Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!
Unveiling the Enchanting Journey of a 14-Year-Old & Discover Life's Secrets Through 'My Slice of Life'. Grab it NOW!!

Siddhartha Singha

Abstract

2  

Siddhartha Singha

Abstract

নীলকুঠি

নীলকুঠি

10 mins
739


জ্যোতির বাড়ির গেটের সামনে পৌঁছনোর আগেই অন্যান্য দিনের মতো গাড়ি চালাতে চালাতেই রাজদীপ মোবাইল থেকে ফোন করল, নেমে আয়।

কিন্তু ও প্রান্ত থেকে কোনও সাড়া পাওয়া গেল না।

রাজদীপ বলল, হ্যালো হ্যালো, শুনতে পাচ্ছিস? আমরা এস‍ে গেছি। চলে আয়। তবু ফোনের ও প্রান্ত থেকে কোনও উত্তর ভেসে এল না।

রাজদীপ একটু অবাকই হল। কারণ, এ সব ব্যাপারে ওর উৎসাহই সব চেয়ে বেশি। কয়েক বছর আগে ওর পাল্লায় পড়েই প্রথম প্রথম নীলকুঠি যাওয়া শুরু করেছিল সে। কিছু দিন পরে. তারই ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু ছন্দম আর অরিত্র তাদের সঙ্গী হয়েছিল। আর সেই সূত্রেই তারা চার জনই দেখতে দেখতে একে অপরের হরিহর আত্মা হয়ে উঠেছে। এবং ওখানে যাওয়াটা তাদের এমন নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সন্ধ্যা হলেই তারা এখন নীলকুঠিতে যাওয়ার জন্য ছুঁক-ছুঁক করে।

যে দিন ফোনে ফোনে কথা হয়ে যায় ওখানে যাবে, সে দিন চার বন্ধুর যে কোনও একজন বিকেলে গাড়ির চালককে ছুটি দিয়ে দেয়। নিজেই গাড়ি চালিয়ে এক-এক করে বাকি দুই বন্ধুকে তুলে সবার শেষে জ্যোতিকে নিয়ে সোজা রওনা হয়ে যায় নীলকুঠির উদ্দেশে।

নীলকুঠির নাম শোনেনি চন্দননগরে এমন একটা লোককেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইংরেজরা যখন গোটা ভারতবর্ষটাকে দখল করে ফেলেছিল, তখন ব্যবসা করার জন্য তুলনামূলক ভাবে কম ইংরেজ-আধিপত্য চন্দননগরে নোঙর ফেলেছিল ফরাসিরা। তৈরি করেছিল উপনিবেশ। ইংরেজরা তখন নীল চাষ করার জন চাষিদের উপরে অকথ্য অত্যাচার চালাচ্ছে। তাদের বাগে আনার জন্য এককাট্টা হচ্ছে। সে সময় এখনে তৈরি করা হয় এই নীলকুঠি।

না। নামে ‘নীলকুঠি’ হলেও নীলের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক ছিল না। না-এখানে মজুত করে রাখা হত নীল। না-এখানে নীলের চাষ বাড়বাড়ন্তর জন্য করা হত গোপন বৈঠক। না-এখানে বন্দি করে রাখা হত নীল চাষের বিরুদ্ধে যারা জেহাদ ঘোষণা করত, তাদের।

আসলে যে-সব ইংরেজ নীল চাষ করার জন্য চাষিদের বাধ্য করত, বস্তা ভরে ভরে মুনাফা নিয়ে যেত দেশে, তারাই কয়েক জন মিলে তৈরি করেছিল এই নীলকুঠি। শুধু নিজেদের আমোদ প্রমোদের জন্যই নয়, উচ্চপদস্থ সাহেবদের খুশি করার জন্যই বানানো হয়েছিল ওটা। তারা এলেই সারা রাত ধরে চলত মোচ্ছব। না, শুধু নাচা-গানা বা মদ্যপানই নয়, ঢালাও ব্যবস্থা থাকত মেয়েরও।

এ ভাবেই বছরের পর বছর চলছিল। কিন্তু গোটা দেশ যখন বিদ্রোহীদের তাণ্ডবে উত্তাল, যে কোনও দিন ঘোরতর বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে, বুঝতে পারা মাত্রই রাতারাতি তল্পিতল্পা গুটিয়ে এই নীলকুঠি ফেলে ওরা দেশে চলে যায়। কিন্তু নীলকুঠিটা থেকে যায় নীলকুঠি নামেই।

এই নামের মধ্যে কী যেন একটা ছিল। তাই লোকজন পাল্টালেও ওই বাড়িটা পাল্টায়নি। কোনও এক জমিদারবাবু নাকি ওটার দখল নিয়েছিলেন। বিকেল হলেই সার সার জুড়ি গাড়ি এসে দাঁড়াত তার দোরগো়ড়ায়। একে একে জ্বলে উঠত ঝাড়বাতি। শোনা যেত ঘুঙুরের শব্দ, হই-হুল্লোড়।

সেই জমিদার মারা যাওয়ার পরে নীলকুঠির চেহারা একেবারে আপাদমস্তক পাল্টে যায়। নাচ-গান বাদ দিয়ে শুধুমাত্র দেহোপজীবিনীদের আখড়া হয়ে ওঠে। বিভিন্ন জায়গা থেকে সুন্দরীরা আসতে থাকে। তাদের ঘিরে জড়ো হতে থাকে বড় বড় ব্যবসায়ী, নেতা, মন্ত্রী, আমলা থেকে পুলিশ-প্রশাসনের বড় বড় কর্তা। কে যেত না সেখানে? তেমনি যেত সাধারণ, অতি সাধারণ মানুষ জনেরাও। পকেটে শুধু রেস্ত থাকলেই হল।

স্থানীয় অধিবাসীরা এ নিয়ে বারবার আওয়াজ তুলেছে। দাবি জানিয়েছে, বসতি এলাকায় এ সব বেলেল্লাপনা চলবে না। কিন্তু কে শোনে কার কথা। সমাজের তাবড় তাবড় রাঘব বোয়ালরা ওর মধ্যে ছিল বলেই সেটা আর ধোপে টেঁকেনি। বরং তার রমরমা দিনকে দিন আরও বেড়েছে।

কার সঙ্গে জ্যোতি যে প্রথম ওখানে গিয়েছিল, এখন আর তা মনে নেই। কখনও যেত সিল্কির ঘরে, কখনও গুলাবির ঘরে, তো কখনও আবার রেবেকার ঘরে। কিন্তু কোথাও ওর মন টেঁকেনি। তার পরে বিয়ে হয়েছে। ছেলে হয়েছে। মেয়ে হয়েছে। সে সব নিয়ে এতটাই মেতেছিল যে, নীলকুঠির কথা সে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ একদিন গাড়ি নিয়ে যেতে যেতে সিগন্যালে দাঁড়াতেই সিল্কিকে দেখতে পেয়েছিল সে। আর তাকে দেখামাত্র কেন যে আবার মাথার মধ্যে হুট করে ওই পোকাটা কিলবিল করে উঠল, কে জানে!

মাঝখানে অনেকগুলো দিন নীলকুঠিতে যায়নি সে। তাই একা-একা যেতে কেমন যেন বাধো-বাধো ঠেকছিল। তা ছাড়া সিল্কিকে রাস্তায় দেখেছে ঠিকই, কিন্তু এখনও ও নীলকুঠিতে আছে কি না, সেটা ও জানে না। কারণ, এ সব মেয়ে মাঝে মাঝেই জায়গা বদল করে। না-হলে নাকি একই মুখ, একই রংচং, একই ছলাকলা দিনের পর দিন দেখতে দেখতে খদ্দেরদের একঘেয়েমি ধরে যায়। ফলে কদর কমতে থাকে। অথচ অন্য জায়গায় গেলেই ফের চাহিদা তুঙ্গে।

সিল্কি যদি ওখানে না থাকে তখন কী হবে! সে যাবে কি যাবে না যখন দোনোমোনো করছে, তখনই রাজদীপকে পেয়ে ও যেন হাতে স্বর্গ পেল। রাজদীপও বিবাহিত। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছর পরেই বুঝি প্রত্যেক পুরুষের মধ্যে একটা নিষিদ্ধ সম্পর্ক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকে। না-হলে ওকে বলামাত্রই ও কেন সঙ্গে সঙ্গে একপায়ে রাজি হয়ে যাবে!

পরে ওদের সঙ্গী হয় অরিত্র আর ছন্দম। অজুহাত খোঁজার ক্ষেত্রে ওরা চার জনেই সমান। এ হয়তো কোনও দিন বলল, আজ বউয়ের সঙ্গে একচোট হয়েছে। কিচ্ছু ভাল লাগছে না রে। মন একদম ভাল নেই, চল তো---

কোনও দিন ও বলল, কী মেঘ করেছে দ্যাখ, মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। এমন দিনে কেউ শুধু শুধু বাড়িতে বসে থাকে! যাবি তো চল। সব খরচ আমার।

কোনও দিন আবার সে বলল, কত দিন যাই না বল তো! যতই ফোনে কথা হোক, ওর কাছে না-গেলে কিছুই ভাল লাগে না। ও কেমন আছে কে জানে! ভাবছি, আজ অফিস থেকে সরাসরি ওখানে চলে যাব। সে জনই ফোন করলাম, তোরা কি যাবি?

এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে, একজন তাল তুললেই হল, যার যতই জরুরি কাজ থাকুক না কেন, সব ফেলে শেষ পর্যন্ত সবাই একসঙ্গে জড়ো হয়ে রওনা হয়ে যেত নীলকুঠির দিক।

যদিও চার জন চার রকমের। জ্যোতি কাজ করে একটি সরকারি সংস্থার অত্যন্ত উঁচু পদে। যেখানে কাজ হাসিল করার জন্য লোকেরা জোর করে পকেটে গুঁজে দিয়ে যায় টাকা। রাজদীপ আছে বিখ্যাত একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির পারচেজ ডিপার্টমেন্টে। কোনও কিছু কিনলেই হল। একটা পারসেন্টেজ ঠিক চলে আসে তার হাতে। অরিত্র আবার বাবার তৈরি করা এমন একটা ব্যবসায় যুক্ত, যেখানে কাঁচা টাকার ছড়াছড়ি। আর ছন্দম? জবরদস্ত এক রাজনৈতিক নেতার একমাত্র ছেলে। তার কাছে কোথা থেকে যে টাকা আসে সে নিজেও জানে না।

কিন্তু চার জন চার রকম পরিবার থেকে এলেও, চার রকমের জীবিকায় থাকলেও, চার রকম ভাবে জীবন যাপন করলেও, চার রকম মানসিকতার হলেও, এই একটি জায়গায় কিন্তু ওরা একেবারে এক। অভিন্ন।

এদের মধ্যে রাজদীপ অবশ্য একটু বেশিই আবেগপ্রবণ। তাই একবার ঠিকই করে ফেলেছিল, ও নীলকুঠিতে যার কাছে যায়, বউকে ডিভোর্স করে সেই শেফালিকেই বিয়ে করে নেবে। এত ভাল মেয়ে নাকি জীবনেও দেখেনি সে।

তখন ছন্দম বলেছিল, এমন ভুল কিন্তু ভুল করেও করিস না। জানবি, তুই ওর সঙ্গে কম সময় কাটাস বলে, ওর শুধু ভাল দিকগুলিই তোর নজরে পড়ে। ওকে যদি বিয়ে করে ঘরে নিয়ে তুলিস, তখন দেখবি, ভাল দিক নয়, ওর শুধু খারাপ দিকগুলিই তোর চোখে পড়ছে। তখন মনে হবে, কী ব্লান্ডার করে ফেলেছি। আর একবার সেটা করে ফেললেই সারা জীবন ধরে তার মূল্য দিয়ে যেতে হবে। সেটা কি জানিস?

অরিত্র বলেছিল, বাইরের যা কিছু, তা বাইরেই সুন্দর। ঘরে ঢোকালেই বিপদ। সমুদ্র ভাল লাগে বলে তুই কি খাঁড়ি কেটে সমুদ্রকে ঘরে নিয়ে আসবি? জঙ্গলের সৌন্দর্য দু’চোখ ভরিয়ে দেয় দেখে কি জঙ্গলের এক্সটেনশন ঘটিয়ে তাকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসবি? বৃষ্টি ভাল লাগে বলে কি, বৃষ্টি এলেই যাতে ভিজতে পারিস, সে জন্য মাথার উপর থেকে ছাদটাকে সরিয়ে ফেলবি?

জ্যোতি বলেছিল, সেটা যদি কোনও দিন করিস, তা হলে তুই কিন্তু নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনবি। শেফালিকে তোর যদি খুব ভাল লাগে, শেফালির সঙ্গে যদি আরও একটু বেশি সময় কাটাতে চাস, তা হলে অফিসের নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ওর কাছে চলে যা। সারা দিন থাক। কে বারণ করেছে? দরকার হলে অফিসের কাজে বা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দু’-একদিনের জন্য বাইরে কোথাও যাচ্ছিস বলে মাঝে মধ্যে রাত্রেও ওর কাছে থেকে যা। কিন্তু না। আর যাই কর, ওকে বিয়ে করার চিন্তা মাথাতেও আনিস না। তা হলে একেবারে মাঠে মারা পড়বি। যদি বাঁচতে চাস, আগে বাড়িটাকে ঠিক রাখ। বুঝেছিস? বউ, বউই হয়। বউয়ের কোনও বিকল্প নেই।


কোনও সঙ্গী বেপথে যাচ্ছে টের পেলেই এই ভাবে নানা রকম বুঝিয়ে-সুজিয়ে বাকি বন্ধুরা প্রাণপণে তাকে আটকাবার চেষ্টা করত। যেমন ছন্দম। যখনই নীলকুঠিতে যেত, সিমির জন্য কিছু না-কিছু নিয়ে যেত। কোনও দিন দামি পারফিউম, তো কোনও দিন গলার হার।

এক প্রমোটার অনেক চেষ্টা করেও যখন কিছুতেই ফোর প্লাসের বেশি করার অনুমতি পাচ্ছিলেন না, তখন এসে ধরেছিলেন ছন্দমকে। ছন্দম ওর বাবাকে বলে কর্পোরেশন থেকে এইট প্লাসের পারমিশন বের করে দিয়েছিল। প্রমোটার তাতে খুশি হয়ে ওকে প্রচুর টাকা অফার করেছিলেন, যাতে পরের কাজগুলিও ওকে দিয়ে স্মুথলি করিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু ও সেটা ফিরিয়ে দেওয়ায় ওকে একটা টু-রুম ফ্ল্যাট উপহার দিতে চেয়েছিলেন তিনি। এমনিতে ওর নিজেরই তিন-তিনটে ফ্ল্যাট আছে। তার থেকে--- যার নেই, তাকেই তো সেটা দেওয়া উচিত, না কি? এটা মনের মধ্যে গেঁথে যেতেই প্রমোটার যখন তাকে ফ্ল্যাট দেওয়ার জন্য একেবারে নাছোড়বান্দা, ও তখন তাঁকে বলেছিল, ঠিক আছে, আপনার কোনও চিন্তা নেই। এর পরেও কোনও কাজ থাকলে, আমি ঠিক করে দেব। শুধু ওই ফ্ল্যাটটা, আপনি যখন এত করে বলছেন, আমি নেব। তবে একটা কথা; আমার নামে না-করে, ওটা সিমির নামে করে দিন।

এটা শুনে জ্যোতি ওকে বারবার করে বলেছিল, তুই এটা ঠিক করছিস না। এটা ওটা দিস, ঠিক আছে। কিন্তু একটা পুরো ফ্ল্যাট? বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে রে।

অরিত্র বলেছিল, জেনে রাখ, কোনও কিছু দিয়ে কারও মন পাওয়া যায় না। পাওয়ার যদি হয়, এমনিই পাবি। 

রাজদীপ বলেছিল, দিতে চাইলে দে। তবে আমি তোকে বলছি, ওই ফ্ল্যাটটা ও যদি সত্যি সত্যিই নেয়, তা হলে জানবি, ও তোকে ভালবাসে না। ভালবাসে তোর উপহারকে।

বন্ধুরা এ সব বোঝালেও ছন্দম তাতে কান দেয়নি। শেষ অবধি ওই ফ্ল্যাটটা সিমির নামেই করে দিয়েছিল।

ওদের মতো অতটা না-হলেও রাজদীপও ছিল ভীষণ একগুঁয়ে। ও যার কাছে যেত, সেই শেফালি যাতে অন্য কাউকে তার ঘরে না ঢোকায়, সে জন্য মাসকাবারি থোক টাকা দিলেও, যখনই যেত, মুঠো মুঠো টাকা দিয়ে আসত। তবু ঠিক করেছিল, নীলকুঠির আশপাশেই আলাদা একটা বাড়ি ভাড়া করে ওকে রাখবে।

সেটা শুনে অরিত্র বলেছিল, কাউকে ওই ভাবে রাখাকে কি বলে জানিস? রক্ষিতা রাখা। তুই কি চাস, তোর নামের সঙ্গে ওই রকম একটা বিচ্ছিরি শব্দ জুড়ে যাক?

জ্যোতি বলেছিল, ওই ভাবে পার্মানেন্টলি কাউকে রাখিস না। এতে ও যেমন তোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে, তেমনি ইচ্ছে করলে তুইও হুট করে ওকে আর ছাড়তে পারবি না। নানা সমস্যা হবে।

ছন্দম বলেছিল, তুই কেন এটা চাইছিস আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু তুই তো ওর কাছে সারাক্ষণ থাকতে পারবি না। তোর অবর্তমানে ও যদি কাউকে ঘরে ঢোকায়, তুই বুঝতে পারবি?

না। রাজদীপ আর এগোয়নি। বন্ধুদের কথা শুনে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে এসেছিল।

আর জ্যোতি? একবার যে ঘরে যায়, সে ঘরে পারতপক্ষে আর দ্বিতীয় বার ঢোকে না। যখন যে ঘরে যেতে ইচ্ছে হয়, সে ঘরেই ঢোকে। কোনও বাঁধাধরা নিয়ম নেই। ও বলে, মধু যদি খেতেই হয়, মৌমাছির মতো ঘুরে ঘুরে এক-একদিন এক-একটা ফুলে বসে মধু খাব। একটাই তো জীবন। পৃথিবীতে যখন এসেছি আমি সব চেটেপুটে চেখে দেখতে চাই। যখন যাকে ভাল লাগবে, তখন তার কাছেই যেতে চাই।


যে এই রকম কথা বলে, যে রোজ-রোজ নতুন এক-একটা মেয়ে চায়, এত দিন পরে হঠাৎ তার এমন কী হল যে, সেই সিল্কিকে রাস্তার সিগন্যালে এক ঝলক দেখেই তার মন কেমন করে উঠল! তার কাছে যাবার জন্য উথালপাথাল করতে লাগল মন! একা যেতে ভরসা পাচ্ছে না বলে, সকাল-সকাল ফোন করে বাকি তিন পুরনো সঙ্গীকে যাবার জন্য পইপই করে বলেছে, সেই জ্যোতির দোরগোড়ায় এসে যখন ফোন করছি, সে কিনা কোনও সাড়াশব্দ করছে না! এ কী রে বাবা!

ব্যাপারটা কী! ফোন খারাপ হয়ে গেছে নাকি? নাকি বাড়ির এমন জায়গায় আছে, যেখানে টাওয়ার পাচ্ছে না! নাকি বউ এমন আদর করেছে যে, ওর আজ নীলকুঠিতে আর যেতেই ইচ্ছে করছে না। ভাবতে গিয়ে হাসি পেয়ে গেল রাজদীপের।

ছন্দম বলল, কী রে, পাচ্ছিস না?

রাজদীপ বলল, রিং হচ্ছে। মনে হয় ধরছেও। কিন্তু কিছু বলছে না।

অরিত্র বলল, সে কী রে? এ রকম আবার হয় নাকি! স্পিকারটা অন কর তো দেখি…

জ্যোতির নম্বরে আবার ফোন করে স্পিকার অন করে দিল রাজদীপ। বলল, কী রে, এ বার শুনতে পাচ্ছিস?

জ্যোতি বলল, হ্যাঁ।

--- তা হলে নেমে আয়।

ও প্রান্ত থেকে জ্যোতি বলল, না রে, আজ আর নামব না। তবে কথা দিচ্ছি, আমি এর মধ্যেই তোদের একটা ছোট্ট ট্রিট দেব।

--- ট্রিট! কেন? হঠাৎ?

--- কারণ, আজ আমার চোখ খুলে গেছে।

--- মানে?

মানে আমি আজ বুঝতে পেরেছি, আমার বউও যথেষ্ট সুন্দরী। না-হলে ওর এত ডিম্যান্ড হবে কেন?

--- কী বলছিস তুই? কিছুই তো বুঝতে পারছি না।

--- দ্যাখ, বিয়ের বছর খানেক পর থেকে যে বউয়ের দিকে আমি ফিরেও তাকাইনি, আমার কাছে যার দাম এক কানাকড়িও ছিল না, আজ টের পেলাম, তার দাম অনেক। না-হলে রাস্তায় বেরোলেই শুধু আমার পাড়ার হারুই নয়, আমার হাঁটুর বয়সি টিঙ্কাও কেন ড্যাবড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকবে বল? কেন গায়ে পড়ে কথা বলতে চাইবে? ওদের চোখ-মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে, ওরা আমার বউয়ের জন্য পাগল। জানি না, এ রকম আরও কত জন আছে, যারা আমার বউকে চায়।

--- মানে?

--- মানে, আমার বউয়ের দাম আছে। আর যার দাম আছে, সেই তো মূল্যবান। আর ঘরের মধ্যে এ রকম একটা মূল্যবান জিনিস থাকতে আমি কেন অন্য কারও কাছে যাব বল… আর আমি যদি যাই, তা হলে ও-ও তো ওদের ইশারায় সাড়া দিতে পারে, ওদের কাছে যেতে পারে, তাই নয় কি বল?

জ্যোতির কথার কোনও মাথা-মুণ্ডু বুঝতে না-পেরে রাজদীপ বলল, সে ঠিক আছে, কিন্তু তুই আমাদের ট্রিট দিতে চাইছিস কেন?

--- কারণ, দেরিতে হলেও, আমি যে এটা শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছি, সেই আনন্দে।

--- তা হলে কি তুই আজ যাবি না?

--- নাঃ। শুধু আজ নয়, আর কোনও দিনই যাব না।

জ্যোতির কথা শুনে একেবারে থ' হয়ে গেল রাজদীপ। কথা হারিয়ে ফেলল অরিত্র। আর ছন্দম? সে তো একবারে বোল্ড আউট।

ওরা এতটাই ভেঙে পড়ল যে, আজ পর্যন্ত ওদের জীবনে যা কোনও দিনও হয়নি, তা-ই হল। নীলকুঠি যাবার জন্য বেরিয়েও শেষ অবধি গাড়ির মুখ ঘুরিয়ে নিল ওরা। কেউ একবারের জন্যও বলল না, কীরে, গাড়ি ঘোরচ্ছিস কেন? যাবি না?


Rate this content
Log in

More bengali story from Siddhartha Singha

Similar bengali story from Abstract