STORYMIRROR

Krishna Banerjee

Romance Classics

4  

Krishna Banerjee

Romance Classics

প্রেম এসেছিল

প্রেম এসেছিল

7 mins
515

  সেবার বিকিরা ঘুরতে গিয়েছিল আন্দামান। একটা সুন্দর হোটেলে উঠেছিল তারা। পাঁচ বন্ধু পাঁচটা আলাদা আলাদা রূম নিয়েছে তারা। বিকি পেয়েছে 6 নং রূম ফাস্টফ্লোরের একদম মাথার রূমটাই ছয় নম্বর তারপর সাট, আট, নয় এবং দশ। বন্ধুরা তার উপরের ফ্লোরটা পেয়েছে। সমস‍্যা ঘটেগেল ছয় আর নয় নিয়ে। হোটেলের কেয়ারটেকার একটু বাইরে যাওয়ার ফলে নয় - ছয় এগারো হয়ে গেল বিকির লাইফে। নয় উল্টে ছয় হয়ে গিয়েছে আর সেই ছয়ে উঠেছে রূপা। বিকিও উল্ট নয় বুঝতে না পেরে ঢুকে পড়লো সেখানে। আসলে সমস‍্যাটা হলো প্রতিটা রূমের চাবি এক ডোর লক ফলে ভিতরদিয়ে লক করলেও বাইরে দিয়ে খোলার সুবিধা আছে। যদিও এটা হোটেল কতৃপক্ষের মারাত্মক ভূল যাই হোক এতদিন বিষয়টা কেউ জানতনা আজ সেটাও সামনে এলো। বিকি ঘরে ঢুকে ল‍্যাগেজটা একপাশে রেখে জামাকাপড় ছেড়েই ব‍্যাগথেকে টাওয়ালটা নিয়ে সোজা বাথরুমে। বাইরে লকথাকায় রূপা আর বাথরুম লক করেনি। বিকি বাথরুমে প্রবেশকরে রূপাকে নগ্ন অবস্থায় দেখে কয়েক মুহুর্তের জন‍্য তার চোখ কপালে, রূপাও মুহূর্তের জন‍্য নির্বাক হয়ে যায় তাপরেই টাওয়ালটা টেনে নিয়ে শরীরটা জড়িয়ে চিৎকার করে ওঠে সে। পাশের রূমের লোকেরা তখন বেরিয়ে গিয়েছিল বিকিও টাওয়ালটা কোমরে জড়িয়ে বললো আপনি এই রূমে কি করছেন এটাতো আমার রূম। রূপা বলে আপনিতো ভাড়ি অসভ‍্য একটি মেয়ের ঘরে ঢুকে তাকেই বলছেন সে আপনার রূমে ডুক পড়েছে আপনাদের মতো ছেলেদের আমি খুভ ভালো করে চিনি। বিকি বলে বিশ্বাস করুন রিসেপশন থেকে আমাকে ছয় নাম্বার রূম বলেছে আপনার মনে হয় কোন ভূল হচ্ছে আমি বাইরে রয়েছি প্লিজ আমনি পোশাক পড়ে আপনার রূমে সিফট করুন। রূপা একটু উত্তেজিত হয়ে বলে আপনি ছয় আর নয় চেনেন না? বিকি বলে চিনবোনা কেন চিনি বলেইতো বলছি আপনি ভূল করছেন। রূপা জামাকাপড় নিয়ে ভিতরে যেতে যেতে বলে এখানেই থাকবেন কোথাও যাবেন না আমাকে এই অবস্থায় দেখার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে চালাকি পেয়েছেন। বিকি আবার বলে আপনি ভূল করছেন এটা যদি আমার রূম না হতো তাহলে চাবিখুলে আমি ভিতরে আসতাম কি করে।

                                রূপা পোষাক পড়ে বাইরে বেড়িয়ে আসে তখনো বিকি টাওয়ালপড়ে বিছানায় বসে আছে। রূপা বেড়িয়ে বলে এটা অবশ্যই ভাবার বিষয় আপনার চাবিদিয়ে আমার রূমটা খুললো কি ভাবে তবে এটাযে ছয় নয় সেটা আমি আপনাকে দেখাচ্ছি। বিকিকে বাইরে নিয়ে এসে বোর্ডের দিকে দেখাতে গিয়ে নিজেই অবাক হয়ে যায় বলে এটা কেমন হলো ওরা যখন আমার জিনিস নিয়ে এলো তখন এটা নয় ছিলো এখন এটা ছয় হলো কি করে? আপনি এখানে দাঁড়ান আমার কোনজিনিসে হাত দেবেন না আমি ম‍্যানেজারকে ডেকে আনছি। রূপা ম‍্যানেজারকে ডেকে আনে সমস‍্যার সমাধান হয় পুরটায় ভূল বোঝাবুঝিতে হয়ে গিয়েছে নয় উলটে ছয় হয়ে গিয়েছে কোনভাবে। কিন্তু সমস‍্যা আরো একটা পাকে একই চাবিতে দুটো ঘর খুললো কি ভাবে? ম‍্যানেজার ভদ্রলোক এখানে নতুন এসেছেন এই বিষয়টা তার ঠিক জানাছিলনা, তিনি সেটা জানিয়ে ক্ষমা পার্থনা করেন তাদের কাছে তারাও একে অপরের কাছথেকে ঙ্গমা চেয়ে নেয়।

                              একটা কিন্তু একটা লজ্জা একটা মেয়ের মধ‍্যে থাকবে এটাই স্বাভাবিক তাই বিকেলে যখন রূপা মার্কেটে বেড়িয়েছে ঠিক তখন বিকিরাও সেখানে ছিলো রূপা তাকে দেখতে পেয়ে চলে যেতে গেলে বিকি তাকে ডাকে রূপা আপনি বুঝি মার্কেটিং করতে এসেছেন। রূপা বলে হ‍্যাঁ ঐ আরকি সকালে বেরতে হবে তাই সামান্য কিছু জিনিস....., বিকি বন্ধুদের একটু এগোতে বলতে তারা এগিয়ে যায়। বিকি রূপার দিকে এগিয়ে এসে রূপাকে বলে দেখুন সকালের ঘটনায় জন‍্য আমি খুবই লজ্জিত তবে ওটা একটা দূর্ঘটনা মাত্র তাই আমরা যদি বন্ধু হই তবেকি আপনার কোন আপত্তি থাকতে পারে। রূপা বলে দেখুন আমি এখানে এসেছি একটা প্রজেক্টের কাজ নিয়ে যেখানে যেমন উত্তেজনা জনা আছে ঠিক ততটাই রিস্ক রয়েছে, আমি চাইনা অন‍্য কেউ এই রিক্সের মধ‍্যে জড়িয়ে পরুক। বিকি বলে বন্ধু মানেতো সকল ভালো মন্দে সঙ্গ দেওয়া তাইনা আমি যদি আপনার প্রজেক্টে পাশে থাকতে পাড়ি তাহলে খুশি হবো। রূপা বলে ঠিক আছে তাহলে সকাল সাতটার মধ‍্যে রেডি থাকবেন আমরা ঐ দূরের পাহাড়টাতে যাবো ওখানেই আমার কাজ আছে। বিকি বলে ওকে আমি ঠিক সাতটার মধ‍্যে তৈরি থাকবো কেমন। রূপা চলে যায় বন্ধুরা একজায়গায় হয়ে বলে কিরে এটা সেই মেয়েটা না ভুলকরে সকালে যার ঘরে তুই ঢুকে পড়েছিলিস। বিকি ঘারনের সন্মতি জানিয়ে বলে আগামীকাল আমি ওর সাথে বরচ্ছি তোরা নিজেদের মতো ঘুড়েআশিস কেমন। একজন বলে বা যেই মেয়ে পেলি আমাদের ভূলে যাচ্ছিস। বিকি বলে তোদের ভোলার প্রশ্নই ওঠেনা কিন্তু তোরা একটু ভাব রূপা যদি আমার স্ত্রী হয় তাহলে কেমন হবে। আর এক বন্ধু বলে সেতো বুঝলাম বিকি কিন্তু আমি বলছিলাম কি আমরাতো মেয়েটার সম্বন্ধে কিছুই জানিনা ইভেন্ট তুইও কিছুই জানিস না। বিকি বলে জানতেইতো চাইছি আর জানবার জন‍্য কালকের দিনটা ওরসাথে কাটাতে চাইছি তোরা দেখিস পরশু আমরা সবাই একসাথে বেরবো কেমন। বন্ধুরা সন্মতি জানায়।

                           পরেরদিন সকালে সাতটার মধ‍্যে তৈরি হয়ে নেয় বিকি। তার দরজায় নক করে রূপা, বিকি বলে আমি রেডি এখুনি আসছি। দরজা খুলতেই রূপাকে দেখে একদম চমকে যায় বিকি। কালকের চুড়িদারে আবৃত মেয়েটি আজ সম্পূর্ণ আলটামর্ডান পোষাকে। জিন্সের প‍্যান্ট একটা টপ তার উপরে একটা জিন্সের জ‍্যাকেট পিঠে একটা স্মার্ট ব‍্যাগ সে বললো আর দেরি করা যাবেনা চলুন। গাড়ি হোটেলের নিচে রাখাই ছিলো বিকি এবং রূপা গাড়িতে বসে রওনা হলো। প্রায় দুই ঘন্টার পথ কিন্তু পথে তাদের মধ‍্যে কথা হলো মাত্র পাঁচ সাতটি, গতকাল রূপাকে এতটা রিজার্ভ মনে হয়নি বিকির কিন্তু আজ যতবার সে কথাবলতে যায় ততবারই খুব সংক্ষেপে তাকে থামিয়ে দেয় রূপা। পাহাড়ের সামনে গাড়িটা এসে থামতেই একজন লোক এসে জিঙ্গাসা করলেন আপনি মিস রূপা চ‍্যাটার্জী। রূপা বলল হ‍্যাঁ, আপনি? আমি এই ফরেস্টের ফরেষ্ট অফিসার আমি।হেড অফিস থেকে ফোন এসেছিল আপনার কি কি জিনিস প্রয়োজন আমায় বলতে পারেন। রূপা বলে আমার কিছু লাগবেনা আপনি সুধু বলুন কি সমস‍্যা হয়েছে পাহাড়ে? অফিসার বলে কিছুদিন আগে একদল টুরিস্ট এখানে এসেছিলো ওরা ট্রাকিং করতে পাহাড়ে যায় সাত জন ছিলো ওরা তারমধ‍্যে মাত্র একজন ফিরেছিলো কিন্তু সেও প্রাণে বাঁচেনি এখানে এসে সুধু বলেছিল পাহাড়ে কিছু একটা আছে, তারপরই সে মাড়া যায়। বিষয়টা বিকির মাথার উপরদিয়ে বেরিয়ে যায়, অফিসার রূপাকে এইসব বলছেন কেন? অফিসার বলেন ম‍্যাডাম আপনি একজন প্রখ্যাত প‍্যরানরমাল স্পার্ট আপনিই পারেন এই সমস‍্যার সমাধান করতে।

                                এতক্ষণে রূপার বিষয়ে কিছুটা অবগত হলো বিকি, এতো আবার ভূত - প্রেতের কারবার মনে মনে ভাবল এ কোথায় ফেঁসে গেলাম আমি ঠিক তখনি রূপা বলল আপনার ভয় করলে আপনি চলে যেতে পারেন এটাই আমার কাজ। বিকি বলে না না ভয়ের কি আছে আপনিতো আছেন। রূপা বলে তাহলে দেরি না করে আমার সাথে পা চালান। পাহাড়ি জঙ্গলের বেশ কিছুটা ভিতরে তখন আমরা রূপা হঠাৎ বিকিকে থামতে বললেন। তারপর একটা যন্ত্র কিছুটা দূরে বসিয়ে দিয়ে সেটাকে অন করে দিলেন, যন্ত্রটার একপাশে একটা ডাকনা মতো ছিলো সেটা খুলে দিয়ে সেটাকে অন করতেই একটা বিকট ধরনের শব্দ বাজতে শুরু করে। আমরা কিছুটা দূরে আর একটা যন্ত্র এবং একটা একটু অন‍্য ধরনের ক‍্যামেরা নিয়ে বসে রয়েছি কিছুটা সময় তারা কেমন যেন বোকার মত বসে রয়েছে যন্ত্রটার বিকট শব্দে বিকির মাথা ধরে নিচ্ছে। বিকি জিঙ্গাসা করে আমরা এখানে ঠিক কি করছি বলুনতো? রূপা মুখে আঙ্গুল দিয়ে বিকিকে চুপ করতে বলে তার কয়েক মুহূর্ত পরেই আমাদের সামনে রাখা যন্ত্রটা ইসিজি মেশিনের মতো গ্রাফ উঠতে থাকে ক‍্যামেরায় কেমন যেন একটা ধোঁয়া ধিরে ধিরে এগিয়ে আসতে থাকে বিকি কিছু বলতে যাচ্ছিল রূপা মুখটা চেপে ধরে তার, হঠাৎ দূরে রাখা যন্ত্রটির খোলামুখটা ধপ করে আটকে যায়। রূপা ছুটে যায় গিয়ে যন্ত্রটার ভিতর থেকে একটা কাঁচের বোতল বার করে বিকির চোখ কপালে উঠে যায় ক‍্যামেরায় ঠিক যেমন ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল ঠিক তেমনটাই ঐ কাঁচের বোতলের ভিতরে, রূপা বলে হাতে নিয়ে দেখবেন নাকি। বিকি বলে কি এটা রূপা বলে এই পাহাড়ের ভূত যে মানুষদের মারতো ধরে দেখুননা। বিকি বলে না থাক আপনার কাছেই রাখুন এবার কি করবেন? রূপা বলে কাজ শেষ এবার ফিরতে হবে যন্ত্রগুলো একটু ব‍্যাগের মধ‍্যে ঢুকিয়ে দেবেন প্লিজ। বিকি যন্ত্রপাতি ব‍্যাগে ঢুকিয়ে ব‍্যাগটা কাঁধে তুলেনেয় রূপা বলে আরে ওটা আপনি বইছেন কেন আমাকে দিন বিকি বলে না ঠিক আছে ওটা ঢোকাবেন না। অফিসারকে দেখিয়ে দেই ওনার পাহাড়ের ভূত ওনাকে না দেখালে হয়।

                                          সব শেষে যখন হোটেলে পৌঁছালো তারা তখন প্রায় সন্ধা সাতটা, বন্ধুরা অবশ‍্য তখনো ফেরেনি। হোটেলে ঢোকার সময় নিচের টি স্টল থেকে এক কাপ করে চা খেয়ে হোটলের রূমে প্রবেশ করলো তারা। বিকি হয়তো খুব আশা করেই ছিলো ডিনারে হয়তো রূপার সাথে তার আবার দেখা হবে কিন্তু তা হলোনা। হোটেলের রেস্টুরেন্টে বিকিরা যখন ডিনারে গেল তখন বিকি একটু অপেক্ষায় ছিলো রূপার কিন্তু সেখানকার ওয়েটার তার হাতে একটা চিঠি দিয়ে জানালো এটা আপনাকে রূপা ম‍্যাডাম দিতে বলেছেন। চিঠিটা হাতে পেতেই বন্ধুরাও উৎসুক হয়ে ওঠে। হুমরি খেয়ে পড়ে সকলে কি লেখা আছে ঐ চিঠিতে। চিঠিতে লেখা রয়েছে বিকি আপনি খুব ভালো ছেলে আমি জানি মনে মনে আপনি আমাকে পছন্দ করেন আমারও আপনাকে মন্দ লাগেনি কিন্তু আমার প্রফেশনটা একদম অন‍্যরকম এই প্রফেশনে কোন নিঃশ্চয়তা নেই তাই আমাদের এক সাথে সময় কাটানোটা একটা স্বপ্ন মনে করে ভূলে যাওয়াটাই ভালো। ওকে বাই।

                                                   ইতি.....

                                                   রূপা....

 চিঠি শেষ করে বিকি ওয়েটারকে ডাকে ওয়েটার, ওয়েটার এসে বলে কিছু বলবেন? বিকি বলে তোমার রূপা ম‍্যাডাম কোথায় ? ওয়েটার বলে উনিতো চেক আউট করে গিয়েছেন যাবার সময় আমার হাতে পাঁচশত টাকা আর ঐ চিঠিটা দিয়ে বললেন আপনাকে দিয়ে দিতে........।

                         🙏 সমাপ্ত 🙏


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance