STORYMIRROR

Anishri's Epilogue

Romance

3  

Anishri's Epilogue

Romance

প্রিয় অসম্পূর্ণতা (পর্ব ৯)

প্রিয় অসম্পূর্ণতা (পর্ব ৯)

7 mins
276

খেলা ভাঙার খেলা পর্ব :

----------------------------------‐

রচনা : উশ্রী ও তিতির

Roy Villa, Go Down :

---------------------------------------

                            গুড়ুমমমমমমম

জোরে কানফাটা শব্দে জোরে একটা গুলি চলার আওয়াজ পাওয়া হয়... মূহুর্তেই নীহারবাবু চোখ বন্ধ করে ফেলেন.... নিজের সন্তানকে ওই অবস্থায় তিনি দেখতে পারবেন না... তবে আজ শুধুমাত্র উনি নন, রোহিনীদেবী নিজেও ওই ভয়াবহ দৃশ্যের আঁচ সহ্য করতে না পারার আশঙ্কায় মাথা নীচু করে নেন... শুধুমাত্র অভিরীর গলায় শোনা যায়,

     'দিদিভাইইইইইই !!!!! দৈবিককককককক !!!!'

পিস্তলের গুলি এসে দৈবিকের হাতে লাগে... ততক্ষণে দৈবিকের হাত থেকে রক্তধারা বইতে আরম্ভ করেছে.... দৈবিক যন্ত্রণাতে চিৎকার করে ওঠে... ফলস্বরূপ ওর হাতে ধরা পিস্তল মাটিতে পড়ে যায়... বাকি বন্দুকধারীদের হাতে পায়েও এসে গুলি লাগে, যাতে সবাই আহত হলেও কেউ মারা না যায়... গোডাউন-এর মেঝেতে দীর্ঘ এক কালো ছায়া এসে পড়ে... ঘটনার আকস্মিকতা কাটিয়ে সুরকে বাদ দিয়ে ওখানে থাকা প্রত্যেকটা চোখ সামনের দিকে চলে যায়... শেষবারের মতো সুর আশায় বুক বেঁধে দরজার দিকে তাকায়... গোডাউন-এর ঘুলঘুলি থেকে আসা সূর্যের আলোয় ততক্ষণে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তার সবথেকে প্রিয় মানুষটার মুখ.... সুরের মুখে এতক্ষণে হাসি ফুটে ওঠে... সেই হাসিতে নেই কোনো যন্ত্রণা, নেই কোনো মলিনতা, নেই কোনো না পাওয়ার অ-সুখ... অস্ফুটে শুধু একটাই শব্দ বেরিয়ে আসে মুখ দিয়ে,

                            'উত্তীয়ওওওওওও'

ঘরের মাঝে এসে দাঁড়ায় সে...হাতের বন্দুক থেকে বেরনো বারুদের গন্ধ তখন জানান দিচ্ছে,

'তুমি পেরেছো উত্তীয়... তুমি পেরেছো... তোমার নদীকে তুমি বাঁচাতে পেরেছো...'

ততক্ষণে সূর্যও সামনে এসে দাঁড়িয়েছে... উত্তীয়র বন্ধু সূর্য... IPS Officer সূর্য রায়চৌধুরী... দেবতনু বাবুর গোডাউন-এ পুলিশে ভরে যায়... সবাইকে ধরে নিয়ে যাওয়া হলেও দৈবিক আর দেবতনু বাবুকে IPS Officer সূর্য রায়চৌধুরীর আদেশে গোডাউনে বেঁধে রাখা হয়...

আর বোধহয় সহ্য হয় না অসুস্থ সুর-এর... গুলির শব্দে সুর-এর বুকটা কেঁপে ওঠেছিল... বুকের ক্ষতস্থানে হাত দিয়ে টলতে টলতে পেছতে থাকে... ঘটনার আকস্মিকতায় সাময়িকভাবে জ্ঞান হারায় সে... পরে যাওয়ার উপক্রম হতেই আচ্ছন্ন অবস্থাতেই তার বহু পরিচিত, পরম আত্মীয়র পদধ্বনি শুনতে পায়, বোঝে দৌড়ে এসে বলিষ্ঠ দুটো হাতে তাকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো.... উত্তীয়র বুকে জ্ঞান হারিয়ে ছিন্নলতার মতো লুটিয়ে পড়ে... পরিচিত স্পর্শ পেয়ে সুর-এর চোখটা একবার কুঁচকে যায়, তবুও সে ভয়ে বন্ধ চোখ খোলার সাহস পায় না.... যদি চোখ খুলে দেখে, যাকে সে অনুভব করছে- সে নয়.... তার কানে ভেসে আসে বহু কাঙ্খিত সেই কন্ঠস্বর,

নদী... নদী... চোখ খোলো.... দেখো আমি এসে গেছি... দেখো আমি... আমি তোমার কিছু হতে দিই নি... কিচ্ছু না... একবার চোখটা খোলো না নদী.... লক্ষ্মীটি... তোমার বুকে কি কষ্ট হচ্ছে নদী !!!! বলো না একবার...

সূর্য ছুটে আসে উত্তীয়-র কাছে... দু'জনে মিলে পরম যত্নে সুরকে নিয়ে মাটিতে বসে... সূর্য দৌড়ে জল নিয়ে আসে... নীহারবাবুরাও দৌড়ে আসেন... সূর্য সুর-এর চোখে মুখে জল ছিটিয়ে দেয়...

সুর-এর ঠোঁটটা একবার থরথর করে কেঁপে ওঠে... ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে কাঁপা কাঁপা হাতে উত্তীয়র গোটা মুখে হাত বোলাতে উত্তীয়কে অনুভব করার চেষ্টা করে- সত্যিই তাকে উত্তীয় আঁকড়ে ধরে আছে কি না !!! ভর্তি জল নিয়ে সে খুব ধীরে ধীরে চোখ খোলে... মূহুর্তেরা যেন সেই ক্ষণেই থেমে যায়.... টুপ টুপ করে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি ঝরে পড়ে সুর-এর চোখ দিয়ে... উত্তীয় সুরের মাথায় সযত্নে, পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দেয়... কিন্তু ক্লান্ত সুর আবার চোখ বন্ধ করে দেয়... উত্তীয় সুরের গালে আলতো চাপড় মেরে উৎকন্ঠার সাথে বলে ওঠে,

উত্তীয় : নদী... নদী... চোখ খোলো... চোখ খোলো Please.... Please.... এখনো অনেক অপ্রিয় সত্যের মুখোমুখি হওয়ার বাকি আছে তোমার... সাথে আছে তোমার জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া কয়েকটা বছরের স্মৃতি রোমন্থনের চেষ্টা... আজ যে তোমার হারিয়ে যাওয়া খুশি তোমাকে ফেরত দেবার পালা...

সূর্য : সুর... ও সুর... লক্ষ্মী বোন আমার, চোখ খোল Please... হ্যাঁ রে, সুর-এর শরীরটা কি আবার খারাপ করলো !!

উত্তীয় : বুঝতে পারছি না... (Pulse Check করে) Pulse তো আস্তে আস্তে Normal হচ্ছে... হয়তো জ্ঞান ফিরে আসবে খুব তাড়াতাড়ি....

নীহারবাবু মাটিতে লুটিয়ে থাকা সুর-এর হাতটা নিজের মুঠোবন্দী করে উদ্বেগের সাথে বলে ওঠেন,

নীহার : মা... মা রে... চোখ খোল মা... তুই তো কাউকে কষ্ট দিতে পারিস না, তাহলে !!! তাহলে কেন এই বুড়ো বাবাকে এত কষ্ট দিচ্ছিস মা !!! চোখ খোল....

উত্তীয় : আর না নদী... আর এইভাবে ঘুমিয়ে থেকো না... চোখ খোলো... চোখ খোলো Pleaseeeeee....

সুর-এর ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরতে থাকে... তাকে চারপাশ থেকে ঘিরে থাকা মানুষজনের মুখ, চারপাশের দৃশ্যপট ধীরে ধীরে অস্পষ্ট থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে সুর-এর চোখে.... উত্তীয়কে ভর দিয়ে কষ্ট করে উঠে বসে সুর... উত্তীয় তাকে নিজের বাহুবন্ধনে আবৃত করে রাখে... সে তার দুর্বল মাথাটা উত্তীয়র বুকের উপর রাখে... উত্তীয়র বাঁধন দৃঢ় হয়...

হঠাৎই পেছন থেকে দৈবিকের হুঙ্কারের ভেসে আসে,

দৈবিক : এই অফিসার... অকম্মার ঢেঁকি... তোকে Appoint করলাম আমরা... আর তুই আমাকেই গুলি করে আমাদেরকেই বেঁধে রাখছিস... আর তুই !!! তুই এখনো মরিস নি... এই যে অফিসার, এই... এই লোকটাই সুর-কে Kidnap করেছিল.... ওকে Arrest কর আগে...

এবার সূর্য উঠে দাঁড়ায়... দেবতনু বাবুর সামনে গিয়ে কঠোর স্বরে বলে,

সূর্য : দু'দুটো পরিবারের সাথে এতদিন যাবৎ বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য, জোর করে ওদের সবকিছু কেড়ে নেবার চেষ্টা করার জন্য, একজন নিরপরাধ মানুষকে দু দু'বার খুন করার চেষ্টা করার জন্য, দু'দুটো মানুষকে খুন করার অভিযোগ- You are under Arrest.... আপনি এইসব কিছুর Master Mind... বহু বছরের সূক্ষ্ম পরিকল্পনা আপনার... আর এইসব অন্যায় কাজে সহযোগিতা আর উৎসাহ দেবার জন্য- You are also Arrested Mr. Daibik Roy....

দেবতনু : ক্কে !!! কে তুমি !!! আর কোন খুনের কথা বলছো !!!

সূর্য : ঠিক... মনে করতে পারছেন না, তাই না !!! একবার আমার আর উত্তীয়র দিকে ভালো করে চেয়ে দেখুন তো !!! কারুর কথা মনে পড়ছে কি !!! আমার চোখের দিকে তাকান তো- কাউকে মনে পড়ছে !!! বছর পনেরো আগের কাউকে !!!

দেবতনু : কে তুমি !!! কি তোমার উদ্দেশ্য !!!

সূর্য : IPS Officer অম্বর রায়চৌধুরীকে মনে পড়ে !!! মনে পড়ে উদয় ব্যানার্জিকে!!! তাদেরও তো ঠিক এইভাবেই খুন করেছিলেন না আপনি !! উত্তীয়, বাকি কথাগুলো আমি বলব না তুই !!!

নামদুটো উচ্চারিত হবার সাথে সাথে দেবতনু আৎকে ওঠেন আর চমকে ওঠেন নীহারবাবু... প্রায় আর্তনাদের মতো তার গলা থেকে বেরিয়ে আসে,

নীহার : উদয় !!! উদয়কে খুন করা হয়েছিল !!! আমি... আমি জানতাম, ও যেমন ছেলে- ও কিছুতেই Suicide করতে পারে না... কিন্তু তাই বলে খুন !!! আমার বড় হয়ে ওঠার আধার ছিল ও... আজ আমাকে আর কি কি শুনতে হবে কে জানে !!

উত্তীয় : আমরা কে !!! আমাদের কি উদ্দেশ্য !!! সবাই সবকিছু জানতে পারবে !!! কিন্তু তার আগে আমার কিছু হিসাব মেটানোর আছে... কাকাবাবু আপনি সুর-কে একটু ধরুন...

নীহারবাবুর কাছে সুরকে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় উত্তীয়... পাথরের মতো কঠিন মুখ দিয়ে এক পা, এক পা করে এগোতে থাকে দৈবিকের দিকে....

উত্তীয় : তুই তো জানতে চেয়েছিলিস- আমি কে !!! আমার কি উদ্দেশ্য ছিল সুর-কে অপহরণ করার !!! তখন আমি চুপ ছিলাম শুধু সুর-এর জন্য, কারণ সুর তোদের হাতে ছিল... সুর-কে আমি ভালোবাসি... নিজের প্রাণের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসি... যতদিন আমি বেঁচে থাকব- তুই কখনো সুর-এর থেকে আমাকে আলাদা করতে পারবি না, সে তুই যতবারই চেষ্টা কর... আগেও পারিস নি, আজও পারিস নি, ভবিষ্যতেও কোনোদিনও পারবি না- এটা কান খুলে শুনে রাখিস... এর আগে যতবার তুই সুর-এর ক্ষতি করতে চেয়েছিস, প্রত্যেকবার আমিই ঢাল হয়ে থেকেছি আর ভবিষ্যতেও থাকব... আর হ্যাঁ, এই সুর-কে Kidnap করা, তোর আর অভিরীর বিয়ে ভাঙা, তোদের ভুল পথে চালনা করতে সূর্যর তোদের দলে যোগ দেওয়া, আবার তোকে আমার কাছে টেনে আনা- এই সবটা আমার আর সূর্যর পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়েছে... ভুল করেও ভাবিস না তুই নিজে কিছু করেছিস, আমাদের গোছানো রাস্তায় আমাদের ইচ্ছেমতো তুই হেটেছিস নিরেট গর্দভ কোথাকার !!! আমরা না চাইলে তুই কিচ্ছু করতে পারতিস না... নয়তো দোলের দিন আহত সুর-কে নিয়ে তোর লোকেদের চোখের সামনে দিয়ে কর্পূরের মতো আমি উধাও হয়ে যেতে পারতাম না, সুর আপাত সুস্থ না হওয়া অব্দি তুই ওর একটা খবরও পাস নি... আর ভুলেও সুরকে আঘাত করার কথা ভাববি না... সাহস কি করে হলো তোর সুর-এর কপালে পিস্তল ধরার !!!

বলেই দৈবিকের মুখ বরাবর একটা ঘুসি চালায় উত্তীয়... সঙ্গে সঙ্গেই দৈবিকের ঠোঁট কেটে রক্ত পড়তে থাকে... হয়তো আরো কয়েকটা ঘুসি পড়ত, কিন্তু সুর ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে...

সুর : কি হলো দৈবিক !!! লাগলো বুঝি !! আমাকে সামনে রেখে যে অত্যাচারটা তোমরা উত্তীয়র উপর করেছিলে !!!!

আর বলতে পারে না সুর, আর্তনাদ করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে... উত্তীয়-র যন্ত্রণা যতটা সুরকে আহত করেছে, ঠিক তেমনই সুর-এর এই কান্নাও উত্তীয়র চোখকে আদ্র করে দেয়....

উত্তীয় : চুপ করো নদী... এই মূহুর্তে আমাকে দুর্বল করে দিয়ো না.. ওর আঘাতের থেকেও তোমার চোখের জল আমাকে বেশি আহত করছে...

নীহার : কিন্তু তোমরা কে- সেটাই তো স্পষ্ট হলো না বাবা... তোমরা কোথা থেকে এসে আমাদের এমনভাবে বাঁচালে !!! ক্ষণিকের জন্য হলেও আমার মনে হয়েছিল, আমি বোধহয় আমার মেয়েদুটোকে হারিয়েই ফেললাম... কারণ সুর Sign করে দিলেও ওরা যে ওর আর অভিরীর কোনো ক্ষতি করত না, এমনটা দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বলা অসম্ভব... ছিঃ ছিঃ এতগুলো বছর ধরে আমি একজন ঠক জোচ্চর মানুষকে বন্ধু ভেবে এসেছেন !!! সুর-এর নরম মনের সুযোগ দিয়ে দৈবিক তার দুই মেয়ের ভালোবাসার সাথে এইভাবে প্রতারণা করলো.... অভিরী নয় ওর পাপের শাস্তি পাচ্ছে, কিন্তু সুর !!! সে তো কোনো পাপ করে নি... তাহলে সে কিসের শাস্তি পেল !!! আর তোমাকে দেখে তো আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি... সত্যিই এত মিল !!! একই চোখ, একই মুখ, একই রকম তেজদীপ্ততা !!! তুমি কে উত্তীয় !!!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance