MD ROBIUL ALAM

Tragedy Inspirational

4  

MD ROBIUL ALAM

Tragedy Inspirational

নিজস্ব কর্ম

নিজস্ব কর্ম

3 mins
194


ইদানিং যেন নিজেকে খুব সস্তা বা কম দামের মনে হচ্ছে। হওয়ারই কথা, দাবি ও বাড়ছে যে যোগ্যতার থেকে বেশি। এখন সবাই ফিতে ধরলে মিস্ত্রী আর স্টিয়ারিং ধরলে ড্রাইভার। আমিও তাই। কিন্তু তবুও চারপাশে দু পয়সার মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি তো হচ্ছে, কতরকম ফন্দিফিকিরি চলছে। আমি সেলসম্যান। স্বপ্ন ছিলো ডাক্তারি পড়ব। চান্স পাইনি তাই ওষুধ নিয়ে পড়লাম। তারপর ভাবলাম মেডিসিন রিসার্চ এ ঢুকবো নতুন কিছু করবো, হল না। তারপর ওষুধ বিক্রি করছি। যাই হোক,ওষুধে তো বটে। ডাক্তার না হলেও ডাক্তারবাবুকে রিকোয়েস্ট তো করি। ওষুধ তৈরী না করলেও বেচি তো।


একদিন আমাদের টিমমের কয়েকজন অফিসে যাচ্ছিলাম। আমাদের রিপোর্টিং ম্যানেজার উৎপল দা ও ছিল। রাস্তার পাশে সবাই জুতো পালিশ করাচ্ছিলাম।


গল্প ও শুরু হলো একে স্যালারি কম, ইনক্রিমেন্ট আরো কম, কাজের চাপ দিনে দিনে দিগুন হচ্ছে। বেকারত্ব বাড়ছে আর কোম্পানি সস্তায় ছেলে নিয়ে সুযোগে খাটাচ্ছে। এভাবে চলে? আমাদের নীতি টাকা বেশি কাজ কম আর কোম্পানির উলটোটা। মধ্যিখানে ম্যানেজাররা ফাঁদে, দু দিক সামলে, ছেলেদের গায়ে হাত বুলিয়ে কাজ সারে। কাজ আর বিতর্ক দুটোই চলতে থাকে।

 উৎপল দা বললো : দ্যাখো , তোমরা যে এতো কিছু বলো, সব কি ঠিক, আমাদের থেকে ভালো কোম্পানি ও আছে, এমপ্লয়ী ও আছে আবার তেমনি খারাপ ও আছে। যেটা পাচ্ছি যেভাবে আছি অনেকের থেকে যেমন খারাপ তেমনি অনেকের থেকে ভালো ও।


আমি বললাম : একদমই ঠিক , সেটার সুযোগই তো কোম্পানি কাজ এ লাগাচ্ছে আমরাই খারাপ মনে করছি, কোম্পানি তো আরো বেশিই করবে ভাবছে বেরোয় নি

মানে যোগ্যতা নেই, যোগ্যতা নেই মানে দাবি দাওয়াও নেই আর থাকলেও দাম নেই। এভাবে বিতর্ক চলতে চলতে হঠাৎ আমার জুড়োর দিকে চোখ গেল


- কাকা, সামনের দিকটা একটু সেলাই করে দিও, ছেড়ে গেছে 

লোকটা অতিরিক্ত বয়স্ক, রোগা, কমবেশি আশির কাছাকাছি বয়স। মনেহয় বিহারিই হবে। দশটাকার ব্যবসা,ফুটপাতে দু হাত দোকান, তাতেই থাকার জায়গা।

 এর মধ্যে আমার জুতোটাও রেডি হয়ে গেল। জুতোটা কাছে নিতেই দেখলাম জুতোয় সেলাই এর কোনো দাগ নেই।


- কি কাকা,সেলাই করো নি?

 - হা করে দিয়েছি , লোকই বললো।

 আমি এবার ভালো করে দেখলাম, সেলাই নেই! শুধু আঠা লাগানো।

- কই, নেই তো

বলার সাথে সাথে লোকটা জুতো টা আবার নেয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলো। আমি দিলাম। কিন্তু লোকটি আবার আঠার উপর আঠা লাগাতে লাগলো।


-আরে কাকা, আঠায় হবে না সেলাই করো

 লোকটা শুনছেই না 

-উৎপল দা, এ পারে না না কি 

উৎপলদা মুচকি হাসলো


বুঝলাম এর দ্বারা হবেনা বেকার বলে লাভ নেই, অন্য কোথাও থেকে করে নেব । কেন যে এরা এই বয়সে রাস্তা জ্যাম করে বসে থাকে, এতো কিসের টাকার দরকার


বিল হলো পঁচাত্তর টাকা। সবার মিলিয়ে। তবুও বাজার ছাড়া বিশ টাকা বেশি, মেনেও নিলাম। বাধ্য। 

উৎপল দা আগেই টাকা বের করেছিলো, আমাদের দিতে বারণ করলো। ম্যানেজার তাই সম্মান ও রাখলাম। উৎপলদা একটা এক‌শো টাকার নোট এগিয়ে দিয়ে বলল - এই নাও কাকা

টাকা টা নেওয়ার পর কাকা পয়সার কৌটো টা চোখের কাছে এনে তিন চার মিনিট হাতড়েই যাচ্ছে, আমরা দাঁড়িয়ে ভাবছি, পয়সা নেই না কি, খোদ্দের তো আসে বলে মনে হয় না। নাকি না দেয়ার ভান। সে এবার কৌটোটা আমাদের দিকে এগিয়ে দিয়ে ভয়ে কাঁপাকাঁপা গলায় বললো - বাবু আমি দেখতে পাচ্ছি না,তোমরা একটু হিসেব করে দেবে?

 লোকটা কৌটো ধরে আছে আমরা পরিস্কার বুঝতে পারছি কৌটোটা কাঁপছে, বয়সের অক্ষমতায় ওনার হাত প্রায় অচল শরীর ও ততই , ভাঙা চশমা , ছেঁড়া লুঙ্গি গেঞ্জি , চামড়া গুটিয়ে ঝুলে পড়েছে ।

মুহূর্তের দৃষ্টিতে বহুকিছু বুঝতে পারলাম। কৌটোটা হাতে নেওয়ার মতো আমাদের কারো সাহস ছিল না

উৎপলদা বললো - থাক কাকা, তুমি রেখে দাও, দিতে হবে না 

লোকটির প্রতি ভীষণ শ্রদ্ধা জন্মালো। তার থেকেও তার কর্মের প্রতি আরো বেশি।


উৎপল দা বললো - এবার বলো তোমরা কেমন অবস্থায় আছো? এর থেকেও খারাপ? মুহূর্তের মধ্যে কিছুক্ষনের জন্য

সবাই যেন বোবা হয়ে গেলাম, উত্তর ছিলো না। মনে মনে বললাম : অমানুষের বাচ্চা গুলো চুরি করে খাচ্ছে, লুট করে খাচ্ছে, গদাই চেহারায় হাত পাতছে, এদের দেখে লজ্জা করে না। সত্যি, খিস্তি খাওয়ার থেকে লোকের টয়লেট ধুয়ে খাওয়া অনেক অনেক সম্মানের। নিজস্ব কর্ম সবসময়ই মহান!!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy