Manasi Ganguli

Romance

4.4  

Manasi Ganguli

Romance

পেন ফ্রেন্ড

পেন ফ্রেন্ড

4 mins
914


খবরের কাগজের পেনফ্রেন্ড কলাম দেখে মৃত্তিকার ইচ্ছা হল মিতালী পাতাতে। খুব পছন্দ হল ওর সানির বন্ধুত্বের আবেদন। হাত বাড়িয়ে দিল ও বন্ধু হতে। চিঠি দেবার জন্য মনটা অস্থির হয়ে উঠেছে। রাইটিং প্যাড আর পেন নিয়ে বসে পড়ল মৃত্তিকা ওর পড়ার টেবিলে। কিছুটা করে লিখছে আর পাতাটা দলামোচড়া করে ফেলে দিচ্ছে,কিছুতেই মনের মত হচ্ছে না। ভেতরে এত আকুতি অথচ ভাষায় তা প্রকাশ করতে পারছে না ও। মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকল কিছুক্ষণ। মুড অফ লাগছে। তারপর ঘর অন্ধকার করে চোখ বুজে শুয়ে থাকল যদি কিছু মাথায় আসে তাই। শুয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ ওর মনে হল বন্ধু শ্রীর কথা। শ্রীর সাহায্য নিতে হবে। ছোট থেকেই ও খুব ভালো চিঠি লিখতে পারে। ওদের বাড়ির রান্নাপিসিমার চিঠি লিখে দিত বেশিরভাগই ওনার মেয়েদেরকে। রান্নাপিসিমা খালি বলে দিতেন কি কি জানাতে হবে আর শ্রী সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে চিঠিটা লিখে ফেলত মায়ের বয়ানে মেয়েকে। তারপর রান্নাপিসিমাকে পড়ে শোনাত। উনি তো বেজায় খুশি,যেটুকু বলে দিতেন তা বাদেও শ্রী যেন ওনার মনের কথা বুঝতে পারত,এমনভাবে চিঠিগুলো লিখে দিত সে। আর সে চিঠি যেন পোস্টকার্ডে মহাভারত,খুদি খুদি কিন্তু পরিষ্কার হরফে লিখে দিত শ্রী,ওর হাতের লেখাও খুব সুন্দর।মহাখুশিতে চিঠি পোস্ট করে ফেলতেন উনি তখনই। ভাবে মৃত্তিকা,পরদিনই কলেজে গিয়ে শ্রীকে ধরতে হবে ওর মুশকিল আসান করার জন্য।

     যেমন ভাবা তেমন কাজ। শ্রীর শরণাপন্ন হলে ও কিছু হিন্ট দেয়। মৃত্তিকা বাড়ি ফিরে সেইমতো চেষ্টা করে লিখতে কিন্তু কিছুতে যেন মনের মত হয় না। পরদিন ও শ্রীকে ধরে ওর বয়ানে সানিকে চিঠি লিখে দেবার জন্য। যদিও পত্রমিতালী কিন্তু শ্রীর মনে হয় মৃত্তিকা আসলে সানিকে প্রেমপত্র লিখতে চাইছে। ও বলে,"লিখে দিতে পারি একটাই শর্তে সানি যেন কোনোদিন জানতে না পারে চিঠিটা আমার লেখা।" মৃত্তিকা রাজী। চলতে থাকে চিঠি লেখা। প্রথমদিকে শ্রী বন্ধুত্বপূর্ণ চিঠিই লিখে দেয়,সানিও তাই লেখে। কিন্তু কয়েকটা চিঠি আদানপ্রদানের পরই সানির তরফ থেকে চিঠিতে আসি প্রেমের আভাসঙ্গিত। মৃত্তিকা তাতে বেশ খুশি,মনে তার রং লেগেছে কিন্তু শ্রী একটু বিড়ম্বনায় পড়ে। এ পর্যন্ত ও কারও প্রেমেও পড়েনি আর প্রেমপত্রও লেখেনি কোনোদিন,তাই একটু অস্বস্তি আর কি। এদিকে মৃত্তিকাও ছাড়বার পাত্রী নয়,বলে,"না বললে শুনবোই না আমি"।

     অতঃপর শুরু হয় চিঠির মাধ্যমে প্রেমের আদান-প্রদান। প্রেমের চিঠি লিখতে লিখতে শ্রীর ভেতরেও এক প্রেমের অনুভূতি জাগে,যা ওর মধ্যে এতদিন ছিল না। যখন লিখতে বসে সানিকে আবেগে ভেসে যায় ও,কত কাব্য এসে যায় সেসব চিঠিতে। আর সেই আবেগতাড়িত চিঠি মৃত্তিকার খুব পছন্দ হয়,বলে,"আমি কেন তোর মত লিখতে পারি না রে?" শ্রী হাসে। চলতে থাকে প্রেমপত্র দেয়ানেয়া। সানিও খুব সুন্দর প্রেমপত্র লেখে। মৃত্তিকা সেসব শ্রীকে পড়তে দেয় তার জুতসই উত্তর লিখে দেওয়ার জন্য। সেসব পড়ে আর সানিকে প্রেমপত্র লিখতে লিখতে শ্রীই বুঝি সানির প্রেমে পড়ে যায়। অহরহ সে সানিকে নিয়ে ভাবতে থাকে,পরের চিঠিতে কি লিখবে সেসব ছকতে থাকে। আর এসবই আসে ওর মন থেকে,তাই প্রেমপত্র ভরে ওঠে শ্রীর মনের কথায়। সানি আপ্লুত এমন প্রেমপত্র পেয়ে,প্রতি চিঠিতেই সে তা জানায়।

      ওদিকে মৃত্তিকা সানির প্রেমে পাগল,সানিও মৃত্তিকার। কেউ কাউকে দেখেনি ওরা তাই দুজনে পরিকল্পনা করে দেখা করার। সেই আকাঙ্খিত দিনটি এল অবশেষে। সানি আর মৃত্তিকা প্রথম দেখল দুজন দুজনকে। দুজনেই মোহাবিষ্ট। প্রথম দর্শনে কথা হারিয়ে ফেলে দুজনে, সামলে নিয়ে শুরু হয় আলাপ। সানি আসনসোল থেকে কলকাতায় মাসির বাড়ি এসেছে কদিনের জন্য মৃত্তিকার সঙ্গে দেখা করবে বলে। আলাপ চলতে লাগল। "কিন্তু এ কি?" সানি চিঠি পড়ে যে ছবি এঁকেছিল মৃত্তিকার এ তো সে নয়। যে মেয়ে এমন চিঠি লেখে,তার কথাবার্তা এমন কেন?" সানি মেলাতে পারে না কিছুতে। কেমন অস্থির লাগে তার,"এ কেমন হল? আমি তো এর সাথে কথা বলে তৃপ্তি পাচ্ছি না!" তবু পরদিন আবার দেখা করে,হয়তো তার কোনও ভুল হচ্ছে এই ভেবে। সেদিন মৃত্তিকা ওর প্রিয়বন্ধু শ্রীকে সঙ্গে এনেছে। শ্রী কিছুতেই আসতে চায়নি,আসলে সানিকে প্রেমের চিঠি লিখতে লিখতে,যদিও মৃত্তিকার বয়ানে,কবে যেন নিজেই ও সানির প্রেমে পড়ে গিয়েছিল আর তাই মৃত্তিকার প্রেমাস্পদের সামনে এসে দাঁড়াতে চায়নি ও। কিন্তু মৃত্তিকার জোরাজুরিতে ওকে আসতেই হয় সানির সঙ্গে আলাপ করতে। প্রথম থেকেই শ্রী চুপচাপই ছিল কিন্তু সানির বোধহয় ওকে খুব মনে ধরেছিল। এরপর এক দু'কথায় আলাপ এগোতে সানির মনে হয়, "এই তো সেই মেয়ে যার সঙ্গে আমার প্রেমের আদান-প্রদান হয়েছে এতকাল চিঠিতে", যদিও সানি কিছুই জানত না যে শ্রী-ই মৃত্তিকার চিঠি লিখে দেয়। শ্রীকে দেখে,ওর কথা শুনে সানির মনে হয় যেন ছন্দে মাতাল এক ঝর্ণা যে ওর মনের গভীরে সুর তুলেছে।

     সানি মৃত্তিকার প্রতি আকর্ষণ হারায়,কেবলই শ্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়,দেখা করতে চায়। শ্রীরও খুব ইচ্ছা করছে সানির সঙ্গে দেখা করতে,কথা বলতে কিন্তু প্রিয়বন্ধুর কথা চিন্তা করে নিজেকে সংযত করার বৃথা চেষ্টা করে চলেছে। মনের ভেতর তুমুল তোলপাড় তার। মৃত্তিকা কষ্ট পায় মনে মনে,বুঝতে পারে সানি ওর প্রতি আকৃষ্ট নয়। শ্রীকে বলে সে কথা। চুপ করে থাকাই শ্রেয় এক্ষেত্রে,তাই শ্রী শোনে কেবল।

     দু'দিন পর শ্রী কলেজ থেকে ফিরে দেখে বাড়িতে কিছু গেস্ট এসেছেন,অপরিচিত মুখ সব। ভেতরে ঢুকতে গেলে মা ওকে ডাকেন, প্রণাম করতে বলেন। জানতে পারে উনি সানির মাসি,এসেছেন সানির সঙ্গে ওর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance