ফিরে পাওয়া ভালবাসা
ফিরে পাওয়া ভালবাসা
সায়ন ও স্নিগ্ধার চার বছরের বিবাহিত জীবন। বিয়ের তিন বছরের মাথায় কনসিভ করে স্নিগ্ধা। এই সুসংবাদে দুজনেরই আনন্দের কোন সীমা ছিলন। চাকরির সুবাদে সায়ন ও স্নিগ্ধা কোলকাতায় তাদের একটা ছোট সংসারে বেশ আনন্দেই ছিল।
উইকেন্ডে প্রায়ই দেশের বাড়ি বর্ধমানে ঘুরতে যাওয়া, ছুটির পর মাঝেমধ্যেই সিনেমা দেখা ও বাইরে ডিনার করার মধ্যে দিয়ে বেশ ভালোই কাটছিল তাদের দৈনন্দিন জীবন।
কিন্তু একটা দুর্ঘটনা নিমেষের মধ্যেই যেন সবকিছু তছনছ করে দিল। কনসিভ করার তিনমাসের মাথায় ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার সময় আচমকা একটা গাড়ির ধাক্কায় পড়ে যায় স্নিগ্ধা ও তার মিসক্যারেজ হয়ে যায়। তারপর থেকেই সে আর কিছুতেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছেনা। যদিও ডাক্তার বলেছে ভয়ের কিছু নেই, আর আবার কনসিভ করার ক্ষেত্রেও কোন অসুবিধা নেই।
স্নিগ্ধা সারাদিন ঘরের মধ্যে একা বসে থাকে যেন একদম স্তব্ধ হয়ে গেছে সে। মা ও শাশুড়ি বেশ কয়েকদিন থেকে গিয়েছেন স্নিগ্ধার কাছে, বুঝিয়েছেন অনেক, কিন্তু খুব একটা কাজ হয়নি।
সায়নের আজকাল প্রায়ই মনে হয় স্নিগ্ধা যেন শুধু জীবনের গতি থেকেই নয় তার থেকেও অনেক দূরে চলে যাচ্ছে।
এইভাবেই তাদের জীবন কাটতে কাটতে প্রায় মাস ছয়েক কেটে গেল। তাদের জীবনের গতি না পাল্টালেও প্রকৃতির নিয়মে ঋতু পরিবর্তিত হয়ে এল শরৎকাল। নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, কাশের বনে হিমেল হাওয়ার ছোঁয়া, শিউলির মন মাতানো গন্ধ— সবই আগের মতই ছিল কিন্তু কোথাও যেন সায়নের জীবন থেকে স্নিগ্ধার ভালবাসা হারিয়ে যাচ্ছিল। সায়ন নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করল স্নিগ্ধা কিছুতেই এইভাবে ভেঙে পড়তে দেবেনা, তার সব ভালবাসা দিয়ে স্নিগ্ধাকে আবার আগের মত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনবে।
প্রতিবারের মত এবারও দুর্গাপূজায় দেশের বাড়ি গেল সায়ন ও স্নিগ্ধা। ষষ্ঠীর দিন খুব ভোরে উঠল সায়ন। তখনও স্নিগ্ধা ঘুমিয়ে ছিল। সেদিন অনেক শিউলি ফুল কুড়িয়ে আনল সায়ন। যখন সে ফিরল, দেখল স্নিগ্ধা স্নান সেরে ঠাকুর দালানে এসেছে। সায়ন একমুঠো শিউলি ফুল নিয়ে স্নিগ্ধার হাতে দিল আর বলল ‘স্নিগ্ধা একবার এস না আমরা আমাদের জীবনকে আবার নতুন ভালবাসায়, নতুন সৌরভে ভরিয়ে তুলি। কিছুই শেষ হয়নি স্নিগ্ধা। শুধু তুমি আগের মত জীবনের ছন্দে ফিরে এসো দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।’ এই বলে সায়ন স্নিগ্ধাকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিল। অনেকদিন পর বাচ্চা মেয়ের মত ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল স্নিগ্ধা। সেদিন দশভূজা মা দুর্গাও তাদের দশহাতে আশীর্বাদ করলেন।
ঠিক একবছর পর—
আবার শরৎকাল এল আবার দুর্গাপূজাও তবে এবছর পূজাতে আর সায়ন ও স্নিগ্ধা দেশের বাড়ি যাবেনা—ওদের ঘরে যে স্নিগ্ধার কোল আলো করে একটা ছোট্ট মা দুর্গা এসেছে এবং তার বয়স যে সবে দুমাস।
সত্যিই ভালবাসা অনেক অসুখেই ওষুধের কাজ করে।