STORYMIRROR

aparna sadhukhan

Comedy Romance Others

3  

aparna sadhukhan

Comedy Romance Others

পরিনতি

পরিনতি

13 mins
185

মা- বাবু কি করছিস ছাদে। এখুনি নিচে আয় বৃষ্টি পরছে তো

‌সৃজন- হ্যাঁ মা যাচ্ছি। ছাদ থেকে নামতে যাবো ঠিক সেই সময় পাশের ফ্ল্যাটের ছাদের দরজা খুলে একজন ছাদে উঠল। আমি দেখা মাত্র থমকে গেলাম। কে এনি আগে তো কোনোদিন দেখিনি, এই বৃষ্টিতে উনি ছাদে কি করছে। কিছু টা সময় ওখানে দাড়িয়ে থেকে নিচে নেমে গেলাম।

‌পরের দিন

‌সৃজন -আমি বিকালে করে গিটার নিয়ে রোজ ছাদে যাই। আজ ও তাই গেছিলাম । ছাদে উঠেই দেখি কালকের সেই ম্যাডাম আজকে আমার বাড়ির ছাদের দিকে তাকিয়ে কার যেন আসার অপেক্ষা করছে। আমাকে দেখেই মেয়েটি হই হই ই ই ই করে উঠলো। আমি ভয়তে দু পা পিছিয়ে গেলাম 

‌পিওন- এই এই,,,,,,,,, 

‌সৃজন- কে! আমি। 

‌পিওন- হ্যাঁ তুমি। কাল আমাকে ওমন করে দেখছিলে কেন, আমি ভূত না পেত্নী।। 

‌সৃজন- আসলে তুমি ভূত ও না পেত্নী ও না, আসলে তোমাকে আগে কোনোদিন দেখিনি তো তাই দেখছিলাম। 

‌পিওন- কেন হে আগে কি কোনোদিন মেয়ে দেখোনি, নাকি মেয়ে দেখতে ভালো লাগে। 

‌সৃজন- তুমি আমাকে ভুল বুঝঝো। আমি ওই রকম ছেলে না। 

পিওন- কে কি রকম ছেলে সেটা আমার ভালো মতোই জানা আছে। 

সৃজন- এই কথা গুলো শোনার পর আমার খারাপ লাগলো আমি আর কিছু না বলে ছাদের এক কোণে গিয়ে একটা গান ধরলাম। 

 এখন অনেক রাত 

 তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস 

আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায়

 ছুঁয়ে দিলে হাত

 আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা 

চেপে ধরে টলছি কেমন নেশায়

কেন যে অসংকোচে অন্ধগানের কলি। 

পাখার ব্লেডের তালে সোজাসুজি কথা বলি।।


আমি আঁড় চোখে দেখলাম। মেয়েটি ছাদের পাঁচিলে হাতের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে এক মনে আমার গান শুনছে। গানটা শেষ করে সামনের দিকে তাকাতেই মেয়েটি বলে উঠল,,,,,,,, 

‌পিওন- তুমিতো দারুণ গান গাও। তুমি কি গান শেখো, 

‌সৃজন - না না, এমনি ভালো লাগে তাই গাই। 

‌পিওন- আমি তো তোমার গানের ফ্যান হয়ে গেলাম। 

‌সৃজন- আরে না না তেমন ভালো কিছু গাই না। আচ্ছা তোমার নাম,,,,, 

‌পিওন- এই দেখেছো কথা বলছি কিন্তু দূজন দুজনের নাম টাই জানিনা। হাই আমি পিওন, এই ফ্ল্যাটে নতুন। 

‌সৃজন- আমার আর পিওনের বাড়ির দুরত্ব বেশি নয় হাত বাড়ালে দুজন দুজনকে ছোঁয়া যাবে।। পিওন নাম টা বলেই হাতটা বাড়িয়ে দিল আমার দিকে,আমি থমকে গেলাম। আমি অবাক চোখে ওর হাতের দিকে তাকিয়ে আছি। ঠিক সেই সময় পিওন বলে উঠলো। 

‌পিওন- ও হ্যালো,,,,,,,। কি হল কি ভাবছো। 

‌সৃজন- আমি চমক ভেঙে বোকার মত হেসে বললাম হাই আমি সৃজন। 

‌পিওন- তাহলে আজ থেকে আমরা বন্ধু। 

‌সৃজন- কি ভাবছেন প্রেম টা শুরু হয়ে গেল। আরে দাঁড়ান মশাই আপনি না খুব তাড়াতাড়ি সব ভেবে নিচ্ছেন। আগে বন্ধুত্ব টা হোক তারপর তো প্রেম, একসাথে হাত ধরে ঘোরা, গঙ্গার ধারে বসে ঝালমুড়ি খাওয়া, কাঁধে মাথা রেখে গল্প করা। রাতে লুকিয়ে বাইক নিয়ে রাতের কলকাতা ঘোরা । তবেই তো প্রেম টা জমবে।এত তাড়াতাড়ি করলে হবে মশাই। 

‌পিওন- কি কর তুমি। 

‌সৃজন- আমি কলেজ 3 rd year । মেডিকেল। তুমি, 

‌পিওন- আমি কলেজ 1st year । ইকোনমিক্স অর্নাস। যাদবপুর ইউনিভার্সিটি।। 

‌সৃজন- ওহ!!!! 

‌পিওন- আচ্ছা শোন এবার থেকে আমি তোকে তুই বলেই ডাকবো। কারণ বন্ধুত্ব তে তুমি টা ঠিক ভালো লাগে না। 

‌সৃজন- আচ্ছা। 

‌পিওন- এখন চলি পরে কথা হবে। 

‌সৃজন- আচ্ছা। 

রাতে খাওয়ার পর নিজের ঘরে এলাম যখন তখন ঘড়ি তে বাজে রাত ১০টা । সৌভিক কে ম্যাসেজ করলাম,, ভাই একটা খবর আছে। আমাদের পাশের বাড়িতে একটি মেয়ে এসেছে। বাকিটা কাল বলব, ফোন করিস,,এটা বলে ফোনটা রাখতে যাব ঠিক সেই সময় ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ফেসবুক এ ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট ঢুকেছে, ফেসবুক খুলে দেখি একটা মেয়ের নাম, পিওন ব্যার্নাজী। এটা দেখার পর কিছুক্ষণের জন্য আমি অবাক হয়ে গেলাম, চমক ভাঙ্গল আর একটা আওয়াজে, আরও একটা নোটিফিকেশন সৌভিক রিপ্লাই দিয়েছে, কি খবর বাবা, আগে তো কোনোদিন মেয়েদের দিকে চোখ তুলেও দেখতিস না আজকে আবার মেয়ে এসেছে খবর পেয়ে গেলি। আরে এসব কিছু নয়, ছাদে উঠেছিল দেখলাম। ফেসবুক টা খুলে রিকুয়েস্ট টা এক্সেপ্ট না করেই ফোন টা পাশে রেখে শুয়ে পরলাম। 

‌পরের দিন 

‌ সৃজন-রবিবার বলে একটু বেলা পর্যন্ত ঘুমাই, কিন্তু মা কি শান্তিতে ঘুমাতে দেবে না।

‌মা- এই বাবু ওঠ বলছি, দেখ কে এসেছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে আয়। 

‌সৃজন- সভাবতই আমি তাই করলাম। ফ্রেস হয়ে ব্রেকফাস্ট টেবিলে যেতেই কিছুক্ষণের জন্য মনে হল আমি ঠিক দেখছি তো নাকি ঘুমের ঘোরে ভুল দেখছি। চোখ কচলে দেখলাম নাহহহ ঠিক দেখছি, পি পি পিওন তুই এখানে। 

‌ পিওন- হ্যাঁ কেন আসতে পারি না। 

‌সৃজন- আমার গলা শুনে মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। 

‌মা- আয় বস। পিওন আলাপ, করিয়ে দি, ওও আমার ছেলে সৃজন। 

‌সৃজন- পিওন বলল ওকে তো আমি চিনি। এটা শোনার পর আমি প্রায় বিষম খেলাম ঠিক সেই সময় পিওন টেবিল থেকে জলের গ্লাস টা আমার সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল এই নে জল খা। আমি মুখ টুলে সামনে তাকাতেই দেখি পিওন মুচকি হেসে আমার কানের পাশে মুখ এনে বলল এটা অভ্যাসে পরিণত কর আমি প্রায়ই আসব,আর ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করিসনি কেন, এটা বলেই ওও মায়ের দিকে ঘুরে বলল আজ চলি কাকিমা পরে আসব আবার।। আমি ওর চলে যাবার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম । মা বলল খাবি বস। 

‌সৃজন - দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে আছি ঠিক তখনই ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে একটা ম্যাসেজ ঢুকলো।হাই! কি করছিস।। 

বুঝতেই পারছেন কার ম্যাসেজ , ঠিকই ধরেছেন পিওন।। আমিও রিপ্লাই দিলাম । এই তো শুয়ে আছি তুই, 

‌পিওন- বলছি তুই বিকালে ছাদে আসবি। 

‌সৃজন- ঠিক নেই। আজকে খেলা আছে আমার। 

‌পিওন- কি খেলা। 

‌সৃজন- ফুটবল। 

‌পিওন- তুই ফুটবল খেলিস। আমার খেলা দেখতে খুব ভালো লাগে। 

‌সৃজন- বাহ্হ। তাহলে বিকালে সবুজ সংঘ ক্লাবের মাঠে চলে আয়। 

‌পিওন- আচ্ছা ঠিক আছে। চল তাহলে বিকালে দেখা হচ্ছে। বাই।। 

‌সৃজন- বাই। 

‌বিকালে খেলার মাঠে

‌খেলা শুরু হয়ে গেছে। প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে, ২-২ টে খেলছি আমরা। খেলা শেষ হতে ৫ মিনিট মতো বাকি আছে, মিডফিল্ড থেকে সৌভিক পাস দিতেই আমি বল টা নিয়ে নবোদয় সংঘ ক্লাবের ৩টে ডিফেন্ডার কে কাটিয়ে নিয়ে পেনাল্টি বক্সের ভিতরে ঢুকে ১টা ডিফেন্ডারের মাথার ওপর দিয়ে গোলপোস্ট লক্ষ করে বলটি শুট করতে যাব ঠিক পিছন দিয়ে সৌভিক বলে উঠল ভাই আমার তোর পায়ে মিসাইল আছে মার ভাই, আর আমিও গোলপোস্ট লক্ষ্য করে ডান পায়ে শুট করলাম,ঠিক সেই সময় গোলপোস্ট থেকে দূরে মাঠের বাইরে একটা চেনা মুখ দেখে আমি থমকে গেলাম, তার চোখের ওপর চোখ পরতেই মনে হল সময় যেন থেমে গেছে , হঠাৎই মনে হল কেউ যেন আমার কাঁধের উপর লাফিয়ে এলো চমক ভেঙে দেখি আমি যে শুটটা করেছিলাম সেটা গোলপোস্টের জালে বলটা জড়িয়ে গেছে, আমি মুচকি হেসে মনে মনে ভাবলাম গোলকিপার মানুষ মিসাইল কি করে ধরবে।  

‌সৃজন- খেলা শেষে সব বন্ধুরা মিলে বাড়ি ফিরছি , হঠাৎ পিছন থেকে একটা চেনা গলার স্বর ভেসে এলো , আমি পিছন ফিরে দেখি পিওন ডাকছে। 

‌পিওন- সৃজন দাঁড়া কথা আছে। 

‌সৃজন- আমি দাঁড়িয়ে পরলাম। সৌভিক পাশ থেকে বলে উঠলো কিরে ভাই এনি নাকি , হেব্বি দেখতে ভাই লেগে পর চান্স মিশ করিসনা। পিওন দ্রুত এসে আমার পাশে এসে হাটতে থাকে। প্রায় দশ মিনিট হাঁটার পর দুজনে বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালাম। হঠাৎ আমার হাতে একটা ঠান্ডা হাতের ছোয়া লাগলো আমি মাথাটা হালকা নিচু করে দেখি পিওন, হ্যাঁ পিওন আমার হাত ধরেছে, আমি বুঝতে পারছি আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে, আমি ঘামছি, মুখ লাল হয়ে গেছে, কান গরম হচ্ছে, তখন আমি অনুভব করলাম পিওন আমার হাতের ওপর আলতো চাপ দিয়ে ডাকছে। 

‌পিওন- সৃজন শোন। 

‌সৃজন- আমি পিওনের দিকে তাকালাম, ওর চোখে কিছু আছে , ওর চোখের দিকে তাকালে আর কোনো দিকে তাকাতে ইচ্ছে করে না, মনে হয় সারা জীবন আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বসে থাকি। পিওনের কথাতে চমক ভাঙলো, পিওন বলল। 

‌পিওন- কাল বিকালে আমার সাথে ঢাকুরিয়া লেকে যাবি, আমার বন্ধুরা আসবে। 

‌সৃজন- আ.. আ... আমি তোর সাথে,,, । 

‌পিওন- কেন অসুবিধা আছে। 

‌সৃজন- না তা নয় তোর বন্ধুরা আসবে তো আমি আবার ওখানে কি করব। 

‌পিওন- বন্ধুরা আসবে তো কি হয়েছে, তুইও তো আমার বন্ধু। 

‌সৃজন- হঠাৎ করেই পিওন আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে নিজের পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে আমার মাথার চুল গুলো ঘেটে দিয়ে ছুটে বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে গেটের কাছে গিয়ে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পরে পিছন ফিরে বলল । 

‌পিওন- কাল বিকাল চারটের সময় বিল্টুদার চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়াবি। তারপর সে মুচকি হেসে বাড়িতে ঢুকে যায়। 

‌সৃজন- আমি ও কিছুক্ষন ওখানে দাড়িয়ে থেকে মুচকি হেসে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বাড়িতে ঢুকে গেলাম। 

পরেরদিন বিকাল ৪টে

পিওনের কথামত আমি ৪টে থেকে বাইক নিয়ে বিল্টুদার চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে আছি। যথারীতি ম্যাডাম এলেন ৩০মিনিত পর। 

‌হলুদ চুড়িঁদার, সাদা ওরনা, চুল খোলা, চোখে কাজল, কপালে কালো ছোট্টো টিপ ,ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক। আমি পিওনকে দেখা মাত্র ভিমড়ি খেলাম, ও সামনে এসে চল বলতেই আমি আমতা আমতা করতে লাগলাম, ওর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। আমি আর কিছু না বলে বাইকে উঠে বসলাম ওর দিকে হেলমেটটা এগিয়ে দিলাম, আমার হাতের সাথে ওর হাতের হালকা ছোয়া লাগলো।পিওন বাইকে উঠে বসেছে। আমি বাইকের সামনে লুকিঙ্গ গ্লাস থেকে ওকে দেখছিলাম। চোখে কাজল, কপালে টিপ, ঠোঁটে লিপস্টিক কী সুন্দর লাগছে, আমি অবাক হয়ে দেখছিলাম। তখন পিছন থেকে কাঁধে একটা টোকা মেরে বলল চল আর দেখতে হবে না, দেরি হয়ে গেছে। আমি একটু লজ্জাই পেলাম, বাইক স্টাট দিতেই পিওন আমার কাঁধের উপর হাত রাখলো। আমি মুচকি হেসে বাইক চালাতে সুরু করলাম। লেকে পৌছাতে পৌছাতে ৫টা বেজে গেল। পিওনের বন্ধুরা দেখি দাড়িয়ে আছে পিওন সবার সাথে আলাপ করিয়ে দিল,, সুজাতা, অমিত, রাই, আদিত্য। ওদের মধ্যে রাই পিওনকে কানে কানে কিছু একটা বলল সেটা শোনার পর পিওনের মুখ লাল হয়ে গেল দেখে মনেই হচ্ছে লজ্জা পেয়েছে। তারপর আমরা ঘুরলাম আড্ডা দিলাম, তারপর বাড়িও চলে এলাম কিন্তু আমি একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যতক্ষণ আমরা ঘুরেছি ততক্ষণ পিওন আমার হাত ছাড়েনি শক্ত করে ধরে রেখে ছিল। বাড়ি ফিরে পিওন হেলমেটা খুলতে খুলতে 

‌পিওন- আজকের দিনটা কোনোদিন ভুলবো না। thank you  

‌ এই ভাবেই পেরিয়ে গেল ১টা বছর আমাদের বন্ধুত্ব বেড়েছে। 

আমার কলেজ শেষ হয়ে গেছে,পিওন সেকেন্ড ইয়ারে উঠে গেছে।পিওনের বন্ধু মহলে আমার নামডাক হয়েছে অনেক।একদিন হঠাৎ পিওন সকাল বেলা ফোন করে বলল,বিকালে ছাদে আসিস কথা আছে।আমি বললাম আমারও কিছু কথা আছে। 

‌সেইদিন বিকালে ছাদে

 দুজনেই ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি, ছাদে এসেছি ৩০মিনিট হয়ে গেছে , না পিওন কিছু বলছে না আমাকে বলতে দিচ্ছে। আমি নিস্তব্ধতা ভেঙে বললাম তুই কি বলবি নাকি আমি বলব। 

‌পিওন- না বলছি দাঁড়া। আমরা না এই ফ্ল্যাট ছেড়ে চলে যাচ্ছি বাবার ট্রান্সফার হয়ে গেছে। 

‌সৃজন- মানে কবে। কোথায় ট্রান্সফার হয়েছে। 

‌পিওন- পরের রবিবার চলে যাচ্ছি। হায়দ্রাবাদ। 

‌সৃজন- আমি আর কিছু বললাম না। চুপচাপ ছাদের এক কোণে দাড়িয়ে রইলাম। পিওন ও আর কিছু বলল না। আমি বুঝতে পারছি পিওন কান্না চাপার চেষ্টা করছে। আমি বললাম কাঁদিস না সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে ঘরে যা অসুবিধা হলে ফোন করিস। আমি ও বুঝতে পারছি আমার গলার কাছে কান্না ডলা পাকিয়ে যাচ্ছে, আমি কাদ্দে চাইছি না কিন্তু আমার চোখ জলে ভিজে যাচ্ছে। আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম চলি রে। 

‌পিওন- ছাদের দরজার কাছে আসতেই পিছন থেকে পিওন বলে উঠলো তুই কিছু বলবি বলছিলি। 

‌সৃজন- আর বলে লাভ নেই রে, তুই যা সারপ্রাইজ আমাকে দিলি এর থেকে বড়ো সারপ্রাইজ আর কিছু হতে পারে বল, থাক অন্য দিন বলব।

‌এক সপ্তাহ পর পিওন চলে গেল। আমি ও আসতে আসতে সবার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম। দেখতে দেখতে ৬টা বছর কেটে গেল।

‌৬ বছর পর কলকাতায়

‌সৃজন-রোজকারের মতন আজ ও আমার এসিস্টেন্ট সব পেসেন্টের পুরো নামের লিস্ট নিয়ে এসে আমার হাতে দেয় । এতগুলো নামের মধ্যে একটা নামে গিয়ে চোখ আটকে গেল, পিওন ব্যার্নাজী। আমি কিছুক্ষণের জন্য স্তম্ভিত হয়ে গেলাম, ৬ বছর আগের স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠল। মনে মনে ভাবলাম এ কি সেই পিওন যার আমার ছয় বছর আগে আলাপ হয়ছিল, নাকি এ অন্য কেউ। এসিস্টেন্ট র কথায় চমক ভাঙলো। আমি পিওনের নামের উপর হাত রেখে বললাম এই নামের পেসেন্টকে আগে পাঠাবেন। এসিস্টেন্ট কিছুক্ষণের জন্য হতবাক হয়ে গাড় নেড়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। আমি চেয়ার থেকে উঠে ঘরের মধ্যে পাইচাড়ি করতে লাগলাম। হঠাৎ দরজায় টোকা পরল , আসবো, আমি পিছন ফিরে দেখি পিওন হ্যাঁ সেই পিওন যাকে আমি সেই বৃষ্টির দিনে ছাদে দেখেছিলাম , যার সাথে আমি ঘন্টা ছাদে গল্প করে কাটিয়েছি, যাকে আমি ভালোবেসে ছিলাম এখনও ভালোবাসি কিন্তু তাকে বলতে পারিনি। এ কি অবস্থা হয়েছে, চোখের নিচে কালি পরেছে, চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে, চোখের মধ্যে বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট। 

‌পিওন- সৃজন তুই। আমি নামতা দেখে প্রথম অবাক হয়েছিলাম। কিন্ত আমি ভাবিনি তোকে এই ভাবে এত গুলো বছর পর দেখতে পাবো। 

‌সৃজন-পিওন ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল , আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম আনন্দে চোখে জল এসে গেছে। চোখ জলে ভিজে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ এই ভাবেই কেটে যায়। তারপর আমি পিওনকে জিজ্ঞাসা করি , তোর কি হয়েছে। চোখ মুখের এইঅবস্থা কেন। 

‌পিওন- সব বলব তোকে। এই কটা বছরে আমার জীবনটা পুরো পাল্টে গেছে। 

‌সৃজন- কি হয়েছে বল। কাকু কাকিমা ঠিক আছে তো। 

‌পিওন- হ্যাঁ

‌সৃজন- তাহলে বল। 

‌পিওন- কলকাতা থেকে হায়দ্রাবাদ যাবার পর আমি একজনের সাথে রিলেশানসিপে যাই,ওর নাম ছিল অনূরূপ। ভালোই চলছিল, ৫বছর আমাদের সম্পর্কটা চলেছিল , আমরা ৬মাস হল কলকাতায় এসেছি আর তুই জানিস ২বছর করোনার কারনে এখন বাইরে থেকে আসার পর ১৪ দিন কোরেনটাইনে থেকে যখন ১৪দিন পর ফোনটি হাতে পেলাম যখন কলেজের বন্ধুদের মেসেজ অনূরূপের মেসেজ, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে, তারপর হোয়াটসঅ্যাপ থেকে বেরিয়ে ফেসবুকে যেতে অনূরূপের প্রোফাইল পিকচারে দেখি ও আর ওর এক্স সাথে ছবি ওরা দুজন একসাথে আছে। 

‌সৃজন- আমি বুঝতে পারছিলাম পিওন আর বলতে পারছে না ওর কান্নার দমকে ওর কথা আটকে যাচ্ছে। থাক পিওন তোকে আর কিছু বলতে হবে না আমি তোর মনের অবস্থাটা বুঝতে পারছি। তুই এখন বাড়ি যা তোকে আমি রাতে ফোন করব। 

‌সৃজন- রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘরে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে পিওনকে ফোন করলাম প্রায় ২-৩বার রিঙ্ হবার পর ফোনটা যখন তুললো পিওনের গলা শুনে মনে হল ও কাঁদছিল। তুই আবার কাঁদছিস, ছেড়ে দে না যেটা হবার হয়ে গেছে এবার জীবনটা নতুন করে শুরু কর। আর শোন কখনও নিজেকে একা ভাব্বি না আমি সবসময় তোর পাশে আছি । আচ্ছা শোন কাল বাগবাজার যাবি গঙ্গার ঘাটে। 

‌পিওন- যাবো। 

‌সৃজন- ঠিক আছে কাল বিকাল ৪ টের সময় রবীন্দ্র সদন মেট্রো স্টেশনের সামনে দাঁড়াবি। আর কান্না কাটি করিস না সব ঠিক হয় যাবে আমি আছি তো। 

‌পিওন- হুম। 

‌সৃজন- এবার ঘুমো। 

‌পরের দিন বিকালে

‌সৃজন- পিওন তোকে একটা কথা বলার ছিল ৬বছর আগে বলার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। 

‌পিওন- কি বল। 

‌সৃজন- তুই রাগ করবি না তো। তাহলে বলব না। 

‌পিওন- বলবি তুই। 

‌সৃজন- হ্যাঁ মানে আমি তোকে ভালোবাসি। ৬ বছর আগে অনেক বার বলার চেষ্টা করেছি আর যেদিন বলব ভাবলাম সেইদিন তুই আমাকে বললি যে তুই চলে যাচ্ছিস, তাই আর বলা হয়নি্  

‌পিওন- কতটা ভালোবাসিস আমাকে। 

‌সৃজন- পাশাপাশি বসে একটা জন্ম কাটিয়ে দিতে পারি..


‌পিওন- পরে যদি মুখ ফিরিয়ে নিস?

‌সৃজন-নেবো না। তোর সাথে পুরো একটা জন্ম কাটানোর পণ নিয়েছি। এত সহজে নিজেকে হারাতে দিতে পারি না।


‌পিওন- আমার ব্যাপারে তুই কত টুকু জানিস যে এমন একটা..?

‌সৃজন- জানার জন্য পুরো একটা জন্ম পরে আছে। তাড়াহুড়ো করে আমি আমাদের সুন্দর এই মুহূর্ত গুলো এত তাড়াতাড়ি নষ্ট করতে চাইনা


‌পিওন-আমি কিন্তু প্রচন্ড একরোখা, জেদী, ভীষণ বাজে একটা মেয়ে। পারবি তো থাকতে?

‌সৃজন-আমি তো ঠিক তোর বিপরীত। শুনেছি নাকি দুটো বিপরীত স্বভাবের মানুষ একটা নয় ভালোবেসে একসাথে সাতটা জন্ম কাটিয়ে দিতে পারে। আর আমি সেখানে একটা জন্ম পারবো না বলছিস!


‌পিওন-তোর কথা শুনে গলে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ভীষণ ভয় হয় জানিস!

‌সৃজন- আমার হাতদুটো তো খালিই পড়ে আছে। একবার ধরেই দেখনা পাড়িস কিনা!


‌পিওন-ইচ্ছে তো করছে। তবু কোথাও একটা কিন্তু ঠিক চলেই আসছে।।

‌সৃজন-যে আসছে তাকে আসতে দে। মিটিয়ে নে সব তার সাথে। দ্বন্দ্বে পড়ে থাকিস না।


‌পিওন- যে বিশ্বাস উঠে গেছে সবার থেকে। পারবি ফিরিয়ে আনতে সেই বিশ্বাস?

‌সৃজন-আর সকলের দেওয়া মিথ্যে বিশ্বাস হয়তো ফেরাতে পারবো না, কখনও চেষ্টাও করবো না। তবে আমার প্রতি তোর যে বিশ্বাসের প্রদীপ আছে সেটাকে কখনও নিভতে দেব না। ভালোবাসা নামক তেল দিয়ে সবসময় জ্বালিয়ে রাখব।


‌পিওন- আরেকবার ভালো করে ভেবে দেখতে পারতিস!

‌সৃজন- আর নতুন করে ভাবার মতো কিছু নেই।।

‌পিওন- তুইও যদি আর পাঁচজনের মতো মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেষে চলে যাস, তখন ?

‌সৃজন-ছেড়ে যাবার হলে কখনোই তোর কাছে নিজের এই হাতদুটো বাড়িয়ে দিতাম না ভালোবাসি বলে।

‌পিওন- এই আমি ধরলাম শক্ত করে তোর হাতটা। কখনও আলগা হতে দিস না।।

‌সৃজন- দেব না। আমিও শক্ত করেই ধরেছি।।

‌পিওন-কিন্তু যদি ঝড় আসে?

‌সৃজন-আসুক না। ক্ষতি কি! এই শক্ত বাঁধন ছেঁড়ার সাধ্যি আছে কি কোনো ঝড়ের!


‌পিওন-না তবু..!

‌সৃজন-উফ তুই না বড্ড বকিস গরু।।

‌পিওন-কি বললি শয়তান । 

‌সৃজন- পিওন আমার হাতে ২বার ঘুশি মেরে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম। কিরে মন ভালো হয়েছে। 

‌পিওন- কি বলত সৃজন যখন কাউকে ভালোবাসাটা অসম্ভব লাগে তখন জীবনে এমন একজন আসে যে এই অসম্ভব তাকে সম্ভব করে তোলে। যেমন তুই আমার জীবনে এলি। 

‌সৃজন- চিন্তা করিস না আমি সবসময় তোর পাশে থাকবো, এই আমি ধরলাম তোর হাত, আর ছাড়বো না, তোকে এই ভাবেই সারা জীবন আগলে রাখবো। 

‌পিওন- আমিও এটাই চাই। 

‌ছয় মাস পর

‌সৃজন- আজ পিওনের জন্মদিন। ওকে আজ একটা সারপ্রাইজ দেবো। পিওন কে নিয়ে আজ চলে এলাম হাওড়া ব্রিজের নিচে গঙ্গার ধারে । পিওন আজ তোর জন্মদিন বেশি কিছু করতে পারিনি। 

‌পিওন- আমি তো এই সব কিছু চাই না সৃজন শুধু তুই সারাজীবন এই ভাবে আমার পাশে থাক আর কিছু চাই না। 

‌সৃজন- থাকবো তো। আর থাকবো বলেই তো আজ তোকে একটা প্রস্তাব দিতে চাই। 

‌পিওন- কি প্রস্তাব? 

‌সৃজন- will You Marry me . 

‌পিওন- কি! 

‌সৃজন- তুই কি আমাকে বিয়ে করবি। দেখ ৬বছর আগে থেকে তোকে ভালোবাসি সেই সময় বলা হয়নি এত গুলো বছর আমি অপেক্ষা করেছি আমার বিশ্বাস ছিল তোর সাথে আমার দেখা হবে আর হয়েছে আর আমি তোকে হারাতে চাই না। পিওন চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল, কিরে বল পায়ে লাগছে তো, আর কতক্ষণ বসিয়ে রাখবি এমন ভাবে। 

‌পিওন- কেন বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিস আর হাঁটু ভেঙে বসে থাকতে পারবি না। 

‌সৃজন- কেন রে শোধ নিচ্ছিস নাকি। বলনা বলনা আর কতক্ষণ বসিয়ে রাখবি। 

‌পিওন- ওঠ এবার অনেক প্রপোজ করা হয়েছে। 

‌সৃজন- হ্যাঁ কি না সেটা তো বল। 

‌পিওন- তোর কি মনে হচ্ছ আমি হ্যী বলব নাকি না বলব। 

‌সৃজন- কি জানি বাবা মেয়েদের মন বোঝা ওত সহজ না। 

‌পিওন- কেন রে তোর প্রপোজ করার অভিজ্ঞতা আছে। 

‌সৃজন- না পিওন তুই প্রথম তুই শেষ। 

‌পিওন- হ্যাঁ সেটা বিয়ের পরই দেখবো। 

‌সৃজন- মানে তুই হ্যাঁ বললি। 

‌পিওন- হুম। 

‌সৃজন- ইয়েস,ইয়েস । আমি আনন্দে পিওনকে কোলে তুলে নিলাম। 

‌পিওন- আরে নামা পরে যাবো তো। এই সৃজন নামা রে। 

‌সৃজন- তাহলে তোর বাড়িতে আমার মা বাবাকে পাঠাই। 

‌পিওন- সে পাঠাস তার আগে বাড়ি চো মনোহর কাকার দোকান ফুচকা খাবো চল তাড়াতাড়ি। 

‌দেড় মাস পর বিয়ের পিড়িতে বসে

‌পিওন- কিরে আজ আমরা এক হলাম তাহলে। 

‌সৃজন- হুম। কি বলে ছিলাম কোনোদিন ছেড়ে যাবো না। কিন্তু একটা কথা বলব। 

‌পিওন- কি কথা। 

‌সৃজন- তোকে কে সাজিয়ে দিয়েছে তাকে গিফ্ট দিতে হবে তো, আমার পেত্নীকে এত সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। 

‌পিওন- সৃজন তুই কিন্তু এবার আমার হাতে মার খাবি। 

‌সৃজন- ভুল কি বললাম তুই কিন্তু প্রথম দিন ছাদে আমাকে বলেছিলি তুই ভূত না পেত্নী, তাই আমি তোকে পেত্নী বলি। 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy