পরিচালকের স্মৃতি
পরিচালকের স্মৃতি
পরিচালক হতে চেয়েছিল পরাগ। আজ সে অনেক বড় মাপের পরিচালক। ওর পরিচালনায় তৈরি ছবি পুরস্কারও পেয়েছে অনেক। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রায় সবাই ওকে এক ডাকে চেনে। মূলত আর্টফিল্ম বানায় পরাগ।
এই তো আজই ওর একটা ফিল্মের প্রিমিয়ার শোতে গিয়ে রোদ্দুরের সাথে দেখা হয়েছিল। ওর কলেজ ফ্রেন্ড। এখন সেম প্রফেশনে থাকার সুবাদে দেখা সাক্ষাৎ মাঝে মাঝেই হয়। রোদ্দুর আজ ওর পরিচিত এক নতুন প্রোডিউসারকে নিয়ে পরাগের বাড়িতে আসবে বলেছে। পরাগের পরের ছবির প্রি-প্রোডাকশনের ব্যাপারে প্রাথমিক কথাবার্তা বলতে।
আজকাল প্রচন্ড ব্যস্ত পরাগ। বাড়ি ফিরে স্নান করে ফ্রেস হয়ে স্টাডিতে বসল সে। প্রোডিউসারের আসার আগে স্ক্রিপ্টটা একটু গুছিয়ে নিতে।
জীবনে যা চেয়েছিল সব পেয়েছে সে। কিন্তু এই সবকিছু থাকা সত্ত্বেও ওর মনে হয় জীবনটা তো ফাঁকাই থেকে গেল। নাহ্। সেটা ওর অসুখী দাম্পত্যের জন্য নয়। ডিভোর্সের আগে ও পরে ওর জীবনে আরও নতুন নতুন মুখ উঁকি দিয়েছে বহুবার। তবুও ও ভুলতে পারে না সেই মুখ। স্মৃতি থেকে গেছে।
পরাগের এক বন্ধু ছিল। মেয়েটির সাথে সে সব কথা শেয়ার করতে পারত। তার উপহার দেওয়া বইগুলো নাড়তে নাড়তে ওর কথা আজও ভাবে পরাগ। ওর অবচেতন মনে কোথাও একটা আজও থেকে গেছে মেয়েটা। একদিন একটা বই উপহার দেওয়ার পর বলেছিল "এই গল্পটা দিয়ে খুব সুন্দর একটা ফিল্ম হতে পারে পরাগ।" ওই গল্পটা দিয়েই তৈরি হচ্ছে পরাগের পরের ফিল্ম। ওই মেয়েটি বিনা স্বার্থে ওকে সময় দিত, ওর কথা মন দিয়ে শুনত, ওকে চোখ বুজে বিশ্বাস করত। পুরো পৃথিবী ওকে ছেড়ে গেলেও ওই বন্ধুকে পরাগ সারাজীবন পাশে পাবে ভেবেছিল। হয়তো পেতোও। কিন্তু সাফল্য ওর মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল।
পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে ওর চোখের কোণে জ্বালা করছিল, গলায় মাছের কাঁটা বিঁধলে যেমন যন্ত্রনা হয় ঠিক তেমনটাই হচ্ছিল। ওর কান্না পাচ্ছিল খুব। ভাবছিল যদি একবার যোগাযোগ করা যেত ...
সেইসময় কলিং বেলের শব্দ। "রোদ্দুর এসে গেছে নিশ্চয়" - বলতে বলতে দরজা খুলতেই রোদ্দুর পরিচয় করিয়ে দিল -
"পরাগ, ইনিই মিসেস মুখার্জী। আমাদের নতুন ছবির প্রোডিউসার।"
"স্মৃতি!" - অস্ফুটে বলল পরাগ।

