Saptarshi Nag

Tragedy Others Drama

4.8  

Saptarshi Nag

Tragedy Others Drama

ফার্স্ট বয়

ফার্স্ট বয়

3 mins
407


দিন পনেরো মেয়ের বাড়িতে কাটিয়ে আজ বিদায়ের পালা | ট্রেন প্রায় ঘন্টাদুয়েক লেট | অনেকক্ষণ আগে স্টেশনে এসে সাত্যকিবাবুর খানিকটা আক্ষেপই হচ্ছিল, নাতনিকে দিয়ে ইন্টারনেটে একবার ট্রেনের স্টেটাসটা দেখে নিলেই হতো | মেয়ে আর জামাই নাতনিকে নিয়ে স্টেশনে ছাড়তে এসেছিল, কিন্তু ট্রেন লেট দেখে আধা ঘন্টা মতন থেকে বেরিয়ে গেছে | জামাইয়ের একটা ভিসি মিটিং আছে কোম্পানির | নাতনিরও টিউশন ক্লাস আছে | এখনো মিনিট পনেরো বাকি ট্রেন আসবার |

সাত্যকি বসু | সরকারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক | বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই | ছিপছিপে গড়ন | প্রায় পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চি উচ্চতা | গলার স্বর এখনো সেই আগেরই মতো বজ্রগম্ভীর | মাথার চুল ধবধবে সাদা | আর সঙ্গে মানানসই ধুতি পাঞ্জাবি | কালো পাম্প শু | সময় বদলালেও আদর্শ আর পোশাক বদলাননি সত্যকিবাবু |

 একটা হুইলার দোকানে উল্টেপাল্টে বই পড়ছিলেন | আজকাল বাংলা লেখা পড়ার ইচ্ছে থাকলেও সেরকম কাজ কোথায়? তাই শেষমেষ একটা ম্যাগাজিন কিনেই দাম দিচ্ছিলেন তিনি | হঠাৎ 'স্যার ' ডাকটা শুনে চমকে উঠলেন | একজন স্থূলকায় মানুষ এসে ঢিপ করে তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলো | 'তোমায় তো ঠিক চিনতে পারলাম না হে ' বজ্রগম্ভীর গলায় সত্যকিবাবু বললেন |'স্যার, আমি দীপ্তমান, আপনার প্রিয় ছাত্র ছিলাম একসময় ' জবাব এলো |দীপ্তমান! মানে তাঁর একসময়কার নয়নের মনি | ক্লাসে বরাবরের ফার্স্ট বয় | খেলাধুলোয় ও নজর কাড়তো রীতিমতো | চোখের মনিতে একটা অদ্ভুত স্বচ্ছতা ছিল | ভারি স্নেহ করতেন ওকে সাত্যকিবাবু i জয়েন্ট পরীক্ষাতে রাজ্যে প্রথম হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হয় | সেই থেকে দীর্ঘদিন কোনো যোগাযোগ নেই ওর সঙ্গে |

আর তার এ কি চেহারা! ওজন প্রায় একশো কেজির উপরে | গলায় মোটা একটা সোনার চেন | চোখের তলায় কালি | কোথায় সেই উজ্জ্বলতা? সারা শরীরেই শৃঙ্খলাবিহীন জীবনযাত্রার ছাপ স্পষ্ট | এই বয়সেই মুখে বার্ধক্যের ছাপ |'এ কি চেহারা বানিয়েছো দীপ্ত | চিনতেই তো পারিনি তোমাকে '|'কাজের চাপ আর কি স্যার | বয়স ও তো চল্লিশ ছাড়ালো | অবিশ্যি স্যার আপনাকে দেখে বয়স চেনা দায় | স্যার পরিচয় করিয়ে দিই | আমার গিন্নি গীতশ্রী | ও দিল্লিতেই মানুষ হয়েছে |' এক আধুনিকা কোনোমতে তাঁর হাঁটু ছুঁল | ঝুঁকতে কষ্ট হচ্ছিলো বোঝা গেল | এরকম ধুতি পাঞ্জাবি পড়া বৃদ্ধকে প্রণাম করার কারণ মনে হয় বুঝতে পারেনি |

'আর স্যার এই যে আমার ছেলে | নিজেদের নাম মিলিয়ে নাম রেখেছি শ্রীদীপ্ত |'ঢিপ করে এক বছর দশেকের ছেলে তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করলো | ওকে জড়িয়ে ধরে ভালো করে ওর দিকে তাকাতেই চমকে গেলেন সাত্যকি | আরে এ যে অবিকল সেই ছেলেবেলার দীপ্তমান | সেই চোখ | সেই টিকালো নাক | সেই ভ্রু | সেই উজ্জ্বল চোখের মনি |

এক দমকা তাজা হাওয়ার মতো বুকে ভারি শান্তি এলো সত্যকিবাবুর | নিজের একসময়কার প্রিয় ছাত্রকে তারই ছেলের মধ্যে খুঁজে পেয়ে |দু-একটা কুশল বিনিময়ের পরে সাত্যকিবাবু গর্বের সঙ্গে তাকে বললেন - ' জানো তো তোমার বাবা আমার প্রিয় ছাত্র ছিল | বরাবরের ফার্স্ট বয় ছিল | ও ছিল আমার গ্রামের স্কুলের গর্ব | সবকিছুতে এক নম্বর ছিল তোমার বাবা | ''তাই নাকি স্যার? তাহলে সেদিন রাতে যে বাবা একটা ব্যাগ আলমারিতে রাখার সময় মা বলছিল, শুধু দুইনম্বরী করে টাকা না কামিয়ে বাড়িতে একটু সময় ও তো দিতে পারো | মা - মা, বাবা কি দুই নম্বরি না এক নম্বরি? 'হতভম্ব দীপ্তমান সপরিবারে কেটে পড়লো কোনোক্রমে | কু -ঝিঁক ঝিঁক আওয়াজ জানান দিলো ট্রেন ঢুকছে |ঝরঝর করে সাত্যকিবাবুর চশমার ফাঁক দিয়ে জল পড়তে থাকলো | এবার সত্যিই বিদায়ের পালা |


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy