ফুল
ফুল
তিতলি এখন বিবাহিত, ঘোর সংসারী। তার রোজকার অভ্যাস সকালে ঘুম থেকে উঠেই সূর্য প্রণাম সেরে নিয়ে হাতে ফুলের সাজি নিয়ে ফুল তুলতে বাগানে ঢুকে পড়া।
সাদা ফুল তার খুব প্রিয়। অন্যান্য ফুলের সাথে তিতলির সাধের বাগানে নাম-না-জানা সাদা ফুলের তিনটি চারা উঠেছিল। সে আদৌ জানত না যে চারা গাছ গুলো আসলে কিসের গাছ। ওই গাছের পাতাগুলো দেখে তার খুব ভালো লেগে যায় যার জন্য সে তার নিজের বাগানে থাকা অন্যান্য চারাগুলোর মতো সমান যত্ন করতে শুরু করে দেয় তাদের। ওর নাম না জানা চাড়া গাছ গুলো এখন বড় হয়েছে। কলকের মত দেখতে অজস্ত্র ধবধবে সাদা ফুল ফুটে আছে তিনটি গাছ জুড়ে। দেখে তার মন ভরে যায়।
হাতে সাজি নিয়ে ফুল তুলতে তুলতে সে কোথাও হারিয়ে যায়। আজ তার বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। বাগান পরিচর্যা করা ফুলতোলা তুলসী পাতা কি করে তুলতে হয়
সে তার বাবার কাছে শিখে ছিল এসব খুঁটিনাটি অনেক কিছু। ছোটবেলায় একদিন তিতলি তাদের বাগান থেকে ফুল তোলার সময় তার বাবা এসে তাকে থামিয়ে দেয়---
থামো থামো থামো,,, "তুমি করছো টা কি?"
এভাবে ফুল তুলতে নেই সোনা,,, এসো আমি তোমায় আজ ফুল তোলা শিখিয়ে দিচ্ছি, এরপর থেকে তুমি এভাবেই ফুল তুলবে, তাহলে দেখবে অযথা গাছের কোন পাতা ছিঁড়ে যাবে না, ফুলের সাথে না ফোটা কলি গুলো ছিঁড়ে যাবে না।
এই ছিল তিতলির বাবা। এখন তিনি ইহলোকে নেই। সারাদিন কতো কাজের ফাঁকে বাবাকে তার কতবার যে মনে পড়ে আর দু চোখের কোল গড়িয়ে নোনা জল ঝরে পড়ে তার ইয়ত্তা নেই। তিতলি বুঝতে পারে এটাকেই হয়তো নিজের প্রিয়জনকে মিস করা বলে ।
সেদিন অলৌকিকভাবে বাবার সাথে তিতলির দেখা হয়ে গেল। ঠিক ঠিক টিভি সিরিয়ালে ঠাকুর দেবতাদের যেমন ভাবে দেখানো হয়। মহাশূন্যে ভাসমান ধবধবে শুভ্র বসনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। তার শরীর থেকে উজ্বল কিরণচ্ছটা চতুর্দিকে একটি বলয় সৃষ্টি করেছে। আর তিতলি দেখতে পাচ্ছে তিনি সেই বলয়ের মাঝখানে সহাস্য বদনে তিনি দাঁড়িয়ে। তিতলির দুচোখ ভিজে যাচ্ছে আনন্দ অশ্রু ধারায়। দুজনার কথোপকথন হচ্ছে। অনেক কথা। কিন্তু ঘুম ভাঙার পর তিতলি বুঝতে পারল আসলে স্বপ্নে তার বাবা তাকে দেখা দিয়েছে। কারণ প্রতিনিয়তঃ সে বাবার কথা ভাবতেই থাকে। সে বুঝতে পারে যারা বাবা তারা মৃত্যুর পরেও সন্তানের সাথে থাকে। বাবার কথা ভেবেই ওর চোখে বারবার জল চলে আসে। কিছুতেই আটকাতে পারে না। বাবার সাথে যে তার কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে সেসব তো আর বলে শেষ করা যায় না। সম্ভব নয় কখনো। মাঝে মাঝে বাবার সাথে তার কত স্মৃতি মনে করে নিজের অজান্তে হেসেও ফেলে।