সোনালী প্রেম
সোনালী প্রেম


" শীত কালে যারা ভোর বেলা পড়ায় তাদের আমার একদম পছন্দ না বুঝলি?" চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে কথাটা বলল তিয়াসা।
" তোর মত ঘুম কাতুরে হলে কোন কালেই ভোর বেলা পড়তে ভালো লাগবে না" চশমার কাঁচটা মুছতে মুছতে বলল রক্তিম।
তিয়াসা: এই আমি মোটেই ঘুম কাতুরে না ওকে? আমি অনেক ভোরে উঠতে পারি।
রক্তিম: তা সেই "ভোর" টা কটায় হয়?
তিয়াসা: আব…ক..কেন.. আটটায়…
রক্তিম: আটটাটা ভোর হলো!
তিয়াসা: দরকার পড়লে আমি ভোর চারটেতেও উঠতে পারি বুঝেছিস?
রক্তিম: আচ্ছা তাই?
প্রশ্নটা করেই রক্তিম কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে ওঠে, তিয়াসা যদিও সেটা খেয়াল না করেই বলে: হম তাই।
অন্যমনস্ক রক্তিম আপনমনেই বলে ওঠে: আমার সাথে সূর্যোদয় দেখতে যাবি তিয়ু?
তিয়াসা রক্তিমের কথার মানে বুঝতে না পেরে বলে: কি?
মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নেয় রক্তিম,আরেকটু হলেই ওর দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে যাচ্ছিল! মনে মনে নিজের মাথায় একটা চাঁটি বসিয়ে রক্তিম বলে: না.. মানে বলছিলাম…তুই যখন এতই সকালে উঠতে পারিস তাহলে চল না একদিন গিয়ে সূর্যোদয় দেখে আসি ঝিলের ধারে।
তিয়াসা: সে যাওয়াই যায়…কবে যাবি বল।
রক্তিম কয়েক মুহূর্ত ভেবে বলে: পরশু?
তিয়াসা: মাথা নেড়ে বলে: হুউ যাব।
রক্তিম: ফাইনাল?
তিয়াসা: ফাইনাল। চল এবার, নইলে দেরি হয়ে যাবে।
চায়ের ভাঁড়টা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায় তিয়াসা, আর নিজের মনে ছক কাটতে কাটতে ওর পাশে হাঁটতে থাকে রক্তিম।
সময়ের চাকা ঘুরে চলে নিজের নিয়মেই,তাই মাঝখানের একটা দিন পেরিয়ে পরশু আসতে দেরি হয় না। কথামত দুজন ভোরবেলা জড়ো হয় ঝিলের ধারে,চাপ বাঁধা অন্ধকার ফিকে হয়ে আসছে তখন।
দুজনেই চুপ করে ঝিলের দিকে তাকিয়ে মুহূর্তটা অনুভব করছে নিজের মত করে। একজনের মনে চাপা উত্তেজনার স্রোত,আরেকজন নির্লিপ্ত। পুব আকাশ ফর্সা হয়ে আসছে ক্রমশ। রক্তিম বোঝে সময় এসে গেছে। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে তিয়াসার দিকে তাকিয়ে বলে: একটা কথা বলার ছিল?
তিয়াসা: বল।
রক্তিম: আমি…তোকে ভালবাসি।
এর বেশি কিছু বলতে পারে না সে। তিয়াসার দিকে তাকিয়ে দেখে ওর চোখের কোনে জল,হয়ত এতদিনে নিজের সুপ্ত প্রেমকে নিজের করে পাওয়ার আনন্দেই। কান্না ভেজা তিয়াসা বলে ওঠে: আমিও তোকে ভালবাসি। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে পরম আবেশে,অনুভব করতে চায় মুহূর্তটা। পুব আকাশে সূয্যি দেবও যেন নরম আভায় আশীর্বাদের হাত ছুঁইয়ে দেন ওদের মাথায়।