হয়তো আমিই…
হয়তো আমিই…


উস্কুখুস্ক চুল, খোঁচা খোঁচা বাসি দাড়ি, দ্রুত বেগে এগিয়ে আসছিল, মনে করতে চেষ্টা করছিলাম ঠিক যেন কোথায় দেখেছি? আরে এ তো সেই………!!
বছর আটেক পূর্বে দেখা ছিপছিপে, সুদর্শন, পারিপাট্য, আপাদমস্তক সাদা সুট পরিহিত, চোখে বিদেশি ব্রান্ডের মহামূল্য কালো চশমা, কব্জিতে রোলেক্সের একলাখি ঘড়ি... পদে পদে অভিজাত্য ঠিকরে বেরিয়ে আসা সেই যুবকটা না?
কিছুতেই বোধগম্য হচ্ছে না, আজ বিনা ব্রান্ডে কেমন যেন পানসে পানসে দেখায়, যেন পর্বত-সম সমুদ্রের ঢেউ শান্ত শাবকের ন্যায় চুপসে গেছে। মরুভূমির তীব্র দহনে যেন ঝলসে যাওয়া নগ্ন গাছের মতই এক টুকরো জীর্ণ, শত ছিদ্র কাপড়ে লজ্জা নিবারণে শশব্যস্ত। সর্বত্র মলিনতার ছাপ স্পষ্ট। সত্যিই অদ্ভুত দেখাছে!!
গটগট করে হেঁটে চলে গেল, একবারও ফিরে দেখল না…।।! হয়তো বা চিনতে পারেনি, কিন্তু আমি তো পেরেছি সেটা কি যথেষ্ট নয়? অন্তত: দম্ভের একটা সীমা থাকা খুবই জরুরী। আঘাত পেয়েছি কিন্তু আমিই বা কেন বারবার ছোট হতে যাবো, আমারও আত্মসন্মান বোধ যথেষ্টই, সন্দেহ-অতীত ।
যাক গে… এসব ভেবে কি লাভ!!
ধরেই নিয়েছি সেও সেই এক অপরিচিত ছায়ার মতোই, জীবনে চলার পথে এমন কতই না ছায়া প্রতিক্ষণেই বিনা পাশ কাটিয়েই চলে যায়। এখন আর মন খারাপ করে না, গা সোয়া হয়ে গেছে, খুব বুঝিয়েছি মনকে…মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ দু-পিঠই। মৃদু বাতাসে ছড়িয়ে যাওয়া কস্তূরীর সুগন্ধ বা বিদেশি ব্রান্ডের পারফিউম আর প্রয়োজনে আসে না, আর ভালও লাগে না। এখনও আমার নাকে লেপটে আছে রজনীগন্ধার মাদকতা……শৈশবের স্মৃতি। সে বুঝবে কি? তার মৃদু স্পর্শে আজও হৃদয় তোলপাড় করে। পৌষের মাঝ রাতেও ঝরঝর করে ঘাম ঝরে। তার এক মুহূর্তের বক্র হাসি… বিনা যুদ্ধে জয় করেছে কতই না কলিঙ্গের ময়দান।
জীবনের ম্যারাথন দৌড়ে বিগত আট আটটি বসন্ত পেরিয়ে গেছে, ফেলে অচেনা, অজানা, নামবিহীন এক একটি মাইল ফলক তবুও শেষ প্রান্ত ঢের দেরি। দুঃখ হয় শেষ পরিণতির কথা ভাবলে, কিন্তু অসহায় আমি!! বিফলে গেছে বহু চেষ্টা তবুও মনে পড়েনা বিগত দিনের ছোট ছোট প্রতিশ্রুতি!! অপূর্ণ সেসব অঙ্গীকার।
কে সে? এখনও ছুটে চলেছে অবিরাম.........।।
শুধুই কি ছায়া না অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী?
না জীবন যুদ্ধে পরাজিত অতীত………অনিবার ছুটেই চলেছে।
কে সে? হয়তো বা ……!