দশা
দশা
(এক)
রাত্রি প্রায় বারোটা,
এসময় হঠাৎ আব্বা ডেকে পাঠালো আমাকে
এমনি বাবা ডাকলে ওপরের দিকটা
অর্ধেকটা শুকিয়ে যায় , তার ওপর এত রাতে
আসলে আব্বার সাথে আমাদের তেমন
মেলামেশা সম্পর্ক নেই, খুব না দরকার হলে
আমি আব্বার সাথে কথা বলি না
আর শাসন করার না থাকলে আব্বাও ডাকে না
আমি আব্বার ঘরের দিকে এগোচ্ছি আর ভাবছি
কি কারণ হতে পারে
বড় কিছু ভুল করেছি, না তেমন তো কিছু করিনি
হতে পারে , আব্বা এমনিতেই এরকম সময়ে বাড়ি ফেরে
তাই কোনো কথা হয়তো বলবে
ভাবতে ভাবতে দরজার সামনে পৌঁছে গেলাম
বারান্দার কোনো এক পাশে সুয়ে আছে সেজ কাকা, আমি দেখতে পাচ্ছি না তবে স্পষ্ট অনুভব করতে পারছি
অপরাধির মতন দাঁড়িয়ে আছি চৌকাঠের একপাশে
আব্বা মেঝেয় বসে ভাত খাচ্ছে
১
মা আব্বার পাশে বসে আছে।
আব্বার ভাত খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত
মা এরকম বসে থাকে
আব্বা ভাতের থালা থেকে নজর তুলছে না
আর আমার গলা থেকে শব্দ বেরুচ্ছে না
আমি ধারণাহীন অপরাধের শাস্তি পাওয়ার মতো শেষে
ভাঙ্গা গলায় কষ্ট করে বললাম : কি?
সঙ্গে সঙ্গে আব্বার মনোযোগ ভাতের থালা থেকে
আমার দিকে চলে এল।
আব্বা আমার দিকে তাকালেই বুঝতে পারি তার মেজজ।
মেজাজ এখন চরম, প্রচন্ড , চোখ লাল মুখ ভারী, কোথাও খুবই ভারী।
দোকানে বেচাকেনা কতো হচ্ছে? ছোটটার প্রাইভেটের মাইনে দিয়েছিস?
আর এসব কি বাজার করেছিস?
তুই জানিসনা আমি এসব খেতে পারিনা?
এতোক্ষন ভয় ভয় লাগছিলো ,
এবার হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম।
২
এতগুলো কাজের কোনোটাই আমি করিনি আর
একটাও আমার কাজ নয়
আব্বা বাড়ির কর্তা, এগুলো আব্বাই করে।
হঠাৎ আমার ঘাড়ে কখন এল জানি না
আমি যেনো সেই অপরাধের শাস্তি পাচ্ছি,
যে অপরাধ সম্পর্কে আমার কোনো জ্ঞানই নেই
আসলে আব্বা কোনো ভাবেই
আমাকে পছন্দ করতে পারে না
তাই আমাকে সবসময় শাসন করে
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল মনে পড়লো আব্বা তো নেই , অনেক দিন হলো। এখন পুরো সংসারের হাল আমার হাতে। সেজো কাকাও নেই। বাবা মারা যাওয়ার
তিন মাস বাদে হঠাৎ মারা যায়।
সংসারে এখন সবাই কচুরিপানার মতন এদিক ওদিক ভেসে বেড়াচ্ছে। আমিই বরং সব থেকে বেশি চেষ্টা করি সংসার আগলে রাখার আর যত দোষ আমারই আর মা ও তেমনি, আমার হয়ে দুটো কথা তো বলবে, মুখই খুললো না।
৩
কোথাও যেন আমার সুখ নেই
জলে নামলে ডুবে যাওয়া কোনো নাবিক
আমার পা ধরে নিচে টানে।
আকাশে ভাসলে উঁচু উঁচু ইমারতে ধাক্কা খেয়ে ছেড়ে ছেঁড়া মেঘের মতন হয়ে যাই।
আর দাঙ্গায় আমি চিরকাল উদাসীন পাথরের মতন বিশাল ভারে মুখ থুবড়ে থাকি।
