Sonali Basu

Drama Romance

2.5  

Sonali Basu

Drama Romance

প্রেম ঘৃণা শ্রদ্ধা

প্রেম ঘৃণা শ্রদ্ধা

5 mins
3.1K


অনেকদিন পর কাল বোলপুর এসেছে সন্দীপ। অফিসের কাজে আসা। দুদিনের কাজের প্রথমদিনের ভাগটুকু করে ও খোয়াইয়ের পথে হাঁটা শুরু করেছে। সব চেনা সেই লাল মাটির রাস্তা সেই শাল পলাশের হাত ধরাধরি করে দাঁড়ানো। একসময় এখানেই জীবনের প্রথম চৌদ্দ বছর এখানে কাটিয়েছে ও। তারপর এখান থেকে কলকাতায় চলে যায় চাকরি পাওয়ার জন্য বিশেষ পড়াশোনা করতে। তারপর যথাসময়ে পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পায় কলকাতা শহরের বুকে। তখন ভেবে রেখেছিলো ওখানে সারা জীবন কাটাতে পারবে। তাই বাড়ি ভাড়া করে তাড়াতাড়িই মা বাবাকে নিয়ে গেলো দুর্গাপুরের বাড়ি থেকে। বয়স্ক বাবা মাকে ওখানে দেখার কেউ নেই। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। এক ভাই এক বোন ওরা। দিদি সুমনাও শান্তিনিকেতনের ছাত্রী ছিল আর পড়ার পর ওরই সহপাঠী কল্যাণকে বিয়ে করে ইলামবাজারের শ্বশুরবাড়িতে জাঁকিয়ে বসেছে। বাবা অবশ্য মৃদু আপত্তি জানিয়েছিল। চাকরি সুত্রে বহু বছর দুর্গাপুরে বসবাস করছেন বছরে এক কি দুবার দেশেরবাড়ি গেছেন তাও দরকারে। ওনার ইচ্ছে ছিল অবসর জীবনটা দেশেরবাড়িতেই কাটাবেন কিন্তু স্ত্রী মালবিকার কোন ইচ্ছে ছিল না শহরের জীবন ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে থাকার। তাই দুর্গাপুরের বুকে ভাড়াবাড়িতে দিন কাটাচ্ছিলেন। সন্দীপ প্রস্তাবটা দিতে মালবিকা উৎসাহ দেখালেন তাই সুজয়বাবুও নিমরাজি হয়ে চলে এলেন ছেলের ভাড়াবাড়িতে।

কয়েক বছর সন্দীপ কলকাতায় বেশ সুনামের সাথে কাজ করছিলো। মালবিকাও তোড়জোড় শুরু করেছিলো ছেলের বিয়ে দেওয়ার।কিন্তু তার আগেই ওর আরও ভালো সুযোগ এসে পড়লো ছয় বছরের মাথায়। মাইনে দিগুণ কিন্তু কাজের জায়গা কলকাতা থেকে এক লাফে উত্তর পূর্ব ভারতে। সুদূর অসমে বদলি হল ও।

আসামে চলে যেতে মায়ের পাত্রী দেখার কাজে কিছুদিনের জন্য যতি পড়লো। বাবাও আর কলকাতায় থাকতে চাইলেন না। দুজনকে গ্রামের বাড়ি কালনায় পৌছে দিয়ে সন্দীপ অসম মেল ধরলো। ওর অবশ্য বিয়ে করার ইচ্ছেটাও খানিক মিইয়ে গিয়েছিল অতীতের একটা ঘটনা

অসমে অচেনা পরিবেশে খুব বেশি মিশতে না পেরে সন্দীপ শুধু অফিস আর ভাড়াবাড়ি করেই দিন পাড় করছিলো। কিন্তু পরিবেশ অচেনা বেশিদিন রইলো না। পাশের বাড়ির মেয়েটিকে দেখে ওর মনে এক অন্য ভাবের উদয় হল। মেয়েটি তথাকথিত সুন্দরী না হলেও সামনে একবার দেখলে আরেকবার ঘুরে দেখার ইচ্ছে জাগে। কি এক আলগা মিষ্টতা ওর মুখে! নামটা মিলি! তারপর যা হয় আর কি। চেষ্টাচরিত্র করে মেয়ের মাকে কাকিমা ডেকে প্রথমে যাতায়াতের পথটা সুগম করে নেয়। তারপর মেয়ের বাবার সাথে হাসি বিনিময় কথা বিনিময় আর মনের ভালোলাগার সাথে সবার সামনে দুচারটে মামুলি কথা আর একান্তে চোখেচোখে ইশারা। এভাবে যে বেশিদিন যাবে না তা বুঝে নিয়েছিলো সন্দীপ তাই আগেই মাকে সব লিখে পাঠাল রাখঢাক না করেই। বাবা মা তাড়াতাড়ি ছেলের কাছে বেড়াতে এসে সব পাকা করে নিলেন। সেই মিলি এখন সন্দীপ ঘরণী।

হাটতে হাটতে সন্দীপ চলে এলো খোয়াইয়ের হাটে। মিলিকে আনার ইচ্ছে থাকলেও পারেনি কারণ মেয়ে টিপের সামনেই বার্ষিক পরীক্ষা। সেই হাট যা আগেও ছিল এখনো আছে। কিছু কিনবে মনে করে ও এগিয়ে গেলো মাটির পুতুলগুলোর দিকে। আর প্রথম দোকান ঘুরে দ্বিতীয় দোকানের কাছাকাছি আসতেই সন্দীপ এক অতি চেনা মানুষকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। আরে ও আকাশ না! ডাকব কি ডাকবো না এই দোনামোনা ছেড়ে সন্দীপঃ আরে আকাশ যে, কেমন আছিস?

আকাশঃ আরে তুই... অনেকদিন পর... ভালো আছি... আর তুই?

সন্দীপঃ চলে যাচ্ছে। কোথায় আছিস এখন? এখানেই?

আকাশঃ হ্যাঁ। বোলপুরে বাবাদের পৈত্রিকবাড়ির আমাদের যে ভাগ আছে সেই অংশে থাকি। আর কাজ করি বলতে বাবার দোকানটা এখন আমার নামে সেটাই সামলাই। আমারটা তো জানলি। তোর খবর বল। কোথায় আছিস কি করছিস? দাঁড়া তোর হয়ে গেছে কি তাহলে চলে কোপাইয়ের পাড়ে গিয়ে একটু বসি

সন্দীপঃ হ্যাঁ তা হয়েছে। মেয়ে আর তার মায়ের চাহিদা মতো কেনাকাটা হয়ে গেছে চল... আরে ওই দ্যাখ সনাতনদার চায়ের দোকান... চল এক চাপ করে চা খাই

আকাশঃ চল

রাস্তায় হাটতে হাটতেই সন্দীপ জানায় ওর এখানে আসার কারণ। আকাশঃ বাহ তোর উন্নতির কথা শুনে খুশি হলাম

সনাতনদার অস্থায়ী চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে সন্দীপ দু কাপ চায়ের অর্ডার দেয়। সনাতন ওদের দেখে বলেঃ কেমন আছো গো তোমরা?

আকাশ আর সন্দীপঃ ভালো

সনাতনঃ কতজনদের দেখি রোজ কিন্তু তোমাদের ভুলিনি

সন্দীপঃ একটু তাড়াতাড়ি দাও সনাতনদা চায়ের তেষ্টা বেড়ে উঠেছে

সনাতনঃ এই নাও

চা খেয়ে দুজনেই কোপাইয়ের ধারে গিয়ে মাটিতে বসে পড়ে। আকাশঃ সনাতনদার কথাটা পাড়ার আগেই কথা চায়ের দিকে ঘুরিয়ে দিলি

সন্দীপঃ বাদ দে না যা অতীত তাকে বর্তমানে টেনে আনার কি দরকার

আকাশঃ তুই মিছেই ভয় পাচ্ছিস যার কারণে আমাদের মধ্যে ঝগড়া অশান্তি মারামারি পর্যন্ত গড়িয়েছিল সে তো আমাদের কারোরই হয়নি

সন্দীপঃ সে কি রে বহ্নি তোর স্ত্রী নয়, তুই ওকে বিয়ে করিসনি?

ম্লান হেসে আকাশঃ সে অনেক বড় গল্প রে

সন্দীপঃ সেই যার বিদেশ যাওয়ার গল্প আমরা প্রায় শুনতাম সেই বরুণের সাথে শেষে ঝুলেছিল না?

আকাশঃ হ্যাঁ

সন্দীপঃ যাক যা হওয়ার হয়ে গেছে ... বিয়ে করেছিস

আকাশঃ হ্যাঁ

সন্দীপঃ তোকে খুব সুখী মনে হচ্ছে ... আমি খুব খুশি

আকাশঃ চল আমার বাড়ি। আমার স্ত্রীর হাতে দুপুরের খাওয়ার নেমতন্ন করছি তোকে।

সন্দীপঃ আজ থাক অন্য কোনদিন যাব

আকাশঃ আজই চল আমার বাড়ি। তুই একবার চলে গেলে আবার কবে আসবি কোন ঠিক আছে

সন্দীপ আর আপত্তি না করে চলে আসে আকাশের বাড়িতে। বাড়ি পৌছে আকাশ ডাকেঃ শুনছো এসে দ্যাখো কাকে এনেছি সাথে আকাশের স্ত্রী বেরিয়ে আসে। ওকে দেখে সন্দীপ হতবাক। আরে এ তো বহ্নি! তবে ও কিছু বলার আগেই আকাশ বলেঃ এ আমার স্কুল জীবনের বন্ধু সন্দীপ... আর সন্দীপ এ বাণী আমার স্ত্রী

সন্দীপএর মনে হল ঘৃণায় ঘুরিয়ে নেই মুখ। কিন্তু সেই সাথে বুঝতে পারে না আরেকটা ব্যাপার। বহ্নিকে বাণী বলে পরিচয় করাচ্ছে কেন আকাশ? তাহলে কি যমজ? বহ্নির কোন যমজ বোন ছিল বলেও তো জানা যায়নি। তাহলে এ কে? যদি বহ্নিই হতো তাহলে ওকে নিশ্চই চিনতো।

আকাশ তখন স্ত্রীকে বলছেঃ ও আজ দুপুরে এখানে খাবে

দুপুরে খাওয়ার পর সন্দীপার থাকলো না। বন্ধুকে কিছুটা পথ এগিয়ে দিতে এলো আকাশ। কিছু বলতে যাচ্ছিলো সন্দীপ, আকাশ বললঃ আমি জানি তুই হতবাক হয়ে গেছিস ওকে দেখে। বহ্নির মতো দেখতে অথচ বহ্নি নয় কি করে সম্ভব। বলেছিলাম না গল্পটা বেশ বড়। সংক্ষেপেই বলি যে বহ্নি পুরুষ বন্ধু বদলাত জামাকাপড়ের মতো সে বরুণকে সত্যি ভালবেসেছিল। কিন্তু বরুণের স্বভাব বহ্নির মতো, বান্ধবী বদলাত কাপড়ের মতো। তবে এবার ও সামান্য অন্য পন্থা নিলো ও বহ্নিকে নিজেও ভোগ করতো আবার টাকার বিনিময়ে বন্ধুদের হাতেও ছেড়ে দিতো ভোগ করার জন্য।বহ্নি যখন কোনমতে ওর হাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারলো তখন ওর করুণ অবস্থা। পাগল প্রায় অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলো। ওখানকার এক কর্মী আমাদের পরিচিত দোলন। ও আমাকে ওর সম্পর্কে খবর দেয়। সুস্থ হওয়ার পর সেখান থেকে আমি নিয়ে আসি। বিয়ে করেছি তবে পুরনো কোন কথা আর ওর সামনে তুলি না। যাক ভুলে অতীতের সব। নতুন পরিচয় নতুন জীবন নিয়ে বাঁচুক।

দুই বন্ধু আলিঙ্গনাবদ্ধ হল, সন্দীপ মনে মনে বললঃ ভাই তোকে প্রণাম

--শেষ--


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama