STORYMIRROR

Srishti Pahari

Abstract Tragedy

4  

Srishti Pahari

Abstract Tragedy

প্রেমের ওপারে

প্রেমের ওপারে

3 mins
446


নীলা আর হিমাদ্রির বিয়েটা হয়ে যেতেই মন্ডপ ছেড়ে ছাদে এসে দাঁড়াল প্রিয়া। এক লহমায় যে সবটাই শেষ হয়ে গেল। ওর তিন বছরের "সুপ্ত" ভালোবাসা আজ নির্দ্বিধায় অন্য কারো ভালোবাসার বন্ধনে আটকা পড়লো। নিমেষেই চোখগুলো জলে ভরে উঠল ওর, রেলিংয়ে হাত রেখে মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগল ও।


বিয়ের মন্ডপে প্রিয়াকে দেখতে না পেয়ে ওকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে এসে পৌঁছাল নীল। প্রিয়া যে হিমাদ্রিকে ভালোবাসে এটা একমাত্র ওই জানত, আর তাই ওকে নিয়ে এত চিন্তিত ও। 

ছাদে গিয়ে নীল দেখল প্রিয়া রেলিংয়ের ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হয়ত কাঁদছে। ও নিঃশব্দে একটু একটু করে ওর দিকে এগোতে লাগল।

নিঃশব্দে প্রিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে নীল দেখল প্রিয়া কাঁদছে, ভীষণ পরিমাণে কাঁদছে। ওর চোখগুলো লাল হয়ে আছে, ঠোঁটটা তিরতির করে কাঁপছে অনবরত। প্রিয়ার হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল ও, একটা কাঁচের টুকরোকে হাতের মুঠোয় সজরে চেপে আছে ও, রক্তের লালাভা সারা হাতময় ছড়িয়ে আছে।

নীল: কি করছ? ফেলো,ফেলো ওটা!!

প্রিয়া নীলের উপস্থিতি বুঝতে পারেনি, তাই চমকে যায় আর ওর হাত থেকে রক্তমাখা কাঁচের টুকরোটা পড়ে যায়।

নীল: আর ইউ ম্যাড? কি করছ এসব? চলো চলো, ঘরে চলো।

বলেই পা বাড়াতে গিয়ে প্রিয়াকে তেমনি স্থির দেখে প্রশ্ন করে: কি হল, কথা কানে যায় নি?চলো..

প্রিয়া সামান্য কেঁপে উঠে রুমের দিকে পা বাড়ায়।


প্রিয়াকে ওর রুমে নিয়ে এসে হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয় নীল। প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে এখনো কাঁদছে ও। নীল প্রিয়ার পাশে বসে বলে: প্রিয়া...

আচমকাই নীলকে জড়িয়ে ধরে প্রিয়া, কাঁদতে কাঁদতে বলে: কেন নীল কেন? কেন আমার সাথেই এরকম হলো? কেন পূর্নতা পেল না আমার ভালোবাসা? কি দোষ করেছি আমি?

নীল চুপ করে ওর মাথায় হাত বোলাতে থাকে, সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পা

য় না। একসময় লক্ষ্য করে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে প্রিয়া। ওকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে রুম লক করে নিজের রুমে চলে যায় নীল।


প্রিয়া, নীলা, হিমাদ্রি, নীল। চারজনে চার মেরুর বাসিন্দা হলেও দেখাটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই হয়েছিল। বিশেষত প্রিয়ার সাথে যখন বাকিদের দেখা হয়, ও তখন ভয়ানক ডিপ্রেশনে ছিল। বাকিরা ওকে সাহায্য করে ওই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে, আর সেই সময়ই একটু একটু করে হিমাদ্রির শান্ত, গম্ভীর স্বভাবের প্রেমে পড়ে যায় প্রিয়া, আঁটকে যায় মায়ার বাঁধনে। কিন্ত হিমাদ্রির মনের কথা বুঝে উঠতে পারেনি কখনই। সে যে প্রথম থেকেই নীলাকে ভালোবাসে, তা ঘুনক্ষরেও বুঝতে পারেনি প্রিয়া। আর তারপর হঠাৎই ওদের বিয়ে। নীল জানে প্রিয়ার পক্ষে ধাক্কাটা সামলানো অনেক কঠিন, অন্নেক।

না জানে আর কত কষ্ট পাবে মেয়েটা!! ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয় নীল।


দেখতে দেখতে কেটে গেছে দুটো মাস। প্রিয়া এরই মধ্যে দুবার সুইসাইড আটেম্প করেছে, যদিও নীলের তৎপরতায় বেঁচে ফিরেছে দুবার ই। নীল ঠিক করেছে আজ বলেই দেবে মনের কথাটা, আর কতদিন লুকিয়ে রাখবে! হম্ম ভালোবাসে ও প্রিয়াকে, অনেক আগে থেকে। শুধু সাহস করে বলতে পারেনি, কিন্ত আজ বলবেই।

বাজার থেকে এক গোছা সদ্যফোটা লাল টকটকে গোলাপ কিনে প্রিয়ার বাড়ির দিকে পা বাড়াল নীল।

প্রিয়ার রুমের দরজাটা ভেজানো ছিল, হালকা চাপ দিতেই খুলে গেল। অন্যান্য দিনের মত আজো নীল দেখল প্রিয়া হিমাদ্রির একটা ছবি নিয়ে বসে আছে, ওর দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে। নিমেষেই বুকটা মুচড়ে উঠল ওর। প্রিয়ার সামনে গিয়ে বসল ও।

নীল: এখনো হিমাদ্রির কথা ভেবে চোখের জল ফেলছ?

প্রিয়া: আমাকে যে ভালোবাসো, আগে বলোনি কেন? তাহলে হয়ত আজ তোমার ভালোবাসার পরিণতিটা এমন হত না। বলেই সিলিংএর দিকে তাকাল প্রিয়া,যেখানে ঝুলছে ওর ই মৃতদেহ!



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract