STORYMIRROR

Rima Goswami

Romance Inspirational

3  

Rima Goswami

Romance Inspirational

প্রচন্ড কুঁড়ের পায়ের তলে সর্ষে

প্রচন্ড কুঁড়ের পায়ের তলে সর্ষে

5 mins
229

বাঙালি মানেই দুর্গাপূজো , বাঙালি মানেই হই হই করে ভ্রমণ । বাঙালি নস্টালজিক তার চিরাচরিত আভিজাত্য নিয়ে । সে হোক নকুরের সন্দেশ , বর্ধমানের সীতাভোগ মিহিদানা বা শক্তিগরের ল্যাংচা । সব কিছুই যেন ছকে বাঁধা , এত টুকু নরণ চরণের উপায় আছে নাকি ? বিয়ের পর চলে যাও মধুচন্দ্রিমায় পুরী বা দার্জিলিং গ্যাংটক । বাড়িতে বসে ভালোলাগছে না তবে যাওনা একবার মায়াপুর নবদ্বীপ বা দিঘা । কম খরচে দেদার আনন্দের ভরপুর প্যাকেজ আর কোথাও পাবে না ভাই । সমুদ্রের ধারে বসে বসে ঝালমুড়ি সঙ্গে আলুর চপ বা গরম গরম সামুদ্রিক মাছ ভাজা খাওনা কত খাবে । দার্জিলিং এর পাহাড়ে গেলে গরমা গরম মোমো খেতে ভারী মজা । বাঙালিদের বলছি কেন আমাদের সারা দেশের জনগণের পায়ের তলায় যেন সর্ষে দেওয়া আছে । এত কিছু বলছি তার কারণ এধরণের মধুচন্দ্রিমা ট্যাবু ভেঙে স্বামীর সঙ্গে গেছিলাম রাজস্থান । ননদ , নন্দাই , ভাগ্নে আর দুটি বন্ধু স্থানীয় পরিবার মিলে গেলাম আজমের এক্সপ্রেস করে জয়পুর । প্রতিদিনের শহুরে জীবনের একঘেয়েমিতে যখন আমাদের মন বিরক্ত। উত্তেজনাপূর্ণ নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য মনে মনে মুখিয়ে সেই ক্ষেত্রে ভ্রমণ নিজেদের সুবিধাজনক স্বস্তির পরিবেশের থেকে বেরিয়ে নতুন স্থান, পথ, মানুষ, ভাষা এবং অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলে নিজে প্রতিবন্ধকতায় উত্তীর্ন হতে কতটা সক্ষম তা আবিষ্কার করার জন্য আদর্শ। সময়টা দুইহাজার এগারো সালের একত্রিশে ডিসেম্বর । আসানসোল থেকে ট্রেনে চাপলাম আমরা বেশ শীত তাই সঙ্গে লটবহর ও বেশ ভারী । আমার প্রথম ট্রেনে রাত্রি বাস । শুধু রাত্রিবাস কেন বলছি সত্যি কথা বলতে আমার এর আগে দুর্গাপুর থেকে বর্ধমান লোকাল ছাড়া ট্রেনে চাপা হইনি কোনদিন । মনে বেশ একটা উত্তেজনা , সঙ্গে অস্বস্তি যে আমি কি করে রাতে ঘুমাবো বা টয়লেট যেতে সমস্যা হবে কি না । আসলে আমাদের যোধপুর এক্সপ্রেসে যাবার কথা সেটি বাতিল হয়ে যাওয়ায় আমরা তৎকালে আজমের এক্সপ্রেস নিলাম যথারীতি রিসারর্ভেশন ছাড়াই যাচ্ছি । নন্দাই রেলের কর্মী বেশ ভালো পোস্টে অধীন সঙ্গে ওনার বন্ধুরা ও রেলে তাই রক্ষা । ট্রেনে চেপে বসলাম রাত দুটো আড়াইটা হবে । জন্মের পর মামাবাড়ি , মাসিবাড়ি করা আমার প্রথম বেঙ্গল থেকে বাইরে যাওয়া । আমি আর আমার স্বামী দুজনের বয়স মোটে একুশ ও বাইশ আমরা বি কম পাস করেছি তখন সদ্য । যাওয়ার সময় টিফিন কৌটোতে নিয়েছি চানার ঘুগনি , মটরশুটির কচুরি , সন্দেশ । ট্রেনে খাবার দেবে জানি কিন্তু তবু নিজের সঙ্গে থাকা ভালো । ননদ মানে দিদির বান্ধবী নিয়েছিল পরোটা আর আলু ভাজা সে নিয়ে এক কান্ড । পরোটা গুলো কি ভাবে যেন এত শক্ত হয়ে গেছিলো যে কেউ দাঁতে কেটে খেয়ে উঠতে পারেনি । আমার রাতে শোবার ব্যবস্থা তিন নম্বর বার্থে । আমি তো কিছুতেই উঠতে পারছি না , ভয় লাগছে যদি পড়ে যাই । নন্দাই আর বাকি বন্ধুরা মজা করে বলছে , আহা বেচারি এসো কোলে করে তুলে দিচ্চি । আমি তো লজ্জায় মরে যাই । রাত পার করে সকালে উঠে ট্রেনে আমরা আগের দিন সঙ্গে ছাদা বেঁধে আনা খাবার গুলো খেলাম । এক দুকলি গান হলো সবাই মিলে , বেশ জমে উঠেছে আমাদের আড্ডা । দিন পেরিয়ে সন্ধ্যায় শ্যামলদা বললো ট্রেন এখন যমুনা নদীর ব্রিজের উপর , তাজমহল দেখা যাবে । আমি তো শুনে ভীষণ খুশি , আহা আমার ইতিহাসে পড়া পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যর এক তাজমহল ! অনেক উকি ঝুঁকি মেরে লাভ হলো না তেমন অন্ধকারে কি ব্রিজের উপর ট্রেনের ভিতর থেকে তাজমহল দেখা যায় ? আমি বিষণ্ন হয়ে গেলে আমার স্বামীটি আমাকে শান্তনা দিতে লাগলো এই বলে যে ফিরতি পথে সে তাজমহল দেখাবে । তখন নতুন নতুন বিয়ে ছিল কিনা তাই স্বামী আমার শাহাজান এর মতোই রোমান্টিক ছিলেন । আজ হলে হয়ত তাজমহল দেখানোর কথা দিয়ে বসতেন না । দেখলাম বেঙ্গলের বাইরে শীতকাল বেশ কষ্টদায়ক । খুব ঠান্ডা বাতাস , আমাদের দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে । অনেক রাত করে আমরা জয়পুরে নামলাম । চারদিকে তুমুল ব্যস্ততা , জয়পুরে নেমে সিধান্ত নেওয়া হলো উদয়পুর যাবো । আমরা তো কোন প্ল্যান করে বেরোই নি তাই এই অবস্থা । আবার নেক্সট ট্রেনে রাতের বেলাতেই আমরা রওনা দিলাম যোধপুরের দিকে । ট্রেনে বসার জায়গা নেই , ঘেঁষা ঘেঁষি করে বসে আছি শরীর জুড়ে ক্লান্তি অভ্যাস নেই এত ধকলের । মনে হচ্ছে তখন কেন যে এদের কথা শুনে চলে এলাম? কেন জানি না মায়ের জন্য মন খারাপ করছিলো তখন । ভোর বেলা দেখছি ফাঁকা জনহীন প্রান্তর দিয়ে ট্রেন ছুটছে , বাইরে এদিক ওদিকে অনেক ময়ূর আর হরিণ । কি সুন্দর দৃশ্য ! তবে প্রচন্ড শীতে ঠক ঠক করে কাঁপছি কিন্তু । বেলা বাড়ার পর পৌঁছে গেলাম যোধপুর । সেখানে ডমেন্টারিতে উঠলাম আমরা , বিছানা দেখেই এক লাফে ওতে শুয়ে পড়লাম । তখন তো করোনা ছিলো না তাই হাত পা ধুতেও শিখিনি বারবার । এর মধ্যে একটা কান্ড হয়ে গেছে লিপি দিদির আনা ওই পরোটা গুলো নাকি এই রাজস্থানের কুকুর গুলোও খেতে আপত্তি জানিয়েছে । সেই নিয়ে লিপি দিদিকে নিয়ে সকলে মিলে একটা হাসাহাসি করছে আর বেচারি কান্না কান্না মুখ করে বসে আছে । আমি তো একটু ল্যাদ খোর মানুষ , তাই ওদের ক্যাওসে না ঢুকে একটু গড়িয়ে নিলাম । তারপর ডমেন্টারির ক্যান্টিনে দুপুর দুটো সময় গরম গরম দেরাদুন রাইসের ভাত , ডাল , ভাজি , আচার , রায়তা আর ডিম ভাজা খেলাম । তৃপ্তি করে খেয়ে গেলাম ফোর্ট দেখতে । এখানে একটা কথা না বললেই নয় , আমার খুব অহংকার ছিলো আমি ভেতো বাঙালি না । সেই ভুল ভাঙার জন্য আর বেশি সময় লাগেনি , এই যোধপুরের লাঞ্চের পর যতদিন আমি রাজস্থানের বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি কোথাও ভালো করে ভাত খেতে পাইনি আর তারপর ভাতের অভাব বাঙালির জন্য কি সেটা বুঝেছিলাম । সেই বিষয়ে আলোচনা করবো তার আগে শেয়ার করি যোধপুরের ভ্রমণের কিছু অংশ । প্রথমে আমরা গেলাম

মেহেরানগড় দুর্গতে । বিশাল দুর্গ দেখে তো ভিমরি খেলাম , এখানে কি করে উঠবো ! পরে জানলাম লিফটের ব্যবস্থা আছে , লিফটের কথা শুনে ধরে প্রাণটা এলো ।

1400 শতকের মাঝামাঝি রাও যোধা এই দূর্গটি নির্মাণ করেন। এই দূর্গ থেকে যোধপুর দৃশ্যমান । রাজপুর ঘরানার নকশা করা আকর্ষণীয় আঙ্গিনা, কাঁচের জানলা বিভিন্ন মহল আপনাকে এক লহমায় নিয়ে যাবে সেই রাজপুর যুগে। আভিজাত্য আর শৌর্যের অসাধারণ মেলবন্ধন মেহেরানগড়। ভেতরে রয়েছে একটি মিউজিয়ামও। যেখানে রাজকীয় পালকি, অস্ত্র ও পোশাকের সম্ভার। নীল শহর হিসেবে পরিচিত যোধপুর যেন ঐতিহ্যের ডালি নিয়ে বসে আছে। এর পর আমরা গেলাম উমেইদ ভবন প্যালেস । ডেস্টিনেশন ওয়েডিং এর ভারতের অন্যতম সেরা ঠিকানা হল এই উমেইদ ভবন প্যালেস। তাজ হোটেল রয়েছে এই দায়িত্বে। মহারাজা উমেদ সিং-এর নামে পরিচিত এই রাজকীয় প্রাসাদের একটি অংশ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত, যা প্রকৃতপক্ষে একটি বিশাল জাদুঘর। সেসব দেখে শুনে ফিরলাম ডমেন্টারিতে আর রাতের খাবার জোয়ারের রুটি লাল মাস খেয়ে দিলাম লম্বা একটা ঘুম কারণ সকালেই আমাদের ট্রেন জয়সলমের ।


পরবর্তী পর্ব দুই ......



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance