STORYMIRROR

Anishri's Epilogue

Romance Others

3  

Anishri's Epilogue

Romance Others

প্রিয় অসম্পূর্ণতা (পর্ব ৭)

প্রিয় অসম্পূর্ণতা (পর্ব ৭)

7 mins
251

অজ্ঞাত ডেরা :

----------------------

সুর... সুর... উঠে পড়ো... দেখো আমি এসে গেছি... ওই Kidnapper-টা আসার আগেই আমাদের পালাতে হবে... সুর... সুর... ওঠো.... চলো... চলো...

ঘুমন্ত সুর দৈবিক-এর গলা পেয়ে ধরফর করে উঠে বসে... সুর-এর ব্যাপারটা বুঝতে একটু সময় লাগে যে দৈবিক তাকে নিতে এসেছে... সে তো রাতে উত্তীয়-র কাঁধে মাথা রেখে, হাতের উপর হাত রেখে গল্প করছিল... উত্তীয়-র উষ্ণ সান্নিধ্যে কখন যেন চোখ লেগে গেছে তার... কিন্তু দৈবিক এইসব কি বলছে !!!! আর উত্তীয় !!! উত্তীয় কোথায় !!!

সুর : না... না... দৈবিক... তুই ভুল করছিস... উত্তীয়... উত্তীয় আমাকে Kidnap করেছে ঠিকই, কিন্তু ও খারাপ নয়... ও খুব ভালো মনের একটা মানুষ... ও আমার কোনো ক্ষতি করে নি... দেখ, আমার শরীরে কোনো আঁচড় নেই... ওর আমাকে Kidnap করার পেছনে কোনো ভালো উদ্দেশ্য আছে, ও আমাকে কারুর হাত থেকে বাঁচাতে চায়...

দৈবিক : (ব্যঙ্গাত্মক গলায়) Really !!! কার হাত থেকে রে সুর !!! কথাগুলো তুই আমাকে বলছিস না কি নিজেকে বোঝাচ্ছিস !!!

সুর : নিজেকে কেন বোঝাতে যাব !!! আমি তো ওর সাথে দু'মাস ধরে আছি !!! দেখ, আমার কোনো ক্ষতি হয় নি !!! আমি একদম ঠিক আছি...

দৈবিক : (ব্যঙ্গ করে) তাইইইই !!! তা ও যদি তোর কোনো ক্ষতিই না করবে, তাহলে তোর বুকে গুলিটা লাগল কি করে !!!

সুর : গুলিটা তো আমি ওকে সস... (চমকে ওঠে) এক সেকেন্ড... আমার গুলি লেগেছে, তুই জানলি কি করে !!!

হঠাৎই সুর সামনে দিকে তাকিয়ে দেখে উত্তীয় পেছনে হাত বাঁধা, হাঁটু ভাজ করে বসা অবস্থায় সামনের দিকে ঝুঁকে ধুকচ্ছে... আর ওকে ঘিরে জনা কুড়ি লোক... সবার হাতে হকিস্টিক যেগুলো সুরকে জানান দেয় উত্তীয়-র শরীরের কালশিটে দাগ আর জমাট বাঁধা রক্ত... উত্তীয়-র এই রকম অবস্থা, এই রকম রূপ দেখে সুর আতঙ্কে শিউরে ওঠে,

সুর : (আর্তনাদ করে) কাকে কি করেছিস তুই দৈবিক !!!! He is a Doctor... a Surgeon...

সুর ছুটে উত্তীয়-র কাছে যেতে গেলে দৈবিকের মুষ্টিবদ্ধ হাত সুর-এর হাত শক্ত করে ধরে...

সুর : কি করছিস তুই !!! হাত ছাড় আমার... আমাকে ওর কাছে যেতে দে...

দৈবিক : কোথাও যাবি না তুই !!! এইখানে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাক....

সুর : (ক্রুদ্ধ স্বরে) দৈবিক !!! তুই ওকে এত মেরেছিস কেন বল !!!

উত্তীয় চোখের ইশারায় সুর-কে শান্ত হতে বলে... কিন্তু আজ সুর কিছুতেই শান্ত হতে পারছে না... উত্তীয়-র এই অবস্থা দেখে আজ তার সব সহ্যের প্রাচীর যেন তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়েছে... সুর-এর চোখের জলে উত্তীয় আজ সুর-এর অন্তরটা পরিষ্কার পড়তে পারছে, কিন্তু সুর-এর শরীর !! মেয়েটা এইভাবে উত্তেজিত হলে এই অসুস্থ শরীরে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে... উত্তীয় আরো একবার ইশারায় বারণ করলে উত্তীয়কে সম্মান করে সুর কান্নাভেজা গলায় দৈবিককে কাতরভাবে বলে,

সুর : দেখ... উত্তীয় সত্যিই আমার কোনো ক্ষতি করে নি... ওকে ছেড়ে দে... Pleaseeeee.... তুই তো আমাকে খুঁজতে এসেছিস, দেখ আমি তোর সামনে দাঁড়িয়ে আছি... তোরা শুধু ওকে ছেড়ে দে...

দৈবিক : ওর জন্য মনে খুব ব্যাথা দেখছি তোর... মার খেলো ও... আর যন্ত্রণায় বিদ্ধ হচ্ছিস তুই !!! কি এমন যাদু করলো সোনা !!!

দৈবিকের ভাবভঙ্গী একেবারেই বদলে গেছে.... এই দৈবিক-কে সুর চেনে না... এই দৈবিক-কে তো সুর ভালোবাসে নি.... ছোটবেলা থেকে যার সাথে হেসে খেলে সুর বড় হয়েছে, সেই দৈবিক আর এই ছেলেটা এক নয়... এ কোন চন্ডাল ভয়ঙ্কর রূপ দৈবিক-এর !!! হকিস্টিক ধারী লোকগুলোর উদ্দেশে দৈবিক প্রশ্ন ছোড়ে,

দৈবিক : কি রে !!! সুর-কে কেন তুলে এনেছে বললো কিছু !!!

লোকগুলো : না বস... এত্ত ক্যালানি, এত্ত মার খাবার পরও মুখ খোলে নি !!!

দৈবিক : তোরা কিভাবে জিজ্ঞেস করলি যে এখনো মুখ খোলাতে পারলি না !!! একে সামলা...

সুরকে লোকগুলোর হাতে প্রায় ছুঁড়ে দেয় দৈবিক... এতক্ষণ, এত কিছু হয়ে গেলেও, এত মার খেয়েও, এত কষ্ট পাবার পরেও উত্তীয়-র কোনো তাপ উত্তাপ ছিল না... সে একেবারে নির্বিকার ছিল, মুখে যেন কুলুপ এঁটে আছে... এত মার খাবার পরেও মুখ থেকে এতটুকু 'টু' শব্দ পর্যন্ত বের করতে পারে নি কেউ... কিন্তু সুর-কে ওইভাবে ছুঁড়ে দিতে দেখে গর্জে ওঠে সে,

উত্তীয় : এইইইইইইইইইইইই.... যা করার আমাকে কর, কিন্তু ওকে কিছু....

হঠাৎই দৈবিক নিজে গিয়ে উত্তীয়-র উদ্দেশ্যে কয়েকটা ঘুসি, লাথি ছুঁড়ে দিল... সুর আর দেখতে পারছে না... যন্ত্রণাতে কুঁচকে থাকা উত্তীয়-র মুখ... গায়ের ছেঁড়া ফাটা শার্ট, যার মধ্যে দিয়ে শরীরের জায়গায় জায়গায় জমাট বাঁধা রক্ত আর কালশিটের দাগ স্পষ্ট... দৈবিক-এর উদ্দেশ্যে সুর আবারও চিৎকার করে ওঠে,

সুর : ছেড়ে দে ওকে... দৈবিক... ও নির্দোষ... ছেড়ে দে Pleaseeeeee.... ওকে এইভাবে আর কষ্ট দিস না... কিছু করে নি ও... ছেড়ে দে ওকে....

দৈবিক (ক্রুর স্বরে) : কাকে ছেড়ে দিতে বলছিস তুই সুর !!! এই Kidnapper !! এই Criminal-টাকে !!! একে ছেড়ে দিতে বলছিস যে তোকে তুলে নিয়ে এসেছে !!!

সুর : আরে, তুলে তো আমাকে এনেছে... অভিরীকে তো আর আনে নি... তোর কোথায় সমস্যা হচ্ছে !!!

দৈবিক ওর বুট পরা পা দিয়ে উত্তীয়-র বুকে গুতো মেরে দেখায়,

দৈবিক : একে তো আমি ছাড়বই না... এত বড় সাহস ওর- আমার সমস্ত Plan-এ জল ঢেলে দেবার চেষ্টা করছে.... ও দৈবিক রয়-কে চেনে না... এবার ওকে বোঝাবো আমি কি...

দৈবিক কোনো কথাই সুর-এর কানে পৌছাতে না... উত্তীয়-র জন্য তার খুব কষ্ট হচ্ছে, উত্তীয়কে এই অবস্থায় সে দেখতে পারছে না.... সহ্য হচ্ছে না তার... সুর আর্তনাদ করে ওঠে,

সুর : ছেড়ে দাও... ছেড়ে দাও বলছি ওকে... ও আমার কোনো ক্ষতি করে নি... ছেড়ে দাও তোমরা....

যে চার-পাচঁজন সুরকে শক্ত করে ধরে রেখেছিল, শান্ত, স্নিগ্ধ সুর হঠাৎই এক ঝটকায় তাদের বাঁধন ছাড়িয়ে ছুটে গিয়ে উত্তীয়-র বুকে আছড়ে পড়ে... নিজের শরীর দিয়ে যতটা সম্ভব আগলে রাখার চেষ্টা করে উত্তীয়-কে... পরম মমতায় মুছিয়ে দেয় উত্তীয়-র ক্ষত-র রক্ত.... দু'হাতের অঞ্জলি দিয়ে উত্তীয়-র মুখটা যখন ধরে সুর, তখন তার নিজের চোখেও অঝোর ধারায় শ্রাবণ নেমেছে....

সুর : I am Sorry Uttiyo.... Sooooo.... Soooo Sorry.... আমার জন্য তোমাকে এত কষ্ট পেতে হলো....

সবকিছু ভুলে উত্তীয়কে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে, নিজের ভালোবাসার উষ্ণ ওমে উত্তীয়কে ভরিয়ে দেয়... দৈবিক জোর করে সুর-কে হাত ধরে টেনে উত্তীয়-র বুকের থেকে ছিনিয়ে নেবার চেষ্টা করে...

দৈবিক : Stop talking Nonsense... Get Up Sur.... পনেরো বছর আগে টিনটিন-কে আটকাতে গিয়েই সিঁড়ি থেকে পড়ে এক বছর কোমায় ছিলিস তুই, মনে নেই !!! মাথায় আঘাত পেয়ে তোর জীবনের প্রথম দশটা বছর সারাজীবনের মতো তোর জীবন থেকে মুছে গিয়েছিল.... আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক আমি চাই না...

ঠিক যেন সেই মুহূর্তে পাষানী অহল্যা রামচন্দ্রের ছোঁয়া পেল... দৈবিকের কথা শুনে চমকে ওঠে উত্তীয়... তাহলে এটাই কারণ ছিল, ঠাম্মির আর সুর-এর ওদের না আটকাতে আসার... ওদের আটকাতে আসতে গিয়ে সুর সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিল... সব স্মৃতি মুছে গিয়েছিল সুরের... এক বছর ধরে মৃত্যুর সাথে লড়েছিল সে.... আর উত্তীয় সেই সুর-এর উপর মনের গহীনে পাহাড় প্রমাণ অভিমান বুকে জমিয়ে রেখেছিল.... তার ভালোবাসা অভিমানের উষ্ণতায় পাথরে পরিণত হয়েছিল... পনেরো বছরে মনে মনে অভিমানী ভালোবাসা জমিয়ে রেখে ফিরে এসেছিল প্রতিশোধ নিতে... সুর-এর কান্নায় ঘোর কাটে উত্তীয়-র....

সুর : নাহহহহ.... নাহহহহ.... আমি কিছুতেই ওকে ছাড়ব না... তাহলেই তোরা ওকে আবার মারবি... দয়া কর তোরা... দয়া করে ছেড়ে দে ওকে... মানুষ হয়ে একটা মানুষকে কেউ এইভাবে কষ্ট দিতে পারে !!! ও কোনো দোষ করে নি...

কথা শেষ করতে পারে না সুর... উত্তীয়-র ছেঁড়া শার্ট আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে আরো বেশি করে কান্নায় ভেঙে পড়ে.... আজকের দিনটাকে উত্তীয়-র নিজের জীবনের 'শ্রেষ্ঠ দিন' বলে মনে হচ্ছে... তার এত বছরের অভিমান, ভুল ধারণা আজ মুছে গেছে... আজ সে তার ছোটোবেলার ভালোবাসাকে পূর্ণ রূপে ফিরে পেয়েছে... সুর আজ নিজের মনের সব দ্বিধা সরিয়ে দিয়ে তাকে কাছে টেনে নিয়েছে... উত্তীয়-র ভালোবাসা অবশেষে উত্তীয়কে ভালোবেসে তার জন্য কষ্ট পাচ্ছে- এর থেকে বেশি আর কি চায় সে !!! আজ সে মরে গেলেও কোনো দুঃখ নেই... কাউকে নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসে মরেও যে এত সুখ- জীবনে তা প্রথম অনুভব করতে পারল উত্তীয়, মুখে এক চিলতে খুশির হাসি ভেসে উঠলো... নাহহহহ... নিজেকে নিয়ে ভাবলে হবে না, সুর-কে বাঁচাতে হবে... সুর এখন ওদের কবজায়... সুরের কানে কানে খুব আস্তে আস্তে বলে,

উত্তীয় : (ফিসফিস করে) সুর... সুর... শান্ত হও... আমি ঠিক আছি... আমি যেটা বলছি মন দিয়ে শোনো... দেখেছো তো সুর, নদী যতদিন অন্যের পঙ্কিলতা, অন্যের অন্যায়ের বোঝা নিজের অন্তরে বহন করে শান্ত থাকে- ততদিন সবাই তাকে গতিহীনা ভাবে... কেউ তার গভীরের গহীন চোরা ঘুর্ণীর অনুমান করতে পারে না... কিন্তু যখন নদীতে প্লাবন আসে, বা নদী খরস্রোতা হয়ে ওঠে- নদীর জলধারার তীব্র গতির কাছে সব বাধাই তুচ্ছ হয়ে ওঠে... তুমিও কিন্তু নদী, এবার তোমার খরস্রোতা হবার সময় এসেছে... সময় এসেছে সব বাঁধা অতিক্রম করার... আরো একটা কথা মনে রাখবে, যাই হয়ে যাক- তুমি কোনো কাগজে sign করবে না... মনে থাকবে আমার কথা !!!

সুর বিস্মিত হয়ে উত্তীয়র দিকে তাকায়... দৈবিক উত্তীয়-র বুকের থেকে সুরকে টেনে হিঁচড়ে জোর করে ধরে নিয়ে যাবার সময় উত্তীয়-র দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,

দৈবিক : এই দুর্বল শরীর নিয়ে তুই সুরকে বাঁচাতে এসেছিলিস... নে এবার দেখ, নিজের জীবনটা বাঁচাতে পারিস কি না !!

কিন্তু কি মনে হতে উত্তীয়-র মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে দৈবিক... কেমন যেন মুখে হাসি দেখা যাচ্ছে... মনে মনে উত্তীয়কে বলে সে,

দৈবিক : মরার আগে শেষ হাসিটা হেসে নে...

সব ঘটনা মিলে সুর Traumatize হয়ে পড়ে.... সুরের প্রায় প্রাণহীন, যন্ত্রমানবের ন্যায় শরীরটাকে ঠেলে গাড়িতে তোলে দৈবিক, যেন উত্তীয়-র বিরহটুকু ছাড়া জাগতিক কিছু সুর-কে স্পর্শ করছে না... সুর-এর ঠিক এই পরিণতিই তো চেয়েছিল দৈবিক... এবার সুরকে দিয়ে যা খুশি করিয়ে নেওয়া যাবে... সুর মৃত মানুষের মতো স্থির দৃষ্টিতে ঘরের ভেতরের বাঁধা পড়ে থাকা উত্তীয়-র দিকে তাকিয়ে থাকে... যতক্ষণ তাকে দেখা যায়, দু'চোখ ভরে দেখে নিতে থাকে.... উত্তীয়-র মুখে মৃদু হাসি... গাড়ি Start হলে সুর একবার শুধু নড়ে ওঠে, কয়েকফোটা চোখের জল নিজেদের ভারেই গড়িয়ে পড়ে... দৈবিক চালু করে দৈবিক লোকগুলোকে বলে,

দৈবিক : শোন, মালটার History, Geography জেনে আর কোনো লাভ নেই... এবার মালটাকে মেরে বাড়িটা জ্বালিয়ে দিবি... দৈবিকের সাথে পাঙ্গা নেবার ফল ওকে ভোগ করতেই হবে...

(উত্তীয় কি তাহলে হেরে গেল !!!! কি পরিণতি হলো উত্তীয় আর সুর-এর !!!! অতঃপর !!!)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance