ। কিন্তু শুধু ১৬ই মে পেজটাই দেখবি, বুঝেছিস?


হীরু - যথা আজ্ঞা ম্যাডাম। বলে, তার ব্যাগ থেকে ডায়েরীটা বের করলো। মৌসুমী, আকাঙ্ক্ষা গোয়েলের পুরো কেসটা জিস্ট করে লিখে রেখেছিলো ডায়েরীতে। তার তদন্ত অনুযায়ী, কোনো বড় ভারী যানের ধাক্কায়, রাস্তা থেকে ছিটকে পাশের জলাভূমিতে পড়ে, মৃত্যু হয়েছে তাঁর। গায়ের পোশাক - একটা সিফনের শাড়ি জড়িয়ে ছিলো পাশের খেজুর গাছে, হয়তো গাড়ির ধাক্কা খেয়ে, ঐ গাছেই ছিটকে পড়েছিলেন তিনি।


শাড়িটা ছিঁড়ে গিয়েছিলো। গায়ে যা ছিলো তা অন্তর্বাস তুল্যই - অত্যাধুনিকাদের ব্লাউজের এখন যা হাল আর কি! নিচের পেটিকোটের হালও খারাপ - কোমর থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে ছিলো পাশেই। প্রথমে রেপ অ্যাণ্ড মার্ডার কেস ভাবলেও, পোস্টমর্টেম রীপোর্টে রেপের প্রমাণ মেলেনি - পিছন থেকে থ্রাস্টের কারণেই মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৪১ বছর।


মৌসুমী যখন বাথরুম থেকে বেরোলো, হীরু তখন আর বাস্তবের দুনিয়ায় নেই, পুরো চিন্তায় নিমজ্জিত। খাবার দিতে এসে, ছেলেটা এতবার রিং করেছে, তার কানেই ঢোকেনি। মৌসুমী তাই তাকে কিছু না বলে, খাবারটা নিয়ে এসে, টেবলে দুজনের জন্য বেড়ে ফেললো। 


হীরু ওদিকে ভাবনায় মগ্ন, তাই অগত্যা উঠে এসে, তাকে ধাক্কা দিয়ে বললো - এই শালা, পরে ভাবিস। এখন গিলবি আয়। আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে, ওয়েট করতে পারছি না। হীরু বললো - তুই খেয়ে নে। আমায় একটু ভাবতে দে। তোর মোবাইলে ঐ মহিলার বা তার পোশাক আশাকের ছবি আছে? একটু দেখা তো। 


তারপর, নিজেই মৌসুমীর মোবাইল থেকে, ছবিগুলো নিজের মোবাইলে ট্রান্সফার করে নিলো। ভালো করে মন দিয়ে সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। তারপর বেশ খানিক ক্ষণ কিসব ভেবে বললো - আচ্ছা মৌ, তোর কি মনে হয় - এটা খুন হতে পারে কিনা?


মৌসুমী - হতেই পারে। কৃষ্ণদাও সেইরকমই বলছিলো। ওর ওখানেও ঐ মহিলার রীলেটিভ কেউ নাকি খুন হয়েছে, তোরও তো নাকি তাইই মত! কিন্তু এখানে কোন মোটিভ বা প্রমাণ সেরকম কি দেখছিস?


হীরু - কোনো গাড়িতে ধাক্কা খেয়ে, মহিলা যদি ছিটকেই যাবে, তাহলে, গা থেকে শাড়িটা খুলে যাবে কিভাবে? আর ঐভাবে পেটিকোটই বা ছিঁড়ে বেরিয়ে যাবে কেন? এদিকে তো রেপ হয়নি বলছিস। মোটিভটা তো আমিও বুঝতে পারছি না রে। সঙ্গে আরও একটা খটকা রয়েছে - ঐরকম পোশাকে তিনি অত রাতে একা, বাইপাশেই বা গেলেন কেন?


ওনার বাড়ি মানিকতলায়, নিজের ফ্ল্যাট উল্টোডাঙা - কাকুঁরগাছির মাঝামাঝি। নিজেদের এতগুলো বিদেশী গাড়িও আছে, তাহলে একা এত রাতে ওখানে তিনি কি করছিলেন? হ্যারে, আর কিছু পাস নি ওনার - মোবাইল জাতীয় কিছু?


মৌসুমী - না রে, সেরকম কিছু তো পাইনি। এটা তো বেশ বলেছিস - ওটা তো পাওয়া উচিত ছিলো। আজকাল মোবাইল ছাড়া একটা রিক্সাওয়ালাও মেলে না, আর এ তো বড়লোকের বৌ। সেটা তো পেলাম না, ওটা থাকা উচিত ছিলো এর কাছে নিশ্চয়ই। 


হীরু - ওনার বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে? বডি নিয়ে গেছে বাড়ির লোক? 


মৌসুমী - হ্যাঁ, ওনার হাসব্যাণ্ড বোধ হয় বাইরে আছেন। তবে ছেলে এসে বডি ক্লেম করে নিয়ে গেছে। তাঁকে, আর জি করে আয়ার কাজ করে এক মহিলা, চিনতে পেরেছিলো। ওনাদের পাড়াতেই নাকি বাড়ি, সেই গিয়ে খবরটা দিয়েছিলো ওনার ছেলেকে। খুনই বল বা অ্যাক্সিডেন্ট, মৃত্যুটা হয়েছে কিন্তু পরশু রাতে! আমরা বডিটা পেয়েছি কাল সন্ধ্যায়।


হীরু স্বগতোক্তি করলো - তার মানে, বিনোদ কুমার আর এই আকাঙ্ক্ষা গোয়েল দুজনেই একই রাতে মারা গেলো! সময়টাও প্রায় কাছাকাছি - তবে কি কোনও কানেকশান আছে এদের মৃত্যুর মধ্যেও? কেমন যেন একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে!


হীরু তখনই দৌড়ালো খাবার ফেলে রাহুল গোয়েলের বাড়ি। যেতে যেতেই কৃষ্ণদাকে ফোন করলো - দাদা শিগ্গিরি মানিকতলায় রাহুলের বাড়িতে আসুন। মনে হয় দুটোই খুন, আর তার ক্লু ওদের বাড়িতেই আছে। আমি পৌঁছাচ্ছি, আপনিও আসুন।


রাহুলের বাড়িতে গিয়ে, হীরু দেখে তালাবন্ধ বাড়ি। সে পাঁচিলের ওপর দিয়ে, ভালো করে বাড়িটার ভিতরের আসপাশ দেখতে দেখতেই, কৃষ্ণদা এসে হাজির হলেন। বললেন - কি ব্যাপার বলো তো?


হীরু - পাখি মনে হচ্ছে খাঁচা ছেড়ে পালালো দাদা। চলুন, আর একবার বরং ঐ ফ্ল্যাটে যাই। যদি খুব ভুল বুঝে না থাকি, তবে রাহুল হযতো ওখানেই থাকবে, চলুন!


দুজনেই বাইক নিয়ে দৌড়ালো সেই ফ্ল্যাটে। যথারীতি, রাহুল ফ্ল্যাটে এসেছে বলে জানালো সিকিউরিটির লোকটা। দুজনেই দৌড়ালো ওদের ফ্ল্যাটের দিকে। বিনোদের ফ্ল্যাটটা তারা যেমন বন্ধ করে রেখে গিয়েছিলো, তেমনই আছে দেখে, ওরা গেলো ওদের সেই 'গেস্ট হাউস' ফ্ল্যাটটাতে। 


রাহুল বোধ হয় সাড়া পেয়ে গিয়েছিলো ওদের আসার, তাই ফ্ল্যাট খোলা রেখেই ব্যাক ডোর দিয়ে এমারজেন্সী এক্সিট ধরে পালিয়ে গেলো। ওরা যখন তাকে দেখতে পেলো, তখন সে নিচেয় নেমে গেছে। অত ওপর থেকে নেমে এসে, তাকে ধরার চেষ্টা করা বৃথা হবে বুঝে, হীরু বললো - দাদা, এ ব্যাটাকে পালাতে দেওয়া ঠিক হবে না। ওর বাবা শহরে নেই, বাড়ির দুজন খুন হলো, আর ও এভাবে পালিয়ে যাচ্ছে - লক্ষণ ভালো না।


ক্রমশঃ


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama