Aparna Chaudhuri

Romance

3  

Aparna Chaudhuri

Romance

প্রেম বাই চান্স

প্রেম বাই চান্স

4 mins
946


সেদিন যখন কৃষ্ণেন্দুদা এসে লাজুক লাজুক স্বরে বলেছিল,”মৌ আমার একটা কাজ করে দিবি?” ওর মাথার থেকে পা অবধি একটা ভালোলাগার ঢেউ খেলে গেছিল। কৃষ্ণেন্দুদা ওদের কলেজের সব মেয়েদের হার্ট থ্রব। দারুণ স্মার্ট, পড়াশোনায় ভালো, খেলাধুলোয় ভালো। লাস্ট ক্যাম্পাস ইন্টার্ভিউতে সবচেয়ে বড় পে-প্যাকেজটা ওই পেয়েছে। সেই কৃষ্ণেন্দুদা ওকে একটা কাজ করে দিতে বলছে, মৌ মানে মৌমিতা, নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছিল না।

“শর্মিলা......... তোর বেস্ট ফ্রেন্ড না রে? “

“হ্যাঁ......” একটু অবাক হয়ে উত্তর দিয়েছিল ও।

“ তুই ওর ফোন নাম্বারটা দিতে পারবি?”

মৌমিতার মনে হল হঠাৎ বিনা নোটিসে একটা চড় এসে পড়ল ওর গালে, কোন রকমে নিজেকে সামলে, মুখে একটা হাসি টেনে এনে বলেছিল,” নি...নিশ্চয়ই।“ তাড়াতাড়ি নম্বরটা দিয়ে আর দাঁড়ায়নি ওখানে। ছুটে চলে এসে নিজের মান বাঁচিয়েছিল সেদিন।

তারপর নিজেকে বুঝিয়েছিল, এটাই তো স্বাভাবিক, কৃষ্ণেন্দুদার মত ছেলে শর্মিলার মত ডাকসাইটে সুন্দরীকে পছন্দ করবে না, তো কাকে করবে? শর্মিলাকেই মানায় কৃষ্ণেন্দুদার পাশে। তার মত সাদামাটা মেয়েকে না। দীর্ঘশ্বাস চেপে হাসিমুখে যখন ও চুপিচুপি কথাটা বলে শর্মিলাকে, তখন শর্মিলার বিজয়িনীর মত মুখটা এখনও চোখের সামনে ভাসে ওর ,”কিরে আমি বলেছিলাম না?”

মৌমিতার মনে পড়ে গেলো আলোচনাটা। শর্মিলা আর মৌমিতা প্রাণের বন্ধু, সেই নার্সারি থেকে। মৌমিতা সাধারণ বাড়ীর সাধারণ মেয়ে, আর শর্মিলা, বিরাট ব্যারিস্টারের একমাত্র মেয়ে। একটু অহংকার করা ওর সাজে। একদিন গল্প করতে করতে কৃষ্ণেন্দুদার প্রসঙ্গ আসতেই শর্মিলা হেসে বলে উঠেছিলো, “ কৃষ্ণেন্দুদা সারা কলেজের সব মেয়ের হার্ট থ্রব হতে পারে, কৃষ্ণেন্দুদার হার্ট থ্রব কিন্তু আমি।“

ওর বলার ধরন আর কনফিডেন্স দেখে মৌমিতার গা জ্বলে গিয়েছিল কিন্তু সেদিন সাহস করে মুখে ও কিছু বলতে পারেনি। আজও চুপ করে রইল।

তারপর প্রায় ছমাস কেটে গেছে। মৌমিতা নিয়মিত নিষ্ঠা সহকারে দূতের ভূমিকা পালন করেছে। শর্মিলার প্রিয় বন্ধু তো ও ছিলই, এখন কৃষ্ণেন্দুদারও ও বেস্ট ফ্রেন্ড। শর্মিলার কি ভালো লাগে, কোন রঙ প্রিয়, কোন গান প্রিয়, সব বলতে হয় ওকে। শর্মিলা কি কি করলো, কি কি বলল তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিতে হয়। ওরা কোথাও লুকিয়ে দেখা করলে, মৌমিতা সঙ্গে থাকে , না হলে শর্মিলার বাড়ী থেকে বেরনো অসম্ভব।

যেদিন শর্মিলা প্রথম এসেছিল কৃষ্ণেন্দুদার বাসা বাড়ীতে , উফ! কৃষ্ণেন্দুদা কি নার্ভাসই না ছিল। মৌমিতাকে গিয়ে সমস্ত বাড়ী গুছিয়ে, সাজিয়ে , খাবারের ব্যবস্থা করে রেখে আসতে হয়েছিল। তারপর সন্ধ্যা বেলায় আবার শর্মিলাকে নিয়ে যেতে হয়েছিল কৃষ্ণেন্দুদার বাড়ী। ভান করতে হয়েছিল, যেন মৌমিতাও এই প্রথম আসছে কৃষ্ণেন্দুদার বাড়ীতে। কিন্তু অ-সাব্যস্ত কৃষ্ণেন্দুদা এই ভান বেশীক্ষণ বজায় রাখতে পারেনি। রান্নাঘরে গিয়ে দুধ খুঁজে না পেয়ে মৌমিতাকে ডেকে উঠছিল,” কি রে মৌ! চা করার দুধটাও আনিস নি?”

“ ফ্রিজে আছে দেখো।” বলেই হেসে ফেলেছিল মৌমিতা সঙ্গে বাকিরাও।

ডিসেম্বরের সেমিস্টার এন্ড এক্সাম শেষ হলেই বিয়ের প্রস্তাব করবে কৃষ্ণেন্দুদা। পরীক্ষা শুরু হবার আগেই মৌমিতাকে যেতে হয়েছিল গয়নার দোকানে , আংটি কেনার জন্য। ওর আর শর্মিলার আঙ্গুলের মাপ সমান। বুকের ভিতরটা মুচড়ে উঠেছিলো মৌমিতার, এতোটা মহান হওয়া খুব শক্ত। সেদিন কৃষ্ণেন্দু যখন ওকে হোস্টেলের সামনে ড্রপ করেছিল তখন ও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিল আর না। আর ও থাকবে না এসবে।

শেষ পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে মৌমিতা কৃষ্ণেন্দুর একটা ফোন কল পেলো,” তুই এক্ষুনি একবার আমার বাড়ী আসতে পারবি?”

“ এখন ? না গো আজ হবে না।“ তাড়াতাড়ি ফোনটা কেটে দিলো মৌমিতা।

আর ওদের মধ্যে থাকতে চায় না ও। সেদিন রাতের ট্রেন ধরে বাড়ী চলে গিয়েছিল মৌমিতা । বাড়ীতে ঢুকেই প্রথম ধাক্কাটা খেলো ও। ওর টেবিলের ওপর রাখা রয়েছে একটা বিয়ের কার্ড। শর্মিলা ওয়েডস অনিরুদ্ধ ।

মা বললেন, ” আজ সকালেই এসেছে।“

কার্ডটা দেখে পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইল মৌমিতা খানিকক্ষণ, বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে এতো কিছু হয়ে গেলো আর শর্মিলা ওকে ঘুণাক্ষরেও জানাল না।

শর্মিলাকে ফোন করলো মৌমিতা, “এটা তুই কি করলি?”

“আমার কিছু করার ছিল না রে। আমাদের বাড়ী কৃষ্ণেন্দুকে জামাই হিসেবে কখনই মেনে নিতে পারবে না। তাই ভেবে দেখলাম এটা আমাদের দুজনের জন্যই শ্রেয়......”

“ তুই পারলি......!” আর কোন কথা বলতে পারলো না মৌমিতা। ফোনটা কেটে দিল।

 যোগ্য পাত্রের হাত ধরে জীবন শুরু করতে চলেছে শর্মিলা । হঠাৎ খুব অপরাধী মনে হয় নিজেকে। একবার ভাবল ফোন করবে কৃষ্ণেন্দুদাকে। তারপর ভাবল , কি বলবে?

প্রায় দুমাস কেটে গেছে। শর্মিলা এই সেমিস্টারটা জয়েন করেনি। কি জানি আর পড়বে কিনা? মৌমিতা নিজের পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। না, শর্মিলার বিয়েতে যায়নি ও। কৃষ্ণেন্দুকে ফোনও করেনি।

সেদিন ১৪ই ফেব্রুয়ারি, ভালেনটাইন্স ডে। সব দিনের মত ক্লাস শেষ করে হোস্টেলের দিকে রওয়ানা হল মৌমিতা। হোস্টেলের কাছে একটা পার্কের ধারে কৃষ্ণেন্দু বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে। দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিল মৌমিতা।

“ তোর সঙ্গে কথা ছিল। বাইকে ওঠ।“ গম্ভীর নির্দেশের স্বর কৃষ্ণেন্দুর গলায়।

এই নির্দেশ উল্লঙ্ঘন করার ক্ষমতা নেই মৌমিতার। বিনা বাক্যব্যয়ে বাইকে চড়ে বসলো সে। বাইক সোজা গিয়ে দাঁড়ালো কৃষ্ণেন্দুর বাসা বাড়ীতে।

ঘরে ঢুকে মৌমিতা দেখল, ও যেভাবে গুছিয়ে রেখে গিয়েছিল ঠিক সেভাবেই রাখা আছে সবকিছু।

“ জানিস শর্মিলা আমায় যেদিন ফোন করে বলল, যে ও আমাকে বিয়ে করতে পারবে না, সেদিন খুব দুঃখ হল। কিন্তু সেটা হারানোর দুঃখ নয় , হেরে যাবার দুঃখ। তারপর দেখলাম বেশ হাল্কা লাগছে। কারণ ও আমাকে কোনদিন বোঝেই নি, আমাকে জানেই না। যে আমাকে জানে, বোঝে, সে অন্যজন। তার অভাবটা…… দিনে দিনে আরও বেশী করে বুঝতে পারলাম। “ এতোটা বলে থামল কৃষ্ণেন্দু।

এক অজানা আশঙ্কায় দুরু দুরু বক্ষে নিঃশব্দে অপেক্ষা করছিল মৌমিতা।

হঠাৎ ওর হাতটা ধরে কৃষ্ণেন্দু হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলল,” শর্মিলা চলে গেছে। তুই আমায় ছেড়ে চলে যাস না মৌ, আমি তোকে ছাড়া……”

কৃষ্ণেন্দুর অশ্রু-ভেজা মুখটা পরম আদরে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিলো মৌমিতা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance