জলেও জ্বলি আগুনেও পাইনা নিস্তার
জলেও জ্বলি আগুনেও পাইনা নিস্তার
আল্লাহ তুমি দুনিয়ার সব মানুষকে
হেফাজত কারো।
সবাই এখন সচেতন হচ্ছে
অচেতনার দিকে।
সবাই এখন সাপের ভয়ে
পাহাড় থেকে লাফ দিচ্ছে
একটা কোভিড যেমন মানুষকে
মুখোশ পরিয়েছে,
তেমনি মানুষের মুখোশ খুলেও দিয়েছে
এই কোভিড এর মধ্যেই আমার আব্বার জ্বর। ভয়ের তো অবশ্যই।
তবে পাঁচ দিনেও কোনো সিম্পটমস পাইনি
এখন জ্বর ও একটু কমেছে
কেবল খেতে পারছে না কিছু
ডায়াবেটিক পেশেন্ট, খাবার ও রেস্ট্রিক্টেড।হস্পিটালাইসেশান করার
কোনোরকম চিন্তাই করিনি,
কন্টামিনেশন এর ভয়ে।
এ ভয় আরো ভয়াবহ
তবে দিনে দিনে যেন আব্বা দুর্বল হয়ে পড়ছে, শরীর থেকে।
মন থেকে আব্বা আমার থেকেও হাজার গুন স্ট্রং,
এটা আগা গোড়াই
সাতান্ন- আটান্ন বছর বয়সে
এখনো নিজে ক্ষেত বানিয়ে
রোদ্দুরে চাষ করে
পুকুর কেটে মাছ ফেলেছে
খুব ছোট বেলা থেকেই আব্বা
চাষাবাদ করতো তো তাই পুরোনো নেশা,
এখন শখ
তবে আমি ভয়েই ধারে পশে যাই না
ছোট ভাইটা সাথে থাকে
গাড়ি ঘোড়া ব্যাবসাও
এক হাতে দেখা শোনা করে
শরীর খারাপের আগের দিনও সারা দিন বৃষ্টিতে ভিজে রাত এগারোটায় বাড়ি ফেরে
চেষ্টা তো করছি,
ডাক্তার পাওয়া খুব মুশকিল,
পরিচিত ডাক্তার দিয়েও কনসাল্টেশান চলছে, লোকাল ডাক্তার
রেগুলার চেক আপ এ আসে।
সবার একই মতামত,
কোনো ভাবেই হাসপাতালে দেওয়া যাবে না, বরং বাড়িতে একটু খেয়াল রেখে
ডায়েট আর মেডিকেশন এ
নজর দেওয়া দরকার
খেয়ালে তো রেখেছি সবাই,
একবার স্ট্রোক হয়েছিল,
কোনোভাবেই এই দুর্বল অবস্থায়
চোখের আড়াল করা যাবে না
তবে,
রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টও সব ভালো, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, টাইফয়েড
কোনো সমস্যাই নেই,
তাইভাবলাম, না খাওয়ায় শরীর দিনদিন ভেঙে যাচ্ছে,
কিন্তু আমি কোনো ভাবেই
সুনিশ্চিত হতে পারছিলাম না,
মাঝে মাঝে আব্বাকে একটু সুস্থ দেখায় ঠিকই
তবে মাঝে মধ্যে ভিশন অসুস্থ দেখায়
কি করি, কি করা উচিত, সুস্থ সাবলম্বী মানুষ,
যে অন্যের বোঝা দু দিন আগে পর্যন্ত নিয়েছে,
আজ নিজেই বাথরুম থেকে
ফিরতে পারছে না, তিন পা এর
বেশি আর হাঁটার ক্ষমতা নেই
ঘরে তো কোনোভাবেই টয়লেট করে না
ধরে ধরে নিয়ে যাই ,নিয়ে আসি,
আজ বিকালে
নিয়ে আসার সময় এবার আব্বা প্রায়
অচেতন হয়ে যায়
একদিকে আমি হাতের নিচে দিয়ে
কাঁধে ঠেকিয়ে ভর দিয়ে আছি,
ওদিকে মা, ভাই আর আমার স্ত্রী
হঠাৎ আবার পা টান টান হয়ে গেল,
চোখ উল্টে গেল, শরীর নেতিয়ে পড়লো, কথাও জড়িয়ে যাচ্ছে অথচ
আত্মবিশ্বাস আকাশ ছোঁয়া :
এতো ঘাবড়াচ্ছো কেন ?
আমার কিছু হয় নি, উঃ উঃ উঃ
আমরা, নীরবে কাঁদছি, ভয় পেলেও হবেনা, কাউকে ডাকারও অপশন নেই,
আগে ঘরে নিয়ে বসতে হবে
তারপর ভাববো অন্য কিছু
খুব কষ্টে, চোখে জল, বুকে ব্যথা, দম বন্ধ, খুব কষ্টে ঘরে এনে বসালাম
এখন এই কোভিড এর টাইমে
ভালো ডাক্তার ও কেউ আসছে না ,
সবদিকেই খুব সমস্যা
সঙ্গে সঙ্গে আমার ম্যানেজারকে
ফোন করলাম।
চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের
একজন ডাক্তারবাবুর সঙ্গে
আমাদের পরিচয় ছিলো,
তাই অনলাইন কনসাল্টেশান নিলাম
এবং সিম্পটমস বলার পর
বুঝলাম যে ইউ টি আই
অর্থাৎ পেচ্ছাপ এর ইনফেকশন
যেটা বাড়াবাড়ি হয়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে
ডাক্তারবাবু মেডিকেশনও চেঞ্জ করলেন ডায়াবেটিস, প্রেসার,
কোলেস্টেরল এবং
বাকি সব ওষুধ প্রয়োজন মতো
ঠিক করে দিলেন
এর মধ্যে ব্লক হাসপাতালে
কোভিড এর টেস্টও করা হয়ে ছিল,
রিপোর্ট এখনও আসেনি
সবার মতামত নিলাম, সবাই বললো
জোর করে যত্ন নাও, চেষ্টা করো কোনো ভাবেই যেন
হাসপাতালে না নিয়ে যেতে হয়।
ওয়ান পার্সেন্ট কোভিড এর চান্সও
আমার আব্বার জন্যে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ভয়াবহ
কিন্তু হচ্ছে না
ইতিমধ্যে লোকাল ডাক্তার এসে
চেকাপ করার পর এনার্জি পাউডার খাওয়ায়
আর সুগার ৫০০র উপর হয়ে যায়
আরো ভয় পেতে থাকি,
আব্বার কথা শুনলে সাহস বাড়ে ঠিকই,
কিন্তু কথা আর শরীর এক কথা বলে না -আমার কোনো অসুবিধা নেই,
শুধুমাত্র খেতে পারছি না, খেতে ভালো লাগছে না।
আগাগোড়া আব্বা এরকমই, কোনো ঝড় ঝাপ্টা ক্ষয় ক্ষতি কিছুই বুঝতে দেয় না ।
সবার সবকিছু বহন করে।
অথচ নিজের বিন্দুমাত্র ভার কখনওই
কারো ওপর দেয় না।
আমার ছেলের চকলেট থেকে শুরু করে ছেলের ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, ওষুধ, খাবার
বাড়ির সমস্ত খরচ, বোনের বাড়ি
এমন কি আমার বৌ-এর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসও সব আব্বা বহন করে
সুখ শান্তি আহ্ললাদ সব
সুইফট কেনার কথা,
আমিই পুরোনো কিনতে বললাম
কারণ চালাতে পারিনা তাই
আব্বা কিনলো,
রেজিস্ট্রেশন করলো আমার নামে।
চালাই না তাই বকাবকি ও করেছে বহুবার।আমি সেরকম চালাতাম না
কারণ লজ্জা লাগতো
বাইকও প্রথমটা কিনে দিয়েছিলো,
বাড়িও নিজের সৌখিনতায় করেছে ।
বলতো, ছেলে যা আয় করে তাতে
বাথরুম তৈরী করতে পারবে না,
রাস্তায় যাবে তাই.........
আমি পনেরো হাজার টাকার স্যালারী পাই।
তাতে ম্যাকবুক, আইফোন, ফসিল ওয়াচ, পোলারয়েড সানগ্লাস, ইউ সি বি স্যু,
সনি এক্সট্রা বাস এয়ারফোন,
ফ্রেঞ্চ কানেকশন ওয়ালেট ....
কারো সাধ্য আছে ?
একমাত্র আমার আছে
কারণ আমার বাদ দেওয়া মোবাইল
আমার আব্বা ব্যবহার করেন।
আমার বাদ দেওয়া ঘড়ি আব্বা পরেন
শহরে না গেলে কখনো প্যান্ট পরেন না। লুঙ্গি ।
নিজে মনেহয় যে সব জিনিসের
নাম শোনে নি, নাতির জন্যে তা কিনে আনেন
নাতিকে ইংলিশ মিডিয়াম ভালো স্কুলে পড়াবেন, ইংলিশ বলবে, কত স্বপ্ন।
বড় ছেলে কে নিয়ে হলো না
ছোট ছেলেকেও না
এবার নাতি কে নিয়ে স্বপ্ন।
আমার ছেলেটাও সেরকম
আড়াই বছরের ছেলে কাজের মেয়েকে বলে : আমি টিচার, বলতো মা নিউটনের সূত্রটা কি?
একদিন বৃষ্টি আসছিলো,
বললাম, আব্বু উঠে এসো,
বৃষ্টি পড়বে গায়ে।
ছেলে বললো : আমি তো তাই দেখছি যে
আকাশের ভাবটা কি
তারপর আমি একদিন ওকে জিগ্গেস করলাম :
আব্বু বলতো, আমি তোমার আব্বু না তুমি আমার আব্বু?
উত্তর দিলো : আমি তোমার আব্বু আর
তুমি আমার আব্বু
তবে রাগের সময় যদি ছেলেকে বলি, বলে : আমি তোর আব্বু আর তুই আমার আব্বু।
চল গাড়ি কিনতে নিয়ে চল।
সারা পাড়ার সবাই ওকে কাছে ডাকে।
এই পাকা পাকা কথা শোনার জন্যে।
যখন বলে : মাহির, তোমার কথাগুলো আমায় ধার দেবে?
ও বলে : আগে পুরোনো হোক
তারপর দেব।
এইটুকু ছেলে, মোবাইল এর লক খুলে
একা একা এরোপ্লেন গেম খেলে, চার চাকা, দশ চাকা, গিয়ার্,
ব্রেক, ওয়াইপার, এমনকি রাস্তায় বাম্পার এলেও ও খেয়াল রাখে : আস্তে চালাও, সাইড কাটিয়ে চলো…..
কিছুটা ইউটুবে আর বাকিটা আব্বার থেকে শিখেছে।
মোবাইল এ টাওয়ার না থাকলে পর্যন্ত জানালার দিয়ে মোবাইল বের করে টাওয়ার খোঁজে,
সাইকেল ও চালায় নিখুত ভাবে।
দু’তিন বার এমন ও হয়েছে , শ্বশুরবাড়ি ছিলাম, ভোর চারটেয় উঠে কান্না শুরু করে। শেষে
পাঁচটায় আব্বা এসে ওকে নিয়ে যায়। ছেলেও দিব্বি বাবা মা কে ছেড়ে আনন্দের সাথে দাদুর সাথে বাড়ি চলে যায়।
এমনকি আসার কথা একবারও বলেনি।
আমার আব্বা এই অসুস্থতায়ও ওকে এখনো চোখের আড়াল করে না।
আমার আব্বা আসলে
শুধু আমার আব্বা নয়,
শুধু আমার পরিবারের নয়,
গোটা বংশের নয়,
তার বাইরেও অন্তত বিশ-পঞ্চাশ মানুষের মাথার ছাদ , নিজে রোদে পুড়ে, জলে ভিজে সবাইকে আগলে রাখে।
যে পয়সার গরমে মুখের উপর কথাও বলেছিলো, সেও আজ
আব্বার ওপর নির্ভরশীল ।
মাঝে মাঝে রাগও হয়, কেন এত?
যার টা সে দেখবে, যার টা সে ভাববে, আয়ের হয়তো প্রায় অর্ধেকটাই
অন্যদের ভরণ পোষণ করেন।
মাঝে মাঝে অসহায় মানুষ বাড়িতে এলে,
হাসি মুখে ফিরে যাওয়ার পর
মনে মনে ভালোও লাগে
একবার চোরকে ধরার পরও
বুঝিয়ে, খাইয়ে, ছেড়ে দিয়েছে।
বলে- ও অভাবে চুরি করেছে। নাহলে আমার গাড়ির টায়ার চুরি করে আবার সরঞ্জাম গুছিয়ে গাড়িতে রাখে ?
দুটো টায়ারের দাম ছিল কমপক্ষে পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা।
মানুষ ঘেঁটেঘেঁটে এমন অভিজ্ঞতা,
চোখ দেখলে চোর ধরে ফালে।
একবার আমার মোবাইল চুরি হয়েছিল।
ঘর থেকে ।
ঘরে এসেছিলো ড্রাইভার আর হেল্পার ।
নিশ্চিত হওয়া গেল চুরি দুজনের কেউ করেছে।
আমি এলাম, আব্বা ও এলো।
ড্রাইভারের হাত পা কাপছে আর বলছে : বাবু পাওয়া যাচ্ছে না তো, কি হবে বলো দেখি ?
কিন্তু আব্বা ড্রাইভার এর দিকে তাকাচ্ছেই না, হেল্পার কে শুধু চড় থাপ্পড় মেরে যাচ্ছে : বল মোবাইল কোথায় রেখেছিস বল
আর হেল্পার টা আমার আব্বার পা জড়িয়ে কাঁদছে আর বলছে : বাবু আমার মরা বাপ মার কসম,
আমি নেই নি
আমি আব্বাকে বলছি : আব্বা এ চুরি করেনি, ড্রাইভার কে ধরো ।
আব্বা শুনছেই না !
পনেরো মিনিট পর মার খেতে খেতে
শেষে হেল্পার স্বীকার করলো :
হ্যাঁ বাবু , আমি চুরি করেছিলাম।
শুধু এই না, আমাদের সমস্যাও সহজ সমাধান করে দেয় অনায়াসে।
একমাত্র আমার আব্বাই।
যেমন, একবার আমার পিসিমশাই
মদ খেয়ে লোকজনের সামনে মাতলামি করেছিলো। লোকে ঠাট্টা করছে দেখে, পিসি ছেলেকে খবর দেয়।
পিসির ছেলে বাবাকে নিয়ে যেতে যেতে দুজনের মধ্যে মারপিঠ বাধে।
পিসির ছেলে কাঁদতে কাঁদতে আমার বাবার কাছে আসে।
আব্বা আমাকে বললো : ওকে ডাক্তার দেখিয়ে
ওদের বাড়ি চলো, আমি আসছি ।
আমি গেলাম।
পিসিমশাই তো রেগে আগুন হয়ে আছে :
ছেলে বউ সব বাড়ি থেকে বের করে দেব। কাউকে রাখবো না।
আমি ভয় পাচ্ছিলাম যে বাবা যা রাগি, এসে আবার সংসার না শেষ করে দেয়।
কিছুক্ষন এর মধ্যে আব্বা এলো।
পুরো ঘটনাটা পিসির মুখ থেকে শুনলো।
পিসিকে বললো : তুমি এত জ্ঞানী যে বাচ্চা ছেলেকে এসব কাজে পাঠাচ্ছো, খুব ভালো, নাকি?
সে তো জ্ঞান হারিয়েছে বলেই এরকম করেছিল, তাহলে বড়ো কাউকে না বলে একে পাঠালি কোনো?
পিসিমশাই মনে মনে হাসছে।
পিসির ছেলে কে বললো : তোর এত সাহস কি করে হয় বাপের সাথে হাতাহাতি করার? সে তো বাপ্ নাকি?
পিসিমশাই এবার সুযোগও পেয়ে বললো : ছেলের জাত? লোকের সামনে আমার মান সম্মান ডোবালো.........
আব্বা এবার পিসিমশাই কে বললো :
তোমাকে তো আর কিছু বলারই নেই, এমন বীরপুরুষের কাজ করেছো, লোকের সামনে ছেলের হাতে মার খেতে হলো যাক এটাই তোমার উচিত শিক্ষা।
পিসি আর পিসির ছেলে এবার এতক্ষন বাদে খুশি হলো। তারপর সব রাগ ঠান্ডা হয় ।
এমনি আমার আব্বা।
এতোটাই পারে, আমাকে দায়িত্ব দিলে হয়তো গোটা সংসার তছনছ করে ফেলতাম।
হ্যাঁ, তবে অন্যায় কখনো সহ্য করে নি।
সেবার আমাদের বাড়ির সামনে ইলেকট্রিক অফিস থেকে পোস্ট বসাতে এসেছিলো, বললো পাড়ায় ভোল্টেজ নেই তাই ডাবল লাইন যাবে
যেই জানাগেল যে লোক গুলো টাকা খেয়ে মিথ্যে বলে পাড়ার ক্ষতি করে মদের দোকানে ইলেকট্রিসিটি পৌঁছতে এসেছিলো, অতো লোকের ভিড়ে আব্বা সঙ্গে সঙ্গে ওদের কলার ধরলো :
চল, আগে যে পোস্ট গুলো হেলে পড়ে যাচ্ছে, এক্ষুনি ঠিক কর, গ্রামের ক্ষতি করে মদের দোকানের উপকার? বলেই আব্বা ওদেরকে টেনে আনতে লাগল। আব্বা একাই।
তারপর ওরা হাতে পায়ে ধরে
ক্ষমা স্বীকার করার পর ছেড়ে দেয়
বহুবার আব্বাকে এরকম প্রতিবাদ করতে দেখেছি,পার্টির নেতার বিরুদ্ধেও ভয় পায় নি। একাই মুখ খুলেছে খুব সাহসী আব্বা।
আবার খুব ভীরুও
ঘরের সামনে থেকে চুরি হয়েছে যখন, ঘর থেকে দেখেছে, পরিবারের সুরক্ষার জন্য
চুপ করেই ছিলো। কিচ্ছু বলেনি।
নীরবে ক্ষতি মেনে নিয়েছে।
বিকেলের এই দুর্ঘটনার খবর সবাই জেনে যায়।
সবাই রাত্রী পর্যন্ত ভিড় করতে থাকে।বোন, দুলাভাই, কাকু-কাকিমা, মামা, পিসি আরো অনেকে।
আমি সবাইকে দূরত্বে রাখার চেষ্টা করতে থাকি
রাতে একটু ভালো ও ছিলো। কথাবাত্রা
খাওয়া দাওয়া সব স্বাভাবিক
শুধু একটাই সমস্যা আব্বা আগা গোড়াই বলছে : খেতে পারছি না, খেতে ভালো লাগছে না
এই শরীরেও আব্বা হেঁটে হেঁটে দেয়াল ধরে বাইরে গিয়েছিল গত পরশুদিন।
তাই মনের বিস্বাস যে জ্বরে শরীর দুর্বল হয়েছে, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে
কোভিড এর সব সিম্পটমস্ও আমি চেক করলাম : গলায় বেথা, শ্বাস কষ্ট ,
নাকের ঘ্রান, জিভের স্বাদ,কাশি
কোনোটাই খারাপ পেলাম না।
এমনকি রান্নার ঘরে পিঁয়াজের গন্ধে
আব্বা ঘরে বসে বিরক্ত হয়ে যায়
ম্যালেরিয়া ডেঙ্গু টাইফয়েডও কিছু নেই
তাই ভাবলাম, যেহেতু ডায়াবেটিস , একটু সময় লাগবে
সকাল হলো। আব্বার এক জেদ বাইরে বাথরুমে যাবে। গেলও আমরা সবাই পশে পাশে। আমি বললাম : আব্বা, তাড়াহুড়ো কোরো না, আস্তে আস্তে পা বাড়াও।
আমার মনে হলো আব্বা ফেরার সময় অসুবিধা হতে পারে
তাই খুব কাছাকাছি ছিলাম
শেষবেস, যা ভয়, তাই হলো
ফেরার সময় আচমকাই আব্বা আস্তে আস্তে ভেঙে পড়তে লাগলো। প্রানপন কোনোরকমে বারান্দায় বসিয়ে দিলাম।
আব্বা এবার কাঁপছে, মাথা দুলছে, অস্থির, চোখ উল্টে যাচ্ছে সারা শরীর কাঁপছে .....
আমি আর্তনাদে যে কি করি পাগলের মতো চেল্লাতে লাগলাম :
মাথায় পানি দাও, শিগগির দাও, ধরে রাখো, শুইয়ে দিও না যেনো, একটু চিনি দাও,
কে আছিস তাড়াতাড়ি আয়, গাড়ি বের কর, তাড়া তাড়ি আয়....
আমি কিছুই করছি না শুধু সারা বাড়ি পাগলের মতো এ মাথা ও মাথা করছি।
মুহূর্তের মধ্যে পঞ্চাশ একশ লোক জমা হলো
ধীরে ধীরে আব্বাও একটু ঠিক হলো।
আমার হাত পা কাঁপছে। ফোন ধরতে পারছি না । খুব কষ্টে ডাক্তারকে ফোন করলাম। ডাক্তার চিল্লাতে লাগলো:
এক্ষুনি যেকোনো হাসপাতালে নিয়ে যাও, এক্ষুনি, এক্ষুনি, গাড়িতে উঠে ফোন করো।
সঞ্জয়দা কে ফোন করলাম : সঞ্জয়দা সময় নেই শিগগিরই হাসপাতালে দেয়ার ব্যবস্থা করো। তাড়াতাড়ি।
-তুই নিয়ে বেরো, স্পন্দনে আয়,
আমি আসছি।
আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট করলাম না।
-আব্বা চলো
-কোথায়?
-হাসপাতালে যাবো
আব্বা আব্বাকে ধরে বসালাম। সবাই ছিল।
এখনো আব্বা ততটাই শক্ত। একা জামা পরল, চুল আঁচড়ালো,
ওযু করলো, কলেমা পড়তে পড়তে
এগোতে লাগলো
সবাই মিলে তড়ি ঘড়ি করে গাড়িতে বসলাম ।
আর বিন্দুমাত্র দেরি করলাম না
আগে আগে বাইকে বেরিয়ে গেলাম
হাসপাতালে পৌছলাম,
হাসপাতাল তো কোভিড রিপোর্ট ছাড়া
নিতে চাইছিল না। সেসবেস সঞ্জয়দা ফোন করলো, তারপর আই সি ইউ আইসলেসান ওয়ার্ড এ আব্বাকে ভর্তি করলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে কোভিড রিপোর্ট করতে দিলাম ।
সাথে সাথে ট্রিটমেন্ট শুরু হলো
অক্সিজেন চলছে।আমি দেখা করলাম
তখন দুপুর বারোটার কাছাকাছি
আব্বা বললো : আমার অন্য কোনো সমস্যা নেই, শুধু খেতে পারছি না ইটা বল ঠিক আছে তুমি কিচ্ছু ভেবো না, আমি সব বলে যাচ্ছি
-ম্যাডাম আমার আব্বা খুব জেদি
হয়তো বেড থেকে নামার চেষ্টা করবে,
প্লিজ খেয়াল রাখবেন
-আপনি কিছু ভাববেন না, উনি নামতে
পারবেন না
তারপর আমি রিসেপশন এ এসে কথা বললাম।ওরা বললো : আপনি বাইরে অপেক্ষা করুন, ডাক্তার আসবে পেশেন্ট কে দেখবে
তারপর আপনার সাথে কথা বলবে ।
তিনটার দিকে ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। মেডিকেল রিপ্রেসেন্টেটিভ হিসাবে নিজের পরিচয়ও দিলাম
খুব সুন্দর ভাবে কথা হলো
আগের স্ট্রোক ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত সব ট্রিটমেন্ট এর কথা বললাম।
ডাক্তার বললো : দেখো একটা চেস্ট ইনফেকশন আছে,
সেটা নিউমোনিয়াও হতে পারে আবার
কোভিডও হতে পারে।
মাস্ক ভেন্টিলেশন দিয়াছি,
ব্লাডে অক্সিজেন লেভেল খুব খুব কম
আমি অলরেডি পুরো মেডিসিন স্টার্ট করে দিয়েছি, তুমি তাড়াতাড়ি কোভিড এর রিপোর্ট টা আনো, তাহলে আমি কন্ফার্ম হয়ে থেরাপি লাইনে ট্রিটমেন্ট শুরু করি
তুমি কোভিড রিপোর্ট টা দেখো।
আমি বেরিয়েই সঞ্জয়দা কে ফোন করলামঃ সঞ্জয়দা, তুমি রিপোর্ট তা দেখে তাড়াতাড়ি দেখো
-তুই কিছু চিন্তা করিস না।কাল সকালের মধ্যে যে কোনো ভাবে আমি বের করে দেবো।
সঞ্জয় দা ডক্টর লালপ্যাথ ল্যাব এর এমপ্লয়ী আর টেস্ট হচ্ছে ওখানেই।
তাই একটু সাহস পেলাম
এদিকে সরকারি রিপোর্ট এর জন্যে ও খুব চেষ্টা করছি । মাসীর মেয়ে রুরাল হেলথ এ কাজ করে।
এদিকে ও যোগাযোগ রাখছি
সব দিকেই যোগাযোগ আছে,
তাই বিশ্বাস যে,
কোনো না কোনো উপায় বের হবেই
রাত কাটলো। সকাল থেকে আবার হাসপাতাল এর সামনে দাঁড়িয়ে পড়লাম। এখন শুধু রিপোর্ট এর অপেক্ষায়।
সঞ্জয় দা বললো : দেখেছি দেখেছি যত তাড়া তাড়ি করা যায়। এ রিপোর্ট একটু সময় লাগে রে ভাই
দুপুর তিনটার সময় ডাক্তার আমাদেরকে ডাকলো :
কালকের থেকে একটু ভালো। তবে
ওনার কথা অনুযায়ী। আমি কিন্তু ভালো কিছু দেখেছি না। তোমরা রিপোর্ট টা দেখো।
আমি এদেরকে বলে দিচ্ছি। তুমি একবার গিয়ে দেখা করে এসো।
সিকিউরিটির সাথে আমি এক দৌড়ে উপরে গেলাম। আব্বা এবার কাঁচের ভেতর আইসোলেসান এ , অক্সিজেন-মাস্ক পরানো।
সিস্টার আমাকে নিয়ে কাঁচের দরজা খুলে দাঁড়ালো।
সিস্টার আমাকে দেখিয়ে আব্বাকে বললোঃ এটা কে বলুন তো ?
আব্বা তখন খুব গম্ভীর, খুব মেজাজে বললো : কে আবার , আপনাদের কোনো স্টাফ হবে
আমি একটু হতাশ হলাম
বুঝলাম আমি মাস্ক পরে তাই আব্বা চিনতে পারছে না
আমি ধীর গলায় বললাম : আব্বা , আমি
ও , আচ্ছা তা, ওকে দোষ দিচ্ছেন কেন ?
ও তো আপনাদের জিম্মায় দিয়ে গ্যাছে , আপনারা আপনাদের কাজ টা করুন। একবার এটা লাগাচ্ছেন, একবার ওটা লাগাচ্ছেন
পাশ থেকে আর এম ও বললোঃ এই কি করছেন ? দরজা খুলছেন কেন ? লাগান , লাগান , বাইরে থেকে বলুন
দরজা বন্ধ হয়ে গেল
আব্বা এবার চুপচাপ হয়ে গেল
আর কিছু বললো না
আমি এবার গুলিয়ে গেলাম। ভাবলাম , রিপোর্টটা খুব জরুরি , এটাই আগে দেখি
আমরা, আমি মামা দুলাভাই সবাই রিপোর্ট এর চেষ্টা করতে লাগলাম। সঞ্জয়দা কে ফোনের পর ফোন। সঞ্জয়দা বললো : মনেহয় রাত দশটার দিকে হবে, তোরা অপেক্ষা কর। আমরা আর বাড়ি গেলাম না। অপেক্ষা করছি। রাত্রি এগারোটায় সঞ্জয় দা ফোন করলো : তোর বাবার নাম কি ছিলো যেন?
এবার আমার বিরক্তি লাগছে।
এতদিনে যে আমার বাবার নাম মনে রাখেনি, সে আমার বাবার রিপোর্টের কথা কিভাবে মনে রাখবে !
আমি আবার নিরুপায়ের মতো বাবার নাম বললাম ।
না রে, ওই নামে কোন ডকুমেন্ট আমার কাছে আসেনি।
এবার আমার ইচ্ছে করছে ফোনের ভেতর থেকে ওর মুখে লাথি মারি।
কিছুক্ষণ পরে বলল : ও, পেয়েছি রে
হয় নি এখনো। মনেহয় রাত দেড়টা দুটো বাজবে তোরা চলে যা
-তাহলে? কি হবে ?
-আমি জানিয়ে দেবো
-অতো রাত্তিরে তুমি জেগে থাকবে?
-আরে ভাই, আমাদের আর ঘুম?
তুই ফোন করিস।
কোনো অসুবিধা নেই।
আমরা বাড়িতে এলাম।
না এলে মা বোন বৌ সবাই না খেয়ে বসে থাকে, আগে আমাদের মুখের দিকে তাকায়,
আমাদের মুখের আকৃতিতে ওদের কান্না হাসি লেগেথাকে।
মুখ ভার করে থাকলে হাউহাউ করে কাঁদে।
আর আমরা স্বাভাবিক থাকলে
ওরা একটু ভরসা পায়।
ফিরতে ফিরতে মাঝপথে হাসপাতাল থেকে ফোন করলো : আপনার পেশেন্ট এর অবস্থা খুব একটা ভালো নয়, দরকার পড়লে ভেন্টিলেশন এ দিতে হতে পারে । তাছাড়া ডাক্তারবাবুতো আপনার সঙ্গে সবি বলেছেন মানে এরকম ও হচ্ছে যে রিপোর্ট আসা পর্যন্ত পেশেন্ট সময় পাচ্ছেন না।
তাই আপনাকে জানিয়ে রাখলাম ।
আপনি এখনি একটা চিঠি লিখে হোয়াট'স এ্যাপ এ পাঠিয়ে দিন ।
আমি খুব খুব কষ্টে লিখলাম । পাঠালাম।
তারপর নেশাগ্রস্থের মতো টলতে টলতে বাড়ি ফিরলাম।
কি করি এই প্রথমবার নিজেকে অসহায় অপরাধী অকর্মণ্য মনে হচ্ছে। কেঁদেও শান্তি পাচ্ছি না।
রাত্তিরে এসে একটা থেকে তিনটা পর্যন্ত সঞ্জয়দা কে ফোন করলাম।
তুললো না ।
সকাল ছয়টায় করলাম ,তুললো না।
সাতটায় ফোন ধরলো : হ্যাঁ রে বল।
আমার এবার যেন
শরীর টায় জ্বালা শুরু হলো।
এরকম নির্লজ্য আমার কোন শত্রুও নেই।
- বল মানে? দু দিন ধরে নাটক করছো, সত্যি টা বলো না, তোমার দ্বারায় না হলে বলে দাও আমার আব্বাকে এবার ভেন্টিলেশন এ দিতে হবে।
-তাহলে তাই ধরে নে
-ইয়ার্কি মারছি তুমি?
-আরে না রে, করোনা হলে কি তোর বাবা মরে যাবে? কিচ্ছু হবেনা , এই কি করছো, সকাল সকাল বোলতা টা মেরো না..
আমি এবার মনে মনে বলছি (শুওরের বাচ্চা আমার বাবা মরে যাচ্ছে তোর কোনো চিন্তা নেই, বোলতার চিন্তা?)
এই সঞ্জয়দা যখন মেয়েলি কেস এ লকাপ হয়, ওর বাবা হাত তুলে দিয়েছিলো, আর আমি বোকার মতো তিরিশ কিলোমিটার দূরথেকে ছুটে গিয়েছিলাম
যাক! আমি নিরুপায়। এটাই আমার কপাল, এর বেশি আশা করা অপরাধ।
দুপুরে ডাক্তার আমায় ডাকলো
-রিপোর্ট টা কই ? রিপোর্ট টা কই ? লোকের সাত ঘন্টায় রিপোর্ট চলে আসে, তোমাদের দুদিন কেন লাগছে? বন্ধুকে বলো, বলো, যদি কোভিড হয় তাহলে তোমার বাবাকে
স্পেশাল কোভিড হাসপাতাল এ ট্রান্সফার করবো, যদি না হয় তবে পুরো দমে ট্রিটমেন্ট করবো ।
-স্যার ও চেষ্টায় আছে
-নাঃ, আমার দ্বারায় আর হবে না, আমি হাত তুলে দিলাম।
আমার এবার হাত পা থর থর করে কাঁপতে লাগলো। আচমকা এতোটা ভেতরে ভেতরে হয়ে গেছে জানিনা। শেষে পিসির ছেলেকে বললাম :
রিপোর্ট টা দেখ, না হলে আমার আব্বা আর বাঁচবে না। ও চমকে উঠলো। পিসির ছেলে একটু উশ্রীখল জীবন যাপন করে। মদ খায় রাট বেরাত এদিক ওদিক আড্ডা মারে
এক্সিডেন্ট এ পা ভাঙা, প্লেট বসানো। তাতেই আবার এক্সিডেন্ট করে প্লেট বেঁকে যায়। নিজের বাবাকেও ছাড়েনি।
তবে আজ অব্দি আমার আব্বার সামনে মাথা উঁচু করার সাহস পায় নি। যতটা ভয় করে, ততটা নির্ভর করে, ততটা ভালোও বাসে এবং ততটা সম্মানও করে।
ও ফোন রেখেই সরকারি হাসপাতালে দৌড় দেয়। দশ মিনিটের মধ্যে ফোন করলো : ভাইয়া, হাসপাতালে প্যাথলজি রিপোর্ট ডিপার্টমেন্ট আজ বন্ধ
ঝামেলা করে, অনেক যোগাযোগ করে কম্পিউটার রুম থেকে রিপোর্ট প্রিন্ট করে মেডিকেল অফিসার এর স্ট্যাম্প সাইন করলাম।
তুই চিন্তা করিস না, মামা মামীর কারো করোনা হয় নি। দুজনেই নেগেটিভ। আমি এক্ষুনি রিপোর্ট নিয়ে আসছি তোর ওখানে।
এতদিন বাদে আমি যেন এবার নিঃস্বাসটা বুক ভরে নিতে পারছি
সেটাই হওয়ার কথা, ফ্যামিলি তে কারো কোনো সিম্পটমস নেই। এমনকি আমার তিন বছরের ছেলেও ভালো আছে...........
ওরা এলো। আমি রিপোর্ট নিয়ে হাসপাতাল এ ঢুকলাম। এক মুহূর্তও দেরি করলাম না। ঢুকে দেখলাম, ডাক্তারও দাঁড়িয়ে।
আমি রিপোর্ট টা হাতে দেওয়ার সাথে সাথেই লাল পথ এর রিপোর্টাও এলো। ২৬ তারিখ এর স্যাম্পল এর রিপোর্ট নেগেটিভ। আর ২৯ তারিখ এর লাল পথ এর স্যাম্পল এর রিপোর্ট
পজিটিভ। আরো দেখলাম যে স্যাম্পেল একদিন দেরিতে ল্যাবে পৌঁছেছে।
আর, তাইজন্যেই মনেহয় একদিন দেরিতে রিপোর্ট এসেছে।
ডাক্তার বললো :
দ্যাখো, তিন দিনের ডিফারেন্স আর আমি লাস্ট এর রিপোর্ট টাই জোর দেবো। তাছাড়া তোমার বাবার কন্ডিশন দেখো আমি কনফার্ম
তুমি এখনি কোনো সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাও, আই সি ইউ অ্যাম্বুলেন্স লাগবে। ইমিডিয়েট প্লাসমা থেরাপি বা লেটেস্ট ট্রিটমেন্ট লাগবে যা এখানে সম্ভব নয়।
ইমমেডিয়েটলি দ্যাখো।
আমরা আর সময় নষ্ট করলাম না। পেমেন্ট দিতে হবে ট্রান্সফার করতে হবে। তাই মামাকে ফোন করলাম।
মামা এলো। এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি বিল। একটু ডিসকাউন্টও হলো।
যত চেনাজানা যোগাযোগ ছিলো, নেতা মন্ত্রী সরকারি দপ্তরে সব জায়গায় যোগাযোগ করলাম।
অন্যদিকে, বাড়িতে জানিয়ে দিলাম, বাড়ি স্যানিটাইজ করতে বললাম।সবাইকে আলাদা আলাদা থাকতে বললাম। এবং গ্রামীণ সাস্থকরমীকে জানিয়ে দিলাম যাতে পাড়ায় কোন মানুষের বিপদ না হয়।
সরকারি হাসপাতাল ঠিক হলো। অ্যাম্বুলেন্স এল টেকনিশান এর সাথে ঝামেলা করে ওকে আব্বার সাথে অ্যাম্বুলেন্স এর ভিতরে বসতে রাজি করলাম
বাড়ি থেকে পোশাক এনে ছিলো মামা , দুলাভাই দিয়ে ও এসেছে আব্বাকে পরানোর জন্যে।
আমরা মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস নিয়ে রেডি, ডিসচার্জ এর জন্য উপরে ডাকবে সেই অপেক্ষায়।
উপরে ডাকলো।
আমি এক দৌড়ে লিফ্ট ছাড়াই ফোর্থ ফ্লোর এ উঠলাম। দরজায় টোকা মারলাম।
আর এম ও বেরোলো।
- স্যার, আমি বাড়ির লোক
তড়িঘড়ি করে বলল - শোন, শোনো, আমরা বের করবো, এই মুহূর্তে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়, আমরা চেষ্টা করছি,
ডাক্তার কে ফোন করছি এক্ষুনি আসছে, তুমি নিচে অপেক্ষা করো, নামানোর মতো হলে, আমি দেখে নিচ্ছি ।
আমি এবার সিঁড়ি ধরে ধরে নিচে নামলাম
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে খুব কষ্টে হাঁফাতে হাঁফাতে বললাম : আর মনেহয় হবে না!
বোন কে ফোন করলাম। কান্না তো চেপে রাখতেই হবে ।একটাই কথা বললাম : দোয়া করি যেন আব্বা বেঁচে যায় !
আমি রাস্তায় উবু হয়ে বসে। কাউকে জড়িয়ে ও ধরতে পারার সুযোগ নেই। কাদঁছি কাদঁছি আর শুধু কাদঁছি। আবার উপর থেকে ডাক এলো। আমি আর যেতে পারলাম না, দুলাভাই গেল
নিচে নামতেই সব বুঝে গেলাম। কিছু জিজ্ঞেস ও করতে হলো না ।ডাক্তার নেমে বাইরে বেরিয়ে আমার কাছে এসে সান্তনা দিলো।
রাত নটা হবে মনেহয়।
আমি তখন সেরকমই যেরকম কেউ বাবার নিস্বাসে বাবার শরীরে পাথোজেনের মতো বেঁচে থাকতে থাকতে বাবার মৃত্যু তে নিজেও মরে যায়।
আমি তখন সেরকমই যেরকম অবিশ্বাস্য মৃত্যুতে বাবা হারিয়ে সবাই অনাথ হয়ে যায়
আমি বড়ো অনাথ হয়ে গেলাম।
আমি কিছুটা ধোয়াশায়, কিছুটা অবিস্বাসে, কিছুটা অসহায়ের মতো আর বাকিটা অজানায় বোবা হয়ে কাঁদছি ......
একবার দেখার সুযোগ দিলো। শুধুমাত্র একজন কে তাও নিজের রেসপনসিবিলিটিতে, যেহেতু কোভিড পেশেন্ট
মনে মনে নিজেকে খিস্তি দিলাম কোভিড পেশেন্ট?
আমার জন্মদাতা বাপ্? আমার রক্তে রক্তে আছে আমার সত্যিকারের নায়ক
শেষবারের মতো আব্বা কে দেখলাম, যেন জীবন্ত চেহারা, গম্ভীর নয়, যেভাবে আমাকে শাসন করতো সেভাবে নয় যেভাবে আমি জানার আগ্রহ দেখালে বোঝাতো, ঠিক সেরকম মুখ
আমার দিকে তাকিয়ে, আমাদের পোশাক পরা চকচকে অবিস্বাস জীবন্ত চেহারা।আব্বা শুয়ে আছে মাথা উত্তর দিকে, পা দক্ষিণ দিকে আর মুখটা পশ্চিম দিকে একটু ঘুরে , আমার দিকে
রাত্রি তিনটা পর্যন্ত সব কাগজ পত্রে সই করলাম। অনেককেই ফোন করলাম।
এলো শুধু পিসির ছেলে আর ওর কটা বন্ধু। আব্বা কে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্যে পিসির ছেলে কতো কাউ কে ফোন করলো, হলো না,
শেষে পিসির ছেলেও হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগলো। বন্ধুরা আমাকে গাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করলো।
আমি বললাম : না গো, আমি ডাইরেক্টলি কন্টাক্ট এ ছিলাম । এখন যদি আমার জন্যে তোমাদের হয়, তবে আমার পাপ হবে ।
ওরা অবশেষে খেয়াল রাখতে রাখতে গাড়ি নিয়ে এগোতে লাগল।
বলল : বাড়িতে পৌঁছে ফোন করবি।
বাড়িতে এলাম।
বাড়িতে এখনও কেউ জানে না।
এতটুকু জানে আজকে আব্বার শরীরটা একটু খারাপ তাই আজ আব্বা কে নিয়ে যাই নি । কাল নিয়ে যাবো।
ভিতরে ভিতরে আব্বা এতোটা কষ্ট কাউকে বুঝতে দেয় নি। আমরা বাড়ি ফিরতে ফিরতে আস্তে আস্তে নিজেদেরকে সামলে নিলাম। স্যানিটাইজ করে স্নান সেরে দোতালায় আলাদা ঘরে ঢুকে গেলাম।
বললাম : আমরা আমরা হাসপাতাল এ যাওয়া আসা করছি। তাই কদিন আলাদা থাকবো।
মা বললো তাই কর, বাড়িতে বাচ্চারা আছে
তিনটায় মা জেগে।
পাঁচটায় উঠে দেখি মা জেগে।
কি করে বলবো!
সকাল হতে মায়ের হাজার প্রশ্ন : তোর আব্বা কেমন আছে? আমি একবার যাবো?
হাসপাতাল এ ফোন কর? কেমন আছে জিজ্ঞেস কর ।
আমি বললাম : তোমারও সুগার, এতো চিন্তা কোরো না, মামা যোগাযোগ রেখেছে। মামা ফোন করবে একটু পরে।
কথামতো মামা ফোন করলো। মায়ের ফোনে: তোরা সবাই দূরে দূরে বসে যে যার কেউ কারো ছোঁয়া ছুঁয়ি করবি না।
আমি আর দুলাভাই দোতলার সিঁড়িতে, নিচে নামার বিকল্প কিছু নেই । দূর থেকেই বলছি : বসো তোমরা । যে যার বোসো। দূরে দূরে বসো।
কেউ শুনছেই না!
শেসবেস আমি চিল্লে গালাগালি করে ফেললাম : বা.. শোনা যায় না? বস, বস সব
ভয়ে সবাই বসে পড়লো।
- মামা বলো
এবার মামা বলতে শুরু করলো : এখন, কাল তোমরা শুনেছো, ভাই এর কোভিড ধরা পড়েছে। তো পরিবারের সবারই সাবধানে থাকতে হবে।
বাড়িতে দুটো বাচ্চা আছে। সবাই মাস্ক পরো। ঘরের বাইরে কেউ যাবে না। যে যার ঘরে ঘরে থাকো । স্যানিটাইজার ব্যবহার করো।
মামা এর থেকে আর যেনো কথা এগোতে পারছে না, বুঝতে পারছি মামার গলা কাঁপছে
কিন্তু মামাকেই বলতে হবে । আমি পারব না। তাই মুখ চেপে বসে আছি।
শেষে, মামা বললো : গত কাল রাতের দিকে একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
সবাই এবার হাঁফাতে লাগলো ।
মামা বললো : আমরা নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরোবো, এমতো অবস্থায় ডাক্তার জানায় ভাই আর নেই।
সঙ্গে সঙ্গে কান্নায় ফেটে পড়লো বাড়ি।
সে আর্তনাদ যেন আমার কান থেকে
রক্ত বেরোনোর মতো।
বোন বৌ দুজনেই চেল্লাচ্ছে, আর বাচ্চা দুটো অসহায়ের মতো যেন যে যার মায়ের কোলে বসে আছে। আমার চোদ্দ বছরের ভাই ও আছে। ওর মুখের দিকে তাকানোর
সাহস হয় নি।
আর, আমার মা?
আমার মা মেঝেয় বসে মেঝের ওপর মাথা ঠুকছে, অসহায়, নিঃস্বের মতো শুধু চিল্লে চিল্লে কাঁদছে আর বলছে : আল্লাহ, আল্লাহ
আমি সিঁড়িতে বসে আছি। কথা বেরোচ্ছে না। আমার মতো নির্লজ্জ অকৃতজ্ঞ অকর্মণ্য দুশ্চরিত্র মনে হলো যেন আর কেউ নেই।
মা কে বললাম : মা গো, কত চেষ্টা করলাম, কার না পায়ে ধরলাম, দু দিন ধরে কত কিছু করলাম, হলো না মা, হলো না ।
আমি নিজে সই করে এসেছি। আমার আব্বার মৃত্যুর সাক্ষী আমি। শুধু নাটক করে যাচ্ছি মা।
মা বললো : আল্লা তোদের হায়াত দেক বাপ্, আল্লা আমার বাচ্চাদের তুমি ভালো রেখো।
আমার আব্বাকে নিয়ে যাওয়ার পারমিশন দিয়ে এসেছি মা। সরকারী লোক এসে নিয়াও চলে যাবে মা, কাউকে দেখতেও দেবে না।
কবরটাও দেখতে পাবো না মা।
- আল্লাহ্! আল্লাহ্! ব'লে মা তোলাআছাড়।
খেতে লাগলো।
একের পর এক ধাক্কায় মা তোলা আছাড় খাচ্ছে আর আমি সিড়িতে বসে, আমিও কাঁদছি বটে তবে আমি এক নির্লজ্জ স্বার্থপর।
সারা দিন রাত বাড়ি জুড়ে মরা কান্না । চারিদিক আর্তনাদ। কেউ নেই বাড়ি লক। সরকারী নিষেধ।
কাছেএসে কেউ মাথায় হাত বোলাবে বা কোলে টেনে নেবে, সে পারমিশন নেই। আর আমাদের ও কাউকে জড়িয়ে ধরার পারমিশন নেই !
মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছে দেয়ালে মাথা ঠুকে দেয়াল ফাটিয়ে ফেলি কিংবা ছাদ থেকে লাফ দিই। তা করার ও সুযোগ নেই। তাহলে আমার পরিবারের সবাই এবার রাস্তায় বসবে।
পিসির সেই ছেলে তো উন্মাদের মতো বাড়ির গেটে মাথা ঠুঁকছে। মাথায় পানিও দিতে হয়েছে।
ছোট কাকা বলল ,
প্রায় তিন চারশো ফোন এসেছিল ছোট কাকার কাছে।
এমন ও লোকে বলেছে, আমরা আছি তোমরা চিন্তা কোর না, আমরা পশে আছি, যা লাগবে সব দেব,
অনেকে ফোন করে বলেছে পেমেন্ট টা নিয়ে যেও। অনেককেই চিনি না যারা বাড়ির সামনে এসে হাউমাউ করে কেঁদেছে। অনেকে ফোন করে আব্বার অনুদান আর উপকারের কথা বলছে। আমাকে সান্তনা দিচ্ছে, ভরসা দিচ্ছে। পরিবারের শুভকামনা করছে।
আবার এমন একজন কে পেয়েছি, যে আমাদের চুরি করতো, মরে যাওয়ার পর আব্বা ও নাকি তার শেষ কাজে ঘাটতি পূরণ করে ছিলো, কাল আব্বা মারা গেছে আর আজ আমাদের জমির পাশে তার পরিবার পোস্ট বসাচ্ছে। পিসির ছেলেকে দেখে বলেছিলো, মরে গিয়ে এবার দালাল পাঠাচ্ছে? যা ডেকে আন এবার দেখি...
দু দিন হলো। এখন আমি চেতনা আর অবচেতনার মধ্যে ধোঁয়াশায় জড়িয়ে আছি। খাবার দাবারের কোন অভাব অবশ্য নেই
পুকুরে মাছ আছে, খেতে সবজি আছে
আম্ফানের পরেও, ভেন্দি পেকে যাচ্ছে, বেগুন,পেঁপে……
মারা যাওয়ার পরেও আব্বার সম্পদ আর পরিশ্রমে আমরা জীবন কাটাচ্ছি……
এখন সারাদিন
জানালায় বসে রাস্তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মানুষ গুলোকে দেখি।
যারা বাথরুম থেকে বেরিয়ে কখনো হাতে সাবান দেয় না, তারা আমাদের বাড়ি থেকে একশো ফুট দূর থেকে কেউ মুখে গামছা বাঁধছে, কেউ শাড়ি জড়াচ্ছে।
কেউ চোখ পড়লেই মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে।
দূর থেকে ওদেরকে দেখে মনে মনে বলি : আল্লা এদের ভালো রেখো
আর আমার ছেলে এখনো দাদু ফিরে আসার অপেক্ষায় আছে : দাদু কবে হাসপাতাল থেকে আসবে? আমাকে ডিম্ লজেন্স কিনতে নিয়ে যাবে, না এলে দাদু কে ফোনে বকে দেব....
ছেলেকে দেখতে পেলে মনে মনে বলি : আব্বু, তুমি তোমার আব্বুর মতো হবে না যেনো , আমার আব্বুর মতো হবে।
আমি এখন অনাথ, অসহায় নিঃস্ব।
আসলে আমি তা নই। আমি নির্লজ্জ, দুশ্চরিত্র, অকৃতজ্ঞ ,স্বার্থপর
এর পর:
আমরা সব দিক থেকেই পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলাম। আতঙ্কে সমালোচনার ভয়ে। বদনামের ভয়ে।
আমার আব্বার বদনাম না হয়ে যায়!
পাড়ার লোকজন আমাদের জন্যে বাজার করে কাকা কাকিমা দের বাড়ি দিয়ে গিয়েছিল ঠিকই তবে ভয়ও হচ্ছিল, ওরা কারো করণে দোষ আমার আব্বার ঘাড়ে না দেয়
একদিন পর আমাদের কোভিড টেস্ট হলো। কাজের মেয়েটি যে ছিলো তার পরিবারকেও নিলাম। মেজ কাকা আর মেজ কাকিমার বহুদিন থেকে একটু জ্বর জ্বর ছিল। তাই ওদের পরিবারকেও নিলাম। ছোট কাকা আর সেজকাকার ছেলে, যে সাথে ছিলো তাকেও নিলাম। পিসির ছেলে বললো আমার মা তোদের বাড়িতে ছিল, মা কে ও নে।
পিসিকে ও নিলাম। সবার টেস্ট হলো। চার পাঁচ দিন পর রিপোর্ট এলো। মেজ কাকু আর মেজ কাকিমার কোভিড রিপোর্ট পসিটিভ , শুনেই হাউমাউ করে কান্না কান্নি পড়ে গেল। শুনলাম ওরা নাকি বহুদিন ধরে জ্বর লুকিয়ে রেখেছিল।
পিসির ও পসিটিভ । পিসি কাঁদতে কাঁদতে বলল আমি মেজ ভাই দের ঘরে অনেকবার ঢুকেছিলাম, খেয়েও ছিলাম।
সরকারি ভাবে লোক এসে কাকুকে হাসপাতাল এ নিয়ে গেল।
তারপর সারারাত ঘুরে বাড়িতে দিয়ে গেল, বেড নেই তাই।
আমাদের বাকি কারো রিপোর্ট আর এলো না। এখন টেস্ট ও বন্ধ।
স্বাস্থকর্মীরা বললো : তোমাদের নিশ্চই রিপোর্ট ভালো তাই আসে নি, পজিটিভ হলে খবর চলে আসতো।
পুরো ঘটনাটা আমি অবাক হয়ে একবার ভাবলাম :
আব্বা যদি বাড়িতে থাকতো, তাহলে?
যদি হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে
যেতে যেতে দুর্ঘটনাটা ঘটতো তাহলে?
এমনকি শেষবার দুজন আব্বার দাফন
করতে যাওয়া পর্যন্ত সুযোগ ছিলো ।
সেটা কমিউনিকেশন মিস হয়
কে এম সি ফোন কলও মিস হয়।
আমরা যেতে পারিনি ।
শুধু আমাদের টেস্ট হলে ধরা পড়তো না। কাকু কাকিমার টেস্ট না হলে বাড়িতে পাড়ায় ছড়িয়ে পড়তো
শুধু কাকু কাকিমার টেস্ট হলেও কিছু বুঝতে পারতাম না। পিসির টেস্ট আমার মাথায় ছিলো না, পিসির ছেলে মনে করে দিয়েছিল।
কারো বিন্দুমাত্র ক্ষতি হলো না। পাড়ার লোক যারা ছুটে এসে ছিল, যে বন্ধুটা গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো, যারা আব্বাকে গাড়িতে তুলে দিয়েছিলো, সবাই ভালো আছে। আমার ছেলে আব্বা যাওয়ার দু দিন আগে পর্যন্ত, যেদিন লোকজন আসে, আব্বাকে জড়িয়ে আব্বার গায়ে পা তুলে শুয়ে ছিলো পর্যন্ত
আমি আব্বার সিরাপ খেয়েছিলাম, ফিরে এসে আব্বার কম্বল বিছিয়ে শুয়ে ছিলাম...... সবাই ভালো আছি
আব্বার দিকে কোনো আঙুল উঠলো না....
যেখানে এক মিটারে ভয়,
সেখানে ছুঁয়েই ছিলাম।
কিন্তু কিভাবে হলো এতো কিছু?
কিভাবে সম্ভব?
প্রত্যেকটা পদক্ষেপ আর ঘটনা যেন পরিস্কার।
আমি সব এবার ভোলার চেষ্টা করছি,
এটা আমার আর দ্বিতীয় বার ভাবও ঠিক হবে না, এটা আমার নাগালের বাইরে।
অনেক যোগাযোগ ছিল,
একটাও কাজে লাগেনি,
সময় আর ফলাফল তার মতন করেই এগিয়েছে, কেউ কিছু করতে পারেনি।
আব্বার নিয়তি ছিলো
তাই মৃত্যু টা মেনে নিলাম।
খবর পেলাম যে আব্বার মৃত্যুর চার দিন পর আব্বার একটা বন্ধু মারা যায়,
একটা বন্ধু হৃদ রোগে আক্রান্ত হয় ,
এ হাসপাতাল ও হাসপাতালে ছোটাছুটি চলছে....
আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুন সুস্থ রাখুন।
এখন দায়িত্বের ভয়। কাঁধে নিতে হবে। পারব কি পারবনা সেটা চয়েস করার অপশান নেই।
পারলে স্বার্থপরতার বদনামের ভয় ।
না পারলে অজ্ঞতার বদনামের ভয়।
এক অজানা অচেনা আতঙ্ক আমার দিকে সারাক্ষণই তাক করে আছে।
আমি ভাবছি, আয়নায় নিজেকে দেখলেও যার ছবি আমাকে ঢেকে দেয়, সারাটা জীবন তাকে ছাড়াই
কাটাতে হবে ।
ভাবতেও সাহস হয় না,
মৃত্যুর থেকেও ভয় করে।
তবে ভয় পাওয়ার পরিনাম
আরো ভয়ের।
অনেক যন্ত্রনায় বোবা হতে হয়
অনেক সাহসেও ভয় পেতে হয়
অনেক শাস্তিতে ক্ষমা করতে হয়
অনেক কথাই গোপন রাখতে হয়.......
এখন আমি শুধু আর আমি নোই ,
আমিই আমার আব্বা। হতে হবে।
অন্য কোনো অপসন নেই ।
কেবলমাত্র একটা অবলম্বন ছাড়া
(আল্লাহু আকবার)