Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance Others

3  

Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance Others

প্রিয় অসম্পূর্ণতা (পর্ব ৬)

প্রিয় অসম্পূর্ণতা (পর্ব ৬)

6 mins
222



Chatterjee Mansion :

-----------------------------------

দেখতে দেখতে কেটে গেছে দু'মাস... না সুর-এর কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে, না এসেছে অপহরণকারীর কাছ থেকে মুক্তিপণ চেয়ে কোনো ফোন... এমনই এক মেঘলা দিনে অভিরী দৈবিক-কে ফোন করে,

অভিরী : কেমন আছো !!!

দৈবিক : ঈশান কোণে জমা মেঘ-এর দিকে ভাবছি, কি এমন পাপ করেছিলাম, যে আমাদের এক হবার দিন এত কাছে এসেও আমরা এক হতে পারলাম না !!!

অভিরী : তা এই ঈশান কোণে মেঘটা তো আকাশে জমে নি, জমেছিল তোমার মনে... তুমিই জেদ করলে যে দিদিভাই খুঁজে না পাওয়া অব্দি আমাদের বিয়ে করা উচিত নয়... আচ্ছা ও আমাদের বিয়ে থাকল, কি না থাকল তাতে কি যায় আসে !!! হ্যাঁ !! She is just my Step-Sister !!!

দৈবিক : তাই বুঝি ওর প্রথম ভালোবাসা কেড়ে নিলে !!!

অভিরী : কেন বলো তো দৈবিক !!! তোমার কি আফসোস হয় !!!! দৈবিক, সত্যি করে বলো তো - দিদিভাই এর জন্য কি তোমার মনে এখনো কোনো দূর্বলতা আছে !!!

দৈবিক : (একটু উদাসীনভাবে) যে তোমাকে একবার ভালোবাসে মিষ্টি, সে কখনো আর অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে !!!

অভিরী : গলাটা যেন কেমন শোনালো তোমার !!! শোনো দৈবিক, সুর চ্যাটার্জির কাছ থেকে না আমি সব কিছু কেড়ে নেব, সব কিছু.... আমার Granny, Mom আর Dad-এর Extra Marrital Affair-টা মেনে নিতে না পেরে সব কিছু তার সাধের নাতনি সুর চ্যাটার্জি-কে লিখে দেন... আচ্ছা, সুর চ্যাটার্জি কি Chatterjee & Chatterjee Group-এর এত্ত Property সামলাতে পারবে !! আরে, সুর চ্যাটার্জি এত্ত আবেগপ্রবণ না যে, যে আমি ওর কাছ থেকে তোমাকে কেড়ে নিলাম- সেই আমার কপালে যদি কেউ পিস্তল ধরে তাকে সব সম্পত্তি লিখে দিতে বলে... ও আমাকে বাঁচাতে সব সম্পত্তি লিখে আমাদের পথে বসাতে দু'বার ভাববে না বুঝলে !!! দু'বার ভাববে না... ওর জীবনে ভালোবাসা-টাই সবকিছু...

দৈবিকের মুখটা অকস্মাৎ কঠিন হয়ে পড়ে...

দৈবিক : (কঠোরভাবে) তাই তুমি ওর কাছ ওর ভালোবাসা-টাই কে...

অভিরী : শোনো, দিদিভাই-এর জীবনের প্রথম ভালোবাসা ছিল টিনটিন দা, যাকে তুমি ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছো... হিংসাতে... তুমি কি ভাবো বলো তো, দিদিভাই যদি সেদিন Dad-এর PA এর স্ত্রী মানে ওর ওই So Called Governess বসুন্ধরা মাসি আর টিনটিন দা-কে আটকাতে গিয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত না পেত, যদি সবকিছু ভুলে না যেত- তাহলে তোমার কোনো Chance হতো !!! কক্ষনো না... আমার কিন্তু সব মনে আছে দৈবিক... Dad-এর PA উদয় চ্যাটার্জি কিন্তু সেদিন টাকা চুরি করে নি... দিদিভাই আর টিনটিন-দার বন্ধুত্বকে হিংসা করে টিনটিন দা-কে সরাতে টাকাটা তুমি সরিয়েছিলে... Uncle-এর এই মিথ্যে কলঙ্কটা ওনার স্ত্রী বসুন্ধরা মাসি মেনে নিতে পারেন নি... সব ছেড়ে ওনারা চলে যান... আর ওনাদের আটকাতে গিয়েই দিদিভাই-এর ওই Accident-টা হয়... তুমি হিংসুটে না !!!

দৈবিক : তাহলে তুমি সবকিছু জেনেও কাউকে কিছু কেন বলো নি !!!

অভিরী : কারণ দিদিভাই-কে কষ্ট পেতে দেখলে আমার অদ্ভুত একটা তৃপ্তি আসে...

দৈবিক : তাহলে যদি পরে কোনোদিন সুর-এর জীবনে ভালোবাসা আসে, তুমি আমাকে ছেড়ে তার কাছে চলে যাবে !!! সুর-এর কাছ থেকে ওর ভালোবাসাকে কেড়ে নিতে !!!

অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে অভিরী... হাসির দমক কমলে অভিরী বলে,

অভিরী : ওকে কে ভালোবাসবে !!! টিনটিন-দাকে তো তুমি ভাগিয়ে দিলে... হ্যাঁআআআআআ... এবার যদি কোনোভাবে টিনটিনদা ফিরে আসে, সেটা অন্য ব্যাপার !!! তবে সে কি আর ফিরবে !!!

দৈবিক : আমি এখন রাখছি মিষ্টি... তোমার Dad-এর সাথে একটু কথা বলতে হবে !!!

অভিরী : কেন !!! Dad-এর সাথে তোমার কি এমন দরকারি কথা মনে পড়লো !!!

দৈবিক : এতদিনে আঁধারের মধ্যে একটা হাল্কা আলোর রেখা দেখতে পেলাম মিষ্টি... সুর-কে Kidnap করার একটা Motive এতদিনে খুঁজে পেলাম...

অভিরী : মানে !!!

দৈবিক : পরে কথা বলছি... Bye...

অভিরী : হ্যা.... হ্যালো... হ্যালো... যাহহহহ... ফোনটা রেখে দিল....

দৈবিক : পরে কথা বলছি...


Chatterjee Mansion (সেদিন রাত্রিবেলা) :

-------------------------------------------------------------

দেবতনু : আমি তোমাকে বলছি শোনো নীহার, ওই বসুন্ধরা দেবীর খোঁজ পেলেই আমরা সুর-কে খুঁজে পাব....

নীহার : না না... তোমার এই মতের সাথে কিছুতেই একমত হতে পারছি না.... বসুন্ধরা আর যাই করুক, সুর-এর ক্ষতি করতে পারে না.... ও টিনটিন-এর থেকেও সুর-কে বেশি ভালোবাসে... রাগিনী তো আমার উপর অভিমান করে নিজের মেয়ের মুখটা দেখার আগেই আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেল... এতটাই অভিমান হয়েছিল যে... একবারের জন্য বললো না যে মা হতে গেলে ওর আর বাঁচবে না... মা ওকে আদর করে বাড়ির বউ করে নিয়ে এসেছিল, সেই মায়ের উত্তরাধিকারীর ইচ্ছে নিজের প্রাণ দিয়ে পূরণ করে চলে গেল....

অভিরী : (মনে মনে বিরক্তিভরে) উফফফফফ !!! Dad-এর যে বয়েসটা বাড়ছে, সেটা বোঝা যাচ্ছে... বড়মাসি আর দিদিভাইকে নিয়ে কথা শুরু হলে থামতেই চাইছে না... ঘ্যান ঘ্যান করেই যাচ্ছে...

নীহার : উদয়ও যে টাকা তছরূপ করতে পারে বা টাকা সরাতে পারে- সেটাও এই পনেরো বছরেও আমার বিশ্বাস হলো না...

দেবতনু : আরে নীহার, তখন তো তুমি ছিলে না... রোহিনীকে নিয়ে মরিশাসে ছিলে Business Trip-এ... শুধু তোমার দুই মেয়েকে নিয়ে শুধু মাসিমা ছিলেন এখানে... এতবড় সুযোগ কেউ ছাড়ে !! আর আত্মগ্লানি না হলে কেউ Suicide করে বলো !!

নীহার : সেইখানেই তো আমার আরো বেশি দ্বিধা আছে... উদয় আমার ছোটবেলার বন্ধু ছিল... আমরা একে অপরকে নিজেদের থেকেও বেশি বিশ্বাস করতাম.... সেই উদয় যে এইভাবে আত্মহত্যা করতে পারে !!! কত দুর্দিনে, ব্যবসার কত উত্থান-পতনে ও আমার ভরসার আধার ছিল... ওর মধ্যে একটা অদ্ভুত Positive Vibes ছিল, যেটা সব Negetivity-কে কাটিয়ে দিতে পারত... সে আত্মহত্যা করবে !! নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ না করেই !!!

দেবতনু : আহহহহ নীহার, তোমার যে বয়েস হচ্ছে সেটা বোঝা হচ্ছে... বড্ড Emotional হয়ে পড়ছো... দেখো এখন ঠান্ডা মাথায় Rationally ভাবার সময়... আমাদের তো সুর-কে খুঁজে বার করতে হবে... তোমার ওই অকম্মার IPS Officer তো কিছুই করছে না...

এমনসময় দেবতনুর ফোন বেজে ওঠে,

দেবতনু : দেখো, বলতে না বলতেই তোমার ওই অকম্মাটা ফোন করেছে....

নীহার : ধরো... ধরো....

দেবতনু : হ্যালো... What !!! কি বললে !!!


অজ্ঞাত ডেরা (সেই রাতেই) :

----------------------------------------

আজকাল উত্তীয় সুর-এর ধারেকাছে এলেই সুর-এর অন্তরে একটা অজানা শিহরণ খেলে যায়... তার উপর উত্তীয়-র চোখে যেন আজ সুর-এর অস্তিত্বে নিজের অস্তিত্বকে মিশিয়ে দেবার নেশা...

আজকে ভীষণ কাছে চাই- বুকের কাছে, বুকের মাঝে,

অতীতটা যে ভীষণ জোলো, ভবিষ্যতও এলোমেলো,

আয় না, আমার আজকে হয়ে,

তোর আদুরে চিন্তাগুলো, এলোমেলো স্মৃতিগুলো,

অনেক দূরে উড়িয়ে দিবি,

অনেক দূরে, দেশান্তরে, সূদুর কালো নিভিয়ে দিবি...

                                       (✍ : সঙ্গীতা দুয়ারী)

সুর : তুউউউ.... তুমি এইভাবে এক পা এক পা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছো কেন !!! ক্কি !! ক্কি চাও তুমি উত্তীয় !!

উত্তীয় : জানো না তুমি !! কি চাই আমি !!!

সুর : নাহহহহ.... সরো....

সুর পেছতে পেছতে তার Dressing Table-এ ধাক্কা খাবার আগেই উত্তীয় একটা হাত দিয়ে সুরের কোমরটা ধরে নিজের কাছে টেনে ওর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললো,

উত্তীয় : আজকে কি চাঁদটাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে !!! না কি আমারই মনে হচ্ছে !!! অবশ্য আমার তো কত কিছুই মনে হয় !!! জানো সুর, মায়ায়, ভালোবাসায়.... মনের সুরে সুর মিলিয়ে মাঝে মাঝে ভালোবাসাকে ধরে রাখতে হয়... সবসময়ই যদি ছেড়ে দেবার মনোভাব থাকে, তবে নিজেকেই কষ্ট পেতে হয়... বারবার... বারবার...

সুর : মা... মা... মানে !!!

উত্তীয় সুরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হুট করে কোলে তুলে নেয়... সুর পুরো থতমত খেয়ে যায়.... উত্তীয় সুরকে খাটে বসালে সুর উত্তীয়-র থেকে একটু দূরে সরে বসে... উত্তীয়-র মুখে একটা মিচকে দুষ্টুমিভরা হাসি... উত্তীয় সুর-এর এত কাছে সরে আসে যে সুর নিজের অজান্তেই উত্তীয়-র ঘ্রাণ প্রাণ ভরে নেয়, উত্তীয়-র আবেশে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে থাকে... উত্তীয় একটা আঙুল দিয়ে সুর-এর অগোছালো চুলগুলোকে সরিয়ে মুগ্ধ নয়নে সুরকে দেখতে থাকে, তারপর সুর-এর কোলে শুয়ে পড়ে.... সুর-এর একটা হাত নিজের বুকে টেনে সেটাকে আঁকড়ে ধরে বলে,

উত্তীয় : আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব সুর, যেদিন তুমি আমার ভালোবাসায় নিজেকে সম্পৃক্ত রূপে আবিষ্কার করবে... যতদিন না তুমি মন থেকে সায় পাবে, নিজে সম্মতি দেবে- ততদিন পর্যন্ত আমরা শুধুই বন্ধু হয়েই থাকব.. কথা দিলাম...

'একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে সকল প্রেমের স্মৃতি,

           সকল কালের সকল কবির গীতি....'



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance