STORYMIRROR

Anishri's Epilogue

Romance

3  

Anishri's Epilogue

Romance

প্রিয় অসম্পূর্ণতা (পর্ব ১)

প্রিয় অসম্পূর্ণতা (পর্ব ১)

6 mins
259

Chatterjee Mansion :

----------------------------------

কলকাতার Business Tycoon নীহার চ্যাটার্জির ঘরে আজ উৎসবের আমেজ... তার বড় কন্যা সুর বাংলার বিখ্যাত সঙ্গীত প্রতিযোগিতা 'মা পা ধা নি সা' তে জয়ী হয়েছে... আর তার কনিষ্ঠা কন্যা অভিরী এর আর্শীবাদ আজ তারই ব্যবসায়ীক বন্ধুর ছেলে দৈবিক এর সাথে...

ব্যবসায়ীক বন্ধুত্বকে পারিবারিক সম্পর্কে বাঁধার জন্য ছোট থেকেই সুর-এর সাথে দৈবিকের বিয়ে ঠিক ছিল... সুর নির্মল, স্নিগ্ধ, নিষ্পাপ সুন্দর, অত্যন্ত চাপা স্বভাবের... দুধ-আলতার মতো গায়ের রঙ, গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট, কালো ভ্রমরের মতো কালো কালো টানা টানা আয়ত চোখ, টিকল নাক, মেঘের মতো পিঠ ছাপানো চুল, নরম নরম পুতুল পুতুল গড়ন... দৈবিকের সাথে তার প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর তারা সারা জীবনের সাথী হবার অঙ্গীকারের আবদ্ধ ছিল... কিন্তু সুর নিজের অন্তরকে কারুর সামনেই প্রকাশ করতে পারে না... তাই ধীরে ধীরে যখন দৈবিকের সাথে তার অন্তরের বাঁধন ধীরে ধীরে আলগা হতে লাগল, সে বরাবরের মতোই সে স্থিরাই ছিল... সুরের সাধনাকে আঁকড়ে ধরে তার সব নির্বাক কান্না, যন্ত্রণাকে সুরের মুর্ছনাতে ভাসিয়ে দিয়েছিল... প্রেমের প্রথম ধাপেই প্রেমিকার ভূমিকায় ব্যর্থ সুর নিজেকে ক্রমশঃ গুটিয়ে নিয়েছিল অনাবশ্যকতার উপনামে... সুর যে 'প্রেমের পিয়াসী প্রেমিকা' হতে চায় নি, সে হতে চেয়েছিল 'ভালোবাসায় সংরক্ষিতা' হতে.... কিন্তু আজ সুর বারবার ফিরে যাচ্ছে সেই ফিরে আসা সময়ে... কিছু না বলা কথায়, অগোছালো কিছু পড়ে থাকা ভালোবাসায়... ছোটোবেলার সেই চোখের মায়ার সাগরে হারানো মিষ্টি হাসি মুখ, আর সময়ের ব্যস্ততাকে স্তব্ধ করা স্মৃতির আফসোস... মরিচিকার সমাজ আজ বড্ড ব্যস্ত... তাই হৃদয়ের ঐশ্বর্য আজো আড়ালে লুকানো, হৃদয়ের ব্যর্থ আবেগ আজ প্রতারিত...

সুর-এর চিন্তার আবেশ কাটে রোহিনীর দরজার ধাক্কার আওয়াজে... রোহিনী নীহারের দ্বিতীয়া স্ত্রী, সুরের স্বর্গীয়া মা রাগিনীর ছোট বোন, অভিরী-র মা... সবাই বলে, সে সুরের জন্যই নীহারকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়...

রোহিনী : নদী... নদী রে ... দরজা খোল তো মা....

সুর দ্রুত চোখ মুছে মুখে স্মিত হাসি টেনে দরজা খোলে,

সুর : কিছু বলবে মামনি !!!

রোহিনী সুরের বিছানায় অভিরীর Peach রঙের Designer লেহেঙ্গা আর কল্যান জুয়েলার্সের মুহুরাতের ভারী গয়নাগুলো রাখে...

রোহিনী : মিষ্টিকে একটু তৈরি করে দে না মা...

সুর : আচ্ছা মামনি, আমি ওকে তৈরি করে দেবো...

রোহিনী : এই তো আমার সোনা মেয়ে... হ্যাঁ রে, নদী- তোর কষ্ট হচ্ছে না তো মা !!!

সুর : কিসের কষ্ট মামনি !!!

নেপথ্যে : এই যে দৈবিক আমার হয়ে গেল...

সুর পিছনে তাকিয়ে দেখে অভিরী তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতে হাসতে তার দিকে এগিয়ে আসছে... চোখ ঝলকানো রূপ অভিরীর... যে একবার দেখবে, সে চোখ ফেরাতে পারবে না...

সুর : দৈবিক তোর জন্যই তৈরি হয়েছিল রে মিষ্টি...

অভিরী : নিজেকে একটু বদলা দিদিভাই... একটু Update কর... নিজের Utopian জগৎ থেকে বের হ...

সুর, অভিরী, দৈবিক এক স্কুলে পড়লেও কলেজে উঠে সুর Music Hons নিয়ে অন্য কলেজে ভর্তি হয়... অভিরী আর দৈবিক এক কলেজে পরার সুবাদে একে অপরকে নতুন করে চিনেছে, আর সেখান থেকেই একে অপরের প্রতি ভালবাসা অনুভব করেছে... আর ধীরে সুর-এর সাথে দৈবিকের বাঁধন শিথিল হয়ে পড়ে... বাঁধন যত শিথিল হয়েছে, সুর তত সুরের সাধনায় মগ্ন করে নিয়েছে নিজেকে... তার জীবনের সব বাঁধনই বড় শিথিল... অভিরীকে সাজাতে সাজাতে কোনো এক গোপন বেদনায় তার অন্তর ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত হতে থাকে...

অভিরী : আজ আমাকে যা লাগছে না দিদিভাই, দৈবিক Just চোখ ফেরাতে পারবে না...

অষ্টাদশী অভিরীর এই ছেলেমানুষী দেখে সুরের মুখে একটা মৃদু হাসি খেলে যায়...

অভিরী : তুই কি পরবি দিদিভাই !!!

সুর : আমি কিছু একটা পড়ে নেব...

অভিরী : তোর Wardrobe-টা খোল তো... দেখি কি আছে !!! আমার তো একটা Prestige আছে বল... দেখি সাদা ছাড়া অন্য কোনো রঙ খুঁজে পাই কি না !!! তুই তো আবার সাক্ষাৎ সরস্বতীর প্রতিমূর্তি...

সুর : আমাকে নিয়ে পড়লি কেন !!! আজ তো তোর দিন... আজ তো তোকেই সবাই দেখবে...

অভিরী : (ব্যঙ্গাত্মক স্বরে) তোকেও তো দেখবে... Afterall, 'মা পা ধা নি সা' -র বিজয়িনী বলে কথা... 

সুর : আমার কথা ছাড়...

অভিরী সুরের Wardrobe ঘাটতে থাকে... হঠাৎই একটা সাদা রেশম ঢাকাই টেনে বার করে...

অভিরী : এর সাথে atleast একটা Multi-Colour Blouse পরিস দিদিভাই...

সুর এবার একটু হেসেই ফেলে... আলমারি থেকে একটা হাল্কা দুধ-আলতা ব্লাউজ বার করে বলে,

সুর : এইটা চলবে !!!

অভিরী : সত্যিই !! তুই না দিদিভাই !! কে বলবে তুই আমার থেকে মাত্র দু'বছরের বড় !!! না কি ইচ্ছে করে এমনি করছিস তুই !!!

সুর : (অবাক হয়ে) ইচ্ছে করে !!!

অভিরী : নিজের পরাজয়টা মেনে নিতে পারছিস না...

সুর : তোর আর দৈবিকের সাথে আমার কোনোদিনই কোনো প্রতিযোগিতা ছিল না রে... আসলে জীবনের সাথেই আমার বাঁধনটা বড় আলগা....

অভিরী : তোর এই ভারি ভারি কথা আমি বুঝি না... ছাড়, তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে আয়....

ধান দূর্বা দিয়ে দুই বাড়ির লোক দৈবিক আর আভিরীকে আর্শীবাদ করলো... এতদিনের চেনা পরিচিত মানুষগুলো নতুন সম্পর্কের মোড়কে বাঁধা পড়ল, কেবল ব্রাত্য থাকলো সুর... সে যন্ত্রমানবের মতো নির্বাক হয়ে সব কর্তব্য করে গেল... মাঝে মাঝে কেবল তার অবাধ্য মন আর চোখ দৈবিকের দিকে চলে যাচ্ছিল.. দৈবিকের সাথে অনেক একান্ত মূহুর্ত ছিল, সেগুলো বারবার ভিড় করে আসতে থাকে... মুখের স্মিত হাসির আড়ালে সেই যন্ত্রণা লুকাতে থাকে... এরপর সবাই মিলে দারুণ খাওয়া-দাওয়া হলো... কিন্তু সুর যে মুখে কিছুই দিল না, কেউ খেয়াল করলো না... বেশ কিছুক্ষণ পর রোহিনী সুরকে বলে, অভিরী আর দৈবিক-কে ডেকে দিতে... খাওয়া-দাওয়ার পর সবাই ওদের একটু একান্তে ছেড়ে দিয়েছিল... সুর সবকিছু গুছিয়ে রেখে ওদের ডাকতে গেল...

সিঁড়ি দিয়ে অভিরীর ঘরে ঢোকার মুখে সুর দেখে, পড়ন্ত বিকেলে আলোতে দৈবিক অভিরীকে নিজের কাছে টেনে তার ঠোঁটে গাঢ় চুম্বন করছে, দৈবিকের এরূপ আচরণে অভিরী শিহরিত হতে থাকে... চোখ বন্ধ করে সবটুকু আদর গ্রহণ করতে থাকে... সুর ধাক্কা খেয়ে সিঁড়ি থেকে সরে আছে... কিছুক্ষণ পর ওদের ডেকে দিয়ে সুর নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে মায়ের ফোটোর সামনে গিয়ে ক্ষণিক দাঁড়ায়... তারপর নিজের ডায়েরিটা টেনে নেয়...


প্রিয় অসম্পূর্ণতা,


পূর্ণতা না পাওয়া ভালোবাসা অতীতের মানুষটাকে ঘিরে হৃদয়ের মাঝে কেন বারবার আবর্তিত হতে থাকে !! আচ্ছা, প্রেমিকা হতে গেলে কি সুন্দরী হতেই হয় !!! কোনো সাজ, আড়ম্বরহীনভাবে স্বচ্ছ আমাকে নেবে তো তোমার কাছে টেনে !!! শুধুমাত্র এই কারণেই একদিন আমার আর দৈবিকের সম্পর্কটা শেষ হয়ে দৈবিক আর অভিরীর Journey-টা শুরু হয়... আর আমার Journey-টা শুরু হয় দৈবিককে ভুলে যাওয়ার... আমি এখন দৈবিককে ভুলে যাওয়ার চেষ্টায় রত... দৈবিক এখন অভিরীর প্রেমে মশগুল... তাই ওদের নতুন জীবনে জড়িয়ে ওদের আর বিব্রত করতে চাই না... গুটিয়ে নিতে থাকলাম নিজেকে... প্রথম প্রথম কি প্রচন্ড কষ্ট হতো !!! বারবার মনে হতো কেন দৈবিক আমাকে ভালোবেসেও ছেড়ে চলে গেল !!

কান্না পেত খুব, কিন্তু আমি তো সহজে কাঁদতে পারি না... তাই কেমন একটা দমবন্ধ হয়ে আসতো আমার... মাঝে মাঝে মনে হোত মরে যাই... কিন্তু দৈবিকের থেকে পাওয়া বিশ্বাসঘাতকতা আমাকে ওকে ভুলতে খুব সাহায্য করেছিল... আর সময়... সময়ের সাথে সাথে সব স্মৃতি চাপা পড়তে লাগল... গানকে আশ্রয় করে সবকিছুর সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম... জীবনের সাথে তাল মেলাতে মেলাতে কখন যে দৈবিকের দেওয়া আঘাত, দৈবিকের স্মৃতিগুলো হৃদয়ের গহীন গভীরে চাপা পড়ে গেল, টেরই পেলাম না...

কিন্তু আজ ওদের দেখে কয়েক মূহুর্তের জন্য যেন ঘোর লেগে গিয়েছিল... কিসের একটা অমোঘ আকর্ষণ আমাকে বারবার টানছিল !!! না... না... ওদের দিকে নয় !!! নিজের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া তো দূরের কথা, সাধারন অধিকার জোর করে ফলানো সম্ভব নয় আমার পক্ষে... অমোঘ আকর্ষণ ছিল কিছু প্রশ্নের দিকে...

আচ্ছা, চোখে কাজল না দিয়ে ভালোবাসামাখা, মায়াবি চোখে তোমার মুখের পানে চেয়ে থাকলে তোমার চোখে সুন্দরী হতে পারব কি !!! শাড়ির খোলা আঁচল, খোলা চুল আর নেলপালিশ বিহীন আঙুল দিয়ে তোমার চুলে হাত বুলিয়ে দিলে- পচ্ছন্দ হবে তোমার !!! তোমার হাতে হাত রেখে যদি তোমার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে চুপ করে থাকি, তাহলে কি প্রেমিকা হতে পারব না তোমার !!! রূপ ছাড়া শুধু ভালোবাসা নিয়ে তোমার সামনে দাঁড়ালে ভালোবাসতে পারবে না আমাকে !!! সাজবিহীন নারীর সৌন্দর্যের পূজারী কি হতে পারবে তুমি !!!?

(কথায় বলে, জীবনে মনের মতো কেউ এলে প্রেমে একবার নয়, বারবার পরা যায়... কি হবে সুর -এর ভালোবাসার !! সে কি খুঁজে পাবে তার অসম্পূর্ণতা-কে !!! পরস্পরে মিলে হবে পূর্ণতা পাবে !!! কেমন হবে পরবর্তী পর্ব !!! কি বলো তোমরা !!! অবশ্যই জানিও... একটা স্বতন্ত্র গল্প লেখার প্রাথমিক প্রচেষ্টা মাত্র...)



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance