STORYMIRROR

MD ROBIUL ALAM

Inspirational Others

4.7  

MD ROBIUL ALAM

Inspirational Others

আমার সত্যিকারের নায়ক

আমার সত্যিকারের নায়ক

3 mins
473


ছোট বেলায় আমি খুব বোকা ছিলাম। যেমন একবার আমাকে আমাদের ক্লাসের একটি মেয়ে জিজ্ঞেস করেছিলো- তু্ই হিন্দু না মুসলিম? আমি বললাম - সেটা আবার কি? ও বললো - তুই বাবা বলিস না আব্বা? আমি বললাম- আব্বা। তারপর মেয়েটি বল্ল- তাহলে তুই মুসলিম । আমরা গরিবও ছিলাম। কাজীদের বাড়ি আমি আর আমার বোন পড়তে যেতাম, আমরা মাইনে কম দিতাম তো তাই টিচার ওদের বারিতে পড়াতে আস্ত। চপলও ছিলো অর্ধেক, লজ্জা লাগতো, ওদের দরজার মুখে ঝাড়ু থাকতো। সেটা দিয়ে রোজ ছে‌ঁড়া অংশটা চাপা দিতাম, মোজার উপরে রবার ব্যান্ড লাগানো, ব্যাগ এর ভিতর ক্যারিব্যাগ আর ব্যাগের চেনের জায়গায় জামার বোতাম ইত্যাদি ইত্যাদি.....


কাজীরা খুব বড়োলোক ছিলো, খুব। মোজাক করা, পা ফেলতে ভয় লাগতো, কাজীর বউ একটু অন্য রকম ছিল, আমাকে রোজ জিজ্ঞেস করতো একই প্রশ্ন : এই তোদের ফ্রীজে আছে, খাট, ড্রেসিং টেবিল শোকেস? আর আমি বলতাম না, না, না, তারপর ওনার শেষ প্রশ্ন : কিচ্ছু নেই? আমি বলতাম নাঃ ! 

শুনে শুনে অভ্যেস হয়ে গিয়েছিলো। ভাবতাম বাবার দোষ! আর কি বা বলতাম, ছাদ দিয়ে পানি টোপাত, এক তক্তপোষে আব্বা মা আমি বোন, জায়গা হতো না তাই সাথে বেঞ্চ লাগানো থাকতো, বাবার সাইকেলে সামনে বোন পিছনে আমি। ঠিক যেন আব্বার অসফলতা স্থির গতিতে আমাদেরকে নিয়ে যেত। পদে পদে , প্রায়ই মনে মনে আব্বাকে দোষ দিতাম, অপছন্দও করতাম। ভাবতাম বাবা আমার ছেলে হলে, আমি বাবা হয়ে দেখিয়ে দিতাম।

 এক ফোটা আভিজাত্যের স্বাদের জন্যে জিভ বের করে রাখতাম আমি, এতই ক্ষুধার্ত ছিলাম।

একবার সেকেন্ড হ্যান্ড ভাঙ্গা চোরা একটা বাইক কিনেছিলো আব্বা, সেটাই মুছে মুছে রোজ নতুন করার চেষ্টা করতাম।


যাইহোক, একদিন কাজীর বৌ বললেন: মাস্টার তোমার ছাত্রী অঙ্কে পাস করেছে আজ! পঁয়ত্রিশ পেয়েছে! আমি হা হয়ে তাকিয়ে, আমি ফার্স্ট হয়েছিলাম, হেড মাস্টার বলেছিলো -জোর সে হাততালি দাও একটুখানি ছেলে ফার্স্ট হয়েছে! আমি ভাবলাম বেঁটে তাই বলেছে। লম্বা মেয়েটিকে হারিয়ে দিয়েছিলাম, ওর মা সবার সামনে ওর মুখে চড় ও মেরেছিলো। দারোয়ানজি আমার মাথার টুপিটা তুলে বললো: ওঃ যেমন ছেলে !তেমনি তার রাফ এন্ড টাফ টুপি , পরোক্ষনে মাথায় বসিয়ে দিলো, কারণ টুপিটা ছিল ছেঁড়া, সেজ কাকা

র বাদ দেওয়া , গরমের ছুটিতে নেড়া হয়েছিলাম আর টুপিটা মা নিজের হাতে সেলাই করে পরিয়ে দিয়েছিল।


সহিদুল স্যারের ছেলে যখন পরীক্ষা দিত, স্যারও ছেলের সামনে গভীর মনোযোগে ছেলের সঙ্গে পরীক্ষা দিত। ভাবতাম দিক, আমার আব্বা তো ফাইভ পাস, বড়োলোকও না। তবে আব্বার হাতের লেখা খুব পরিস্কার এমন কি আমার কবিতায় লোক হাতের লেখার প্রশংসা করে, আমার থেকেও সুন্দর।


একবার আমি সেকেন্ড হয়েছিলাম, মহানন্দে বাড়িতে ফিরলাম, আব্বাকে রেজাল্ট দেখলাম : আব্বা দেখো সেকেন্ড হয়েছি। আব্বা বললো : ফার্স্ট হওনি কোনো?


সেবার আমি ফার্স্ট হতে পারিনি শুধু মাত্র আরবিতে তিন চার নম্বর কম পেয়েছিলাম তাই, আরবি মাস্টার গোপনে আব্বাকে ইংগিত ও দিয়েছিলো নাকি।


আব্বা কোনো ভাবেই প্রশ্রয় দেয় নি, দিতোও না গরিব গান্ধী পিতা আমার ! 

 

ভাবতাম বাবার আধিপত্ত থাকলে, ছেলে কতো স্মার্ট এবং এগ্রেসিভ হয়! যেমন আমার সবথেকে ক্লোস ফ্রেন্ড অনিক, পড়াশোনায় খারাপ হলেও সবার প্রিয়, হাতের লেখা খারাপ হলেও ভালোই নম্বর পায়, পেয়েছেও। ফার্স্ট হওয়ার পর বললো :

 জানিস আমি ভাবতেই পারিনি ফার্স্ট হবো কখনো

আমি বললাম : আমি জানতাম, অনেকেই জানতো ।


আসলে আমি সবার জানা, সবার চেনা খুব কমোন নাম : গরিব বাংলা মিডিয়াম।হরলিক্স এর কেমন টেস্ট আজও চেঁখে দেখা হয় নি। এখন আর ইচ্ছে ও করে না


বেকার পড়াশোনায় আব্বার অনেক পয়সা ধ্বংসও করেছি, কত কষ্টের পয়সা, সম্মানও রাখিনি অমতে বিয়ে করেছি, ক্ষমা চাইতেও পারিনা, আব্বা লরি চালাতো, আমাদেরকে কেজি স্কুলে পড়াশোনা শেখানোর জন্যে আর সংসার চালানোর জন্যে খুব কষ্ট করত। বাড়ি থাকতো সপ্তায় এক দু দিন, ছোট বেলা থেকেই দূরত্ব বেড়েছে......


এখন আমি মেডিকেল রিপ্রেসেন্টেটিভের কাজ করি, আব্বার পয়সাটা পুরোটা বেকার যায় নি। ভীষন নেই ঠিকই, কষ্ট ও খুব, তবুও সূর্য ডোবার পরেও উঁচু মাথায় ঘরে ফিরি ছেলের সামনে, বাবার সামনে। ফ্রীজ আছে , ঘরও আছে ছোট হলেও আছে, খাট আলমারি কমদামি হলেও সব আছে, অল্প হলেও সব আছে আর একটা জিনিস ভীষণ ভাবে আছে, আমার রক্তে রক্তে আছে, আমার সত্যিকারের নায়ক, আমার আব্বা.........


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational