প্রফেসর সাম্য - সাধুবাবা ১
প্রফেসর সাম্য - সাধুবাবা ১
৩রা আগস্ট , ২০১৮
কাল সারারাত প্রায় ঘুম ই হলো না । মাঝে মাঝে কোনো নতুন কাজ পড়লে এরকম হয় ।এবার আমার নতুন কাজ টা বেশ উত্তেজনা পূর্ণ , সময়কে নিয়ে খেলা করার চেষ্টা করছি । কাল যা অঙ্কের যোগবিয়োগ লিখেছি , তাতে মনে হচ্ছে অনেকটাই এগোতে পারবো । সবে ঘুম থেকে উঠে কার্তিক কে এক কাপ চা আনতে বলে খবর এর কাগজ টা তে চোখ বলাচ্ছি , হঠাৎ মোবাইল টা বেজে উঠলো । আজ কাল ফ্রি ইন্টারনেট এর যুগ এ বেশিরভাগ লোক ই সরাসরি ভিডিও কল ই করে নেই । তবে এটা ছিল একটি সাধারণ ফোন কল । অজানা নম্বর দেখে ফোন তা রিসিভ করে হ্যালো বলতেই , ওদিক থেকে ভেসে এলো আমার বন্ধু সাংবাদিক প্রীতম এর গলা । অনেক দিন পর ভীষণ ভালো লাগলো প্রীতম এর গলা শুনে । বললাম কেমন আছিস ভাই , এতো দিন পরে হঠাৎ আমাকে ফোন ? আমার নম্বর জানলি কি করে ? প্রীতম জানালো , তোমার মতো এক জন বৈজ্ঞানিক এর নম্বর জানা খুব বেশি শক্ত কাজ নোই বোধহয় ।তা তুই যে নিজেই ফোন ধরবি ভাবিনি , তা কোনো পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্স রাখিসনি ? বললাম না রে ভাই ফ্রি থাকলে নিজেই ধরি , না হলে আমার ঘরে যে কাজ করে কার্তিক ও ধরে । তা বল হঠাৎ কি মনে করে ? এবার প্রীতম যা বললো , আমার বেশ মজাই লাগলো শুনতে ।
প্রীতম তার সাংবাদিকতার তাগিদে ২ দিন আগে বর্ধমান এর কোনো এক জায়গায় গেছিলো, সে খানে সে এক সাধুবাবা এর সাথে দেখা হয়েছিল ।যে নাকি অদ্ভুত সব জাদু মন্ত্র জানে । গ্রামের অনেক মানুষ উপকার পেয়েছে ।এমন কি অদ্ভুত ভাবে মরে যাওয়া পশুকে ও নাকি বাঁচিয়ে দিয়েছে সে । খুব ই কম সময় এর জন্য তিনি সাধারণ এর সাথে কথা বলেন বাকি সময় তিনি নাকি ধ্যান করেন । মানুষ টাকে দেখার জন্য নাকি খুব ভীড় হচ্ছে । প্রীতম ও সেই ভিড় এর ভাগীদার হতে চাই , তবে আমাকে সঙ্গে নিয়ে ।কারণ তার ধারণা এসব ভ্রান্ত সাধুবাবা দের কারুকার্য ধরতে গেলে এক জন বৈজ্ঞানিক এর চোখ ভীষণ দরকার ।
যাবার মৌখিক অনুমতি দিয়ে প্রীতম এর ফোন তা রাখলাম । এমনিতে এই মুহূর্তে কোথাও যাবার ইচ্ছা বিশেষ ছিল না । কিন্ত প্রীতম এর অনুরোধ আর সাধুবাবার অমুখ টান অগ্র্যায্য করার ক্ষমতা বোধহয় আমার ছিল না । তাই প্রীতম এর কথা মতো কাল কের এ রওনা হবার জন্য তোড়জোড়শুরু করে দিলাম ।
৪ঠা আগস্ট , ২০১৮
আজ শনিবার , বাবাজী নাকি সকাল ৮টা থেকে ভক্তদের সাথে দেখা করেন । তাই ভোর ৪টেই প্রীতম এর গাড়িতে দু জন এ বেরিয়ে পড়লাম ।অন্ততঃ ২ দিন থাকবার মতো জামা কাপড় আর কিছু শুকনো খাবার ছাড়া বিশেষ কিছুই নেবার ছিল না । ওখানে গিয়ে থাকার ব্যবস্থা আদৌ হবে কিনা জানা নেই , গাড়িতেই হয়তো রাত কাটাতে হতে পারে । তাই প্রীতম কে দেখলাম মশা হাত থেকে বাঁচার অনেক সরঞ্জাম নিয়েছে ।সাংবাদিক হওয়ায় এরকম হঠাৎ কোথাও যাবার অভ্যাস ভালোই আছে প্রীতম এর । জিজ্ঞেস করলাম তুই কি জায়গা টা চিনিস ? প্রীতম বললো , না , চলনা জিজ্ঞেস করে নেবো । বেশি জিজ্ঞেস করতে হলো না আমাদের । কারণ লোকের ভিড় দেখে বোঝাই যাচ্ছিলো সবাই কোথায় যাচ্ছে । সকাল ৭টা বেজে ৩০ মিনিট এ পৌঁছে গেলাম সাধুবাবার চালায় ।একটা পড়ো বাড়ির সামনে , ছোট্ট একটি চাতাল এর উপর ঠিক সকাল ৮টাই হাজির হলেন বাবাজি । লোক মুখে তাঁকে সবাই ধন্বন্তরী বাবাজি বলছে । অনেক এর ই বেশ কিছু রোগ নাকি বাবার চন্দ্রমিত্র খেলে সেরে যাই । এছাড়া নানা সমস্যা থেকে খুব সহজে মুক্তি পাওয়া যাই বাবার দর্শন পেলে ।
প্রীতম তার সাংবাদিকতার পরিচয় খাটিয়ে অনেক টাই সামনে চলে এলো । এখানে আসার পর বাবাজি কে খুব সামনে থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম । বাবাজি সারা গায়ে সাদা ছাই মেখে আছেন , মাথায় চন্দন এর দাগ । চোখ দুটো আধা বোজা অবস্থায় ভক্তর কথা শুনছিলেন । যদিও ভক্ত কি বলছে আর বাবাজি ই বা কি উত্তর দিচ্ছেন কিছুই বোঝা যাচ্ছিলো না । বাবার চেলা গুলো ও দারুন ভাবে এতো বিশাল ভক্তের সমাগম কে সামলাচ্ছেন । প্রীতম কে দেখলাম এক চেলার সাথে কি সব কথা বলছে , বুঝলাম ও বাবার সাথে দেখা করার কোনো সুযোগ বার করার চেষ্টা করছে । হঠাৎ ই দেখলাম প্রীতম আমাকে হাত নাড়িয়ে ডাকছে । বললো তোর কাছে 'লাই ডিটেক্টর ' যন্ত্র তা আছে তো ? এটা আমার ই তৈরী করা যন্ত্র , এটা শুধু মাত্র মিথ্যে বলছে সেটার সিগন্যাল দেয়না , তার সাথে সম্ভাব্য সত্যিটা কি সেটার ও একটা অনুভব দেয় ।যন্ত্র টা আজ আমি সাথে করেই এনেছিলাম । বললাম আছে । চেলা টা আমাদের নিয়ে গিয়ে লাইন এর একদম প্রথম দিকে দাঁড় করিয়ে দিলো ।চুপিচুপি জিজ্ঞেস করলাম , ভাই ম্যানেজ করলি কি করে ? প্রীতম বললো , এসব জায়গায় ৫০০ টাকার পাবার লোভ সম্বরণ করার লোক খুব কম আছে । বুঝলাম ৫০০ টাকা দিয়ে চেলা টাকে ম্যানেজ করেছে প্রীতম । বেটার নাম টা ও জেনে নিয়েছি ,বটেশ্বর , সবাই বটে বলে ডাকছে । টাকার লোভ আছে , পরে অনেক খবর জোগাড় করা যাবে এর থেকে । মনে মনে তারিফ করলাম প্রীতম এর বুদ্ধি কে , এর মধ্যেই বেটা এক জন কে কত সহজে চিনে ম্যানেজ করে ফেললো । যাই হোক আমাদের সময় এসে গেলো , বাবার কাছে যাবার । প্রীতম কানে কানে বললো সুযোগ মত 'লাই ডিটেক্টর' মেশিন টা অন করে দিস । মাথা নাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম দু জন এ । সামনে বাবা বসে ছিল , তার চোখের দিকে তাকাতেই কি রকম যেন মন তা ভোরে গেলো । মনে হলো মনে আর কোনো অশান্তি নেই , কেন এসেছি , কি আমাদের উদ্দেশ্য সব কিছু যেন ভুলেই গেলাম । শুধু বাবার কাছে গিয়ে তার পা ধরে প্রণাম করা ছাড়াআর কিছুই যেন মাথায় আসছিলো না । বাবা জিজ্ঞেস করলেন , তোদের কি চাই , জবাব বোকার মতো আমরা শুধু বললাম আপনার দর্শন করতে চাই ভালো করে , আর কিছু চাই না । আমার হাতের দামি ঘড়ি ,আর প্রীতম এর সোনার হার বাবার হাতে দান করে , বাবার দেয়া একটা আপেল হাতে করে নিয়েচাতাল থেকে নিচে নেমে এলাম । নিচে এসে দু জন এ গাড়ির কাছে যেতে যেতে বুঝতে পারলাম , এটা আমরা কি করলাম । দু জন এ একটা ঘোর এর মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলাম । আর যথাসম্ভব অবাক হলাম , এটা কি করে সম্ভব , ওখানে গিয়ে না আমি 'লাই ডিটেক্টর' মেশিন ও করতে পারলাম , না প্রীতম কোনো দরকারি প্রশ্ন করতে পারলো , উল্টে আমার ২৫০০০ টাকার ঘড়ি, আর প্রীতম এর ৬০০০০ টাকার হার দান করে চলে আসলাম । প্রীতম এর দিকে তাকিয়ে বুঝলাম প্রীতম বিশাল রেগে গেছে । বললো , সাম্য, দে তোর সাইন্টিফিক এক্সপ্লানেশন , কেন হলো এটা ? সত্যিই একটু চাপ এ পরে গেলাম | কারণ আমার মাথা তেও এখনো কিছু ঢুকছে না , বললাম প্রীতম চল কোথাও গিয়েএকটু রেস্ট নিই , তারপর ঠান্ডা মাথায় ভাবছি । প্রীতম বললো , ঠিক আছে চল , কিন্তু আমি আমার বিয়ের ৬০০০০ টাকার হার এই ভাবে বোকা বোনে দান করে আসতে পারবো না । বললাম একটু মাথা ঠান্ডা কর , চল একটু কোথাও বসি , তারপর ভাবছি ।
দু জন এ মিলে একটা ছোট ধাবা পেলাম , ওদের কে জিজ্ঞেস করে একটা থাকার জায়গাও পাওয়া গেলো । গাড়িতে রাত কাটাতে হবে না বলে মনে হচ্ছে । ধাবায় বসে রুটি আর ডিমতড়কা খেয়ে মন টা ভোরে গেলো । একটু পেট শান্তি পেতে , ঘর এ গিয়ে বসার পর ই প্রীতম এর প্রশ্ন , বল কি ছিল এটা । এতক্ষন এ আমার কাছেই ও ব্যাপার টা একটু পরিষ্কার হয়েছে ।বললাম সম্মোহন করেছিল আমাদের প্রীতম । এটা একটা সাইন্টিফিক পদ্ধতি , কিন্তু শুধু মাত্র চোখ দিয়ে সম্মোহন সত্যিই অবাক করার মতো । মার্শাল আর্ট এ এরকম এক পদ্ধতি লেখা আছে , কিন্তু সেটা ও প্রশ্নসাপেক্ষ । তুই কি কোনো অন্য রকম গন্ধ পেয়ে ছিলিস ওই চাতাল এর কাছে । প্রীতম বললো আমার মনে পড়ছে না, আমি বললাম একটা ধুনো ধুনো টাইপ এর গন্ধ ছিল বটে , হতে পারে শুধু চোখ নয় ,এই গন্ধ ও কিছু কারিকুরি করে থাকতে পারে । প্রীতম বলে উঠলো , ঠিক বলেছিস , সম্মোহন করেছিল আমাদের কে । ছাড়বো না আমি বেটা দের কে । চল এখুনি যাই । বললাম দাঁড়া এসব বাবাদের ধরতে গেলে উপযুক্ত প্রমান লাগবে । তাড়াহুড়ো করিস না । বললাম বাবা কে আজ কের কি আর পাওয়া যাবে ? প্রীতম বললো , আজ কের বিকাল ৪ টেই আবার বসবে , তবে ১ ঘন্টার জন্য । মোবাইল এ দেখলাম দুপুর ১ টা , মানে হাতে ৩ ঘন্টা আছে , যা করার এর মধ্যেই করতে হবে । বললাম প্রীতম তুই একটা কাজ কর একজন গ্রাম এর লোক জোগাড় কর যে বাবার কাছে যাবে আর আমাদের সাজানো কিছু প্রশ্ন বাবাকে করবে । ৩টা ৩০ মিনিট নাগাদ আবার দেখা হচ্ছে, ততক্ষন আমাকে একটু একা ছেড়ে দে এই ঘরে । প্রীতম ঘাড় নাড়িয়ে বেরিয়ে গেলো । এবার আমি বসলাম , বাবার এই সম্মোহন এর থেকে বাঁচার উপায় বার করতে । একটা জিনিস দেখছিলাম , বাবার কাছে যাবার আগে যাদের চশমা আছে খুলে যেতে বলছিলো , যুক্তি দিচ্ছিলো ভগবান কে খালি চোখে দেখায় উচিৎ । সাথে সাথে মাথায় বুদ্ধি এসে গেলো , চশমা খুলতে বলছে , কিন্ত চোখ এ লেন্স লাগিয়ে গেলে তো বোঝার কথা নয় । বেশ আর কিছু না ভেবে , নিজের কাছে যা জিনিস ছিল , তা দিয়ে একটা লেন্স বানানোর কাজে লেগে পড়লাম ।একটা কাজ চালানোর মতো লেন্স রেডি করতে ১ ঘন্টা মতো লেগে গেলো । নিজের চোখে পরে দেখলাম এক দম সাধারণ এর মতোই দেখা যাচ্ছে । এবার ফোন করলাম প্রীতম কে , বললাম এমন কাউকে জোগাড় করতে যার চশমা নেই , কারণ চশমা থাকা কোনো লোক এই লেন্স তা পড়লে খারাপ কিছু হতে পারে । কিছুক্ষন এর মধ্যেই প্রীতম হাজির হয়ে গেলো এক জন কে নিয়ে ,তাকে বললাম এই লেন্স তা পড়তে ,সে আনন্দের সাথেই পরে নিলো । এর পর আমরা আবার বাবার চাতাল এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । প্রীতম কিছু সাধারণ প্রশ্ন তৈরী রেখেছিলো । বাবার চাতাল এ যাবার পর , আবার সেই চেলা তাকে ধরে প্রীতম এগিয়ে দিলো ছেলে টিকে , ছেলে টা বেশ চালাক চতুর আছে মনে হলো , ওর হাতে 'লাই ডিটেক্টর' মেশিন টা দিতে ভালো করেই বুঝে নিলো , কোথায়রাখবে আর কি ভাবে । মেশিন ও করেই ছেলে টিকে পাঠালাম । কিছুক্ষন এর মধ্যে ছেলে টি ফিরে এলো , না সে সম্মোহন হয়নি , ফলে প্রশ্ন গুলো সব ই করতে পেরেছে । কিন্ত বাবার বুদ্ধিমত্তার উত্তর এর কাছে আমার মেশিন টি হার মেনেছে । প্রশ্ন ছিল , বাবা ভগবান কি , আপনাকেই কি ভগবান মানতে পারি ? উত্তর : ভগবান হলো সেই যাকে দেখা যাই না উপলব্ধি করা যাই । তাই আমি ভগবান কিনা সেটা বুঝতে পারবে , যখন আমি তোমার সামনে থাকবো না । প্রশ্ন ছিল , গ্রামের এতো বাড়ি থাকতে এই বাড়িটা কেন আপনি থাকছেন ? উত্তর , ভগবান এর কাছে কোনো বাসস্থান ই থাকার জন্য নয় ।এখানে আমি সাধনা করছি বাছা । প্রশ্ন : বাবা এই পড়ো বাড়ির এক জন মালিক এসেছে গ্রাম এ , সে আপনার সাথে দেখা করতে চাই । উত্তর: একটু চুপ থেকে , বোলো দেখা করতে , এনাউ তোমার প্রসাদ নাও ।
এই কথোপকথন , এর মধ্যে আমার মেশিন কিছুই মিথ্যা খুঁজে পাইনি । কারণ প্রত্যেকটা উত্তর ভীষণ রকম সার্বজনীন , তাই সে গুলো সব সময় ই সত্যি । প্রীতম একটু মুষড়ে পড়েছে দেখে বললাম , দেখ এই বাবা যদি ঠিকঠাক না হয় ,এই ছেলেটির বিপদ আছে , তাই এই ছেলে টিকে ওর মতো যেতে দে , আমরা বরং ওকে ফলো করি , আশা করছি সমাধান মিলবে । বেশিক্ষন ফলো করতে হলো না , একটু গ্রাম এর ভিতরে ঢুকতেই , বাবার এক চেলা কে দেখতে পেলাম ছেলে টিকে ধরতে । কিছু কথোপকথন এর পর ছেড়ে দিলো ছেলে টিকে । চেলা তা চলে গেলে , ছেলে টিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম , কি বলছিলো ? ও আমাদের কে দেখে একটু চমকে গেলো , বললো আপনারা পালিয়ে যান, এই লোক গুলো খুব একটা ভালো নয় ।ওর কাছে আমাদের কথা জেনে গেছে , আর খুব দ্রুত তারা আমাদের কে খুঁজতে আসবে । সব শুনে প্রীতম বললো , কি করবো সাম্য , বললাম ব্যাপার টা যতটা সাধারণ ভেবেছিলাম ঠিক ততটা নয় । প্রীতম বললো , আমরা পুলিশ এর সাহায্য নিতে পারিনা ? বললাম , কিন্ত কোনো প্রমান ছাড়া শুধু মাত্র সন্দেহের বশে পুলিশ কে বলা ঠিক হবে না । প্রীতম রাগত স্বরে বললো , তাহলে কি ফিরে যাবো? বললাম হোটেল এ যাই চল , প্রীতম বললো না চল ওই পড়ো বাড়িতে বাবার আড্ডাখানায় আবার যাই, প্রমান নিশ্চয় পাবো । পকেট হাত দিয়ে দেখলাম বন্দুক টা আছে । আর সম্পূর্ণ হেরে চলে যেতে আমার ও মন চাইছিলো না , অন্তত আমার ঘড়িটা ওই ভাবে খোয়া যাবার পর । বললাম চল , দেখি কি পাওয়া যাই । দু জন এ মাইল চুপি চুপি চলে গেলাম ওই পর বাড়ির কাছে । বাইরে থেকে বোঝা না গেলে ও খুব ভালো করে লক্ষ করলে বোঝা যাচ্ছে ভিতরে একটা ক্ষীণ আলো জ্বলছে । সেই আলো কে লক্ষ করে আমরা এগোতে শুরু করলাম । কিছুদূর যাবার পর বুঝলাম কিছু একটা বড়োসড়ো কাজ চলছে এই বাড়ির মধ্যে । একটা ছোট টিলার আড়াল থেকে আমরা দেখতে লাগলাম । ভেতরে অনেক লোক , একটা গর্ত থেকে কিছু তোলাতে ভীষণ ব্যস্ত । বস্তায় ভোরে সেই জিনিস গুলো উপরে নিয়ে আসছে । প্রীতম ভীষণ উৎসাহ পেয়ে গেলো, বললো চল আর একটু এগিয়ে যাই, এমন সময় পিছন থেকে কেউ বললো কে এখানে ? প্রীতম কিছু না ভেবে ঘুরে গিয়ে এক লাথি মারলো, কিন্ত তাতে সামনের মানুষ তা খুব জোরে পরে গেলো । কিন্ত হঠাৎ উঠে এসে প্রীতম কে মারতে যাবে , আমি আমার বন্দুক তা চালিয়ে দিলাম । স্ট্যাচু হয়ে গেলো অটো বড় মানুষ টা । প্রীতম বললো কতক্ষন এ ভাবে থাকবে ? বললাম ২ ঘন্টা মত । চল তাহলে এগোনো যাক , ভালো কিছু ফুটেজ পাওয়া ভীষণ জরুরী । ২ জন এ মাইল এগিয়ে গেলাম । দেখলাম দরজার কাছে আরো ২ জন দাঁড়িয়ে , তাই জানলা দিয়ে টপকানোর পরিকল্পনা করলাম । জানলা টোপকেই বুঝতে পারলাম , এই বিশাল গর্তের মধ্যে থেকে যে গুলো উদ্ধার হচ্ছে, সে গুলো আর কিছুই নয় ,গুপ্তধন , প্রচুর সোনা আর দামি জিনিস বস্তা ভর্তি করে তুলেই যাচ্ছে কিছু শ্রমিক । ক্যামেরা তে চাবি তোলার জন্য একটু বেশি ঝুঁকতে গেলো প্রীতম , বললাম সাবধান প্রীতম । কিন্ত হঠাৎ পিছন থেকে কেউ ডাকতেই প্রীতম নিজের ব্যালান্স হারিয়ে ফেললো । আর ক্যামেরা সমেত পরে গেলো বাড়ির মধ্যে । পিছন এর লোক টি ও খুব শক্ত করে আমাকে ধরে ফেললো । প্রীতম কে বাঁচাতে গেলে এই লোক টির হাত থেকে বাঁচতে হবে ।
উপায় হিসাবে দেন হাত দিয়ে ধরা একটা বড় থান ইঁট দিয়ে লোক তাকে মারলাম , লোক একটু হতচকিত হয়ে আমার বাঁ হাত টা ছেড়ে দিতেই , বন্দুক টা বার করেই চালিয়ে দিলাম, স্ট্যাচু হয়েগেলো লোক টা । এবার নিচের দিকে তাকালাম , দেখলাম প্রীতম কে অনেক লোক ঘিরে ধরেছে , একটু মারধর ও করছে । কিন্ত এই মুহূর্তে প্রীতম কে বাঁচাতে যাওয়া বেশ বোকামি, তা ও দেখলাম বন্দুক এ মাত্র ২ তো গুলি আছে , আর এতো গুলো লোক এর সাথে পেরে ওঠা কোনো মোটেই যাবে না । দেখতে লাগলাম ওরা প্রীতম কে নিয়ে কি করে , এমন সময় ওদের দলের এক জন আমাকে দেখতে পেয়ে গেলো, তারা হঠাৎ এ বন্দুক বার করে গুলি ছুঁড়লো আমাকে লক্ষ করে । উপায় না দেখে ছুতে পালাতে গেলাম আমি , একটা পাথর এর মতো কিছু আমার পিঠে এসে খুব জোরে লাগলো , পরে গেলাম মাচ থুবড়ে ,যাহোক করে উঠে দৌড়োতে থাকলাম , হঠাৎ সামনে এক জন কে দেখতে পেলাম । বন্দুক তা বার করে গুলি চালিয়ে ছি তার এ মধ্যে খুব জোর একটা লাঠি লাগলো হাতে , কিন্ত গুলি টা লেগে যাওয়ায়সে তৎক্ষণাৎ স্ট্যাচু হয়ে গেলো। বন্দুক তা তুলে নিলাম বটে , কিন্তু পিছন থেকে যে অনেক লোক আসছে সেটা বেশ ভালোই বুজতে পারছিলাম । আর হাঁটু তে এই ব্যাথা নিয়েবেশি দূর পালানো যে সম্ভব নয় ভালোই বুঝতে পারছিলাম । সামনে একটা সবেদা গাছ দেখতে পেলাম , তাই ছোট বেলার শেখা বিদ্যা কে কাজে লাগিয়ে ,উঠে পড়লাম ওই গাছে । একটু অসুবিধা হলে ও ঠিকঠাক ম্যানেজ করে নিতে পারলাম । একটা উপর এর ডালে উঠে যাহোক করে পাতা দিয়ে নিজেকে ভালো করে ঢেকে বসে রইলাম । নিচে শয়তানএ রা পাগল এর মতো খুঁজছে আমাকে , বন্দুক এ একটি মাত্রা গুলি , আর বন্ধু প্রীতম এখন বেঁচে আছে কিনা তা ও জানা নেই । এরকম পরিস্তিতিতে যে সত্যি কখনো পড়বো এখানে আসার আগে ভাবিইনি । এখান থেকে বাঁচার উপায় কি, বা আদৌ কোনো উপায় আছে কিনা , ভাবতে ভাবতেই কখন যেন চোখ লেগে গেলো । মনে হচ্ছে যেন মৃত্যুর অতল জলে ডুবে যাচ্ছি আমি , খুব মনে পড়ছিলো বাবা, মার কথা । জানিনা আর কখনো ফিরতে পারবো কিনা , আমার ওই গবেষণাগার এ , যেখানে লিখে রাখা আছে আমার শেষ অঙ্ক , সময় পরিবর্তনের ।