Sutanu Sinha

Drama

3  

Sutanu Sinha

Drama

প্রফেসর সাম্য - দুর্গাপুজো

প্রফেসর সাম্য - দুর্গাপুজো

27 mins
18.6K


২৬ সেপ্টেম্বর , ২০১৭ , সন্ধ্যা ৬ টা

আজ মহাষষ্ঠী । বাড়ির পুজোর মজা কোনো দিন ছাড়তে পারিনা বলে বিশ্বের যেখানেই থাকি এই কটা দিন ঠিক বাড়িতে চলে আসি । সবে সবে বিজ্ঞানী হিসাবে একটু কদর পেতে শুরু করেছি । এই এক মাস আগে একটা সাইন্টিফিক এক্সিবিশন এ আমেরিকা গেছিলাম আমার কিছু গবেষণার প্রেজেন্টেশন করতে । একটা মাস ডায়েরি লেখার টাইম ই পাইনি । প্রেজেন্টেশন টা রেডি করতে খুব সমস্যায় পড়েছিলাম, এরকম বড় জায়গায় প্রেজেন্টেশন আগে কখনো করা হয়নি । তবে এক্সিবিশন টীম টা দারুন হেলপ করেছিল । না হলে দাঁড় করাতে পারতাম না । যাই হোক সবাই খুব মন দিয়ে শুনেছে আর দারুন appriciate করেছে । মিস্টার স্কট যিনি হিউমান সাইকোলজি র এক জন বড় প্রফেসর এবং এক জন জুনিয়র বিজ্ঞানী কি যেন নাম ছিল সম্ভবত রায়ান আমার সাথে আলাদা করে কথা বলে গেলো । আমার রিসার্চের টপিক টা নাকি ওদের খুব ভালো লেগেছে । আমি কি ভাবে হিউমান সাইন্স নিয়ে এতো ভাবতে শুরু করলাম, কেমন করে ইন্ডিয়াতে থেকে আমি এই গবেষণায় এতো দূর এগোতে পারলাম ইত্যাদি ইত্যাদি । অনেক কিছু নোট ও করলো দেখলাম । এর মধ্যে মিস্টার স্কট কে আমার দারুন লাগলো । ওনার সাথে কথা বলে আমার দরকারি অনেক কিছু ইনফরমেশন পেলাম । থ্যাংক ইউ বলে সবে যখন তিনি বিদায় নিচ্ছিলেন তখনই তাকে আমি জানালাম আমাদের এখন কার দুর্গাপুজো আর আমার গ্রামের বাড়ির পুজোর কথা । শুনে দেখলাম উনি খুব এক্সসাইটেড হয়ে পড়লেন।বিভিন্ন ভাষায় দক্ষ মিস্টার স্কট আমার কাছে বাংলা ভাষা শেখার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন এবং আমার গবেষণাগার দেখতে চাইলেন । আশা করছি উনি সপ্তমী তেই চলে আসবেন । ফোন এ জানালেন ওনার সাথে এক জন জুনিয়রও আসছেন । মিস্টার স্কট এর জন্ম জার্মানিতে, কিন্তু বড় হয়েছেন আমেরিকা তে । প্রচুর কিছু পড়াশোনা করেছেন ,বিশ্বের ১০ টি ভাষায় তিনি রীতিমতো দক্ষ । এখন হিউমান সাইকোলজি উপর গবেষণা করছেন । যা আমার ও গবেষণার বিষয়বস্তূর সাথে বেশ কিছুটা মেলে । উনি মানুষ এর মন এর গুরুহ তত্ত্ব বেশি করে বোঝার চেষ্টা করেন । আর আমি মানুষ এর মন এর দুর্বলতা কে ব্যবহার করে একটি বন্দুক আবিষ্কার করার প্ল্যান এ আছি । আমার এই বন্দুক দিয়ে ৩০মিটার এর মধ্যে থাকা যে কেন মানুষ বা জীব কে ১০ মিনিট এর জন্য স্ট্যাচু করে দেয়া যাবে । ইতিমধ্যে অনেকটাই সফলতা পেয়েছি । তবে এখনো অনেক গবেষণা বাকি আছে । আর এটাই সফলতা পাবার জন্য আমার মিস্টার স্কট এর সাহায্য লাগতেই পারে । কারণ মানুষ এর মন কে ওনার মতো ভালো আর কেউ চেনে না ।

ঢাক বাজা শুরু হয়ে গেছে, মহাষষ্ঠীর বিকালেই বরাবর এর মতো ঢাকি দের আবির্ভাব হয় । আর এই ঢাক আর আওয়াজ শুনলে ছোটবেলার মতো আজ ও মন টা কেমন উথাল পাতাল করে । মনে হয় যেন সব ভুলে গিয়ে শুধু মা এর আরাধনায় মেতে উঠি । যদিও আমি এক জন বিজ্ঞানী , যার প্রধান কাজ হচ্ছে সব কিছু যুক্তি তর্ক দিয়ে বিচার করা । কিন্তু এই দূর্গা পুজো কে আমি এই ভাবে ভাবতেই পারিনা । এটা আমার এতো ছোট বেলার সেন্টিমেন্ট যাকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই । তাই সব যুক্তি তর্ক এই দূর্গা পুজোর সময় বাইরে রেখে আসি আর পুজোর আনন্দে প্রতিবার ছোট বেলার মতো মেতে উঠি । নিচে যাই দেখি মা এর বোধন শেষ হয়ে গেলো কিনা ।

২৭ সেপ্টেম্বর , ২০১৭, সন্ধ্যা ৬:৩০

আজ মহাসপ্তমী । সকাল টা সত্যিই খুব ভালো শুরু হয়েছিল । কলাবৌ স্নান , মা দূর্গা কে দেয়া প্রথম অঞ্জলি , ছোট দের উত্তাল নাচ বাজনার তালে তালে , বড়দের পুজোর নিয়ম ঠিক ঠাক ভাবে মেনে চলার নির্দেশ । সব কিছু মিলে মন টা যেন সম্পূর্ণ অন্যরকম হয়ে যায় ।সব কিছু ভুলে যেন মনে হতে থাকে পুজোটা যেন শেষ না হয় ।চলতেই থাকুক অনেক দিন ধরে ।

সকালে অঞ্জলি শেষ হলে সবাই মিলে খাবার খাবার আনন্দ ই আলাদা । এই টাইম এ মুড়িচপ থেকে লুচি আলুরদম সব ই অমৃত লাগে । যাই হোক লুচি আলুরদম হাতে নিয়ে ভাইদের সাথে আড্ডা মারছি , হঠাৎ জেঠিমা এসে বলে গেলো গ্রামের কেউ এসেছে তার ছেলে কে নিয়ে আমার সাথে দেখা করতে । জেঠিমা ই সবসময় এই গ্রামের বাড়িতেই থাকে । আমরা শুধু পুজোর সময় ই আসি । তাই জেঠিমা র সাথে গ্রামের লোকে র সম্পর্ক অনেক ভালো । পাঠিয়ে দিতে বলে ভাই দের নতুন তৈরি করা ব্যান্ড এর গান শুনতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম।গান গুলো বেশ বানিয়েছে ,রবীন্দ্রসংগীত কে বিভিন্ন সুরে প্রতিস্থাপন করছিলো । শুনতে বেশ ভালো লাগছিলো পুরোনো গান নতুন সুরে । এমন সময় দেখলাম আমার ছর্দা ই লোক টিকে নিয়ে এলো । বললো শ্যাম , ছর্দা ছোটবেলা থেকে আমাকে এই নাম ই ডাকে, দেখতো এই ছেলেটির সমস্যা টা ভারী অদ্ভুত । ছর্দা কথা সবসময় ই সব কাজ ফেলে শোনা আমার ছোট বেলার অভ্যেস । তাই ভাই দের গান চালিয়ে যেতে বলে আমি বেরিয়ে এলাম ।

লোক টি আমাকে দেখেই বললেন ডাক্তার বাবু বাঁচান আমার ছেলে কে । আমি অনেক বার বুঝিয়েছি গ্রাম র সবাইকে যে আমি ডাক্তার বাবু নয় । আমি বিজ্ঞান এর সাধক । কিন্তু এসব গুরুহ কথা বোঝার চেষ্টা তারা করেনা । আমার কিছু এক্সপেরিমেন্টাল টোটকা কাজ করে যাওয়ায় তারা আমাকে ডাক্তার ই মনে করে । যাই হোক লোক টির সম্বধন শুনে বিরক্ত হলে ও , কিছু বললাম না । লোক টির সব কথা শুনে যা বুঝলাম , ওর ছেলে নাকি ভবিষ্যত দেখতে পাই । মানে অনেক বার নাকি বৃষ্টি আসবে কি আসবে না , চাষের ফলন কেমন হবে, এরকম অনেক দরকারি কিন্তু সাধারণ জিনিস মিলিয়ে দিয়েছিলো ।সবাই ব্যাপার টাকে কখনোই সে ভাবে গুরুত্ব দিতো না । কয়েকদিন আগে সে নাকি সবাই কে অনুরোধ করেছিল ধানের গোলায় ধান না রাখতে । বলেছিলো বিপদ আছে । কিন্তু কেউ তার কথা শোনেনি ।দু দিন আগের রাতে সেই ধানের গোলায় হঠাৎ ই আগুন লেগে যাই । সবাই এর পর থেকে নাকি তার ছেলে কে বেশ ভয় পেতে শুরু করেছে । গ্রাম র ছেলে রা সবাই তাকে এড়িয়ে চলছে । তার ছেলে ও আগের থেকে ভীষণ চুপ চাপ হয়ে গেছে । বেশি কথা বলছে না , যেটুকু বলছে খুব বড় বিপদ আসছে তাদের বাড়ির উপর ।

সব শুনে মনে হলো এটা একটা গ্রাম্য সমস্যা, ছোট খাটো ব্যাপার কে অস্বাভাবিক দেখিয়ে ভুতুড়ে ঘটনা বানাতে এদের জুড়ি মেলা ভার । গম্ভীর হয়ে বললাম ছেলে কে বলুন এসব না ভেবে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে । এবার দেখলাম ছর্দা বললো, "তুই এক বার ছেলে টার সাথে দেখা কর । এখানকার গ্রাম এর মোড়ল, ছেলে টাকে দোষী করেছে রে , বলেছে ও ই নাকি গোলাতে আগুন লাগিয়েছে । " আমি বললাম, "ভোলা দা তুমি গিয়ে বলো তোমার ছেলে অসুস্থ , সে এই কাজ করতে পারবে না । ", ভোলা দা বললো , "বলেছিলাম ডাক্তার বাবু কিন্তু গ্রাম এর কেউ মানতেই চাইছে না । আমাদের একেবারে এক ঘরে করে দিয়েছো গো । আপনি যদি কিছু করতে পারেন । ", বললাম , ছেলে টি কোথায় ?,ছর্দা বললো , তোর ঘরে বসিয়েছি ,দেখা করে আই । আমার কিছু হেল্প লাগলে বলিস । ছর্দার কথায় মাথা নাড়িয়ে নিজের ঘরে গেলাম ।

আমার ঘর দোতলায় ।আমার ঘর মানে বাবার ঘর আর কি । বাবা দের জেনারেশন এই বিভাজন টা হয়েছিল ।সারাবছর ঘর টা চাবি দেয়া থাকে । শুধু পুজোর সময় এসে খোলা হয় ।বাবা মা রা কদিন আগে চলে আসে পরিষ্কার করে রাখে । আমি বা দিদিরা সাধারণত পুজোর দিন ই হাজির হই । ভেতরে ঢুকে দেখলাম ছেলে টি আমার টেবিল এ বসে আছে । ঘরে আসবাব বিশেষ কিছু নেই , একটা বেড আর একটা টেবিল চেয়ার ।ছেলেটা টেবিল এ বসে থাকায় আমাকে বেড এই বসতে হলো ।

ছেলে টাকে বেশ মিষ্টি দেখতে । ভীষণ রকম এর চুপ চাপ মনে হচ্ছে । খুব বেশি হলে ১০ থেকে ১২ বছর এর হবে । এটুকু বয়স এই বেচারা এতো বড় সমস্যায় পরে গেছে । সত্যি খুব খারাপ লাগছে দেখে । জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি ? বললো পলাশ । পড়াশোনা করো? গ্রাম এর দিকে কোন ক্লাস এ পড়ো জিজ্ঞেস করার আগে পড়াশোনা করে কিনা জিগ্যেস করে নিতে হয় । বললো হ্যাঁ স্কুল এ পড়ি । কোন ক্লাস ? বললো ক্লাস ৫ । কি পড়তে ভালো লাগে ? এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে, ও হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো আছা আপনি কি ডাক্তার বাবু ? আমাকে ঠিক করে দিন না । আমার বাবা মা খুব কষ্ট পাচ্ছে আমার জন্য । আমার একটু হাসি পেলো ওর কথা শুনে । বললাম , প্রথম কথা আমি ডাক্তার নয় ,স্কুল এ তুমি যে বিজ্ঞান পড়ো আমি তার উপর কিছু গবেষণা করি । আর দ্বিতীয় কথা তোমার সেরে ওঠা পুরোপুরি তোমার উপর নির্ভর করছে । আমি ঠিক যেমন টি বলছি সেরকম টি করো , কেমন ? ছেলে টি মনে হয় একটু খুশি হলো আমার কথা শুনে , ঘর নেড়ে বললো ঠিক আছে ।

এখন আমি তোমাকে কিছু প্রশ্ন করছি সঠিক উত্তর দিয়ো ।ছেলে টি ঘাড় নাড়ালো ।

তুমি কি করে বুঝলে ধানের গোলায় আগুন লাগতে পারে ?

আমি একটা গন্ধ পাই, যেটা পাবার পর মনে হয় কিছু ঘটতে চলেছে । গন্ধ টা শুঁকলে মনে হলো যেন এখানে আগুন লাগতে পারে ।

কি রকম গন্ধ ?

জানিনা অনেকটা তেল এর গন্ধ ।

তুমি এই গন্ধ টা পাবার কতদিন পর আগুন লেগেছিলো ?

সেই দিন রাতেই । এক মাত্র আমার পরিবার ই গোলায় সেদিন ধান রাখেনি তাই তো ওদের এতো রাগ স্যার ।

কোনো গ্রাম এর ছেলে স্যার সম্বন্ধন করতে জানে দেখে বেশ ভালো লাগলো ।

বললাম , এখন তোমার কি কিছু মনে হচ্ছে?

এখন খুব কষ্ট লাগছে স্যার , আমার গোটা পরিবার আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে ।

হুম বুঝলাম । ঠিক আছে কাল কের এখানে পুষ্পাঞ্জলি দিতে আসবি । তোর সাথে ওই গোলাটাই যাব । তারপর দেখছি কি করা যাই । একদম মন খারাপ করিস না । তোর বাড়ির সবাই খুব টেনশন করছে ।

ছেলে টি ঘাড় নাড়িয়ে চলে গেলো ।

ছেলে টি চলে যাবার পর অনেক্ষন চুপ চাপ বসে রইলাম । সব কিছুই খুব অদ্ভুত লাগছে । মনে মনে প্রশ্ন গুলো সাজিয়ে নিলাম ,রাতে বসে আরো ভালো করে ভাববো বলে ।

প্রশ্ন ১ : ছেলেটির এই অদ্ভুত ক্ষমতার রহস্য কি ? এটা সত্যি কোনো অস্বাভাবিক ক্ষমতা নাকি পরিস্তিতির সাথে মিলে যাচ্ছে ।

প্রশ্ন ২ : ধানের গোলায় আগুন লাগলো কি করে ?

প্রশ্ন ৩ : গ্রামের মোড়ল দের বোঝাবো কি করে ছেলে টির বা ওর পরিবার র কোনো দোষ নেই ।

সবে উঠতে যাবো আমার ফোন টা বেজে উঠলো, মিস্টার স্কট এয়ারপোর্ট এ এসে গেছেন , ড্রাইভার র হাতেই আমি একটা মোবাইল দিয়ে দিয়েছিলাম । যাই হোক মিস্টার স্কট কে ওয়েলকাম জানিয়ে দ্রুত চলে আস্তে বললাম ।

২৮ সেপ্টেম্বর , ২০১৭ , সন্ধ্যা ৭ টা

মিস্টার স্কট যখন এসে পৌঁছলেন সন্ধ্যা আরতি শেষ । তাই পুজোর আসল রেশ কিছুই দেখাতে পারলাম না । বললাম কাল অষ্টমীর পুজো অনেক ভালো কিছু দেখতে পারবে ।

মিস্টার স্কট এর সাথে এক জন জুনিয়রও এসেছেন । ওদের জন্য আমি একটু অন্য রকম খাবার ব্যবস্থা ও রেখেছিলাম , কিন্তু ওনারা দেখলাম বাঙালি খাবার এ খেতে চাইলো । বললো এই কদিন কোনো রেস্ট্রিকশন এই ওরা থাকবে না । শরীর যাই খারাপ হোক দেশে ফিরে দেখা যাবে । ট্যাংরা , পার্শে আর চিংড়ির চপ দিয়ে ভোজন সম্পন্ন করে রাতে যখন এক সাথে বসতে পারলাম তখন প্রায় রাত ১১ টা । বার বার জিজ্ঞেস করছিলাম কিছু পেট রিলেটেড অসুবিধা হচ্ছে কিনা । উনি বার বার এ বলছিলেন অত টেনশন করার কিছু নেই , কারণ তার নাকি খুব খারাপ খাবার খেয়ে থাকার অভ্যেস আছে । আর এতো টেস্টি খাবার খেলে নাকি কোনো সমস্যাই হবার কথা নয় ,কারণ নাকি এতে অসম্ভব মানুষিক শান্তি মেলে । যাই হোক প্রায় সব রকম এর ওষুধ ই আমি আনিয়ে রেখেছিলাম,যদি কোনো অসুবিধা হয় তাহলে যেন দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নেয়া যাই।

এরপর মিস্টার স্কট কে এবং তার সহকারী কে সকাল এর ছেলে টার কথা সব খুলে বললাম । মিস্টার স্কট দেখলাম খুব মন দিয়ে শুনলেন । আমি সব কথা বলার পর তার কাছে এক্সপার্ট কমেন্ট কিছু জানতে চাইলাম । তিনি ইংলিশ ও আমার কাছেই শেখা ছোট ছোট কিছু বাঙ্গালী মিশিয়ে যা বললো , তার মানে দাঁড়ালো এই যে , ছেলে টির যা করেছে সেটা নাকি অস্বাভিক কিছু নয় ,অনেক এর নাকি এরকম প্রখর কিছু ঘ্রান শক্তি থাকে । তবে সাধারণত আমাদের শরীরের পঞ্চদ্রিয়ে কোনো একটি কমজোর হলে অন্য টার শক্তি খুব বেশি হয় । যেমন অন্ধ যারা হয় তাদের ঘ্রান এবং স্পর্শ শক্তি খুব বেশি । ছেলেটির ক্ষেত্রে এরকম কিছু ঘটে থাকবে । সেই অসম্ভব ভালো ঘ্রান শক্তি র সাথে অনুধাবন শক্তি মিশে গিয়ে এরকম পারফেক্ট প্রেডিকশন পসিবল হচ্ছে বলে তার বিশ্বাস । কিন্তু গোলা র আগুন এর সাথে ছেলে টির ঘ্রান শক্তির কি সম্পর্ক সে বিষয়ে খুব একটা আলোকপাত করতে পারলেন না ।

যাই হোক এই আলোচনার পর একটা প্রশ্ন কিছুটা হলে ও পরিষ্কার হলো , ছেলেটির আচরণ খুব একটা অস্বাভাবিক নয় ।এই ভেবেই সপ্তমীর রাতে শুতে গেলাম ।

অষ্টমী দিন সকাল থেকেই বাড়ির সবাই খুব ব্যাস্ত হয়ে পরে । অষ্টমীর পুজোয় মা দুর্গার আসল পুজো । সারাদিন পুজোর অনেক আচার আচরণ থাকে । বাড়ির সবাই খুব আনন্দের সাথে সব কিছু ম্যানেজ করে নেই । আমাদের ঠাকুর মশাই ও তাদের ৩ টি জেনারেশন ধরে আমাদের বাড়ির পুজো করছে । শেষ কয়েক বছর শুধু ঢাকি কে যা নতুন নেয়া হয়েছে ।বাকি সব এ এক এ থাকে । অষ্টমীর সকাল আর সন্ধি পুজোর পুষ্পাঞ্জলি বাড়ির সবার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল । আমরা সবাই ই এটা মেনে চলতে অভস্ত্য ছিলাম ।

সব থেকে ভালো লাগছিলো মিস্টার স্কট এর ব্যস্ততা দেখে । সব কাজ এতো তাড়াতাড়ি শিখে নিয়ে নিজে এগিয়ে এসে করছিলো, দেখতে সত্যি ভীষণ ভালো লাগছিলো । তার সাথে আসা সহকারী টি ও নিজে দারুন খুশি , আনন্দের সাথে সব কাজ বুঝতে ও করতে শুরু করলো । বাড়ির লোকেদের শুধু মাত্র ভাষার ব্যবধান ছাড়া বিশেষ কিছু অসুবিধা হচ্ছিলো না ওদের সাথে মিশতে । ওদের কে যখন জানালাম সন্ধি পুজোর ১০৮ টি পদ্ম আর ১০৮ টি প্রদীপ এর কথা, ওরা ভীষণ আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করতে থাকলো সেই সময়টুকুর ।

অষ্টমীর সকাল এর অঞ্জলি দিতে দিতেই ছেলে টিকে তার বাবা মা র সাথে দেখতে পেলাম , এক রকম অদ্ভুত ভাবেই তারা বেশ অনেক টা দূরত্ব রেখেই গ্রামের অন্য সবাই এর থেকে আলাদা বসেছে । বুঝতে পারলাম গ্রাম র মোড়লর হুকুম কে অগ্রাহ্য করতে এরা পারবে না । আমাদের পরিবার কে শুধু মোড়ল ভদ্রলোক রা বিশেষ কিছু বলে না । আমরা যেহুতু পুজোর পরে কেউ থাকি না তাই হয়তো অত গুরুত্ব দেয়না আমাদের সাথে কথা বলা কে । যাই হোক পুষ্পাঞ্জলি হয়ে যাবার পর ছেলে টিকে ডেকে নিলাম সকাল এর খাবার জন্য । ভোলা দা কে ও ডেকে নিলাম । এদিকে আজ পুস্পাঞ্জলির সময় একটা দারুন মজার ব্যাপার হয়েছে ,মিস্টার স্কট এবং তার সহকারী দু জন এই সংস্কৃত মন্ত্র উচ্চারণ করতে গিয়ে বেশ অসুবিধাই পড়ছিলেন ।ঠাকুরমশাই মানে রাজু দা কে অনেক বার এ থেমে থেমে গিয়ে আস্তে আস্তে বলতে হয়েছে ।সেটা নিয়ে বাড়ির সবাই এর মধ্যে বেশ সুন্দর একটা হাসির রোল উঠেছিল । সবাই এ খুব এনজয় করেছে ব্যাপার টা ।

যাই হোক সকাল এর জল খাবার খেয়ে আমরা , মানে আমি, মিস্টার স্কট, তাঁর সহকারী , আর পলাশ বেরিয়ে পড়লাম ওই ধানের গোলার উদ্দেশে । পলাশ এর বাবা মানে ভোলা যেতে চাইলো না , তার মতে এই অভিশপ্ত জায়গায় সে আবার যাবে না । যাবার আগে মনে করে আমার প্রয়োজনীয় অস্ত্র গুলো সাথে নিয়ে নিলাম । আমার প্রয়োজনীয় অস্ত্র বলতে আমার ৩ টি আবিষ্কার । কোথাও কোনো অভিযান এ গেলে এই ৩ টি জিনিস আমার সাথে রাখি ।

১) আমার আবিষ্কার করা বন্দুক - এটা ম্যাক্সিমাম ৪০ মিটার এর মধ্যে থাকা যে কোনো মানুষ কে স্ট্যাচু করে দিতে পারে ১০ মিনিট এর জন্য । খুব বিপদ এ না পড়লে এটা ব্যবহার করি না ।

সমস্যা - মাঝে মাঝে বন্দুক টা আবার ৩০ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কিছুর উপর ও কাজ করতে পারে না । আবার মাঝে মাঝে ৫০ মিটার অব্দি কাজ করে । তাই একটা অ্যাভারেজ ধরে চলি ৪০ মিটার । ১০ মিনিট স্ট্যাচু টা মাঝে মাঝে ৫ মিনিট হয়ে যাই । ২ টার উপরেই কাজ চলছে , আশা করি দ্রুত কোনো সমাধান পেয়ে যাবো । এই ব্যাপার এই মিস্টার স্কট এর সাহায্য আমার লাগতে পারে । কারণ মানুষ কে স্ট্যাচু করতে হিউমান সাইকোলজি এর একটা বড় ব্যবহার আছে ।

২) আমার ২য় আবিষ্কার ম্যাজিক ওয়াশার ,এটা যে কেন জায়গাকে কিছুক্ষন এর জন্য জাস্ট আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে পারে । অবশ্যই সেটা মাত্র ১০ মিনিট এর জন্য স্থায়ী থাকে ।

সমস্যা - ২০দিন এর বেশি পুরোনো অবস্থায় এখনো ফেরাতে পারে না । এখনো পর্যন্ত ম্যাক্সিমাম ২০ দিন আগে জায়গাটা কেমন ছিল সেটাই দেখাতে পারে । গবেষণা চলেছে এর ক্ষমতা আর ও বাড়ানোর ।

৩) ভ্যানিশ চাদর - এই চাদর মধ্যে ঠুকে যাতে পারলে কমপক্ষে ৩০ মিনিটের মতো অদৃশ্য হয়ে যাওয়া যাই ।

সমস্যা - এটি চাপা দিলে হাঁটতে পারা যাই না , এমনকি বেশি নড়াচড়া করলে মাঝে মাঝে ৩০ মিনিট এর আগেই দৃশ্যমান হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে । যাই হোক গবেষনা এখনো চলেছে এটা কে আরো শক্তিশালী করার ।

আরো ২ টো জিনিস এর উপর গবেষণা করছি । একটি চাদর যেটা দিয়ে নিজেকে দরকার পড়লে উড়োতে পারবো । অনেক টা সেই আলাদিন এর চাদর এর মতো । আর একটি ট্যাবলেট বড়ি ,যেটা একটা খেলে কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা আর খিদে পাবে না ।

যাই হোক নিজের দরকারি ৩ টি জিনিস ব্রিফকেস এ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ।গ্রামের রাস্তার সাধারন অথচ অস্বাভাবিক সৌন্দর্য্য মিস্টার স্কট এবং তার সহকারী কে যে বেশ আকৃষ্ট করছে তা তাদের ঘন ঘন ফটো তোলা দেখে বেশ বুঝতে পারছিলাম । আমাকে আর পলাশ কে মাঝে মাঝেই দাঁড়িয়ে পড়তে হচ্ছিলো ওদের ফটো তোলার আবদার মেটাতে । তাদের সমস্ত রকম আবদার মিটিয়ে যখন ওই ধানের গোলার কাছে পৌঁছলাম তখন দুপুর ১২ টা মতো বাজে ।

জায়গাটায় পৌঁছে বুঝলাম আগুন টা বেশ বড়সরই লেগেছিলো । পুরো গোলাটাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে । পলাশ কে কাছে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তুই যে গন্ধ টা পেয়েছিলিস সেটা গোলার কোন জায়গা থেকে । বললো গোলার পিছন দিক থেকে , সেদিন ওদের গরু চড়াতে এসে ও এই গন্ধ টা পাই । যদিও গোলার পিছন দিক কোনটা পলাশ দেখিয়ে না দিলে আমার পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না , কারণ এখন গোলা টা একটা ধংসস্তূপ এর মতো । পিছন দিকে গিয়ে মোটামুটি ভাবনাচিন্তা করে একটা জায়গা স্থির করে আমার ম্যাজিক ওয়াশারটা বার করলাম । পলাশ কে বললাম একটু সরে আসতে , কারণ এটা থেকে প্রথম দিকে একটা স্পেসিফিক অ্যাসিড বেরোয় যেটা অনেক এ নিতে পারেনা । ছড়িয়ে দিলাম আমার ম্যাজিক ওয়াশার পাউডার , এবার ৫ মিনিট এর অপেক্ষা , হঠাৎ তাকিয়ে দেখলাম মিস্টার স্কট কখন যেন আমার পাশে চলে এসেছে । জিজ্ঞাসা করলেন এটা কি ? বললাম দেখুন ই না কি করে, এটা আমার একটা ছোট্ট আবিষ্কার । উনি ভীষণ উৎসাহ ভোরে সব কিছু দেখতে লাগলেন । ৫ মিনিট এর মধ্যেই আমার ওয়াশার তার ম্যাজিক দেখিয়ে দিলো , এই জায়গার আশপাশের ৫০ মিটার পর্যন্ত পুরোপুরি পুড়ে যাবার আগের দশায় ফিরিয়ে দিলো। পলাশ অবাক হয়ে চেয়ে আছে দেখে ওকে বললাম তাড়াতাড়ি আই, একবার বল এখন সেই আগের গন্ধ টা পাচ্ছিস কিনা । পলাশ বললো হুম পাচ্ছে । সেই এক এ গন্ধ সে পাচ্ছে । খুব মন দিয়ে শুঁকে বলতো কিসের তেলের গন্ধ হারিকেনের তেলের না রান্নার তেলের । পলাশ একটু সময় নিল , তারপর বললো এটা কেরোসিন তেলের গন্ধ । বুঝে গেলাম আগুন টা কেরোসিন তেল থেকেই লেগেছে , কিন্তু কেরোসিন তেল এখানে এলো কি করে আর কেরোসিন এ আগুন ই বা লাগলো কি করে , সেই সম্বন্ধে জানতে ১০ মিনিট ধরে, মানে আমার ম্যাজিক ওয়াশার কাজ করা বন্ধ করার আগে অব্দি জায়গাটা ভালো করে খুঁজে দেখলাম । কিন্তু কিছুই সেরকম খুঁজে পাওয়া গেলো না । ধীরে ধীরে জায়গাটা আবার সেই পুড়ে যাওয়া অবস্থায় ফিরে এলো । পলাশ এর হাত ধরে জায়গাটা থেকে সবে বেরোতে যাবো কিছু ছেলে এসে হঠাৎ পলাশ কে জিজ্ঞেস করতে লাগলো, এই তুই কেন এখানে এসেছিস ? আর এরা কারা ? পলাশ যাতে আমার পরিচয় না সে জন্য ওকে আস্তে করে চিমটি কেটে থামতে বললাম । কিন্তু তাতে কোনো ফল হলো না , পলাশ বলে দিলো আমি এক জন বিজ্ঞানী , গ্রাম দেখতে এসেছি । ওরা মিস্টার স্কট আর তার সঙ্গী কে খুব করা নজর এ দেখতে দেখতে চলে গেলো । এতো ক্ষণ পর আমার নজর মিস্টার স্কট দিকে গেলো , প্রায় হতভম্ব হওয়া বলতে যা বোঝাই , তাঁর অনেক টাই সেরকম অবস্থা । উনি যা বললেন তার বাংলা করলে দাঁড়ায় কি করেছেন মশাই , এতো দারুন আবিষ্কার । এটার কথা আপনার প্রেজেন্টেশন এ বলেন নি তো ।

উত্তর এ জানালাম, জিনিস টা এখনো পুরোপুরি তৈরি নয় ,আর তাছাড়া আপনি শুধু আমার আবিষ্কার টাই দেখলেন , এই ছেলে টির অদ্ভুত ক্ষমতা টা দেখলেন না । আমি বা আপনি কেউ এ কিন্তু কোনো কেরোসিন এর গন্ধ পাইনি , শুধু ও পেলো । এরপর আপনার হিউমান সাইকোলজি তে ঘ্রান শক্তি নিয়ে আলাদা একটা অধ্যায় লিখতে হবে ।

যাই হোক আমাদের কথপোকথন এর মাঝে দূরে একটা ল্যাম্পপোস্ট নিয়ে কিছু ঝামেলা হচ্ছে মনে হলো । গিয়ে দেখলাম কিছু ইলেকট্রিক অফিস এর লোক দাঁড়িয়ে আছে । তারা বলতে চাইছে অত্যধিক হুকিং আর বার বার লাগানো বালব চুরি যাবার ফলেই এই ল্যাম্পপোস্ট এ কোনো কিছুই ঠিক ঠাক ভাবে চলছে না । আর এতে তাদের কিছুই করার নেই । চলে আস্তে আস্তে হঠাৎ মনে হলো আসে পাশের লোক দের সাথে এক বার কথা বলে নিই । আমি পলাশ কে চলে যেতে বললাম , কারণ ও থাকলে কেউ ই আমার সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতো না ।

আমি ঝামেলাটার মধ্যে ঢুকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম দাদা হুকিং যে হয়েছে সেটা আপনারা বুঝলেন কি করে ? উত্তরে বললো , হুকিং র তার পরেই তো এই জায়গাটা পুরো বডি হয়েছিল । যে কোনো সময় বাজে একটা কিছু ঘটে যাতে পারতো । আমি জিজ্ঞেস করলাম , কোন জায়গাটা ? তারা যে জায়গাটা দেখালো, সেটা ঠিক ওই জায়গাটা যেখানে একটু আগে আমার ম্যাজিক ওয়াশার কাজ করছিলো । বেশ ২ এ , ২ এ ৪ করতে আমার বেশি সময় লাগলো না । এখন পরিষ্কার হয়ে গেছে গোলায় আগুন লাগলো কি করে । হুকিং ছিঁড়ে যাওয়া তার এর কারেন্ট থেকেই এই বিপ্পত্তি , আর কেরোসিন থাকায় আগুন টা এতো বড় গোলায় খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরে । এবার শুধু প্রমান জোগাড় করতে হবে এটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য । মনে হয়না সে কাজ টা খুব কষ্টের হবে । কিন্তু আজ এই পর্যন্তই , প্রায় দুপুর ২:৩০ বাজে , বাড়ি থেকে ২ বার ফোন এসে গেছে কখন ফিরবো সেটা জানার জন্য । তাই আর দেরি না করে স্কট আর তার সাথী কে নিয়ে আমি ঘরে ফিরে এলাম ।

এতো টা গ্রাম এর রাস্তায় হাটাহাটি তে মারাত্বক খিদে পেয়েছিলো সবার । মিস্টার স্কট কে আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিলাম আজ নিরামিষ । সেই নিরামিষ খাবার ভীষণ আনন্দ সহকারে এ খেতে দেখলাম তাঁকে । বার বার জিজ্ঞেস করছিলো খাবার নাম আর কিভাবে তা বানানো হয়েছে ।ওনাকে এতো এনজয় করে খেতে দেখে আমার ও বেশ ভালো লাগছিলো । যদিও ভয়ও একটু লাগছিলো পেটের প্রব্লেম না পড়েন ।সব কিছু খেতে দিলে ও ওঁনাদের খাবার জল টা আমি আলাদা রেখেছিলাম ।

২৯ শে সেপ্টেম্বর , ২০১৭, সন্ধ্যা ৭:৩০

মহাষ্টমীর সন্ধ্যা আরতি আর সন্ধি পুজো নিয়ে অষ্টমী র সন্ধ্যা টা প্রতিবার এর মতো অত্যাধিক ব্যস্ততা তেই কেটে গেলো । মহাষ্টমীর সন্ধেবেলা ১০৮ পদ্ম খোলার জন্য যখন সবাই বসলো , তখন স্কট এবং তার সহকারী (স্টিভ ) এর আনন্দ দেখে কে । ২ জন মিলেই সব থেকেই বেশি পদ্ম ছাড়ালো ।আমরা ও ব্যাপার টা দারুন উপভোগ করলাম । এর পর এলো সেই সন্ধিক্ষণ পুরান মতে যে সময় টাই হলো মা এর আসল পুজোর সময় ,আমরা সবাই এটাকে মার সন্ধিপুজো বলে থাকি । আমাদের পুরোনো ঠাকুরমশাই বলতেন মা এর নাকি এই সময় এই আসল আবির্ভাব হয় । এবং নিয়ম অনুযায়ী এই ১ ঘন্টার মধ্যে সমস্ত নিয়মাবলী পালন করতে হয় ,যা পুরো দূর্গা পুজো জুড়ে ধীরে ধীরে তারা পালন করে থাকে । পুরান মতে মহাদেব নিজেই এই সময়ই মা নবদুর্গা রূপ এর বিবরণ দিয়েছিলেন ।যদিও এতো আধ্যাতিক ব্যাপার বোঝার থেকে আমরা এই সময়টাই ভীষণ ভাবে মজা করতাম ছোট বেলা থেকে । বাড়ির সবাই , এমনকি যে সব বড়রা পুজোয় পুরোপুরি থাকতে ও পারতো না , তারা এই সময়ই ঠিক উপস্থিত থাকতো । মা এর উজ্জ্বল মুখ,অন্য রকম বাজনা র সুর, ১০৮ পদ্ম ও ১০৮ প্রদীপ এর অসাধারণ সংমিশ্রনে যেন পরিবেশ টাই অন্য রকম হয়ে যাই । আমি এক জন বিজ্ঞান মনোবিষ্ট সাধক হয়েও এই আধ্যাতিক বিপুল টান কে অস্বীকার করার কোনো জায়গা ই পাই না । দেখলাম স্কট এবং স্টিভ ও পুরো ব্যাপার টা তে বিহ্বল হয়ে গেছে । ভুল এই বোধহয় গেছিলেন তিনি অন্য কোনো ধর্মের মানুষ । তাদের মুখ দেখে বার বার এক টাই কথা মনে হচ্ছিলো, এরকম অনাবিল মুহূর্তের তারা জীবন এ কখনো মুখোমুখি হয়নি ।

সন্ধি পূজা যখন শেষ হলো তখন প্রায় রাত ১০:৩০ । সন্ধিপুজো শেষ হবার পর নিজের মন কে স্থিতিশীল করতে আরও ২ ঘন্টা কমপক্ষে লাগে । তাই ওদের কে শুতে যেতে বলে আমি কিছুক্ষন চুপচাপ দূর্গাদালান এ মা এর কাছে বসে থাকলাম । আর মনে মনে সাজাতে লাগলাম কি ভাবে প্রমান জোগাড় করা যায়, যা গ্রামবাসিকে বিশেষত পঞ্চায়েত প্রধান কে আশস্ত করার মতো হয় আর পলাশ এবং তার পরিবার কে বাঁচানো সম্ভব হয় ।মা কে একটা প্রণাম করে বললাম মা তুমি যাবার আগে যেকোনো ভাবে যেন ছেলে টি আর ওর পরিবার কে বাঁচাতে পারি । আমায় আশীর্বাদ করো ।

নবমীর দিন আমরা সাধারণত বাইরের লোক দের নিমন্ত্রণ করি , এই দিন আমাদের ঘরে ভালো ভালো কিছু রান্না করা হয়, যার মধ্যে ২-৩ রকম মাছ থাকে, চিকেন বা কোনো কোনো বার মটন ও করা হয়ে থাকে । এদিন গ্রামের ও কিছু মানুষ জন কে নিমন্ত্রণ করা হয় ।আমি ভাবলাম এই সুযোগ টাকেই কাজে লাগাবো । কাল সকালে এক বার এই নিমন্ত্রণ করার নাম করে ওই গোলার চারপাশের কিছু লোক জন এর সাথে কথা বলে আসবো । সব থেকে আগে জানা দরকার কে সবার প্রথম দেখেছিলো যে গোলাতে আগুন লেগেছে ।

সকাল হতেই বেরিয়ে পড়লাম যে ভাবে হোক আমার দরকারি ইনফরমেশন গুলো জোগাড় করতে । মিস্টার স্কট এবং স্টিভ দু জনেই পুজোর দালান থেকে নড়তে চাইছে না । সন্ধি পুজো দেখে তাদের মধ্যে নাকি অদ্ভুত এক ভাব এসে গেছে । তাই ওদের কে আর বেশি জোর করলাম না । নিজেই বেরিয়ে পড়লাম ।

এতদিন আমার বাবা ই এই নিমন্ত্রণ এর কাজ টা করে থাকতো , এবার ও বাবা ই করেছে । কারণ বাবা ই সব গ্রাম এর লোক দের খুব ভালো করে চেনে । আমি শুধু এই নিয়ম টাকে হাতিয়ার করে এগিয়ে গেলাম । তবে গোলাটার ধারে কাছে পৌঁছে বুঝলাম কাজ টা করতে খুব একটা বেগ পাবার কথা নয় ।কারণ আশপাশে হাতে গুনে ২-৩ টি বাড়ি ।এদের কাছে জিগ্যেস করলেই আশা করি কাউকে না কাউকে পেয়ে যাবো যে কোনোভাবে নিশ্চয় দেখে থাকবে । তবে আমার সহজ কাজ টা বেশ শক্ত করে দিলো , ২ টি বাড়ির লোক জন আমার সাথে কথা ই বলতে না চাওয়াতে । ভাবলাম পরিবারের কথা বলি কিন্তু বলার সাহস হলো না । ৩ নম্বর বাড়িতে যাবার আগে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিলাম । কারণ একটা জিনিস বুঝলাম শুধু গোলাতে আগুনের কথা জিজ্ঞেস করলে কেউ পরিষ্কার উত্তর দেবে না । আমাকে আমার পরিবার এর পরিচয় দিতেই হবে , তবেই এরা আমাকে গুরুত্ব দিয়ে সত্যি কথা বলবে । তাই ৩নম্বর বাড়িতে ঢোকার আগে, প্রথমেই বললাম আমি পুজোর বেলপাতা নিতে এসেছি , কম পড়েছে তাই । এর পর আমার পরিবার এর কথা শুনে খুব উৎসাহ ভোরে একটি ছেলে এগিয়ে এসে নিজেই বেলপাতা পেরে দিচ্ছিলো । জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম কি ? বললো গোপাল । বললাম এখানে একটা ধানের গোলা ছিল না রে , সেটা কোথায় গেলো ? ছেলে টি বললো ও তো গেলো সপ্তাহে যখন খুব ঝড় হলো তখন ই তো পুড়ে ছাই হয়ে গেলো । একটু ভেবে বললাম , তুই দেখেছিলিস ? বললো দেখলাম তো ঝড় এর মধ্যে হুকিং এর তার ছিঁড়ে পড়লো আর হঠাৎ আগুন লেগে গেলো । বলতে পারবি গোলার মধ্যে কেরোসিন তেল এলো কি করে ? কোনো না কোনো ধানের বান্ডিল এর সাথে থাকতে পারে । কেন বলুন তো ? গোপাল বলে ছেলে টিকে বেশ ভালো লেগেছিলো , ওকে সব কথা খুলে বললাম । বললো বাবু পলাশ আমার বন্ধু , আমি ওকে অনেক দিন এ চিনি । ছেলে টি ভালো , আপনি ছাড়া কেউ ই ওকে সাহায্য করতে পারবে না । আমি বললাম আজ পঞ্চায়েত প্রধান আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রিত । আমায় আলাদা করে ওনার সাথে কথা বলে রাখবো , যদি তোমার সাক্ষীর প্রয়োজন হয় আমি তোমাকে ডাকবো । তুমি আসবে তো , গোপাল জানালো নিশ্চই বাবু । চলে আসছিলাম, হঠাৎ মনে হলো গ্রামের লোক হলে ও এখন সবার কাছে ফোন চলে এসেছে । যদি ফোন থাকে তাহলে সুবিধা হয় ,তাই জিজ্ঞেস করলাম তোমার কি ফোন আছে ? গোপাল আমাকে একটা নম্বর দিলো । সেটা নিয়ে খুশি মনে ফিরে এলাম, যে কাজ টি করতে চাইছিলাম সেটা এতো সহজ এ হয়ে যাওয়ায় মন টা খুশি তে ভোরে গেলো । মা এর দালান এসে মাকে ভালো করে প্রণাম করলাম সাহায্য করার জন্য । তখন দেখলাম স্কট আর স্টিভ , ২ জন এ খুব মন দিয়ে রাজু দা মানে আমাদের ঠাকুর মশাই র সাথে গল্প করছে । রাজু দা ঠাকুরমশাই হলে ও উনি হাই স্কুল এর টিচার । তাই ভাষা টা বোঝা বা বলার ক্ষেত্রে ২ জনের এ খুব একটা অসুবিধা হছে না ।

দেখলাম তখন কেউ এ আসেনি । মানে পঞ্চায়েত প্রধান আসতে এখনো অনেক সময় বাকি । উঠোনে ঠুকেই দেখলাম ছর্দা ভীষণ ব্যস্ত । বরাবর এ এরকম হয় ছর্দা ই পুজোর সব কাজ করে , আমরা বাকি ভাই রা শুধু পুজোর আনন্দ টুকু ই নিতে অভ্যস্ত ।

যত বেলা হতে লাগলো ধীরে ধীরে নিমন্ত্রিত রা আস্তে শুরু করলো । আমরা ভাই এ রা সবাই মিলে পরিবেশন এ ব্যস্ত হয়ে গেলাম । এই একটাই কাজ আমরা পুরো পুজো তে করি । যদিও ছর্দা তত্ত্বাবধানে পুরো পরিবেশন টা চলে । বেলা ১২ তা নাগাদ পঞ্চায়েত প্রধান এলে বাবারা প্রথমেই তাকে খেতে বসিয়ে দিলেন । পরিবেশন এর মধ্যেই আমি ছর্দা কে পাশে ডেকে নিয়ে গিয়ে সব কিছু বললাম । ছর্দা প্রধান কে ভালো করেই চিনতো । খাবার পর ও ওনাকে আলাদা ডেকে নিয়ে গেলো । আমি পরিষ্কার করে জানালাম পলাশ আর তার পরিবার পুরোপুরি নির্দোষ । ঘটনা ঘটেছে হঠাৎ আসা একটা ঝড় ,তাতে হুকিং তার ছিঁড়ে পরে যাওয়া ,এবং কেরোসিন তেল গোলার কোনো ধানের বান্ডিল এর সাথে থাকার ফলে । তবে ছেলেটি একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে যেটা হলো ওর ভীষণ শক্তিশালী ঘ্রাণশক্তি । যদিও এটার ও কারণ আছে, কোনো জীব এর নরমাল পঞ্চদ্রিয়র কোনো একটি অক্ষম বা সাধারণের তুলনায় কম ক্ষমতা শালী হলে , অন্য কোনো এক ইন্দ্রিয় ভীষণ শক্তিশালী হয়ে ওঠে । ছেলেটির ক্ষেত্রে ও তাই হয়েছে ।ঝড় আসা আর হুকিং এর তার ছিঁড়ে যাবার প্রত্যক্ষ প্রমান আছে । গোপাল বলে একটি ছেলে পুরো ঘটনাটা দেখেছে । আর ছেলেটির অদ্ভুত ক্ষমতা যে এক ধরণের শারীরিক শক্তি যা বিশ্বে অনেক এর আছে , তার প্রমান মিস্টার স্কট নিজেই । বলে মিস্টার স্কট এর সাথে পঞ্চায়েত প্রধান এর আলাপ করিয়ে দিলাম, পরিচয় দিলাম বিখ্যাত মানব মন বিষেশজ্ঞ হিসাবে । স্কট ইংরিজি আর বাংলা মিশিয়ে প্রধান কে বোঝানোর চেষ্টা করলেন । প্রধান কতটা বুঝলেন জানিনা, তবে বিদেশী কে দিয়ে রিকোয়েস্ট করা টা যে ভালো কাজ হয়েছে সেটা বোঝা গেলো । প্রধান সব শুনে আশ্বাস দিয়ে গেলো আজ কের মধ্যেই ওদের পরিবার এর উপর থেকে সব বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হবে । আমরা প্রধান কে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় দিলাম । এই সময় এ বাড়িতে প্রচুর লোক, তাই সব ভুলে সবাই কে আপ্পায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম ।পলাশ এর পরিবার এর সবাই কে আসতে বলেছিলাম , ওদের কে সুখবর টা দিলাম । বললো যদি সত্যি হয় কাল সকাল এ আবার দেখা করতে আসবে । আজ খাওয়া দাওয়ার পর স্কট এবং স্টিভ ২ জন এই কথা দিলো পরের বছর আবার আসবে । এরকম খাবার নাকি তারা কখনো ই খাই নি । বিকাল অব্দি বিশাল যজ্ঞ চলার পর , সবাই যথারীতি ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়লো ।কিন্তু ব্যাস্ততার তখনও কিছু শেষ হয়নি কারণ এর পর ই শুরু হয় আমাদের ভাই বোনেদের ছোট খাটো অনুষ্ঠান আর মা এর শেষ সন্ধ্যা আরতি । স্কট আর স্টিভ অগ্রিম আগ্রহে অপেক্ষা করছিলো এই আনন্দের শেষ কি ভাবে হবে তা দেখতে । আমার মনে মনে একটা আনন্দ আজ রয়েছে ছেলেটির জন্য কিছু করতে পেরে ।

৩০ শে সেপ্টেম্বর , ২০১৭, রাত ১১ টা

আজ সারাদিন সময় হয়নি ডায়েরি লেখার । কাল রাতের ভাই বোনেদের অনুষ্ঠান, যা যথারীতি মা এর শেষ সন্ধ্যা আরতি র পরে শুরু হয়েছিল , স্কট আর স্টিভ কে যেন এক নতুন দিগন্তে নিয়েচলে গেছিলো । ওরা নিজে রা ও অনেক কিছুই পারফর্ম করলো । সব মিলিয়ে নবমী রাত টা যখন শেষ হলো কেউ ই আর নিজের মধ্যে ছিল না , শুধু শুতে যাবার জন্য এ যেন সবাই মন দিয়ে অপেক্ষা করছিলো ।

আজ মহাদশমী । সেই দুঃখের দিন যা এক জন বাঙালি কখনো কোনোদিন দেখতে চাই না । দশমী র দিন ও সকাল থেকেই ব্যাস্ততার শুরু , বিকাল র বিসর্জন এর পরে কাঙালি ভোজন এর রান্না বিশাল বড় ৪ টি কড়াই তে সকাল থেকে শুরু হয়ে যাই । খিচুড়ি আর আলুরদম এর গন্ধে সারা বাড়ি ভোরে যাই । এর মধ্যে ঠাকুর মশাই এর বিদায় ,সুতো কাটা , ঘট বিসর্জন সব ই যেমন প্রতিবার ঘটে সেরকম নিয়ম মতোই চলতে থাকে ছর্দার তত্ত্বাবধানে । আমার মন শুধু একটাই কথা ভাবছিলো পলাশ এলো তা নো দেখা করতে , ওদের সমস্যা টা মিটলো তো ? কাল তো প্রধান কথা দিয়ে ই গেলো । আবার কোনো সমস্যা হলো না তো ?

যাই হোক ধীরে ধীরে চলে এলো সেই অন্তিম সময় যখন বিদায় জানাতেই হবে মা কে, এ বিদায় তো শুধু মা কে বিদায় দেয়া নয়,সারাবছর সমস্ত আশা প্রত্যাশা, চাওয়া পাওয়া,আর সেই অনাবিল অপেক্ষা কে বিদায় দেয়া । এই সময় মা, জেঠিমা , কাকিমা রা সেজে উঠে নতুন সাজে , লাল পাড় সাদা শাড়ির সেই অপরূপ সৌন্দর্যের সাথে লাল সিঁদুর এর মাখামাখি যেন এক সুন্দর রূপ দিয়ে যাই পৃথিবীকে বা এই অদ্ভুত উৎসব কে । মা , দিদি, কাকিমা , জেঠিমা রা আজ হয়ে উঠে যেন এক এক জন মা দূর্গা । প্রণাম করে শ্রদ্ধা জানানো ও যেন খুব ছোট সম্মান দেয়া মনে হয় ।এর পর মা দুর্গার বিসর্জন এর প্রস্তূতি শুরু হয়,বাঁশ আর দড়ি দিয়ে প্রতিমার কাঠের পাটাতন কে ভালো করে বেঁধে , কাঁধে মা কে নিয়ে সবাই এগিয়ে চলে, সঙ্গে অনবরত বাজতে থাকা মা এর বিসর্জন এর বাজনা আর সেই অদ্ভুত সুর এ বলা 'দূর্গা মাইকী জয় ।',মনকে যেন উথাল পাথাল করে দেয় । কিছুতেই মানতে চাইনা উৎসব এর শেষ কে । মনে হয় যেন কেন মা চলে গেলো । আবার মা কে পাবার জন্য ১ বছর অপেক্ষা , মন যে মানতে চাই না , কাঁদে ব্যাকুল হয়ে যাই । এর মধ্যে কখন ভাই গুলো এসে সারা মুখে আবির দিয়ে গেলো । সব শেষে যখন সন্ধে সন্ধে হয়ে এলো মা ও ধীরে ধীরে জল এ গিয়ে পড়লো ।সকল মানুষ এর হাজারো চোখের জল উপেক্ষা করে উৎসব এর শেষ এর জানান দিয়ে গেলো খুব স্পষ্ট করে । হঠাৎ মুখে এসে জলের ঝাপ্টা পরে ঘোর কেটে গেলো , বুঝলাম মা এর বিসর্জন শেষ হলো । আমরা ঘরে ফিরে মনোযোগ দিলাম সিদ্ধি খাওয়াতে । তখন ই হঠাৎ চোখ গেলো স্কট আর স্টিভ র দিকে । বিসর্জন করুন বাজনায় ভুলেই গেছিলাম এরকম দুই বহিরাগত মানুষ ও কেমন ভাবে একাত্র হয়ে গেছে আমাদের এই উৎসব এর সাথে । প্রথম বার দেখাতেই বুঝলাম তাদের চোখে জল । উৎসব এর বিদায় যেন তাদের কে ও নাড়া দিয়ে গেছে । যাই হোক ডেকে নিলাম তাদের কে সিদ্ধি খাবার জন্য ।তার আগেই সেরে নিলাম চিরাচরিত নিয়ম বিজয়ার প্রণাম ।প্রতিবার এর মতো ছর্দা আর দিদিকে সাথে নিয়ে সবাই কে প্রণাম সেরে , যখন সিদ্ধি খেতে ঢুকলাম দেখলাম ভাই গুলো অলরেডি শুরু করে দিয়েছে । ২-৩ গ্লাস সিদ্ধি খাবার পর চলে গেলাম কাঙালি ভোজন কেমন হচ্ছে দেখতে । গ্রাম এর মানুষেরা সবাই নিঃস্বার্থ ভাবে রান্না করা থেকে পরিবেশন পর্যন্ত পুরো কাজ টাই করে । আমরা শুধু তত্ত্বাবধান ই করি । স্কট জিজ্ঞেস করলো সিদ্ধি এর আসল ইফেক্ট টা কি ? উত্তর দিতে গিয়ে কিছুক্ষন ভাবলাম আমি । এটা এক অদ্ভুত জিনিস , এর ইফেক্ট সাথে সাথে পরে না , রাত ১১ টার আগে কিছুই বোঝা যাবে না । সেটাই ওনাকে বুঝিয়ে বললাম ।

যাই হোক খিচুড়ি ,আলুরদম এর সমস্ত পরিবেশন শেষ করে যখন সবাই বিদায় নেবার জন্য প্রস্তূত তখন এ হঠাৎ পলাশ কে দেখতে পেলাম । আমাকে দেখেই ছুটে এসে প্রণাম করলো , বললো শুভ বিজয়া । ওর বাবা ও প্রায় চোখ এ জল নিয়ে আমার কাছেই এসেছিলো । বললো আপনি যা উপকার করলেন , এই সবে প্রধান আমাদের কে ডেকে গ্রাম এর কিছু বড় মাথার সামনে নির্দোষ ঘোষিত করলো । সব কিছু আপনার জন্য সম্ভব হয়েছে । আমি বললাম তোমার ছেলের একটু বিশেষ গুন্ আছে , সেটি ভয় পেয়ো না , কিন্তু গুরুত্ব দিয়ো ।আর পলাশ কে বললাম ভালো থাকিস । কখনো কোনো সাহায্য লাগলে ফোন করিস , বলে আমার নম্বর টা ওকে দিয়ে দিলাম ।

পলাশ চলে যাবার পর , খালি দূর্গা দালান এর দিকে তাকিয়ে মন টা আবার খারাপ হয়ে গেলো । এ এক অদ্ভুত সময় ,যখন বিজ্ঞান, ভগবান , মানুষ, পিশাচ সবই যেন ভীষণ মিথ্যা হয়ে যাই , আর পাঁচ টা দিনের চিরাচরিত কাজকর্ম ও কোনোদিন ঘটেছিলো বলে মনে হয়না ,শুধু এই পাঁচ দিনের বাইরে আর কোনো দিন ছিল কিনা মনেই করতে পারিনা , সবই যেন এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে কোন অথৈ জল এ হারিয়ে যাই, সিদ্ধির হালকা নেশায় কাতর মনের মধ্যে যেন শুধু পরে থাকে একটাই আকুতি, আর সব দূর্গা পুজোর উৎসব এ ভেজা বাঙালির মতোই "আবার এস মা , আসতে বছর আবার এস । "


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama