প্রথম বৃষ্টি
প্রথম বৃষ্টি
প্রথম বৃষ্টি
কলমে - কৃষ্ণ ব্যানার্জী
একটি প্রেমের গল্প
অনিন্দ চৌধুরী, বয়স সত্তরের কাছাকাছি। মাথার চুলগুলো ধপধপে সাদা যেন কাশফুলের মতো শুভ্র। এখনো মোটামুটি শক্তপোক্ত। মেরুদন্ড সোজাকরেই একা একাই ঘুরেবেরান কোলকাতার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেরান। কখনো ময়দানে, কখনো নন্দনে এখনো পর্যন্ত অবলম্বনের প্রয়োজন পরেনা। আর্মিতে ছিলেন অনিন্দ বাবু তাই হয়তো কাউকেই প্রয়োজন হয়না তার। যদি কাউকে মিসকরেন তিনি হলেন তার মাধবী। তবে নিজেকে যতটা সম্ভব সরিয়ে রাখতে চেষ্টা করেন তিনি কিন্তু আজ আবার তার মনে পড়েগেল আজ থেকে চল্লিশ বছর আগের কথা। প্রতিদিনের মতোই আজও অনিন্দ বাবু দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে কোলকাতা ময়দানের উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আকাশ শিতের প্রায় শেষ হালকা একটা ঠান্ডার আমেজ রয়েছে তাই জামার উপর একটা হালকা কোট চাপিয়ে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। আর্মি ফিরত মানুষ দুপুরে ঘুমানো পছন্দ করেননা তিনি আর সারাদিনতো গাছপালা নিয়ে থাকা সম্ভব নয় আর টেলিভিশনে নিউজ ছাড়া কিছুই দেখেন না তিনি। জীবনটাকে প্রচন্ড নিয়মকানুনের মধ্যে বেঁধে রেখেছেন। তিনি যখন রওনা হলেন ময়দানের উদ্দেশ্যে তখন আকাশ ছিলো বেশ পরিষ্কার কিন্তু ময়দানে ঘুড়ে বেরাতে বেরাতে হঠাৎ আকাশ মেঘে ছেয়ে গেল। বেশ জোরে পা চালিয়ে ময়দানের বাইরে ভিক্টরিয়ার সামনের ফুটপাতের ধারের যে দোকান পাট রয়েছে তার নিচে একটু ঠাই নেবেন কিন্তু সে সুযোগ পেলেন না তিনি। কিছুটা এগোতেই ঝম ঝম করে নেবে এলো বৃষ্টি। এই বছরের প্রথম বৃষ্টি এটা। কোন উপায় না পেয়ে সামনের একটি বট গাছের নিচে ঠাই নেন তিনি। প্রথমে অবশ্য জল পড়ছিলনা তবে গাছের পাতাগলো ভিজে যেতেই টপ টপ করে জল পড়তে থাকে তার দেহে। এক ফোটা হাতে একফোটা মাথায় এরকম করতে করতে বৃষ্টির জল পড়ার পরিমাণ ক্রমশ বারতেই থাকে ঠিক সেই সময় একটি বছর তেইশের মেয়ে ছাতা নিয়ে এসে বলে কাকাবাবু আপনিতো ভিজে যাচ্ছেন, বছরের প্রথম বৃষ্টি ভিজলে জর হবে যে আপনি আমার ছাতার তলায় দাঁড়ান। প্রথম বৃষ্টির কথাটা শুনেই অনিন্দর বুকটা ধরাস করে ওঠে কারণ এরকমই একটি প্রথম বৃষ্টির দিনে তারসাথে দেখা হয়েছিল মাধবীর। সেদিনও পরিষ্কার আকাশ দেখে ছাতা ছাড়াই বেড়িয়েছিলেন তিনি। হঠাৎ একটা ফাঁকা রাস্তায় ঝম ঝম করে বৃষ্টি নামে। তার মতোই কিছু মানুষ সেই পথে ছিলো সকলেই বৃষ্টির হাতথেকে বাঁচতে এদিক ওদিক ছুটতে থাকে কিন্তু লাভটা কি আশেপাশে কিছুই নেই যার নিচে আশ্রয় নেওয়া যায়। কিছুটা দূরে একটা গাছ চোখে পড়তে অনিন্দ সেই গাছের নিচে আশ্রয় নিলেন কিন্তু তেমন কোন লাভ হলোনা খোলা আকাশের নিচে সরাসরি জলটা পড়ছিল আর এখানে গাছের পাতা ভেদ করে তার গায়ে এসে পড়ছিল বৃষ্টির জল ঠিক সেই সময় মাধবী একটা ছাতা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল সেখানে আর ঠিক এই মেয়েটির মতোই বলেছিল এটা প্রথম বৃষ্টির জল আর এভাবে ভিজলেতো আপনার ঠান্ডা লেগে জর আসতে পারে আপনি পাগল নিকি এভাবে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজছেন। সেদিন অবশ্য অনিন্দ বলেছিলেন উপায় কি আছে বলুন হয় গাছের নিচে না হয় আকাশের নিচে আলটিমেট ভিজতেই হতো। মাধবীর সাথে তার এটাই ছিলো প্রথম আলাপ তারপর কথায় কথায় বন্ধুত্ব সেটা ধিরে ধিরে ভালোবাসায় পরে স্বামী স্ত্রী তে কিন্তু মাধবীর উপর একটা অভিমান অনিন্দ বাবুর রয়েই গিয়েছে তার মতে মাধবী কথা রাখেনি সে বলেছিল জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সঙ্গে থাকবে তার কিন্তু আজ পাঁচ বছর হয়েগেল মাধবী তাকে একা করে চলে গিয়েছে।
বৃষ্টি থেমে গিয়েছে অনিন্দ সেটা ফুঝতেই পারেনি হঠাৎ মেয়েটির কন্ঠশ্বরে অতীতের প্রেক্ষাপট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন তিনি বলেন হ্যাঁ কি হয়েছে মা? মেয়েটি বলে কাকাবাবু বৃষ্টি থেমে গিয়েছে। অনিন্দ বলেন ও তাইতো সরি আমি একটু…….. মেয়েটি বলে ইটস ওকে এবার তাহলে আমি চলি অনিন্দ প্রথমে মাথা নেড়ে সন্মতি জানান তারপর মেয়েটি একটু এগোতেই বলেন মা তোমার নামটা কি? মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বলে আমার নাম মাধবী - মাধবী চ্যাটার্জী এই বলে মেয়েটি এগিয়ে যায় পাকা রাস্তার দিকে, অনিন্দ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন মেয়েটির দিকে এবং মনে মনে বলেন এটাও কি সম্ভব…….?
🙏 সমাপ্ত 🙏

