STORYMIRROR

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Children

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Children

নবাবনন্দিনী

নবাবনন্দিনী

10 mins
244


শীতের সকাল, মাথা থেকে পা... পর্যন্ত লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে অস্মি, মাথা ঢাকার কারন হলো সূর্যের আলো বিনা নিমন্ত্রনে অতিথি হয়ে ঢুকে পড়েছে ঘরে, কিন্তু অস্মির সাধের ঘুম টা... নষ্ট হল, আলোর কারনে নয়, কারনটা হলো মোবাইলটার এক নাগাড়ে বেজে চলা। অস্মি ঢাকা সড়িয়ে বিরক্তি ভরা মন নিয়ে হাত বাড়ালো বেড সাইড টেবিলে দিকে। ফোনটা হাতে নেওয়ার সাথে.... সাথে..... কেটে গেল। অস্মি ফোনটা বালিশের পাশে রেখে আবার শুয়ে পড়ল। আবার ফোনটা বাজতে শুরু করল, অস্মি চোখ বন্ধ করেই ফোনটা ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠল হ‍্যালো.

------ওপাস থেকে ঝাঁঝালো কন্ঠে উত্তর এলো, হ‍্যালো কি বাচ্ছি... তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস! আমি আধঘন্টা সময় দিলাম, এর মধ‍্যে তুই.. যদি আমার সামনে না..... আসিস রেডি হয়ে, তাহলে আজ তোর একদিন কি.... আমার একদিন।

----অস্মি ফোন কানে নিয়ে ধরপর করে উঠে বসে বলল, প্লিজ তৃষা ডার্লিং.... এই রকম করিস না.! আমি কথা দিচ্ছি এক ঘন্টার মধ‍্যে আসছি।

------------তৃষা বলে উঠল, তুই.... এটা করতে পারলি আমার সাথে! কালকে তোর আসার কথা ছিল আসলিনা! তার ওপর আজ সকালে আমাকে ফোন করে তোর ঘুম ভাঙ্গাতে হচ্ছে, তুই এই আমার বেস্টফ্রেন্ড! ছোরদা ঠিকই বলে তুই আমাকে বেস্টফ্রেন্ড বলে মনেই করিস না....!

-----------অস্মি জোড় গলায় বলে উঠল ব‍্যাস..,. আবার তোর শুরু হয়ে গেল ছোরদাকে টানা, এই তোর ছোরদা হচ্ছে নারদ.... আমাদের মধ‍্যে ঝগড়া না.... লাগালে ওনার শান্তি হয় না..., পেটের ভাত হজম হয়না.! দাঁড়া তোর ছোরদার আজ আমি কি.... হাল করি তুই শুধু... দেখবি, আর তুই তোর ঐ... ছোরদার কথায় বিশ্বাস করে গেলি। আই....লাভ... ইউ....ডার্লিং, ইউ নো... আর তুই আমার বেস্টু। এখন রাখি বাকি কথা দেখা হলে বলব, আমি আসছি প্লিজ রাগ করে থাকিস না.....।

------------অস্মি ফোনটা রেখে দিয়ে বিড়বিড় করে উঠল ঐ...... এক হলেন পন্ডিতগ‍্য দেবরূপ রায়,তৃষার ছোরদা। নিজেকে কি... মনে করেন একেবারে সব জানতা, ...! কারোর মনের কথা বোঝার ক্ষমতা নেই, এদিকে জ্ঞান দেওয়ার বেলায় ষোলোআনা, আর সবসময় উল্টোপাল্টা বোঝানো, আমার আর তৃষার সম্পর্কটা নষ্ট করার জন‍্য কাঠি করতেই আছেন, আর আমাকে না. রাগালে ওনার দিন শুরু হয়না, আজকে একটা হেস্তনেস্ত করব। সবেতেই ওনার ঐ.... জ্ঞান দেওয়া আর সহ‍্য হচ্ছেনা....!!! আজকে ভালো করে বুঝিয়ে দেব, এই অস্মি কি.... জিনিস, আর অস্মির পিছনে লাগলে তার ফল কি.... হয়। রাগে গজগজ করতে করতে ওয়াশরুমের দিকে পা.... বাড়াল অস্মি। আধঘন্টার মধ‍্যে রেডি হয়ে ব‍্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়ে নীচে নেমে আসল।

------------অস্মির মা বলে উঠল, মহারানির মুখ ব‍্যাজার কেন... সাকাল সকাল!! কি... হয়েছে?

----------অস্মির বাবা বলে উঠল, ওয়াও খুব সুন্দর লাগছে আমার মেয়েকে....!!!!

----------অস্মি একমুখ হাসি নিয়ে বলল, সুন্দরতো লাগতেই হবে, বেস্টফ্রেন্ডের বিয়েতে যাচ্ছি বলে কথা।

------------অস্মির মা বলে উঠল, তা.....মুখটা ব‍্যাজার কেন, হাসির পরিবর্তে!!!! তৃষা রেগে আছে নাকি....!!!!

----------অস্মি মাকে জড়িয়ে ধরে বলল হ‍্যাঁ..... একেবারে আগুনের গোলা, আর এর জন দায়ি ঐ ওর পন্ডিতগ‍্য ছোরদা!!!! আমাকে দেখলেই ভস্ম করে দেবে আজ তৃষা!!! আর দেরী করা চলবে না.... আমি আসি, তোমরা সন্ধ‍্যাবেলায় তাড়াতাড়ি চলে এসো.. কিন্তু!!!

----------অস্মির বাবা বলল, হ‍্যাঁ......হ‍্যাঁ.... চলে যাব, তুই সাবধানে যা.... তাড়াতাড়ি।

অস্মি বাবা মাকে বলে বেড়িয়ে পড়ল তৃষার বাড়ির উদ্দেশ‍্যে। কালকে রাতেই যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু বেস্টফ্রেন্ডের জন‍্য গিফট কিনতে গিয়ে দেরী হয়ে গেল অস্মির তাই আর যায়নি। মিনিট পনেরোর মধ‍্যে অস্মির স্কুটি এসে থামল তৃষাদের বাড়ির সামনে। স্কুটিটা গ‍্যারেজ করে বাড়ির ভীতরে ঢোকার মুখেই দেখা অস্মির সেই পন্ডিতগ‍্য ছোরদার সাথে। অস্মি দেখেও না..... দেখার ভান করে এগিয়ে যেতে লাগল সামনের দিকে, কারন এখন আর মাথা গরম করার একটুও ইচ্ছে নেই অস্মির।

---------ঠিক তখনই পিছন থেকে আওয়াজ আসল, কি..... ব‍্যাপার নবাব নন্দিনির আজ এত তাড়াতাড়ি আগমন!!

-----------অস্মি ভিতরে ভিতরে রেগেই ছিল, কথাটা আগুনে যেন ঘৃতাহুতি দিল, অস্মি পিছন ঘুরে বলল, তা..... আমার খবরে আপনার কি..... দরকার শুনি নবাবপুত্রর????

---------দেবরূপ বিড়বিড় করে বলে উঠল, আমার তো তোমার সব খবরের দরকার, কিন্তু তুমি সেটা বুঝলে তো.....!!!! সবসময় যেন রেগেই থাকো...!!!

-----------দেবরূপকে বিড়বিড় করতে দেখে অস্মি বলে উঠল, এই তুমি বিড়বিড় করে কি.... বলছ???? যা..... বলবে জোড়ে বলো!!! অসহ‍্য....!!!

---------দেবরূপ বলল, না..... তোমাকে আর কি... বলার থাকতে পারে আমার, সকাল থেকে তোমাকে দেখার জন‍্য মন ছটফট করছে...

--------অস্মি বলে উঠল কিইইইইইইই....!!!!

----------দেবরূপ বলে উঠল তৃষা... তৃষা... ছটফট করছে তোমার জন‍্য সকাল থেকে!!!! আর তোমার এখন আসার সময় হলো কালকে এলেনা কেন..... শুনি??? সবাই অপেক্ষায় ছিল!!!

-----------অস্মি দেবরূপের দিকে আঙ্গুল উঁচিয়ে বলে উঠল, আমি আসব কি.... আসবনা তার কৈফিয়ত তোমাকে দিতে যাব কেন!!!!! আর আমি আমার বেস্টুকে ঠিক মানিয়ে নেব, তোমার নাক না.... গলালেও চলবে!!!!

-----------দেবরূপ অস্মির আঙ্গুলের মধ‍্যে আঙ্গুল জড়িয়ে অস্মির আঙ্গুলটা নামাতে নামাতে বলল, গলাতেতো হবেই যতই... হোক তৃষা আমার বোন.........

---------দেবরূপকে বাকি কথা বলতে না..... দিয়ে অস্মি নিজের আঙ্গুল ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠল, হ‍্যাঁ নাক গলাতেতো হবেই... যাতে ওর আর আমার মধ‍্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়...!!! আচ্ছা তুমি আমাকে সহ‍্য করতে পারোনা... কেন???? আমি কি.... করেছি!!! তোমার গালফ্রেন্ডকে ভেংচি.... দিয়েছি নাকি.... এ বাবা....!!! আমি এটা কি... বললাম, তোমার মত পন্ডিতগ‍্যের স্টুডেন্ট থাকতে পারে, গার্লফ্রেন্ড না....!!!! তোমার জ্ঞান দেওয়ার চোটে পালাবে!!!! অস্মি হো.... হো.... করে হেসে উঠল।

-----------দেবরূপ রাগি লুকে এক পা.... এক পা.... করে অস্মির দিকে এগিয়ে আসতে লাগল, আর অস্মির হাসি ঠোঁটের কোন থেকে মিলিয়ে গেল, অস্মি এক পা.... এক পা.... করে পিছিয়ে যেতে লাগল। অস্মি ঢোক গিলে বলে উঠল, তু....মি..... এইভাবে এগিয়ে আসছ কেন,আমার দিকে???? আমি কিন্তু আঙ্কেল আন্টির কাছে কমপ্লেন করব তোমার নামে।

----------দেবরূপ কোন কথার উত্তর না....দিয়ে অস্মির হাত ধরে হ‍্যাচকা টান দিয়ে নিজের একেবারে কাছে নিয়ে আসল, অস্মির এলোমেলো হওয়া চুলগুলো কানের পাশে গুজে দিতে দিতে বলল, আমার তোমাকে সহ‍্য হয় না..... এ কথা কে..... বলল!!!!! বরং আমি তোমাকে সব সময়ের জন‍্য, এমনকি সারা জীবনের জন‍্য সহ‍্য করতে চাই...!!!

--------দেবরূপের ছোঁয়ায় অস্মি চোখ বন্ধ করে নিয়ে ছিল, অস্মির মনের মধ‍্যে এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিলো, দেবরূপ কে এত কাছে থেকে ফিল করায়, কিন্তু কথাটা শুনে দেবরূপের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, তার.... মানে???

-----------দেবরূপ অস্মিকে ছেড়ে দিয়ে, কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠল তুমি বুদ্ধিমতী ভাবতে থাকো ঠিক মানে পেয়ে যাবে!!! আর পেলে আমাকে জানাবে, এখন আসি অনেক কাজ আছে, বলে মুচকি হাসি হেসে আঙ্গুলের ফাঁকে চাবি ঘোরাতে ঘোরাতে এগিয়ে গেল।

-------আর অস্মি মনে মনে ভাবতে লাগল যা.... বাবা এর আবার কি... হল! সে... যা হয় হোক আমার অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল, মনের কোনে ভালো লাগা কাজ করছিল!!!! দূর বাবা আমি এখন তৃষার কাছে যাই, না হলে এবার আমার মাথা আস্ত চিবিয়ে খাবে। অস্মি গুটি গুটি পায়ে তৃষার ঘরে ঢুকে, তৃষাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল....।

--------তৃষা এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, যা.... আমার সামনে থেকে দূর....হ.... আমার তোকে চাই না...,!!!

----------অস্মি হাসি হাসি মুখে বলল, কিন্তু আমার চাই...!! প্লিজ বাবু আজকের দিনে এই ভাবে রাগ করিসনা, আর রাগলে তোকে একেবারে শ‍্যাওড়া গাছের পেত্নীর মত লাগে, তখন তোর বর তোকে দেখে ভীরমি খাবে, আমি সেটা চাইনা...!!

-------তৃষা বলল সে... যে ভীরমি খায়.... খাক!!!তুই এখন আমার সামনে থেকে দূর..... হ, এক ঘন্টার মধ‍্যে আসবি বলেছিলিস, একঘন্টা কখন পার হয়ে গেছে।

---------অস্মি তৃষাকে জড়িয়ে ধরে বলল, বিশ্বাস কর আমি অনেক্ষণ আগে এসেছি, তোর পন্ডিতগ‍্য ছোরদার চক্করে দেরী হয়ে গেল।

--------তৃষা মুচকি হেসে বলল, তাই!!!! তা..... ছোরদা কি.... এত বলছিল শুনি....!!!

--------অস্মি চোখ মুখ কুঁচকে বলল, সারা জীবনের জন‍্য সহ‍্য করতে চাই, আরও কি... সব বলছিল, মাথামুন্ডু নেই...!!!তা....তুই এই রকম করে হাসছিস কেন?????

---------তৃষা হাসি চেপে বলল, কই হাসছি না...তো!!!

--------অস্মি বলল না.... না.... আমার চোখকে ফাঁকি দেওয়া অত সহজ নয়....!!! কি ব‍্যাপার বল... তাড়াতাড়ি??,

---------তৃষা বলল সে..... সন্ধ্যা হলে ঠিক জানতে পারবি.....!!!

--------অস্মি বলল কি.... জানতে পারব!!!!

---------তৃষা কথা ঘোরানোর জন‍্য বলে উঠল, আমি কিন্তু খুব রেগে আছি,কালকে আসলিনা কেন.... আগে বল....??,

--------অস্মি বলে উঠল, আগে তুই... চোখ বন্ধ কর তাহলেই বুঝতে পারবি!!!!

--------তৃষা বলল চোখ বন্ধ করবো কেন...????

-------অস্মি বলে উঠল, উফ্..... বেশি না....বকে, বন্ধ করতো!!!! তোরা দাদা আর বোন খুব বাজে বকিস।

--------তৃষা মুচকি হেসে বলল তাই.... বুঝি!!!

--------অস্মি মোটা মোটা চোখ করে বলল, চোখ বন্ধ করবি কিনা....???

--------তৃষা সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে বলে উঠল, নে... করে ফেলেছি।

----------অস্মি তৃষার সামনে একটা বক্স ধরে বলল, এবার চোখ খোল...,

--------তৃষা চোখ খুলে র‍্যাপ করা গিফট বক্স দেখে বলল কি.... এটা....???

---------অস্মি হাসি হাসি মুখে বলল, খোল তা.... হলেই দেখতে পাবি।

----------তৃষা আর সময় নষ্ট না.... করে গিফট বক্স খুলতে শুরু করল, এবং খুলে দেখল একটা রুপোর গনেশ খুব সুন্দর দেখতে। তৃষা বলল ওয়াও কি.... সুন্দর....!!!

--------অস্মি আনন্দ সহকারে বলে উঠল, এটা পছন্দ করতে গিয়েই কালকে রাত হয়ে গেছিল, তাই আসতে পারিনি!!!!

----------তৃষা অস্মিকে জড়িয়ে ধরে বলল, আই... লাভ....ইউ... ডার্লিং!!! 

---------অস্মিও বলে উঠল, আই... লাভ... ইউ... টু। দরজার বাইরে থেকে আর একটা আওয়াজ আসল আই.... লাভ.... ইউ... সো... মাচ।

--------তৃষা দরজার দিকে তাকিয়ে বলল,ওহো.... ছোরদা, থাকতে পারছিসনা বুঝি না.... দেখে???আয়... ভিতরে আয়..।

---------দেবরূপ তৃষার মাথায় গাট্টা দিয়ে বলল, খুব বাড় বেড়েছে তোর...!!! তোকে বলাই উচিত হয়নি আমার!!!

--------তৃষা বলে উঠল হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ এখন তো বলবি তুই, আচ্ছা বাদ দে... দেখ কি... সুন্দর গিফট এনেছে অস্মি আমার জন‍্য, দাঁড়া সবাই কে.... দেখিয়ে আসি। আর অস্মি তুই শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নে....!!! একটু পরেই গায়েহলুদের অনুষ্ঠান হবে।

---------দেবরূপ হাতে নিয়ে বলল হুম... খুব সুন্দর!!!! তৃষা লাফাতে লফাতে চলে গেল বাইরে। দেবরূপ অস্মির সামনে দাঁড়িয়ে একটা প‍্যাকেট অস্মির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এটা পড়লে খুব খুশি হবো... প্লিজ পড়ো...!!!

--------অস্মি অবাক বিস্ময়ে বলল কি... এটা!!!

---------দেবরূপ বলল, খুললেই দেখতে পাবে... আমি আসি, আর এক মুহুর্ত না.... দাঁড়িয়ে চলে গেল।

----------অস্মি প‍্যাকেটটা খুলে দেখল, একটা হলুদ রঙের শাড়ি, অস্মি ভাবতে লাগল অদ্ভুত তো....পন্ডিতগ‍্যের আবার কি... হল???? এখন কি.... করব!!! পড়বো, না....পড়বোনা....!!!! অস্মির এই সব ভাবনা চিন্তার মাঝে তৃষা ঘরে ঢুকল, এবং অস্মিকে শাড়ি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, কে..... দিল!!!!

----------অস্মি আনমনে বলল, পন্ডিতগ‍্য....

-------তৃষা বলল কি বলল....???

--------অস্মি বলল পড়তে....!!!

---------তৃষা বলল তাহলে পড়ে ফেল, খুব সুন্দর লাগবে দেখতে বলে হেসে উঠল...

-----------তৃষার হাসিতে অস্মির ভাবনা কাটল, এবং বলে উঠল এই হাসছিস কেন???অদ্ভুত তো... কি... হয়েছে তোদের আজ!!!!অদ্ভুত অদ্ভুত আচরন করছিস...!!!

--------তৃষা বলল আমার কিছু হয় নি..... যা হয়েছে.... তোর পন্ডিতগ‍্যের....!!!

---------অস্মি অবাক হয়ে বলল, হ‍্যাঁ... কিছু একটা হয়েছে.....,আর আমার পন্ডিতগ‍্য মানে কি হ‍্যাঁ...???

--------তৃষা হাসতে হাসতে বলল, তুই পন্ডিতগ‍্য বলিস তো..... তাই বললাম, আমার মনে হয় গুরুতর অসুখ, নে....এখন এসব কথা বাদ দিয়ে তুই..... রেডি হয়ে নে......!!!

-----------অস্মি বলল, সেই ভালো.... অত ভাবনা চিন্তা করতে পারছিনা...!!!

*****************************************

কিছুক্ষণের মধ‍্যে দুই বান্ধবী সুন্দর করে সেজে নিচে নামল। দেবরূপের চোখ আটকে গেছে অস্মির ওপর, হলুদ শাড়িটা খুব সুন্দর মানিয়েছে অস্মিকে। দেবরূপ মনে মনে বিড়বিড় করে উঠল, আজ আমার মনে জমানো সব কথা তোমায় বলে দেব অস্মি। শুরু হল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, সবাই সবাই কে.... হলুদ মাখাতে ব‍্যস্ত। তৃষার চ‍্যালেঞ্জ অ‍্যাকসেপ্ট করে, অস্মি হলুদ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেবরূপকে মাখাতে। ধীর পায়ে দেবরূপের পিছনে দাঁড়িয়ে অস্মি দেবরূপের দুই গালে হলুদ মাখিয়ে দেয়। হঠাৎ এই রকম হওয়ায় দেবরূপ চমকে যায়, কিন্তু যখন পিছন ফিরে অস্মিকে দেখে তখন মন আনন্দে নেচে ওঠে দেবরূপের, অস্মিকে নিজের কাছে টেনে নিজের গালের হলুদ অস্মির গালে ঘোষে দেয়। অস্মির মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি খেলে যায়, আর তার সাথে একরাশ লজ্জা অস্মিকে ঘিরে ধরে, অস্মি দেবরূপের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছুটে পালায়।

হই-হুল্লোড়,হাসি মজায় দিন কেটে যায়, এবং সন্ধ‍্যা নেমে আসে প্রকৃতির বুকে। গোধূলি লগ্নে বিয়ে শুরু হয়ে যায়। তৃষাকে আজ অপরূপ সুন্দর লাগছে, অস্মিও... খুব সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে নিজেকে। অনুষ্ঠানের ভীড়ের মাঝে একটা বাচ্ছা ছেলে ছুটে এসে অস্মির হাতে একটা কাগজ গুজে দেয়, এবং একই ভাবে ছুটে পালায়। অস্মি কিছুটা অবাক হয়ে কাগজটা খুলে দেখে তাতে লেখা আছে....

"নবাবনন্দিনী একটু বাড়ির ছাদে আসতে পারবে, আমি তোমার অপেক্ষায় আছি, বেশি সময় নেবনা....!!!"

অস্মি ভাবে পন্ডিতগ‍্যের আবার কি... হল??? হঠাৎ ছাদে ডাকছে কেন..??? থাক যাবনা, তারপর আবার ভাবে একবার গিয়ে দেখেই আসি কি বলছে...???? মনের কৌতুহল মেটাতে অস্মি ধীর পায়ে এগিয়ে যায় ছাদের দিকে। ছাদে উঠে দেখে কার্নিশের কাছে দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে দেবরূপ.....!!

-----------অস্মি এগিয়ে যেতে যেতে বলে উঠল, কি..... ব‍্যাপার বলতো তোমার??? সকাল থেকে অদ্ভুত অদ্ভুত আচরন করছো??? এখন চিরকূটে লিখে... ডেকে পাঠালে...???

-----------দেবরূপ এগিয়ে এসে অস্মির ঠোঁটে হাত দিয়ে আস্মিকে থামিয়ে দিয়ে, এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল অস্মির দিকে। অস্মি কিছু বলার আগেই দেবরূপ পিছন থেকে অস্মিকে জড়িয়ে ধরে, কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠল, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে অস্মি আজ, আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই.... অনেকদিন ধরে ভাবছি বলব, কিন্তু বলতে পাড়িনি...!!! যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম, দুইদিকে বেনি ঝুলিয়ে স্কুলে যেতে বোনের হাত ধরে, সেইদিন থেকেই আমার তোমাকে খুব ভালো লাগে, তারপর কবে, কখন, কিভাবে তোমাকে ভালোবেসে ফেললাম বলতে পাড়বনা। তোমাকে রাগাতে আমার খুব ভালো লাগে, কারন তোমার রাগি লুকটা আমার খুব পছন্দের, আমাকে সুযোগ দেবে সারা জীবন তোমার পাশে থাকার, তোমাকে ভালোবাসার, তোমাকে রাগাবার, হাসাবার, তোমাকে আগলে রাখার।

অস্মি অবাক বিস্ময়ে ঘুরে দাঁড়াল এবং দেবরূপের চোখে চোখ রাখল।

---------------দেবরূপ হাঁটু মুড়ে অস্মির সামনে বসে বলল, কি.... হল বলো.... দেবে অধিকার???

---------অস্মি ভাষা হারিয়ে ফেলেছে, কি... বলবে বুঝতে পারছেনা!!! এখন অস্মির কাছে তৃষার মুচকি হাসি, এবং দেবরূপের সকালের বলা সমস্ত কথার মানে পরিস্কার হচ্ছে, অস্মি কিছু না বলে ছুটে এগিয়ে যেতে লাগল সিঁড়ির দিকে, আর দেবরূপ ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল, মাথা নিচু করে। কিছুটা সিঁড়ি নামার পর অস্মির মনে পড়ল, দেবরূপ ওর উত্তরের অপেক্ষায় বসে ছিল তাই আবার ছুটে ওপরে উঠতে লাগল। ছাদে উঠে দেখল দেবরূপ হাঁটুর ভাজে মুখ ঢুকিয়ে কাঁদছে, আর বিড়বিড় করে বলছে প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা... অস্মি! আমি তোমাকে খুব... ভালোবাসি!!! অস্মি এগিয়ে গিয়ে দেবরূপের পাশে বসে কাঁধে হাত রাখল, দেবরূপ এক ঝটকায় অস্মিকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠল, প্লিজ অস্মি ছেড়ে যেওনা..... আমায়, প্লিজ...!!! আমি তোমাকে..খুব... খুব... খুব... ভালোবাসি!!!!

----------অস্মি দেবরূপের চোখের জলটা মুছিয়ে দিয়ে বলল, ননদিনির বিয়েটা শেষ হতে চলল.... তাই... এখন এখানে না.... থেকে নীচে যাওয়ায় ভালো।

-----------দেবরূপের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল।

---------অস্মি আর এক মুহুর্ত না.... দাঁড়িয়ে ছুট লাগালো, কিছুটা এগিয়ে গিয়ে পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখল, দেবরূপ হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। অস্মি জোড়ে বলে উঠল, পন্ডিতগ‍্য তোমাকে আমি ভালোবাসিনা, মন্দবাসি।

-------দেবরূপ বলল আমিও তোমাকে মন্দবাসি নবাবনন্দিনী।

দেবরূপ আর অস্মি নীচে নেমে আসল। তৃষার সিঁথি তখন রঙিন হয়ে উঠেছে লাল সিঁদুরে। লজ্জাবস্ত্রে ঢাকা সিঁদুর ভর্তি মুখে অপরূপ লাগছে তৃষাকে। তৃষা ওদের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠল। দেবরূপ অস্মির হাতটা শক্ত করে ধরল আর অস্মিও শক্ত করে ধরল তার পন্ডিতগ‍্যের হাত। শুরু এক ভালোবাসার কাহিনি।





Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance