M Wasiq Ali

Abstract Tragedy

4.0  

M Wasiq Ali

Abstract Tragedy

পরের বসন্তেই.…..

পরের বসন্তেই.…..

4 mins
276


উঁচু উঁচু অট্টালিকার পাশ কাটিয়ে এগুতেই রঙ-বেরঙের কচিকাঁচা চারা গাছগুলি গামলার ভেতর থেকে উঁকি দিয়ে প্রায়শঃই পথ আটকে দেয়... পুকুরের লদলদে পাঁকে ফেঁসে গেলে যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া উচিত ঠিক সে রকমই অনুভূতি মনের অলিন্দে, উৎসুক হয়ে চেয়ে থাকি, যেন চারাগুলো আকারে ইঙ্গিতে কিছু বলতে চাই। খুব মনোযোগ সহকারে শোনার চেষ্টা করি কিন্তু আজ অব্দি ছাইপাঁশ সাংকেতিক ভাষার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝি নি, তবুও রণে ভঙ্গ দিয়ে নিজের আত্মসম্মানবোধকে ধূলিসাৎ হতে দিইনি।


হ্যাঁ এক মুঠো মাটি আর অফুরান বাতাস, অমূল্য সম্পদও বটে এক গরীবের কুড়িয়ে পাওয়া চকচকে আট-আনা সিক্কার মতই। কেউ বুঝেছে, কেউ বোঝেনি আবার কিছু কিছু আঁতেল বুঝেও না বোঝার নিত্য ভান করে। সেইগুলো অকৃত্রিম নাটুকে লোকগুলো ঠিক কি ধাতু দিয়ে তৈরি অন্তত আমার জানা নেই। অবিশ্যি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পর্যালোচনা করে, বহু তথ্য সহকারে অতি সাবধানতা অবলম্বনে গবেষণার মাধ্যমেই সত্যটা উন্মোচন করা উচিৎ।


ঝাঁ চকচকে, সানমাইকার মতো মসৃণ জাতীয় সড়কের বুকের উপর দিয়ে হুস হুস করে তীব্র গতিতে ছুটে যায় না ধরনের বাহারি রঙের বিচিত্র গাড়ীগুলো, ডিভাইডারের এক-ফালি জায়গাতেই নিডর, নির্ভীক গোলাপের ফুল-পাপড়িগুলো দিব্যি পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে সুখে বেঁচে আছে, প্রতিনিয়ত বিষাক্ত কালো ধোঁয়া হজম করেও হজম শক্তির দুর্বল হয়নি বরং একটু বেশীই শক্তপোক্ত। সমস্ত প্রতিকূলতা, বাধা বিপত্তি হেলায় ঠেলে বেঁচে থাকাটাই আসল অস্তিত্বের লড়াই। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠের মত, জিততে হবে নতুবা একটুখানি নুইয়ে পড়লেই হরে রাম হরে কৃষ্ণ!! কেল্লাফতে- সব শেষ। যমরাজের মতোই অতি উৎসাহী মালী সমূলে উৎপাটিত করে রাস্তার পাশে ফেলে দেবে এবং তৎক্ষণাৎ অভুক্ত নিরীহ প্রাণীর উদরে সসন্মানে ঠাই পাবে। আমি স্পষ্ট অনুভব করি, এক একটি গোলাপ ফুল রাত-দিন অস্তিত্বের লড়াই করতে করতেও আমার দিকে চেয়ে চেয়ে অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে কিছু যেন বলার চেষ্টা করে..হয়তো আমাকেই কটাক্ষ করে বলার চেষ্টা " এতো দুর্বল কেন? আমাকে দেখে কিছু শেখো...এখনও লড়ে যাচ্ছি...... ভেঙে পড়বে না, ইত্যাদি ইত্যাদি ধরণের অনুপেরণামূলক উক্তিসমূহ "


সত্যি বলছি, উত্তরের অপেক্ষায় আছি সেই অনন্তকাল ধরে...... কিন্তু মনের গহীন থেকে সামান্য আশার আলোটুকুরও দেখা নাই। কেন নিজের প্রতি নূন্যতম বিশ্বাসটুকুও হারিয়ে ফেলেছি? আমি কি সত্যি সত্যিই এতোটাই দুর্বল? না আমিত্বের নেশায় বুঁদ!!


আজকাল আবার বহিরঙ্গটা একেবারেই টিপটপ, দেখে বোঝা দায় কে আমীর আর কেই বা গরীব!! চারিদিকে রূপের বাহার, সন্দ্যর্য্যের নুমায়েশ, এদিক ওদিক সেদিকে ঘুরে ঘুরে সেলফি তোলার যুগে রাস্তার ওপর পার্কিং বেমানান, গাড়ীগুলোর পাতালে পার্কিং করার সুব্যবস্থা সর্বজন বিদিত। যখন পাতাল-লোকের ছোট্ট অন্ধকার মুখ দিয়ে ঢুকে সামান্য একটু বাতাসের জন্য বুকটা হাঁসফাঁস করে আর রোমাঞ্চ অনুভব করি যখন গাড়িগুলো ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছেড়ে বিশুদ্ধ বাতাস শুষে টেনে নেয়, অজান্তেই ধূমপানে মত্ত হই শুধু আয়েশ করে সিগারেটে টান দেয়াটাই বাকি রইলো । পাতাল পার্কিংয়ের কোনও এক কোণে, সকলের নজর এড়িয়ে টবে লাগানো চারা গাছের নরম কচি কচি পাতাগুলোও প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত। অনামী পাতাগুলো নিজের অস্তিত্বের খোঁজে প্রতিটি গাড়ির মালিকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে, কিন্তু দেখবেই বা কে? তুচ্ছদের কেউ দেখেছে কি? সহানুভূতি প্রকাশ করাও কৃত্রিম, বাস্তবের সাথে মিল নেই বেচারা গুলো জানে না।


মাটিতে অনাদরে লুটিয়ে পড়া হলদেটে পাতাগুলোও বেঁচে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। সজাগ দৃষ্টিতে চলার পথে প্রতিটি মানুষকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জরিপ করে, যদি বা কেউ আদর করে একটু ক্ষতে হাত বুলিয়ে দেয় তবে যে কোনও পাতা কুড়ানি কে দেখলেই ভয়ে সিটিয়ে যায়, এইরে আর রক্ষে নাই এবার জ্বলতে হবে, দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শক্ত করে বাঁচার আকুতি মিনতি করতে থাকে, যতই উড়ে যেতে চেষ্টা করে, পাতা কুড়ানিদের জেদ ততই বেড়ে যায়। হয়ত পাতাগুলোরও ইচ্ছে করে বিহঙ্গের মতো মুক্ত, সুনীল আকাশে উড়ে যায়। কিন্তু .........বাস্তবটা একটু অন্যরকম।


শতাব্দী প্রাচীন বটগাছটিরও সুখ নেই, সেও ধুঁকছে, তার দর্প চূর্ণ। দমকা বাতাসও সর্বগুণে দীক্ষিত, হঠাৎই নিজের গতি পরিবর্তন করে সকলকেই আশ্চর্যান্বিত করে তুলেছে, বেচারা অশীতিপর বট আর পেরে ওঠে না, একে একে অক্ষম সো শাখাপ্রশাখা, আর নেই সেই যৌবনের জৌলুস। তপ্ত দুপুরে হাভাতে ছেলেগুলো আর ভিড় জমায় না, তার শেকড়ে ঝোলা ঝুলি করে পুকুরে ঝাঁপ দেয় না, পাখিদের কোলাহল, কিচির-মিচির একটু আধটু থাকলেও একাকীত্বে ভোগে, মনে প্রতিনিয়ত শূল বিঁধে যায়, খুব কষ্ট হয়। যদিও পণ ছিল ভীষ্মের মত, ইদানীং তার অটল বিশ্বাসে চির ধরেছে, চিন্তাধারা ডগমগে, পতন অনিবার্য, শুধুই সময়ের অপেক্ষা!! ধীরে ধীরে তার সোনালী আভা ফিকে, লুপ্তের দিকে, ক্রমবর্ধমান.....অন্ধকারের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে চলেছে।


ফুল আর প্রেম....ফুল আর প্রেম কি আজঅব্দি কারও পরিপূরক হয়েছে? একে ওপরের বিনা ফিকে, জীবনে নতুন করে বসন্ত আসতেই পারে যদি ফুল ও প্রেম অন্তত: একটিবারের জন্য নিজ নিজ অভিমান ভুলে এক হয়। এইতো গত রাতের এক দমকা হাওয়ায় লণ্ডভণ্ড তাদের সব অহংকার। কিন্তু কেউ কি বুঝেছে রুপি দানব দমকা বাতাস, ঘন কালো মেঘের হৃদয়ে যে পুনঃ-পুনঃ আঘাত হানাতে থাকে, অবশেষে পর্যুদস্ত কালো মেঘের হৃদয় থেকে অশ্রুধারার বদলে তুমুল ওলা-বৃষ্টি হচ্ছিল। গ্রীসয়ের তীব্র দহনে এমন মনোরম বাতাবরণে অনেকেই সীমাহীন আনন্দে লুটোপুটি খাচ্ছিল কিন্তু আমার মন আঙিনার উদার বৃক্ষটি অপেক্ষার এক হলদেটে চাদর বিছিয়ে চুপচাপ গুম মেরে বসে ছিল।


আমি......কি সত্যি সত্যি বোকা ? এক পশলা বৃষ্টির শেষে পরিপার্শ্বিক সবুজের হাটে নিজেকে কেমনেই যেন নির্জীব দেখায় ...আর নীরবতার সাগরে ডুবে, নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করা সাজে কি?


সব কিছু ঝেড়ে ফুঁকে এক নতুন উদ্যমে বেরিয়ে পড়ি নতুনত্বের স্বাদ গ্রহণে, হয়তো আর ছিলিমের দরকার পড়বে না । সত্যি সত্যিই আমি আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, অতিবিশ্বাসী, দ্বিধাহীন, স্থির লক্ষ্য, নিষ্প্রাণ পাথরের বুক ছিন্ন ভিন্ন করে খুঁজে নেবো এক প্রার্থিত পথ।


কথা দিলাম......।


ঠিক শুনেছেন পরের বসন্তেই.…..


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract