গরিব গরিব মনেহয়
গরিব গরিব মনেহয়
খেটে খেতে খুব কষ্ট হয় আমার, তাই একবার ভিক্ষে করার প্ল্যান করি, আমি আর সাধন। আমি অন্ধজন হবো ও হবে দেহ আলো, অন্ধের ওপর দোয়া সবার, ভালোই হবে, কেউ চিনবেও না মুকুন্দপুর, অনেক দূর।
সেজেগুজে সরঞ্জাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
ভিক্ষে করছি দুজন বাজারে, দোকানে দোকানে, রাস্তায়। সাধনের হাতে আমার হাত, আমার হাতে বাটি, খুচরো পয়সার আওয়াজ, হিন্দু দেখলে ভগবানের নাম, মুসলিম দেখলে আল্লা। ভিখারির তো একটাই জাত। একটু অসুবিধা ও হচ্ছে, ভয় ও লাগছে নতুন নতুন, লাগারই কথা ।
রাস্তা শেষ হলো, সবজির বাজারে ঢুকলাম আমি কানা, অনেক্ষন চোখ বন্ধ করে অন্ধকারে ছিলাম, এখন সুযোগ পেলেই একটু একটু করে পাতার ফাঁক দিয়ে দেখছি। আলো একটু অসুবিধাও হচ্ছে, ঝিলিকের মতো চমক। দেখলাম সব্জি দোকানে কি দারুন টমেটোর রঙ, কি পরিপূর্ণ চেহারা , অনেকক্ষন কালো কালো দেখায় পর, সবুজের মাঝখানে অপরূপ হৃদয়ের মতন লাল রঙ যেন প্রাণ ভরে এতক্ষণের চোখের তৃষ্ণা মেটায়। ভয় হয়, যদি আমার মিত্থে কানা চোখ মুখ ফসকে বলে ফেলে ! আর হঠাৎ সেই মাত্র আমি মুখ ফসকে বলেও ফেললাম : টমেটো কি লাল!
তারপর আমিও লাল, সাধনও লাল, ভিখিরি চাকরি ও লাল।
ভাবি, কানা সাজা এতো কঠিন, কানা হওয়া ........ । আমার পাশেই দোতালা বাড়ি সাধনের, ও এখন পেশাদারি ভিখারি। আমার হলো না।
গত কালকে, আমাদের পাশের বাড়ি
মঙ্গলদার বৌ, বৌদি আমাকে ডাকতে এলো, কইগো ঠাকুরপো , শিগগির একটু এসো, তোমার দাদা পাগল হয়ে গেছে। বাড়ি ফিরেই ঘরের চালের মাথায় উঠে চাল ভাঙছে। আমি দৌড়লাম
- কি হয়েছে মঙ্গল দা? পাগল হয়েছো না কি?
-পাগল? আমি বড়োলোক হয়েছি? রাতারাতি ছাদ দেবো চাল ভাঙবো, আমি বিশাল বড়োলোক, বাইশ লক্ষ টাকা বাজিমাৎ ! লটারী! লটারী !
ঘটনাটা যেই
মাত্র বুঝলাম, সঙ্গে সঙ্গে আমিও পাগল হলাম। এক দৌড় যা পকেটে, ছিলো পকেট ধুয়ে এক গোছা লটারীর টিকিট কাটলাম। সেদিন আর কাজে যাই নি।ওঃ বলা হয় নি, আমি কানুবাবুর গোডাউনে ভ্যান চালাই, মাল বওয়া কাজ করি এখন।
সারা রাত ভোর ঘুম ও হয়নি। শুধু স্বপ্ন দেখেছি লটারী টিকেট মিলছে লক্ষ লক্ষ টাকা রাতের স্বপ্ন সত্যি ও হয়, হবেও আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।
পরদিন দোকানে গেলাম, কানুবাবু : যা, সকাল সকাল মালগুলো স্বদেশের দোকানে খালি করে আয়।
এই কানুবাবু একটু অহংকারী। একবার তার মতোই একই জামা আমি পরে গিয়েছিলাম আর উনি রেগে সঙ্গে সঙ্গে নিজের জামা ছিঁড়ে খোদ্দেরের সামনে খালি গায়ে দোকানে গিয়ে নতুন জামা কিনে পোরে তবে দোকান এ আসেন।
আজকে হঠাৎ প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে করলো। বললাম : লটারীর টিকিট কেটেছি। রাতে স্বপ্ন দেখেছি বিশ লক্ষ পাবো, কাল থেকে আমার কাছে কাজ করতে আসবেন।
তারপর দে দৌড় !
পরদিন থেকে কাজ ই বন্ধ হয়ে গেল।
আমি এরকমই যে , গার্ডার পেলে হাতে জড়িয়ে রাখি, পরে টাকা কুড়িয়ে পেলে বাঁধবো তাই!
বহুবার বহু প্ল্যান করেছি আমি, কিছুতে কাজ হয় নি।
একবার একটা তলা ভাঙা গাড়িও কিনেছিলাম। তারপর মোবাইলের টর্চ মেরে তলা দেখতে দেখতে তিনটি মোবাইল ভেঙে যায়
বাপের জমি বেচে কটা টাকা পেয়েছিলাম, সেও গেল সঞ্জয়ের দোকানে বসে বসে চা আর সিগেরেটটা প্ল্যান করতে করতে : এতো টাকা, কি করবো, কোথায় খরচ করবো,কি কিনব, ব্যবসা করবো না কি করবো, এই করতে করতে দেড় লক্ষ টাকা ও শেষ। এখন ধরে চা বিড়ি খাই আর খেতে
খেতে বেঞ্চে উবু হয়ে বসে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার প্ল্যান করি।
খেটে খেতে আমার খুব কষ্ট হয়। তাই আপনাকে অনুরোধ করছি যদি কিছু আপনার কাছে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার বা না খেটে খাওয়ার প্ল্যান থাকে , একটু জানাবেন প্লিজ
খেটে খেতে আমার কেমন গরিব গরিব মনেহয়!