STORYMIRROR

Sharmistha Banerjee

Horror Thriller

3  

Sharmistha Banerjee

Horror Thriller

পরিচালকের প্রথম গল্প!

পরিচালকের প্রথম গল্প!

4 mins
247


কোলকাতা। এই শহরটা দিয়েছে অনেক কিছু। কিন্তু নিয়েছে তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু।


ওর সাধের কোলকাতা ছেড়ে যাওয়ার সময় মনে মনে পুরানো কথা ভাবতে থাকে পরাগ। ফ্লাইটটা তখন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টের রানওয়ে ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা ওপরে উড়তে শুরু করেছে। গন্তব্য ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট।


পরাগ ব্যানার্জী। বয়স ত্রিশ। এক বিখ্যাত বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত ছিল সে। ঝকঝকে কেরিয়ার, সুন্দরী প্রেমিকা সবকিছু থাকা সত্ত্বেও যেটা ছিল না তা হল নিজের জন্য সময়। পরিচালক হতে চেয়েছিল পরাগ। এমবিএ করার আগে একটা নামী ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে শর্ট ফিল্ম স্টাডিজ এ পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমাও করেছিল। কিন্তু বাড়ির চাপে কর্পোরেটের ইঁদুর দৌড়ে নাম লেখাতে হয়। ফলস্বরূপ সারাদিন অফিস, ক্লায়েন্ট, ডেডলাইন, আর উইকএন্ডে প্রেমিকার সাথে শপিং মলে মার্কেটিং, হাজরায় ফুচকা, নন্দনে চা, প্রিন্সেপ ঘাটে চুমু এই নিয়েই চলছিল। হঠাৎ করে তার রোদ্দুরের সাথে ফেসবুকে কথা শুরু হয়। রোদ্দুর মিত্র। পরাগের কলেজ ফ্রেন্ড। এখন দিল্লিতে একটা থিয়েটার গ্রুপের কো- স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করছে। যে স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গিয়েছিল সেটাই আবার দেখতে শুরু করল পরাগ। আর সেই কারণেই মোটা অংকের চাকরিতে রিজাইন আর স্বপ্নের পথে পাড়ি দেওয়া। রিজাইনের পর অবশ্য প্রেমিকাও তাকে ভুলে এক নামী ডাক্তারে মন দিয়েছে।


"এই বরং ভালো হল" মনে মনে ভাবল পরাগ "যাকে ধরে রাখা যায় না তার সাথে দেখা না হওয়ায় ভালো" এইসব ভাবতে ভাবতে সে খেয়াল করল প্লেন ততক্ষনে ল্যান্ড করেছে। এয়ারপোর্টের বাইরে আসার পর দেখল রোদ্দুর হাত নেড়ে তাকে ডাকছে। তারপর দুজনে একটা ক্যাব বুক করে একটা ওয়ার্কিং হস্টেলে পৌঁছাল যেটা পরাগ আগে থেকেই বুক করেছিল। "আজ ফ্রেশ হয়ে ডিনার সেরে রেস্ট নে। কাল তোকে থিয়েটার গ্রুপের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব", বলল রোদ্দুর। পরের দিন রোদ্দুরের সাথে পরাগ ওদের থিয়েটার গ্রুপে যায়। পরিচয় হয় সবার সাথে। মাসখানেক পর নিজ গুনে ওদের গ্রাফিক্স ডিপার্টমেন্টে একটা ভালো জায়গা বানিয়ে নেয় পরাগ।


কিন্তু শুধু গ্রাফিক্স ডিজাইন করতে চায়নি সে, ডিরেকশন দিতে চেয়েছিল । মাঝে মাঝে ভাবে সে। কিন্তু তার জন্য চাই পিসফুল মাইন্ড। যেটা ওয়ার্কিং হস্টেলে পরাগ পাচ্ছিল না। তাই একটা বাড়ির খোঁজ শুরু হল যেখানে সে নিজের মতো করে লিখতে পারবে। কিন্তু এই সামান্য রোজগারে একটা ফ্ল্যাট একা ভাড়া নেওয়া অসুবিধা। হঠাৎ করেই সে একটা ফ্ল্যাটের খোঁজ পায়। মালিক বাঙালি। মাঝারি উচ্চতার। দেখে সজ্জন বলেই মনে হল। "কিন্তু আরও একজনের সাথে রুম শেয়ার করতে হবে। ছেলেটি দু একদিনের মধ্যেই চলে আসবে। এটা আমার কার্ড। এখানে আমার কন্ট্যাক্ট নাম্বার ও আছে। কোনোরকম অসুবিধে হলে যোগাযোগ করবেন।" বলে ভদ্রলোক বেরিয়ে গেলেন। পরাগও দরজা বন্ধ করে স্নান সেরে লিখতে বসল। "দিল্লিতে পলিউশন খুব বেড়ে গেছে। বাইরে থেকে এসে স্নান না করলেই নয়।" বলতে বলতে পরের দিনের শিডিউল দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টেরও পায়নি সে। হঠাৎ করে কলিং বেল এর আওয়াজে ঘুম ভাঙলো তার। পাশে রাখা মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখল, " আরে ৬ টা বেজে গেছে" আবারও বেল বাজল। "এইসময় আবার কে" বলতে বলতে সে দরজা খুলে দেখল তারই বয়সী একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে। পাশে লাগেজ। পরাগ কিছু বলার আগেই ছেলেটি বলল, "আমি আকাশ। আপনিই তাহলে আমার রুমমেট। তাই তো?" "হ্যা। আমি পরাগ।" সে বলল। ছেলেটির সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে পরাগ জানতে পারল সে এখানেই একটি বহুজাতিক সংস্থায় কর্মরত। আরও কিছুক্ষণ কথা হবার পর আকাশ বলল সে একটা পার্টি থ্রো করেছে। সেই উপলক্ষে তার কলিগরা কাল এই ফ্ল্যাটেই আসছে। পরাগ আপত্তি জানিয়েছিল। কিন্তু সে আপত্তি ধোপে টেকেনি। পরদিন যথারীতি থিয়েটার থেকে ফেরার পর সে দেখল ৪জন ভদ্রলোক এবং ১টি মহিলা সহ আকাশ পার্টিতে মত্ত। এদিকে পরাগ ড্রিঙ্ক করে না। কিন্তু ওদের জোরাজুরিতে খানিকটা বাধ্য হয়েই সামান্য করল। তাতেই ওর মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করল। আকাশ কে বলে ও রুমের একটা দিকে গিয়ে বসল। হঠাৎ করে একটা চেঁচামেচিতে ওর ঘোর কাটে। ও দেখল একটা লম্বা, মোটা লোক ঘরে ঢুকে আকাশের সাথে হাতাহাতি শুরু করেছে। আকাশকে শাসাচ্ছে। কথাবার্তায় বোঝা গেল লোকটি ওদের অফিসেই কর্মরত। এবং ঝামেলার বিষয় ওই মহিলা। হঠাৎ করে জানালার বাইরে একটা আওয়াজ। পরাগ তাকিয়ে দেখল লোকটা আকাশকে ছ'তলার জানালা থেকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছে। চারিদিকে শুধুই রক্ত। কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল পরাগ। তারপর ছুটে গেল আকাশকে বাঁচাতে। প্রথমেই গেল গার্ড বিনয়ের কাছে," বিনয় ভাই! আকাশ, আমার রুমমেট, ও ছ'তলার থেকে নিচে পড়ে গেছে। ওকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আপনি একটু চলুন আমার সাথে।" তারপর বিনয় আর পরাগ ছুটতে ছুটতে গেল যেখানে আকাশ পড়ে আছে। কিন্তু গিয়ে দেখল সেখানে কেউ নেই। পরাগ অবাক। ও ভাবল হয়তো ভয়ে ও কোথাও উঠে পালিয়েছে।"কিন্তু যেভাবে পড়েছে তাতে পালানোর চেষ্টা করতেও পারার কথা নয়। তাছাড়া রক্ত দেখলাম, সেটাই বা কোথায় গেল?" ভাবতে থাকে পরাগ। ওরা চারিদিকে তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোথাও কিছুই না পেয়ে পুলিশে খবর দিল। পুলিশ এসে সব শুনে খোঁজ শুরু করল। কিন্তু তারাও কিছু না পেয়ে সিসিটিভি ফুটেজ চেক করল। সেখানে দেখা যায় পরাগ থিয়েটার থেকে ফেরার পর একাই রুমের দিকে গেল। তারপর বেশ কিছুক্ষণ পরে ছুটতে ছুটতে বেরিয়ে বিনয়ের কাছে এল। সেখানে আকাশ বা তার কলিগদের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। পুলিশ স্বাভাবিকভাবেই এই সব দেখে চলে গেল। পরাগকে খানিকটা শাসিয়েও যায় মিথ্যে বলার জন্য। রুমে ফিরে পরাগ ফ্ল্যাটের মালিককে ফোন করে পুরো ঘটনা জানাতে তিনি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন। তিনি বললেন," যে ছেলেটির আসার কথা ছিল সে পরের দিন আসবে বলে জানিয়েছেন।" পরাগ আরও অবাক হল। "তাহলে আকাশ কে ছিল?" বলল সে।

মালিক জিজ্ঞেস করল,"আকাশের পুরো নাম কি বলেছিল?" "আকাশ ঝা" পরাগ উত্তর দিল। ভদ্রলোক খানিকটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন আর জিজ্ঞেস করলেন " দেখতে কেমন?" পরাগ বলল," লম্বা, ছিপছিপে, ফর্সা" ভদ্রলোকের মুখ এবার আরও ফ্যাকাসে হয়ে গেল। তিনি বললেন" মাসখানেক আগে এইরকম দেখতে একজন ভাড়াটে এসেছিলেন। আসার পরের দিনই কিভাবে কেউ জানেনা কিন্তু এই জানালা থেকে নিচে পড়ে মারা যান। নাম ছিল আকাশ ঝা।"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror