Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance

3  

Ushri Chatterjee Bandyopadhyay

Romance

প্রিয় অসম্পূর্ণতা (পর্ব ৩)

প্রিয় অসম্পূর্ণতা (পর্ব ৩)

5 mins
246


অজ্ঞাত ডেরা :

-----------------------

জানলা দিয়ে মিষ্টি রোদের আলো এসে সুর-এর ঘুম ভাঙায়... সুর চোখ খুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে গতকালের স্মৃতি মনে পড়তেই দুম করে উঠে পড়তে যায়, কিন্তু দুর্বল শরীরে তা পেরে ওঠে না... একটু উঠেই আবার বিছানায় নেতিয়ে পড়ে যায়....

নেপথ্যে : Nerve Soothing Injection দেওয়া আছে, দয়া করে তাড়াহুড়ো করো না... Body permit করবে না...

আবার সেই জলদগম্ভীর গলা ভেসে এলো সুর-এর কানে... সুর কোনোরকমে ধীরে সুস্থে উঠে বসে... মুখ ঘুরিয়ে সুর দেখে সেই আগন্তুক জানলা খুলে জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে তাকে কথাগুলো বললো...

সুর : In... Injection 💉 ... Injection কেন দিয়েছিলেন আপনি !! আপনি কি ডক্টর !!!

আগন্তুক : ডাক্তার হই বা গুন্ডা - তোমার কাছে আমার এখন একটাই পরিচয়- আমি তোমার Kidnapper... তাই নয় কি !! আচ্ছা, কতদিন ধরে ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া করো নি বলো তো !!! এত দূর্বল কেন !!!

সুর : That's none of your Business.... আমাকে কতদিন এখানে বন্দি থাকতে হবে !!!

হঠাৎই আগন্তুক উদাত্ত কন্ঠে গেয়ে ওঠে,

আগন্তুক :

         কি আনন্দ, কি আনন্দ, কি আনন্দ !!!

         দিবারাত্রি নাচে মুক্তি, নাচে বন্ধ...

         সে তরঙ্গে, ছুটি রঙ্গে, পাছে পাছে...

         তাতা থৈথৈ, তাতা থৈথৈ, তারা থৈথৈ

সুর এই গলা শুনে মুগ্ধ হয়ে যায়... সবকিছু ভুলে যায় কিছুক্ষণের জন্য.... কি সুন্দর গানের গলা !!! মূহুর্তের মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ওঠে,

সুর : আপনি কি পাগল !!! আমার প্রশ্নের উত্তরে রবি ঠাকুরের এই গান গাওয়ার কি মানে !!! বলুন না, কতদিন বন্দি থাক...

আগন্তুক : যতদিন না তুমি এই রাজকন্যার কোমলতা ছেড়ে চিত্রাঙ্গদা হয়ে ওঠো...

সুর : আপনি কি নিজেকে অর্জুন ভাবেন না কি !!! দেখুন আর ক'দিন পর আমার বোনের বিয়ে... আমাকে পাওয়া না গেলে...

আগন্তুক : জানি... জানি... জানিইইইইইই....

আবার আগন্তুক চিৎকার করে জানলায় জোরে একটা ঘুসি মারে... সুর চমকে উঠলেও দেখে আগন্তুকের হাত থেকে রক্ত বেরচ্ছে...

সুর : এ... এ... এ কিইইই !!! আপনার তো হাত থেকে রক্ত পড়ছে... দেখি হাতটা...

সুর খাটিয়া থেকে নেমে আগন্তুকের দিকে দ্রুত যেতে গেলে সুর-এর আবার মাথা ঘুরে যায়... কিন্তু আগন্তুক দ্রুত এসে সুরকে শক্ত করে ধরে ফেললো নিজের বুকের মধ্যে... সুর-এর নিজেকে আগন্তুকের দুই বাহুর মধ্যে এক ছোট্ট বাচ্চার মতো লাগছে, কারন সেই বাঁধনে এতটাই মমতা, এতটাই affinity ছিল...

আগন্তুক : (কাতর গলায়) কি করছো নদী !!! এক্ষুনি পড়ে যেতে তো !!! তোমাকে তো বললাম, তোমাকে Injection দিতে হয়েছে... সবসময়ই লোকের কথা ভাবা ছাড়ো নদী... সবাই তোমার এই নরম, কোমল মনটার-ই সুযোগ নিতে চাইছে নদী.... তুমি কিছু বোঝো না, খালি সবার কথা ভেবে যাও....

অপহৃত হবার পর এই প্রথম সে আগন্তুককে সামনে থেকে দেখলো, কাল সারারাত তো আগন্তুক মুখে কালো কাপড়ে ঢেকে রেখেছিল... সূর্যের নরম আলোয় আগন্তুককে দেখলেও রূপের ছটায় ক্ষণিকের জন্য সুর-এর চোখ ধাঁধিয়ে যায়, অবশ্য যে কারোরই চোখ ধাঁধিয়ে যাবে... কিন্তু সুর-এর আগন্তুককে দেখে গান্ধার শিল্পের সেই শান্ত, সমাহিত বুদ্ধের কথা মনে পড়ল- ভাস্কর্যোচিত মেদবিহীন পেশীবহুল সুঠাম চেহারা, উন্নত গ্রীবা, টকটকে ফর্সা রঙ, ঠোঁট দুটো লাল টকটকে, টানাটানা চোখ... কিন্তু মুখ শান্ত, সমাহিত, কমনীয়, সৌম্য... পার্থক্য শুধু এই আগন্তুকের চোখে মুখে অদ্ভুত এক তেজদীপ্ততা বিরাজ করছে, যা এতটাই উজ্জ্বল যে যে কোনো অশুভ শক্তির চোখ ধাঁধিয়ে দিতে পারে, যে সব অশুভ শক্তির বিনাশ একা নিজের হাতে করে দেবার ক্ষমতা রাখে... এই মানুষ কোনো অন্যায়ের সাথে যুক্ত থাকতে পারে বলে সুর-এর মন সায় দিচ্ছে না...

সুর : আপ... আপনার হাতে রক... রক্ত... First... Aid লাগবে....

সদ্য ঘুম থেকে ওঠা সুর-এর কমনীয় মুখ আর গভীর সাগরের মতো চঞ্চল অথচ স্থির দুটো চোখের দিকে তাকিয়ে আগন্তুকের সেখানেই তলিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু তার হাত পা বাঁধা... সব কথা জানানোর সময় এখনো আসে নি যে... তাই নিজের মনের খাঁচায় চাবি দিয়ে সুর-এর চোখ থেকে চোখ সরিয়ে ওকে সরিয়ে দূরে সরে এলো... সুর আগন্তুকের চোখের বছর পনেরো আগে এক খুব আপন মানুষের এক ঝলক দেখতে পেল, কিন্তু সে যে কে তা ওর মনে পড়ল না...

আগন্তুক : (কঠোরভাবে) সেটা আমি নিজেই করতে পারব... তুমি চুপ করে বসে দুধটা শেষ করো Please...

সুর : ইসসস, দুধ... ইয়াআআআআআ ... আমি খাব না... গন্ধ লাগে...

আগন্তুক : তাহলে ছোটোবেলার মতো নাক টিপে খাওয়াতে হবে... by the way, ওতে Choco Syrup দেওয়া আছে, খেতে অসুবিধা হবে না...

সুর : এই এক সেকেন্ড.... আপনি কিছুক্ষণ আগে আমাকে নদী বলে ডাকলেন... এখন আমার দুধ খাওয়ার....

আগন্তুক একটা অসম্ভব দুষ্টমিভরা মিচকে হাসি হেসে একটা অদ্ভুত কোমল দৃষ্টিতে সুর-এর দিকে তাকায় যে সুর নিজেকে সংযত করে নেয়... সুর তার দৃষ্টি থেকে চোখ সরিয়ে নেয়... কিন্তু তার কিছুক্ষণ পর আগন্তুকের একার হাতে Bandage বাঁধার ব্যর্থ প্রচেষ্টা দেখে নিজের স্বভাববিরুদ্ধ ভঙ্গিমায় খিলখিলিয়ে হেসে খাটিয়াতে লুটিয়ে পড়ে... সুর-এর এই প্রাণখোলা হাসি দেখে আগন্তুকের মুখেও প্রশান্তির মৃদু হাসি খেলে যায়... হাসতে হাসতে সুর বলে,

সুর : May I...

আগন্তুক First Aid Box নিয়ে সুর-এর পাশে এসে বসে... সুর খুব যত্নে আগন্তুকের রক্তাক্ত হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে সুন্দর করে রক্ত পরিষ্কার করে দিতে থাকে... সুর হাতে মলম লাগানোর সময় ভীষন যত্নশীল থাকে যাতে আগন্তুকের এতটুকু যন্ত্রণা, এতটুকু ব্যাথা না লাগে... সেই প্রচেষ্টায় এতটাই যত্ন ছিল, এতটাই নম্রতা ছিল যে আগন্তুক ভুলেই গিয়েছিল যে সে বিহ্বল দৃষ্টিতে সুর-এর দিকে তাকিয়ে আছে... সুর-এর গলা পেয়ে চমকে ওঠে,

সুর : (আমতা আমতা করে) নাম... নামটা জানতে পারি...

আগন্তুক : অ্যাঁ...

সুর : নাম !!! না মানে কথা বলতে সুবিধা হতো...

আগন্তুক : উত্তীয়....

সুর : আমাকে কতদিন এখানে বন্দি করে রাখবেন উত্তীয় !!! আর কেন বা এই বন্দীদশা !!! কারণটা জানতে পারি....

উত্তীয় : যতদিন না তোমাকে পণ রেখে যে পাশাখেলাটা চলছে, তাতে আমি কিস্তিমাত দিতে পারি... ততদিন তুমি এখানেই থাকবে- আমার চোখের সামনে... প্রতিক্ষণে... আশা করি, তোমার দুটো প্রশ্নেরই উত্তর তুমি পেয়ে গেছো...

সুর বিস্ময় ভরা চোখে উত্তীয়-র দিকে তাকিয়ে থাকে... উত্তীয়র-ও দৃষ্টি সুর-এর দিকে স্থির...


নেপথ্যে (ক্রুর স্বরে) :

------------------------------

কতগুলো ঘন্টা পেরিয়ে গেল... প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেল... আর তোমরা এখনো কোনো Clue পাচ্ছো না... How is it Possible !! কে এত Planning করে সুর-কে তুলতে পারে !!! কে !!! কে !!! কেএএএ !!! নাহহহ... আমাদের এতদিনের এত Planning এইভাবে ভেস্তে যেতে পারে না... কি করছিস তোরা এতগুলো ছেলে মিলে !!! সুর-এর মতো একটা নরম মাটির তালকে খুঁজে পাচ্ছিস না !!! নিষ্কর্মার দল সব... কান খুলে শুনে রাখ, সুর-কে কিন্তু আমাদের চাই... আমাদের এত বছরের Plan এইভাবে ভেস্তে যেতে দেব না... কিছুতেই না... আমাদের এতদিনের এত বড় Plan-এ কে এইভাবে জল ঢেলে দিয়ে চলে গেল !!! কার এতবড় সাহস !!! আমাদের সাথে পাঙ্গা নিতে চাইছে- কে সে !!!

না... না... মাথা গরম করলে হবে না... মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে... কিন্তু একটা প্রশ্ন আমাকে কুরেকুরে পাগল করে দিচ্ছে- আজ কুড়ি বছর পর হঠাৎ করে সুর-এর কোন আপনজন গজিয়ে উঠল যে সুর-কে বাঁচাতে চাইছে !!! সুর-এর নিজের রক্তের বাবা, মাসি, বোন-ও তো সুর-এর এত আপন নয়... তাহলে কে !!! একটু ঠান্ডা মাথায় ভাবতেই হচ্ছে... কিন্তু তুমি যেই হও না কেন, কাজটা তুমি ঠিক করো নি !!! এর শাস্তি তোমাকে পেতেই হবে.... একবার... একবার শুধু তোমাকে আর সুর-কে খুঁজে পাই....

চারিদিক ভয়ঙ্কর একটা ক্রুর, নিষ্ঠুর হাসিতে ভরে যায়....

(তাহলে কে নায়ক আর কে খলনায়ক !!!! সত্যিই কে হয় উত্তীয় সুর-এর !!! কেন সে সুর-এর জন্য নিজেকে এত বড় বিপদের মধ্যে ঠেলে দিল !!! কে এই 'উত্তীয়' !!! কি মনে হয় তোমাদের !!!)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance