ও কেমন আছে ?
ও কেমন আছে ?
ও কেমন আছে ?
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
পর্ব - 9
কলমে - কৃষ্ণ ব্যানার্জী
আমরা যেদিনথেকে নুতন কোরে সংসার শুরু করেছিলাম তারপর থেকে প্রায় দুই বছর চলেছিলো আমাদের প্রজেক্ট । নুতন সংসার মাসখানেক কেটেগেলো গাছ - গাছ করতে , ঝুমড়ি এখন ঘর সংসারী । ওকে দেখে এখন আমার এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়না ও ননবেঙ্গলী । আমার নিজেরি মাঝে মাঝে মনেহয় ঝুমড়ি কি কোরে জানলো আমাদের নিয়ম - কানুন ,আচার - বিচার । যাইহোক সবটাই ঠিক চলছিলো , একমাস পর আমি আমাদের বিয়ের ওনারে একটা ছোটো পার্টি দিলাম । খুব আনন্দ হলো সেদিন । সারাদিনের খাটা - খাটনিতে ঝুমড়ি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল , সকলে চলে যাবার পর , ফ্রেস হয়ে একটা পাতলা নাইট ড্রেস পরিধান কোরে খোলাচুলে যখন বেডরুমে এসে পৌঁছালো ওকে জানো বেশ আলাদাই লাগছিলো আমার । পাতলা কাপড়টার আড়াল দিয়ে ওর দেহটা বেশ মিষ্টি লাগছিলো । আরো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠলো যখন ঝুমড়ি ওর দেহটা এলিয়ে দিলো বিছানার উপড়। এই প্রথম্বার আমি আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না , আমি নিজেকে এলিয়ে দিলাম ওর উষ্ণ দেহটার উপড়ে। সেদিন রাতে আমি ওর কতটা কাছে এসেছিলাম তা বলে বোঝানো সম্ভব নয় , তবে এটুকু বলতে পারি সেদিন রাতে ঝুমড়ির যতটা কাছে আমি এসেছি আজ পর্যন্ত অন্য কোন নারীর কাছে মন থেকে আমি আসতে পারিনি ।
আপনারা হয়তো আমার শেষ কথাটা ঠিক ঠাক বুঝতে পারলেন না তাইতো ? বোঝবার কোথাও নয় , আজ সবটাই বলবো আপনাদের । আমাদের বেশ ভালোই কাটছিলো বিবাহিত জীবন , দেখতে দেখতে আরো চার চারটে মাস কেটে গেলো , আজ আমরা ডাক্তারের কাছ থেকে বাড়ি ফিরলাম । আমরা দুজনেই খুব খুশি কারণ বিষয়টা খুশির মতোই । ডক্টর ঝুমড়িকে পরীক্ষা নিরীক্ষা কোরে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে ঝুমড়ি মা হতে চলেছে আর ঝুমড়ির দেহে যে ছোট্ট প্রাণটা ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে আমি তার পিতা । এখন ঝুমড়ির প্রতী আমার একটু বিশেষ নজর রাখা উচিৎ। পরেরদিন সেই আনন্দে দুই হারি রাসগোল্লা নিয়ে পৌঁছালাম কাজের সাইডে , সকলকে বিষয়টা জানাতেই একটা খুশির ঝড় বয়েগেলো সকলের মধ্যে। হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো আমার প্যান্টের পকেটে , প্রথমে ভেবেছিলাম ঝুমড়ি বোধহয় ফোন করেছে কিছুটা সরে গিয়ে ফোনটা বার করে দেখি আমার মায়ের ফোন । ফোনটা রিসিভ করতেই একটা কান্নার শব্দ ভেসে আসে । আমি মাকে জিজ্ঞাসা করি কি হয়েছে ? মা জানান বাবা হসপিটালে ভর্তি হার্ড এটাকে ডক্টর বলেছেন ফেরার আসা খুব কম তোকে একটি বারের জন্য দেখতে চাইছেন তুই ফিরে আয় বাবা । কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম , মা আবার বললেন ফিরে আয় বাবা । আমার হুস ফিরলো বললাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি আসছি মা তুমি চিন্তা করনা । ফোনটা কেটে কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না । একদিকে ঝুমড়ি অপরদিকে বাবা । এদিকে ঝুমড়ি আমার সন্তানের মা হতে চলেছে । কিছু বুঝতে না পেরে ঝুমড়িকে ফোন করে বিষয়টা জানাতে সে বলল তুমি এখনো আমার জবাবার অপেক্ষাতে রয়েছো উনি তোমার বাবা তোমার এখুনি যাওয়া উচিৎ আমি নিজেকে সামলাতে পারবো ।
ফোনটা কেটে কাজের সাইডের কয়েকজনকে বিষয়টা জানিয়ে অফিসের একটা গাড়িনিয়ে বেরিয়ে গলাম কলকাতার সেই নার্সিংহোমের পথে। সেখানে পৌঁছাতে আমার সময় লাগলো 4 ঘন্টা । বাবা তখন ই.সি.ইউ তে । আমি ঢুকতেই ডক্টর বললেন আপনি ওনার ছেলে ? আমি জানালাম হা । ডক্টর বললেন ওনার হাতে হয়তো বেশি সময় নেই , অনেক্ষন থেকেই আপনার কথা বলছেন , ওনার সাথে দেখা করে নিন । বাবার সম্মুখে পৌঁছে আমি জীবনে যে চরম পরিস্থিতির সম্মুখীন হোলাম তার জন্য আমি এক মুহূর্ত প্রস্তুত ছিলাম না । জীবনের এতগুলো বছর কাটিয়ে ফেলেছিলাম কিন্তু বাবা আমার কাছে কোনদিন কিছুমাত্র চায়নি অথচ জীবনের শেষমুহূর্তে এমন কিছু চাইলেন যা আমাকে ধর্ম সংকটের মুখমুখী এনে উপস্থিত করলো । কোন মানুষের জীবনে এমন মুহূর্ত আসতে পারে সেটা যদি আমার সাথে না ঘাটতো তাহলে আমি বিন্দু মাত্র উপলব্ধি করতে পারতাম না । বাবা চলেগেলেন কিন্তু আমাকে এমন এক সংকটার মুখে ফেলে দিয়ে গেলেন যে কয়েক মুহূর্তের জন্য আমি নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম , আমার মনে হয়েছিল আমার পায়ের তলার মাটিটা হারিয়ে গিয়েছে , আমার সামনে সবটাই জানো ঐ কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ওলোট পালোট হয়ে গিয়েছিল কিন্তু যে মানুষটা সারাটা জীবন শুধু আমাকে দিয়ে গিয়েছে কোনোদিন কিছু চাইনি তার শেষ চাওয়া টাকে আমি অবহেলা করতে পারলামনা , নিজের বিবেকের সাথে অনেক যুদ্ধ করে টানাপোড়েনের মাঝে তাকে বলতে বাধ্য হয়ে ছিলাম তুমি যেমনটা চাইছো তেমনটাই হবে …………।
চলতে থাকবে ……….