পেয়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া
পেয়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া
-তুমি?
- হ্যাঁ, আমি।
- কী মনে করে?
- তোমার কাছে আসার জন্য আমার কোনো কারণের প্রয়োজন?
- অবশ্যই।
- এতটা দূরে ঠেলে দিলে আমায়?
- উল্টোটা তো আমিও বলতে পারি।
- তা অবশ্য ঠিক। শোনো…
- নাহ, কিছু শোনার নেই আমার।
- প্লিজ, এরকম কোরো না। কতদিন হয়ে গেল বলত আমাদের দেখা হয়নি।
- ২০২০ সালের তেরোই নভেম্বর থেকে আজ ২০২২ এর তেইশে ফেব্রুয়ারি। কত মাস, কত দিন, কত ঘন্টা হিসেব করে নাও।
- আমি কোনদিনও তোমার থেকে এতটা দূরে থাকিনি, তাই না? এই প্রথমবার এমন হল।
- আমিও থাকিনি। কিন্তু এখন এটা আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। তোমায় ছাড়া থাকতে আমি শিখে গিয়েছি। আজ এতদিন বাদে হঠাৎ কী মনে করে আবার ফিরে এলে এই বাড়িতে?
- তোমার সঙ্গে কিছু কথা ছিল। তাই এসেছি।
- কিন্তু আমার যে আর কিছু শোনার বাকি নেই।
- সোনা প্লিজ, আমি জানি তুমি রেগে আছো কিন্তু তাও…
- রাগ! রাগ অভিমান এসব তো নিজের লোকের জন্য তোলা থাকে, অচেনা কারুর জন্য নয়।
- আমি তোমার অচেনা!
- কোনো সন্দেহ নেই। ২০২১ সালের ১৩ই নভেম্বর যে মানুষটা এই বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিল, সেই মানুষটাকে আমি অন্তঃত চিনি না।
- আর যাকে তুমি ভালোবাসতে?
- আমি মনে করি সে নিরুদ্দেশ।
- আমি নিরুদ্দেশ?
- আমি তো তোমার কথা বলিনি। তোমায় আমি চিনি না। আমি বলেছিলাম আমি যাকে ভালোবাসতাম, তার কথা।
- সোনা…
- আমার মনে হয় তোমার এখানে সময় নষ্ট না করা ঠিক না। ফ্রি টাইম থাকলে সেটা তোমার ফিঁয়াসের সঙ্গে কাটাও। এতে সম্পর্ক সুস্থ থাকবে।
- তুমি…!
- হ্যাঁ, আমি জানি তোমার বিয়ের ঠিক হয়ে গিয়েছে। এই বছরই জুন মাসে বিয়ে করছো। তাই বলছি, আর তো বেশিদিন নেই। ওনার সঙ্গে সময়টা কাটাও।
- হুমম, আমার বিয়ের ঠিক হয়েছিল।
- হয়েছিল! মানে?
- আমি ক্যানসেল করে দিয়েছি।
- কী! কেন?
- তোমার জন্য।
- মিথ্যে বোলো না।
- বলছি না। আমি আসলে… আমি আসলে আমার অনুভূতিগুলোকে নিয়ে একটু কনফিউজড ছিলাম।
- আর এখন?
- এই লকডাউনে যখন ইচ্ছে থাকলেও তোমার কাছে আসার উপায় ছিল না, তোমার থেকে এই অসম্ভব দূরত্বটাই আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে আমি তোমায় ছাড়া থাকতে পারব না।
- আমি তোমায় বিশ্বাস করি না।
- প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। তোমাকে ওভাবে ছেড়ে যাওয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি আসলে তখন ভীতু ছিলাম, সত্যিটা স্বীকার করার সাহস ছিল না।
- ওহ। আর এখন? এখন কী চাইতে এসেছো?
- তোমাকে।
- ইয়ার্কি কোরো না।
- করছি না। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।
- ভেবে বলছো তো?
- একদম। আর কোনো রকম কোনো দ্বিধা নেই আমার মধ্যে। আজ আমি জানি তুমিই সেই মানুষ যার হাতে হাত রেখে আমি বৃদ্ধ হতে চাই, যার কোলে শুয়ে আমি মরতে চাই।
- সিনেমা চলছে না এখানে।
- জানি, আমার কথাগুলো সিনেমার ডায়লগের মত শোনাচ্ছে কিন্তু এই শব্দগুলোই আমার অনুভূতিটাকে শ্রেষ্ঠভাবে ব্যক্ত করতে পারবে হয়ত।
- তোমার মন যদি আবার পাল্টায়?
- পাল্টাবে না। আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই, এই বছরই। সামনের জুন মাসে যেদিন আমার বিয়ের ঠিক করেছিল আমার বাড়ির লোক, সেদিনই বিয়ে করতে চাই তোমায়।
- বিয়ে! আর ইউ শিওর?
- হান্ড্রেড পার্সেন্ট।
- সেই সাহস আছে তোমার?
- আছে। বিশ্বাস কর, আমার সত্যিই আর কিছু যায় আসে না কে কী ভাবল না ভাবল তাতে। আমরা দুজনেই নারী তো কী হয়েছে? সংবিধান স্বীকৃতি দিয়েছে আমাদের ভালোবাসাকে। তাহলে ভয় কিসের?
- আবারও বলছি, ভালো করে ভেবে নাও। সংবিধান স্বীকৃতি দিলেও মানুষের মন কিন্তু এখনও স্বীকৃতি দেয়নি সমকামী ভালোবাসাকে। সমাজের চোখে আমাদের সম্পর্ক এখনও অপাংতেয়। আমাদের পরিবারের লোকেরাও হয়ত আমাদের বিরুদ্ধাচারণ করবে। এই সম্পর্ককে পরিণতি দিতে গেলে প্রতি মুহূর্তে বিপদের আশংকা রয়েছে। পারবে তো সেই বিপদ মাথায় করে লড়াই করতে।
- তুমি পাশে থাকলে সব পারব। অব পেয়ার কিয়া তো ডরনা ক্যায়া?
#BreakTheBias