পরীর কথা
পরীর কথা


পরী ওর পুঁটিলি টা চায়ের দোকানের বেঞ্চে রেখে এক কাপ চা চাইলো। তখন বলতে গেলে কাকভোর। দোকান সবে খুলেছে। লোকজনও তেমন নেই। চায়ের সবে জল চাপিয়েছে। দোকানী বলল "বসো, একটু দেরি হবে"
পরী কোনো উত্তর না দিয়ে বসে থাকলো। ও তো এখানে কিছুই চেনে না। ভাবলো এই দোকানীকে জিজ্ঞেস করলেই মন্দ হয় না, পরক্ষণেই মনে হলো, যদি লোকটা খারাপ হয় তাহলে বিপদ বাড়তে পারে।
প্রায় এক ঘন্টা এদিক ওদিক ঘোরাঘুরির পর একজন মহিলাকে ঠিকানা লেখা কাগজটা দেখলো। এর আগেও আর একজনকে দেখিয়েছিল সে বলতে পারে নি। এবার খুঁজে পেলো ঠিকানাটা। মহিলাটি ওকে সেই বাড়ির দরজা অবধি পৌঁছে দিলেন।
তিনতলা ঝকঝকে বাড়ি। নিচের তলায় গ্যারেজে থেকে একটি লোক গাড়ি বার করছিল, পরী তাকেই বললো
"এই বাড়িতে কি সুনন্দা কর থাকেন"?
"হ্যাঁ, আপনি কোথা থেকে আসছেন?"
"উনি আমাকে চিনবেন না, বলুন সমর গুপ্ত র মেয়ে এসেছে, যদি একটু দেখা করেন"
পরীর গলায় অনুরোধের সুর।
লোকটি ওকে অপেক্ষা করতে বলে উপরে চলে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর একটি মাঝ বয়সি মহিলা ওকে ডেকে উপরে নিয়ে যায়। ও বাড়ির ভেতরটা দেখে অবাক হয়ে যায়। এত সুন্দর করে সাজানো বাড়ি।কোনোদিন দেখে নি।
"তুমি পরী গুপ্ত?"
"হ্যাঁ আমি পরী, বাবা আপনার কাছে পাঠিয়েছেন..." কথার মাঝেই থামিয়ে দেয় সুনন্দা।
"জানি, যাও অনেকদূর থেকে এসেছো এখন একটু রেস্ট কর, আমি একটু বেরোচ্ছি, ফিরে তোমার কথা শুনবো।"
পরীকে যে মহিলা ডেকে এনেছিল, তার নাম ভবানী, সে ওকে ওর ঘর দেখিয়ে দিল। পরীর এখন মনে পড়লো বাবা পৌঁছে সানু কাকার মোবাইল এ ফোন করতে বলেছিলো। কিন্তু নম্বর লেখা কাগজটা কোথাও খুঁজে পেলো না। এখানে কাকেই বা বলবে। ওর মনে হলো হয়তো কাগজটা রাস্তায় কোথাও পরে গেছে। কিন্তু এখন বাবাকে কি করে জানাবে এই চিন্তা ওর মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকলো।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে চেয়ারে বসেই চোখ লেগে গিয়েছিল পরীর। ভবানীর ডাকে ও উঠে পরে,
"এই মেয়ে, বৌদি ওপরে ডাকছে"
বৌদি শুনে অবাক হলো পরী। মাথায় সিঁদুর নেই, হতে শাঁখা নেই, এ আবার বৌদি বলছে কেন, ভাবখানা এমন।
ভবানীর সাথে সুনন্দার ঘরে যায়। তিনতলায় একদম শেষের ঘরটা ওর। এত সুন্দর করে সাজানো ঘর, পরীর খুব পছন্দ হয়। সবে সুনন্দা আরাম কেদারায় গা টা এলিয়ে একটা সিগারেট ধরাতে যাচ্ছিল,
"আয়, এখানে বস"
সামনে একটা টুল এগিয়ে দেয়।
পরী কোনোদিন মেয়েদের সিগারেট খেতে দ্যাখে নি। ওর মুখ চোখ দেখে সেটা বেশ ঠাহর করা যাচ্ছিল।
"এবার বলত, তুই কি কি কাজ করতে পারিস? সুনন্দা সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে ওর দিকে তাকালো।
"আমি বাড়ির সব কাজ পারি শুধু লংকা বাটলে আমার খুব হাত জ্বালা করে।"
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে আবার চুপ করে যায় পরী।
সুনন্দা একটু মুচকি হেসে বলে
"তোকে এখানে লংকা বাটতে হবে না, শুধু আমি যা করতে বলবো তাই করবি, বুঝলি?"
পরী ওর সরল মুখটা একদিকে হেলিয়ে বুঝিয়ে দেয় ও রাজি।
এক সপ্তাহ ভবানীর ঘরেই থাকে পরী। ওর দেখাশুনার ভার সুনন্দা ভবানীকেই যে দিয়েছে তা ও বেশ ভালো করেই বুঝতে পারে।
সেদিন সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। পরীর আজ বাবার জন্য মনটা খুব খারাপ করছে। ও তো একটা পৌঁছানোর খবরও দিতে পারলো না। কে জানে ফোন এসেছে কিনা জানার জন্য দিনে ক' বার সানু কাকার বাড়ি ছুটছে। পরী ভবানীর কাছে জানতে পারে, সুনন্দা বিধবা। ওর একমাত্র ছেলে দিল্লি তে খুব বড় অফিসার। বিয়ে আর ডিভোর্স দুটোই সেরেছে বছর খানেকের মধ্যেই। এখন একা। সুনন্দা ওর বৌমাকে বার তিনেক দেখেছিল। খুব একটা পছন্দ না হলেও, ওর কোনো অমতও ছিল না।
পরীর সারল্য বেশ অনেকটাই কাছে এনে দিয়েছিল সুনন্দার। আসলে একটু রুক্ষ হলেও সুনন্দার একটা নরম মন আছে।
আজ আর না বলে পারলো না পরী, ভবানীর মত ও বৌদি বলে সুনন্দা কে।
,"বৌদি আমি কি একবার বাবাকে দেখে আসব, সানু কাকার ফোন নম্বর টা হারিয়ে ফেলেছি, তাই বাবাকে এখনও কোনো খবর দিতে পারিনি,"
সুনন্দা অবাক হয়ে বললো,
"সে কি রে , প্রায় দু মাস হয়ে গেলো এখনও খবর দিস নি, আমাকে বলবি তো "
এবার পরী নিশিন্ত হলো,
বৌদি যখন বলেছে। ঠিক যে ভাবে হোক, বাবাকে একটা খবর। দিয়ে দেবে। কিন্তু এটা ভেবে দেখলো না যে, ফোন নম্বরটাই হারিয়ে গেছে।
একদিন রাতে সুনন্দা পরীকে ওপরে ডাকে
"শোন, কাল আমার ছেলে আসবে, কিছুদিন থাকবে, দেখিস যেনো কোনো অসুবিধে না হয়"।
"তোমার কোনো চিন্তা নেই বৌদি, আমি আর ভবানীদিদি তো আছি"
এখন পরী আগের থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক। ওর সেই জড়সর ভাবটা আর নেই। এখন সুনন্দা ফিরলে ও উপরে গিয়ে দরজায় টোকা দিয়ে বলে, "আসব বৌদি?" সুনন্দা ওকে শিখিয়েছে কারো ঘরে না বলে ঢুকতে নেই।
পরী মাঝে মাঝে ভাবে এখানে ওকে এমন কিছু কাজ করতে হয় না, তাহলে ওকে রেখেছে শুধু বাবার কথায়? মা'র অসুখে বাবা জমি জমা সব বেচে দিল। এখন শুধু বসত বাড়ি ছাড়া ওদের আর কিছুই নেই। বাবার আর চাষের কাজ করার ক্ষমতাও নেই। তার উপর আবার এমন অসুখ বাঁধিয়ে বসে আছে যে কলকাতা ছাড়া তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। ওর মনে আছে বাবা একবার ওকে গল্প করে বলেছিল গণেশ চৌধুরীর মেয়ের বিয়েতে কলকাতা থেকে বর যাত্রী এসেছিল। তারা বিয়ের রাতে যে বাড়িতে ছিল সেটা ডাকাতরা ঘিরে ফেলে। বাঁচার কোনো পথে ছিল না। বাবা জানত ওই বাড়ির পিছনে একটা ছোটো গেট আছে, খুব সাবধানে পিছনের গেট দিয়ে সবাইকে বের করে এনেছিল। বরযাত্রীর দলের এক মহিলা বাবাকে পুরষ্কার হিসেবে টাকা দিতে চাইলেও নেন নি, শুধু বলেছিল
"আপনার ঠিকানাটা দিন, যদি কোনোদিন প্রয়োজন হয় বলবো"
এখন পরী বুঝতে পারে সেই মহিলা সুনন্দা। ওর সব কিছু ভালো কিন্তু ওই সিগারেট আর নেশা করাটা পরীর খুব খারাপ লাগে। কেনো যে বৌদির এই অভ্যাস হলো কে জানে। বাবা চেয়েছিলো পড়াশুনা বন্ধ না করতে কিন্তু মায়ের অসুখে ওরা কর্পদক শূন্য হয়ে পড়ে। ওর পড়াশুনাও বন্ধ হয়ে যায়। পেটের ভাত জোটানো দুষ্কর হয়ে পড়ে। সমর বাবু নিজে কষ্ট করতে রাজি কিন্তু পরীর কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না। সুনন্দার সাহায্যের কথাটা মাথায় ছিল কিন্তু মেয়েকে কাছ ছাড়া করতে মন চাইতো না। নিজের শরীর ক্রমশ ভেঙে আসছিল। পয়সার অভাবে পরীর লেখাপড়াও বন্ধ করে দিতে হয়। আর কোনো উপায় না দেখে সুনন্দাকে সব জানিয়ে চিঠি লেখে সমর। সেই চিঠির উত্তরে কিছু টাকা দিতে চায় সুনন্দা। এবারেও সেটা না নিয়ে পরীকে ওর কাছে রেখে ওর একটা হিল্লে করার কথা জানায় চিঠিতে। এই চিঠি দেয়া দেয়ী করতেই মাস তিনেক কেটে যায় । সমর বাবুর শরীর আরো খারাপ হয়ে পড়ে। শেষে পরীর খুব একটা মত না থাকলেও সুনন্দার কাছে কাজ করতে পাঠাচ্ছে বলে ওকে পাঠায়। পরী ভাবে কিছু টাকা উপায় করতে পারলে বাবার চিকিৎসা টা হবে।
পরদিন সুনন্দার ছেলে এলো। বাড়িতে সাজ সাজ রব। পরীও আজ সুনন্দার দেওয়া কমলা রঙের শাড়িটা পরেছে। গায়ের রং শ্যামলা হলেও মুখের গড়ন বেশ সুন্দর। সবচাইতে আকর্ষণীয় ওর গভীর কালো চোখ দুটো। সুনন্দা ওর গানের গলা শুনে এর মধ্যেই একজন গানের দিদিমনি রেখে দিয়েছেন। আসলে ভবানীও জানে পরীকে কাজের লোক হিসাবে সুনন্দা রাখে নি।
সুনন্দার ছেলের,বাড়ি পৌঁছতে বেশ বেলা হয়ে গেলো। পুষ্কর আগে ওর খুব কাছের এক বান্ধবী শেলীর বাড়ি ঘুরে বাড়িতে এলো। সাথে বান্ধবীটিও ছিল। এসব নিয়ে সুনন্দা ছেলেকে কখনো কিছু বলে নি। এবারেও তার ব্যতিক্রম হলো না। তবে শেলীর ছোটো পোশাক দেখে পরী আর একটু হলেই হেসে ফেলছিল। ভবানী ওকে টেনে নিয়ে ঘরে চলে যায়।
পরদিন সকালে ভবানী চা করে পরীকে বলে
"যা এটা দাদা বাবুকে দিয়ে আয়, আর দরজায় টোকা দিয়ে ঢুকবি, দাদা বাবু কিন্তু খুব রাগী"
"না না আমি যেতে পারবো না, ও তুমি যাও"
পরী কিছুতেই যেতে রাজি হয় না।
"ঠিক আছে আমি বৌদি কে বলছি, কাল বৌদি তোকেই পাঠাতে বলে দিয়েছিল"
বৌদির আদেশ শুনে কি আর করবে, চা নিয়ে পুষ্করের ঘরে টোকা দেয়। তিনবার টোকা মারার পর ভেতর থেকে আওয়াজ আসে
"কামিং"
পরী খুব ভয়ে ভয় ঘরে ঢুকে টেবিলে চা টা রাখে। পুষ্কর আগের দিন পরীকে খুব একটা লক্ষ্য করে নি তবে ভবানীর সাথে দেখেছিল।
"তুমি কবে থেকে কাজে লেগেছ?"
পরী কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
"অনেকদিন" ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
সুনন্দা পরীকে আবার স্কুলে ভর্তি করে দেবে ভাবে কারণ চিঠিতে সমর বাবুকে কথা দিয়েছিল পরীর পড়াশুনার ভার ওর। এতে বাদ সাধলো পুষ্কর।
"একজন কাজের মেয়েকে নিয়ে এত বাড়াবাড়ি ভালো নয়, তুমি কি ওর পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়েছে নাকি, কাজ করবে তার বদলে মাইনে দেবে, ব্যাস।"
"শোন, প্রথম কথা পরী আমাদের কাজের লোক নয়, ওর বাবা সমর বাবু সেদিন না থাকলে তোর বাবা আর আমি সেদিন বেঁচে ফিরতাম না"
সুনন্দাকে বেশ উত্তেজিত দেখায়।
"তার জন্য ওকে কিছু টাকা দিয়ে দাও,ভার নেওয়ার প্রয়োজন কি" পুষ্কর প্রশ্ন ছুড়ে দেয় মাকে।
"তোকে এত চিন্তা করার দরকার নেই , আমি এখনও বেঁচে আছি"
রাগে মুখ লাল করে সুনন্দা উপরে উঠে যায়।
পরী সব বুঝতে পারে। তাকে নিয়ে মা ছেলের অশান্তিতে নিজেকেই দায়ী করে। কিন্তু কি ই বা করবে ও।
পুষ্কর প্রায় টানা দু মাস পর আবার এলো কলকাতায়। এবার যেনো আগের থেকে অনেকটা বদলে গেছে মনে হলো পরীর। পরী এখন সারাদিন পড়া আর গান নিয়েই থাকে। বৌদির এত চেষ্টা সে সফল করবেই। সত্যি সুনন্দা ওর পরিশ্রম দেখে খুব খুশি। পরীর বাবাকে চিকিৎসার জন্য লোক পাঠিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে।
সুনন্দা রাতে পরীকে ওপরে ডেকে পাঠায়
"শোন, আমি কিছুদিনের জন্য দেশের বাইরে যাবো তুই বাড়ির সব কিছু দেখবি, মানে আমার বদলে ..."
"সে আমি কি করে পারবো বৌদি, তোমার বদলে না, তোমার আদেশ পালন করবো"
"আচ্ছা তাই, কিছু দরকার হলে আমাকে ফোন এ জানাবি।"
সুনন্দা তো বিদেশ চলে গেলো এই ভেবে যে পরী সব সামলে নেবে, কিন্তু এই সুযোগে পুষ্কর নানা অছিলায় ওকে বাড়ি থেকে বার করতে চাইলো।
চুরির দোষ থেকে আরম্ভ করে বাইরে গিয়ে প্রেম করা কিছুই বাদ গেলো না। পুষ্কর কিন্তু সবই মাকে জানাতো ফোনে। এত কষ্ট পেয়েও পরী এসব বলে সুনন্দাকে বিরক্ত করতে চাইতো না। আসলে ও জানত সুনন্দা ওকে খুব বিশ্বাস করে, তাই পুষ্কর যতই ওকে দোষ দিক, কিছুতেই বৌদি বিশ্বাস করবে না।
এবার ও মনে মনে ঠিক করে নিল, সুনন্দা ফিরলে বাবাকে নিয়ে দেশে চলে যাবে। এই শহরের সাথে ওরা হয়ত ঠিক খাপ খাওয়াতে পারছে না। সবচেয়ে বড়, ওদের জন্য মা ছেলের দ্বন্দ্ব ওর আর ভালো লাগছে না।
"পরী তাড়াতাড়ি উঠে পড়, দাদাবাবুর অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে, ওঠ ওঠ"
"কি করে হলো?"
পরী লাফিয়ে উঠে পড়ে বিছানা থেকে।
সে বার প্রাণে বেঁচে গেলেও পুষ্কর এর বাঁ দিকের পা টা অকেজো হয়ে যায়।
সুনন্দা কাজ কমপ্লিট না করেই ফিরে আসে। একমাত্র ছেলের এই অবস্থায় খুবই ভেঙে পড়ে। পরী পাকা গিন্নীর মত মা ছেলে দুজনকেই সামলাতে থাকে। পুষ্কর এর দেখাশোনা এখন পরীই করে। ভবানী ওকে সাহায্য করে।
সুনন্দা সব লক্ষ্য করে, পুষ্কর এত চেষ্টা করেছে পরীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার, কিন্তু এখন সেই পুষ্কর পরী কিছুক্ষণ না এলে ওকে ডেকে পাঠায়।
পুষ্কর এর ভালোবাসাটা ছিল স্বার্থ মেশানো, কিন্তু পরীর ভালোবাসা নির্ভেজাল। ও পুষ্কর কে যখন ভালোবাসলো তখন পুষ্কর পঙ্গু। এত খারাপ ব্যবহারেও পুষ্কর এর এই কঠিন অবস্থায় ও কিছুই মনে রাখেনি। প্রাণ দিয়ে সেবা করে পুষ্কর কে ভালো করে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সুনন্দার মনের এক কোণে পরীকে বউ করার ভাবনা থাকলেও এখন আর তা নিয়ে ও চিন্তা করে না। কারণ ডাক্তারের মত অনুযায়ী পুষ্কর এর একেবারে স্বাভাবিক হয়ে ওঠা অসম্ভব।
"বৌদি তোমাকে নিচে একজন ভদ্রলোক ডাকছেন" পরীর কথায় সম্বিৎ ফেরে সুনন্দার
"কি নাম বলছে, জেনেছিস?"
"মুকুল কুন্ডু"
"ও তুই আর নিচে যাস না, ভবানিকে পাঠিয়ে ডেকে আন"
"আচ্ছা" বলে পরী পিছনে ফিরতেই সুনন্দা ডাকে
"শোন, একটা ভালো কাপড় পরে একটু সেজে গুজে আসবি, আমি যখন ডাকবো"
একরাশ বিস্ময় নিয়ে পরী ভবানীকে ডাকতে যায়।
সেদিন সুনন্দা যা ছেয়েছিল তাই হলো। মুকুল বাবু তার ব্যারিস্টার ছেলের জন্য পরীকে পছন্দ করে গেলেন। পাকা কথার জন্য পরের মাসে ছেলের মাকে নিয়ে আসবেন। মাঝে ছেলে বন্ধু নিয়ে একবার মেয়ে দেখে যাবে একথাও হলো।
সেদিন রাতে পরী সুনন্দার কাছে গেলো।
"বৌদি, আমি এখন বিয়ে করবো না"
খুব আস্তে গলায় বললো।
"তো কি করবি? সারাজীবন কারো বাড়ি কাজ করে কাটাবি?"
পরী বোঝে সুনন্দা রেগে গিয়ে বলছে,
"না, শুধু তোমার বাড়িতেই থাকবো, কারণ তুমি আমার অন্য কেউ নয়".......
কথাটা সম্পূর্ণ করতে দেয় না সুনন্দা
"বল, পারবি আমার ওই পঙ্গু ছেলেটাকে বিয়ে করে আমাকে মা করে নিতে?"
সুনন্দা আর চোখের জল ধরে রাখতে পারে না। পরী সুনন্দা জড়িয়ে ধরে বলে
"আমি তোমার ছেলেকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি বৌদি, ও পঙ্গু হোক, আমার ভালোবাসা শুধু ওই মানুষটাকে ই চায়। "
সুনন্দা আবার বলে "তোকে ও দায় পরে ভালোবেসেছে পরী, তোর ভালবাসা খাঁটি হতে পারে, কিন্তু পুষ্কর এর টা ভেজাল,"
পরীর এত কষ্টের মাঝেও স্মিত হাসি,
"আমার খাঁটি ভালোবাসাটা পরিমাণে বেশি, তাই তোমার ছেলের ভেজাল একটু মিশলে ও কিছু হবে না"
সুনন্দা হেসে ফেলে।