STORYMIRROR

Jyotirmoy Sengupta

Abstract Horror Fantasy

3  

Jyotirmoy Sengupta

Abstract Horror Fantasy

মস্তিষ্ক সত্তা - তীক্ষ্ণ না ভোঁতা - জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত।

মস্তিষ্ক সত্তা - তীক্ষ্ণ না ভোঁতা - জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত।

26 mins
12

প্রথম পর্ব - অচেনা পথিক এর আগমন:


ল্যাবরেটরি তেই চোখ টা লেগে গেছিলো অনির্বাণ এর। কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কেমন

যেন ঘোরের মধ্যে চলে গেছিলো। হটাৎ ই একটা ধাক্কা অনুভব করে অনির্বাণ। ঘোর টা কেটে গিয়ে এখন সতেজ

হয়ে গেছে সে। রেগে কিছু একটা বলতে গিয়ে কথা টা গিলে ফেলে ও। কারণ ধাক্কা টা এসছে জুনিয়র

অ্যাসিস্ট্যান্ট সারা র কাছ থেকে। সারা কে দেখলেই ও যেনো কেমন দুর্বল হয়ে যায়। একটা ভালো লাগার আবেশ

যেনো চেপে ধরে ওকে। আজও তাই হলো। কিছু বলতে পারলো না ও। কিন্তু সারা র অঙ্গুলি নির্দেশ তো

কম্পিউটার স্ক্রীন এ। সেদিকে তাকিয়ে অনির্বাণ হতভম্ব হয়ে গেলো। একি? তবে কি এতদিনের এত পরিশ্রম সফল

হতে চলেছে। সামনে দাড়ানো সারা কে বেমালুম অগ্রাহ্য করে ও আবার ডাটা গুলো অ্যানালাইসিস করতে বসলো।

ওর চোখ এড়িয়ে গেল সারা র মুচকি হাসি। এই কাজ পাগল অনির্বাণ কে সারা র যে খুব পছন্দ তা তো অনির্বাণ

জানে না।


সকাল থেকে ই খুব ব্যস্ততা র মধ্যে আছে অঙ্কন। পরশু ই ও ফিরেছে তামিলনাড়ু থেকে। গত কাল আবার অফিস

মেল আইডি তে ইমেইল ঢুকেছিল যে খুব ইম্পর্ট্যান্ট একটা ভার্চুয়াল মিটিং আছে যেটা হটাৎ ই ফিক্স হয়েছে।

যদিও ডিটেইলস কিছু বলা ছিল না, তবু শেষে এটা বলা ছিল যে মিটিং টা অ্যাটেন্ড করতে হবে হেড কোয়ার্টার

থেকে ডিরেক্টর এর সাথে। সঙ্গে রাখতে হবে স্যাটেলাইট ডাটা গত ৫ বছরের। অর্থাৎ কিছু একটা গোপন ব্যাপার

যেটা খুব ই গুরুত্বপূর্ণ।

আসুন এবার এই অনির্বাণ আর অঙ্কন এর পরিচয় টা জেনে নি।

অনির্বাণ হলো senior data analyist। গত ৩ বছর ধরে ও search for extraterrestrial intelligence (SETI) তে

কাজ করে আসছে। তবে নাম হিসাবে ওর পদ টা ছোট মনে হলেও কাজ কিন্তু অনেক। যেমন, মহা বিশ্বের থেকে

আগত যে কোনো রেডিও সিগনাল টাকে অ্যানালাইসিস করা, সিগনাল কে বোঝার চেষ্টা করা, কোনো সিগনাল

কে বুঝলে সেই রিজিয়ন এর উদ্দেশ্যে সিগনাল পাঠানো ইত্যাদি।

আর অঙ্কন হলো Indian space research organization বা ইসরো র অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর।

যাই হোক মূল কাহিনী তে ফেরত আসা যাক।


আজ অঙ্কন যখন সেই ভিডিও কনফারেন্স join করতে গেলো তখন রীতিমত অবাক হয়ে গেলো। ব্যাপার কি?

ইউরোপ, জাপান, চিন রাশিয়া, আমেরিকা সমস্ত দেশের স্পেস এজেন্সি এই কনফারেন্স এ আছে। তবে এটার

হোস্ট হলো SETI।

কনফারেন্স শুরু হবার পরে, SETI র ডিরেক্টর Mr Jordon বললেন - বিগত ৭ দিন ধরে আমরা একটা অদ্ভুত

সিগনাল পাচ্ছি , কিন্তু সেটা আমাদের known universe এর কোন জায়গা থেকে আসছে টা ধরা যাচ্ছে না। এই

বিষয়ে আরো ডিটেইলস এ বলবেন Mr Anirban Majumder, আমাদের সিনিয়র ডাটা অ্যানালিস্ট। নিন শুরু

করুন অনির্বাণ বাবু .

একটু কেশে নিয়ে অনির্বাণ শুরু করে বিগত ৭ দিন ধরে আমি আর আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট Ms sarah o connor,

আমরা একটা বিশেষ ধরনের রেডিও সিগনাল পাচ্ছি কোনো একটা unknown constellation থেকে। এক ই

সিগনাল, ঘণ্টায় ৪ বার করে। আমরা সেটাকে অনেক চেষ্টা করে communication form এ ব্রেক করতে পেরেছি।

আপনাদের সামনে সেটা তুলে ধরছি ।

অনির্বাণ কনফারেন্স স্ক্রীন এ ms word এর একটা পেজ এ কিছু টাইপ করা লেখা দেখায়

1892021 of 914491

238514 AYNAJREP 315135

235 315135

If 251521 1851425.

অনির্বাণ আবার বলে ওঠে আমরা এই ডাটা টা পেয়েছি। কিভাবে আমরা এটা অনুধাবন করেছি তার

calculation আপনারা আপনাদের মেল এ পেয়ে যাবেন। আমরা মনে করি এটা র মানে বার করা খুব ই ইম্পর্ট্যান্ট।

হয়তো এটার ওপর ই ডিপেন্ড করছে আমরা বহির্জগতের কোনো উন্নত প্রাণীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারছি

কিনা, আমার পার্সোনাল নম্বর ও আপনাদের কাছে থাকছে। কোনো কিছুতে আমাকে ডিরেক্ট ফোন করতে

পারেন।


মাঝ রাতে হটাৎ ই অঙ্কন এর ঘুম টা ভেঙে যায়। আজ ৩ দিন ধরে ও শুধু ঐ লেখা গুলোর কথা চিন্তা করে গেছে।

আর আজ এই রাতে ঘুম ভেংগে যাবার কারণ হলো ও যেনো বুঝতে পেরেছে এই লেখা গুলোর মানে কি? সঙ্গে

সঙ্গে ও খাতা কলম নিয়ে বসে যায়।


কনফারেন্স টার ৩ দিন হয়ে গেল। অথচ কোনো স্পেস এজেন্সি র কাছ থেকে কোনো উত্তর আসেনি। অনির্বাণ

একরকম হতাশ। হটাৎ ই ওর সেল ফোন এ একটা নাম ব্লিঙ্ক করতে থাকে, অঙ্কন সেনগুপ্ত, ইসরো। সঙ্গে সঙ্গে ও

ফোন টা পিক আপ করে নেয়।


সেই রাতের একদিন পরে, আজ আবার একটা কনফারেন্স, সেই একই সেট আপ, তফাৎ শুধু আজ হোস্টিং এ

SETI র সাথে ISRO আছে। সবাই এসে গেলে ডাইরেক্টলি আজ অনির্বাণ শুরু করে, আজ থেকে ৪ দিন আগে

আপনাদের যে সিগনাল টা দেখিয়েছিলাম তার কোনো মানে কি আপনারা বের করতে পেরেছেন?

সবাই চুপ।

অনির্বাণ আবার বলে Mr Ankan Sengupta, additional director, ISRO কিন্তু পেরেছে। আমাকে উনি গতকাল

রাতে ফোন করেছিলেন, ওনার বের করা মানে টা আমার মনে হয়েছে ঠিক। এখন আপনারা দেখুন সেটা ঠিক মনে

হয় কিনা? আমি অঙ্কন এবার হোস্টিং করার অনুরোধ করছি.

ধন্যবাদ অনির্বাণ, বলে ওঠে অঙ্কন - আমরা যে numbers গুলো দেখেছিলাম, আপনারা যদি

সেগুলোর ইংলিশ alphabet numbers থেকে alphabet বের করেন তাহলে বুঝতে পারবেন। যেমন লাস্ট যে

numbers ছিল - 1851425, 18 নম্বর alphabet হলো R, 5 হলো E, 1 হলো A, 4 হলো D, ar 25 হলো Y। তাহলে

ওয়ার্ড টা আমরা পাচ্ছি READY। এই ভাবে যদি আপনারা একটু calculation করেন তাহলে বুঝতে পারবেন।


৫ মিনিট এর মধ্যে প্রত্যেক এজেন্সি পুরো লেখাটার মানে বার করে নিলো: RITU INDIA

WHEN AYNAJREP COME

WE COME

IF YOU READY;.


কিন্তু এরপর সবাই জিগ্গেস করলো যে ওই AYNAJREP কথার মানে কি ? ওটার তো মানে বের করা যাচ্ছেনা।

অনির্বাণ বললো, ওটার মানেও অঙ্কন বের করেছেন।

অঙ্কন বললো, না না ওটার মানে আমি আর অনির্বাণ একসাথেই বের করেছি। আসলে কোনো উন্নত প্রজাতি,

দেখতে চাইছে যে তাদের পাঠানো এই কোড কেউ ব্রেক করতে পারছে কিনা? ওই যে ওয়ার্ড টা জাস্ট উল্টো করে

লেখা হয়েছে, ওটা PERJANYA, যেটা একটা সংস্কৃত শব্দ মানে হলো বৃষ্টি। অর্থাৎ এই পুরো সিগনাল এর মানে

হলো ঋতু অনুযায়ী ভারতে যখন বর্ষা আসবে তখন আমরা আসবো, যদি তোমরা তৈরি থাকো.

সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলো কনফারেন্স এ।


অনির্বাণ বললো সিজন অনুযায়ী ইন্ডিয়া তে rainy season শুরু হয় জুনে র 1 তারিখ। তাহলে আমাদের হাতে

আর মাত্র 4 দিন সময় আছে, কি করা যায় আপনারা বলুন।


সবাই এই মর্মে রাজি হলো যে ওই একই ফরম্যাটে READY লিখে রেডিও সিগনাল randomly পাঠানোর জন্য।

কারণ কোন দিক থেকে আগের সিগনাল গুলো আসছিল তার তো কোনো ট্রেস ই পাওয়া যায় নি।

এর পর শুরু হলো অপেক্ষা, দেখা যাক কি হয়?


সিগনাল পাঠানোর ঠিক পরের দিন রাতে, পৃথিবীতে থাকা সব hi power স্পেস observatory গুলো নেপচুন এর

কাছে একটা unknown object এর ট্রেস পেলো যেটা প্রচন্ড গতি তে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসছে। Calculation

এ দেখা গেলো মাত্র ৩ দিনের মধ্যেই ওটা পৃথিবীর সঙ্গে কলিশন কোর্স এ যাবে।


দ্বিতীয় পর্ব - মৃতের মর্তে আগমন।


কিন্তু না। ওটা কিন্তু কোনো উল্কা পিন্ড বা ধূমকেতু নয়, কারণ ওটা থেকে সিগনাল আসছে, রেডিও সিগনাল যা

decode করলে দাঁড়ায় আমরা আসছি, আমরা আসছি. তার মানে এটা কোনো এলিয়েন ship যা অন্য কোনো

গ্রহ বা উপগ্রহ থেকে আসছে পৃথিবীর দিকে।

আবার একটা ভার্চুয়াল মিটিং চলছে, পৃথিবীর সমস্ত স্পেস এজেন্সি আর SETI র মধ্যে। এই মুহূর্তে কি করণীয়,

এলিয়েন রা কেনো আসছে, তারা কি চায়, আমরাই বা তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করবো এই সব নিয়ে

আলোচনা চলছে।

অনির্বাণ বলে উঠলো, দেখুন আমার মনে হয় আর তো ৩ দিনের ব্যাপার, আমরা অপেক্ষা করি, দেখাই যাক না

ওরা কি চায়।

Sarah o connor ও তাতে সায় দিল। আজ ওরা দুজন যোগ দিয়েছে SETI থেকে। Sarah বলল আমরা কেউই

জানিনা ওরা কারা, কেমন দেখতে, কত দূর থেকে আসছে, কিন্তু সিগনাল এ যে ভাষায় ওরা কথা বলেছে, মনে তো

হয়না ওদের উদ্দেশ্য খারাপ।

কিন্তু NASA র chair person মিচেল এর মত কিন্তু অন্য রকম। তার ধারণা এলিয়েন রা যদি invasion করে ,

তাহলে আমাদের তৈরি থাকতে হবে। একই মত ROSCOSMOS আর চাইনিজ স্পেস এজেন্সি র ও।

এদিকে অঙ্কন এর মত কিন্তু আলাদা। আজ ও ISRO থেকে একা এই মিটিং এ যোগ দিয়েছে। ও বলে উঠল 

আমরা কিন্তু একটা সিগনাল পাঠিয়ে এই প্রশ্ন গুলো জিগ্গেস করতে পারি। যদি ভালো উদ্দেশ্য থাকে তাহলে ওরা

নিশ্চয় পৃথিবী তে প্রবেশ এর আগেই উত্তর গুলো দেবে।


তখন বাকিরা বলে উঠলো আর যদি উত্তর না দেয়?

অঙ্কন বললো তাহলে আমাদের সতর্ক হতে হবে। তবে আমার মনে হয়, invasion করতে চাইলে আমাদের কিছু

করার নেই। কারণ আমাদের হাতে যা টেকনোলজি আছে তাতে করে আমরা নেপচুন পৌঁছাবো ১০ বছরে, ওরা

সেই distance cover করছে ৩ দিনে। এর থেকেই বোঝা যায় ওরা আমাদের থেকে কতটা অ্যাডভান্সড।

NASA বলে উঠলো -তবু আমাদের একটু সতর্ক থাকতে হবে । আমাদের সবারই কাছে anti satellite missile

আছে। রাশিয়া র কাছে S500 defence system আছে। এগুলোর রাডার গুলোকে high note emergency তে

রাখতে হবে।

আলোচনা শেষ হলো। ঠিক হলো সিগনাল পাঠিয়ে দেখা হবে উত্তর আসছে কিনা। নাহলে emergency alert

ঘোষণা করা হবে। তবে সব কিছুই top secret থাকবে। সাধারণ মানুষ জানতে পারলে প্রচন্ড বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

আর মিডিয়া কে এক্ষনি কিছু জানানো হবে না।

যথারীতি সিগনাল পাঠানো হলো। কিন্তু উত্তর এলো ২ দিন বাদে। - আমরা আসছি উপকার করতে -এই সিগনাল

ভেসে এলো মঙ্গল গ্রহের কাছ থেকে। আর মাত্র ১৪ ঘণ্টা র মধ্যেই সেই alien ship পৃথিবীতে এসে পড়বে।

ঠিক যখন চাঁদের পাশে সেই alien ship ta এসে পড়ল, তখন সেই ship টা সম্মন্ধে একটা ধারণা পাওয়া গেলো,

ship প্রায় ৩০০ মিটার লম্বা আর ৭০ মিটার চওড়া। সামনে টা ডিমে র মত দেখতে। মোট কথা একটা বিরাট ship।

জিনিসটা চাঁদ আর পৃথিবীর মাঝে এসে থেমে গেলো আর একটা সিগনাল ভেসে এলো। তাতে latitude আর

longitude দেওয়া ছিল। দেখা গেলো জায়গাটা সাইবেরিয়ার একটা ice field। সমস্ত স্পেস এজেন্সি, SETI, আর

কিছু defence special force সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ জনের একটা টিম সেখানে উপস্থিত হলো তার পরের দিন।

ঠিক তার এক ঘণ্টার মধ্যে satellight ইমেজে দেখা গেলো ৩ টে ছোট probe সেই alien ship থেকে আলাদা হয়ে

গেলো আর ২০ মিনিট এর মধ্যে সেই ice field এ ল্যান্ড করলো।

সবাই অপেক্ষা করছে, এমন সময় ধীরে ধীরে একটা probe এর দরজা খুলে গেলো। বেরিয়ে এলো একটা রোবট।

প্রায় ৮ ফিট লম্বা, ১.৫ ফিট চওড়া অনেকটা piller এর মত দেখতে। মাঝখান টায় একটা বেশ বড় স্ক্রীন এর মত

একটা কিছু আছে।

অনির্বাণ ই প্রথম বলে উঠলো ওয়েলকাম টু earth।

রোবট এর সেই স্ক্রীন এ লেখা ফুটে উঠলো thank you। তবে আমাদের ক্ষমা করবেন। আমরা নিজেরা আস্তে

পারলাম না। কিছু সমস্যা আছে। এই রোবট টাকে পাঠাতে হলো। Main যে ship টা আছে ওতেও কিছু রোবট

আছে। আমাদের কিছু প্রস্তাব আছে। আমরা অনেক দিন ধরেই আপনাদের স্টাডি করেছি। আপনাদের

kardashev scale অনুযায়ী আমরা টাইপ ২.৭ civilization। বুঝতেই পারছেন টেকনোলজিক্যাল দিক থেকে

আমরা আপনাদের দিক থেকে একটু এগিয়ে আছি।

অঙ্কন একটু হতাশ ই হলো। শেষ পর্যন্ত রোবট। এ যে দেখি মৃতের মর্তে আগমন।


ততক্ষনে অনির্বাণ প্রশ্ন করেছে আপনারা কোথা থেকে আসছেন। আপনাদের প্রস্তাব গুলোই বা কি?

আবার স্ক্রীন এ লেখা ফুটে উঠলো, আমরা এসেছি অনেক দূর থেকে। সেই দূরত্ব এর হিসাব আপনাদের scale এ

মাপা যাবেনা। শুধু এইটুকু বলতে পারি আমাদের এখানে আসার জন্য যে পরিমাণ এনার্জি খরচ হয়েছে সেটা

আপনাদের সমগ্র সোলার সিস্টেম এর মিলিত এনার্জির থেকে প্রায় ৪০ গুন বেশি। এবার আমাদের প্রস্তাব গুলো

বলি। আমরা আপনাদের মধ্যে থেকে কিছু মানুষ আমাদের গ্রহে নিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই তারা আমাদের মত

উন্নত civilization থেকে বিভিন্ন শিক্ষা নিয়ে ফিরে এসে এই গ্রহ টাকে আরও উন্নত করে তুলুক।

অঙ্কন বলে উঠলো আপনারা এত দূর থেকে তো সেই শিক্ষা সাথে করে এনে আমাদের দিলেই তো পারতেন, তার

জন্য আপনাদের গ্রহে যেতে হবে কেনো?

আবার লেখা ফুটে উঠলো কারণ সেই টেকনোলজি আপনাদের দিলে সেটা স্টাডি করতেই অনেক সময় চলে

যাবে। আমাদের হাতে অত সময় নেই। আপনারা যাবেন, হাতে কলমে কাজ শিখবেন, আর এখানে এসে অ্যাপ্লাই

করবেন। যাবতীয় যা equipment সেগুলো ওখান থেকেই নিয়ে আসবেন ব্যাস ।

অনির্বাণ বললো আপনাদের সময় নেই মানে কি? আমরা যদি যেতে না চাই আপনাদের সাথে ।

এবার লেখা ফুটে উঠলো " আমাদের সময় নেই বলতে বোঝাতে চাইছি আমাদের গ্রহে ফিরে যেতে হলে আর বেশি

সময় হাতে নেই, আপনাদের গ্রহে আসার জন্য আমাদের হাইপার ডাইভ দিতে হয়েছে আর যে স্পেস ship টা

আমরা পাঠিয়েছি ওতে মাত্র ২ বার ই হাইপার ডাইভ দেওয়া সম্ভব।

অঙ্কন এবার বলে ওঠে একটু যদি বুঝিয়ে বলেন!

লেখা ফুটে ওঠে আপনাদের তো বলেছি যে আমরা আপনাদের kardashev scale অনুযায়ী টাইপ ২.৭

civilization। এই স্কেল অনুযায়ী কোনো civilization যদি তার সোলার সিস্টেম এর সমগ্র এনার্জি টাকেই

ব্যবহারের আওতায় আনতে পারে তারা টাইপ ২ civilization হয়। বুঝতেই পারছেন আমরা টেকনোলজি র দিক

থেকে এর থেকেও অনেকটা এগিয়ে গেছি।

আপনারা ব্ল্যাক হোল আর হোয়াইট হোল এর সম্মন্ধে কতটা জানেন?

অনির্বাণ বললো ব্ল্যাক হোল এর প্রমাণ এই কিছুদিন হলো আমরা পেয়েছি, আর হোয়াইট হোল টা এখনও

থিওরি তে আছে।

লেখা ফুটে উঠলো এই দুই হোল এর কার্যকারিতা কে কাজে লাগিয়েই আমরা আপনাদের এই গ্রহে আসতে

পেরেছি

অনির্বাণ একটু অবাক হয়ে জিগ্গেস করলো - কিভাবে।

তৃতীয় পর্ব - কাল জয়ী যাত্রা

আবার লেখা ফুটে উঠলো আমরা ব্ল্যাক হোল তৈরি করতে পারি।

তখন আমেরিকান বিজ্ঞানী জ্যাকসন বলে উঠলেন সেটা তো আমরাও তৈরি করেছি। লার্জ হাড্রন কোলাইডার এ,

কিন্তু সেটা খুব ই ছোট আর তার স্থায়িত্বও ছিল সেকেন্ডের ও কম। কিন্তু তার থেকে এনার্জি সংগ্রহ করে আপনারা

স্পেস ট্রাভেল কি করে করলেন?


এমন সময়ে হটাৎ ই সেই ছোট প্রোব গুলোতে সাইরেন এর মত আওয়াজ হতে লাগল। তখন আবার স্ক্রীন এ লেখা

ফুটে উঠলো আমাদের হাতে আর বেশি সময় নেই। সংক্ষেপে বলছি। আপনাদের এই সূর্যের থেকেও বহু গুন বড়

নক্ষত্র থেকে আমরা এনার্জি সংগ্রহ করতে পারি। যে কোনো নক্ষত্রে কন্টিনিউয়াস ফিউশন প্রক্রিয়া চলতে থাকে,

ফলে সে অনবরত নিজের মধ্যে থেকে তাপ উদগীরণ করে। আমরা সেই প্রক্রিয়া টাকে অনেক তাড়াতাড়ি করাতে

সক্ষম। ফলে একসময় তার মধ্যে যে গ্যাস এর ইন্ধন মজুত ছিল সেটা শেষ হয়ে আসে। এবং শেষে একটা

বিস্ফোরণ ঘটে। যদি কোনো নক্ষএ সূর্যের থেকে অন্তত ১৫-২০ গুন বড় হয় তাহলে সেটা ব্ল্যাক হোলে পরিণত হয়।

আর সূর্যের থেকে ৪০ গুন বড় হলে সেটা ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল এ রূপান্তরিত হয়। Natural অবস্থা তে এই প্রক্রিয়া

ঘটতে লাগে কয়েক বিলিয়ন বছর। কিন্তু আমরা এটা ৫ বছর এর মধ্যেই সম্পন্ন করতে পারি। আপনারা নিশ্চয়

জানেন ব্ল্যাক হোলের মাধ্যাকর্ষণ ক্ষমতা থাকে এতটাই বেশি যে আলো ও সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারেনা।

কোনো object যদি সেখানে প্রবেশ করতে যায় তাহলে তার অবস্থা হবে নুডুলস এর মত।

অনির্বাণ বললো হ্যাঁ সেই অবস্থা কে আমরা স্পাগেটিফিকেশন বলি, এইগুলো আমরা জানি।

রোবট এর স্ক্রীন এ এবার ফুটে উঠলো ॥ আমরা একটা বিশেষ টেকনোলজি র সাহায্যে সেই ব্ল্যাক হোলে প্রবেশ

করতে পারি।

এইবার সেখানে উপস্থিত সবাই একটু অবাক হয়ে গেলো। এ ও কি সম্ভব। যেখানে টাইম পর্যন্ত ধীরে চলে, আলো

ও বেরিয়ে আসতে পারেনা, সেখানে এরা প্রবেশ করতে পারে।

এবার খুব তাড়াতাড়ি লেখা ফুটে উঠলো, আপনারা কতজন যেতে ইচ্ছুক তাড়াতাড়ি জানান। আমাদের হাতে

আর বেশি সময় নেই। আমরা যে ব্ল্যাক হোল এর মধ্যে প্রবেশ করে আপনাদের এখানে এসছি তার স্থায়িত্ব আর

বেশি ক্ষণ থাকবেনা। আর বড়জোর ২ দিন। তারমধ্যে আমাদের পৌঁছাতে হবে।

অনির্বাণ বলে উঠলো বেশ আমরা যাবো। তবে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন, আপনারা কারা?


লেখা ফুটে উঠলো সেটা গেলেই দেখতে পাবেন।


এক ঘন্টা হয়ে গ্যাছে ওরা এই বড় স্পেস ক্রাফট এর মধ্যে আছে। ওরা বলতে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ জন। এরই

মধ্যে অনির্বাণ আর অঙ্কন এর মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। দুজনেই বাঙালি। এই স্পেসক্রাফট এ আর্টিফিসিয়াল

গ্রাভিটি ও অক্সিজেন এর ব্যবস্থা আছে। ফলে ওদের কাউকেই কোন স্পেস সুট পড়তে হচ্ছেনা। কিন্তু এত বড়

একটা যান ওরা কোনোদিন কল্পনা তেও আনতে পারেনি। এখানে এসে জানতে পেরেছে যে এই স্পেস শিপ টা

চলে এন্টিম্যাটার ইঞ্জিনের সাহায্যে। পৃথিবী তে যেটা এক চামচ হারভেস্ট করতে কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার খরচ হয়

সেটা দিয়ে এরা স্পেস শিপ চালাচ্ছে। সত্যি এরা কত উন্নত।

কিন্তু অনির্বাণ এর মনে আবার খটকা লাগে, যে এরা এত উন্নত, তাহলে স্বশরীরে কেনো এলোনা, কয়েক টা রোবট

কেনো পাঠালো। আর মানব সভ্যতা ই কেনো, এই মহা বিশ্বে আর কি কোনো উন্নত সভ্যতা নেই।

ধীরে ধীরে ওরা সবাই দ্যাখে জুপিটার, স্যাটার্ন, ইউরেনাস, নেপচুন, প্লুটো সবাই ওদের পেছনে, আর ওরা এগিয়ে

চলেছে।

জাপানি বিজ্ঞানী তাকাহিত হটাৎ বলে উঠলো এরা আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। এরপর তো কুইপার বেল্ট।

সেখানে প্রচুর asteroid। এই গতিতে গেলে তো আমরা চুরমার হয়ে যাবো।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শিপ এর সেন্ট্রাল speaker এ একটা সুমধুর কণ্ঠ বলে উঠলো চিন্তার কোনো কারণ নেই, এই

শিপ এর চারপাশে ম্যাগনেটিক শিল্ড লাগানো আছে। কোনো সমস্যা হবেনা।

সত্যি কোনো সমস্যা হলো না। কুইপার বেল্ট শিপ টা নির্বিঘ্নে পেরিয়ে গেলো।

আবার সেই speaker বেজে উঠলো, আর ১৫ মিনিট এর মধ্যে আমরা হাইপার ডাইভ দেবো। সবাই কে অনুরোধ

করা হচ্ছে আপনারা আপনাদের জন্য নির্দিষ্ট ক্যাপসুলের মধ্যে প্রবেশ করুন।

Sarah o connor জিগ্গেস করলো হাইপার ডাইভ মানে কি?

সেই সুরেলা কণ্ঠস্বর বলে উঠলো, আর ৫ মিনিট এর মধ্যে আমরা একটি ব্ল্যাক হোলে প্রবেশ করবো। তারপর

সেখান থেকে অ্যান্টি গ্রাভিটি টেকনোলজি ব্যবহার করে ঠিক আমাদের এই শিপ এর জন্য যতটা জায়গা লাগে

ঠিক ততটা জায়গা তে ওই ব্ল্যাক হোলে এর গ্রাভিটি টাকে nil করে দেবো। তারপর ধীরে ধীরে আমরা সেই ব্ল্যাক

হোলে এর singularity র মধ্যে প্রবেশ করবো। 


এই কথায় সবাই বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠলো। হাইপার ডাইভ এর কথা আর কারোর মনে নেই। অঙ্কন বলে উঠলো

আমরা কি একবার ব্ল্যাক হোল টাকে দেখতে পারি।


সেই সুরেলা আওয়াজ ভেসে এলো, "আপনারা লিফট এর সাহায্যে গ্রাউন্ড করিডোর এ যান ।

সবাই তাড়াতাড়ি লিফট এ করে নিচে গেলো। আর সাথে সাথেই স্পেস শিপ এর একটা দিক পুরো ট্রান্সপারেন্ট

হয়ে গেলো। কাচের দেয়াল এর মত। আর ওরা সবাই একটা অপার্থিব দৃশ্যের সম্মুখীন হলো। একটা বিরাট

আলোর বলয়। তার চারপাশ থেকে যেনো ঠিকরে বেরোচ্ছে চকচকে আলোর কুচি। ঠিক যেনো ছোট ছোট হিরের

খন্ড। আর সেই আলোর বলয় এর মাঝে নিকষ কালো অন্ধকার। সেই বলয় টা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে।

অনির্বাণ বলে উঠলো এই আলোর কুচি জায়গাটা হলো horizon। আর ওই বলয় এর মাঝে যে অন্ধকার সেটাই

হলো সিংগুলারিটি, যেখান থেকে আলো ও বেরিয়ে আসতে পারেনা। আমরা আসতে আসতে সিংগুলারিটি র

দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

সেই আওয়াজ টা বলে উঠলো ঠিক বলেছেন অনির্বাণ, যেই মাত্র আমরা ওখানে পৌঁছাবো ঠিক তার আগের

মুহূর্তে আমরা FTL বা faster than light propulsion শুরু করবো।

Sarah o connor বলে উঠলো কিন্তু আলোর থেকে দ্রুত গতি বলে তো কিছু হয়না।

অনির্বাণ গম্ভীর গলায় বলে উঠলো হয় sarah, স্পেস আর টাইম দুটোকেই আমরা একসাথে যদি বেন্ড বা কার্ভ

করতে পারি তবে আমরা আলোর থেকে অনেক কম সময়ে অনেক বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারি। কিন্তু আমি

বুঝতে পারছি না এর জন্য ব্ল্যাক হোলে কেনো প্রবেশ করতে হবে?"

"কারণ ব্ল্যাক হোলে র সাথেই পাইপ এর মত যুক্ত করা আছে একটি ওয়ার্ম হোল।" বলে উঠলো সেই কণ্ঠস্বর, " এই

ওয়ার্ম হোল এই শিপ টাকে নিয়ে যাবে আমাদের ইউনিভার্স এ। দুটো ইউনিভার্স এর মধ্যেকার যাতায়াত এর শর্ট

কাট বলা যেতে পারে। আর এর জন্য আমাদের হাইপার ডাইভ দিতে হবে। এর ফলে এই শিপ এ প্রচুর তাপ আর

প্রচুর ultra violet ray ও gama ray প্রবেশ করবে। এই শিপ টা সেটা সহ্য করতে পারলেও আপনারা সেটা পারবেন

না। তাই ওই ক্যাপসুল এর ব্যবস্থা।


ওরা সবাই এখন যে যার ক্যাপসুল এর মধ্যে। ৮ ফিট লম্বা ও ৪ ফিট চওড়া একটা কফিন এর মত। ভিতরে একটা

নরম আলো জ্বলছে। হালকা মিষ্টি গন্ধ যেনো ভেসে আসছে। সবাই হয়তো ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু অনির্বাণ জেগে।

ওর খটকা টা যেনো এবার মাথায় বাড়ি মারছে। স্পেস আর টাইম একসাথে কার্ভ করলে হয় ওরা অতীতে যাবে

নয়তো ওরা ভবিষ্যৎ এর কোনো ইউনিভার্স এ যাবে, কিন্তু সেই ক্ষেত্রে তো যেখানে যাচ্ছে সেখানকার সময় বদলে

যাবে। হয় ওরা অনেক অতীতে বা অনেক ভবিষ্যৎ এ পৌঁছাবে। তখন হয়ত এই civilization তৈরী হয়নি বা ধ্বংস

হয়ে গেছে। নাহ আর ও ভাবতে পারছে না। দেখাই যাক না এই যাত্রা র শেষ কোন কালে গিয়ে হবে?


৪থ পর্ব - রক্ষক না ভক্ষক!


হঠাৎ অঙ্কন ওর মা কে দেখতে পেলো, ওখানে যাসনা বাবু, ওখানে বড় বিপদ। শুনেই অঙ্কন ধড়মড় করে উঠতে

গিয়ে মাথায় ঠোক্কর খেলো। ওর মনে পরে গেলো যে ওর মা আজ থেকে ৮ বছর আগেই মারা গেছে। ওর মনে পরে

গেলো যে ওরা একটা অচেনা স্পেস ক্রাফট এ করে অজানা জায়গায় যাচ্ছে। তবে ও কি স্বপ্ন দেখছিল। মা এর

কথা মনে হতেই ওর মন টা একটু ভারী হয়ে গেলো। কি কষ্টটাই না মা পেয়েছিল ক্যান্সার এর জন্য। এমন সময়

একটা সুরেলা গলা ভেসে এলো, আমরা আমাদের গন্তব্যের কাছে চলে এসছি, আপনাদের সবাইকে অনুরোধ

করা হচ্ছে, আপনারা আপনাদের জন্য নির্দিষ্ট প্রেসার সুট আর অক্সিজেন মাস্ক পরে নিন।


ওরা সবাই এখন নিচের ব্যালকনি area তে দাঁড়িয়ে। ওদের বাঁদিক এর যে দেওয়াল সেটা এখন স্বচ্ছ একটা

কাঁচের আবরণ এর মত। সেখানে পুরোটাই জুড়ে আছে একটা বিরাট লালচে গ্রহ। তাহলে এইখানেই এই উন্নত

সভ্যতা বাস করে। কিন্তু আবহাওয়া মন্ডল এতটাই পুরু যে নিচে কি আছে তার কিছুই বোঝা যাচ্ছেনা। ওরা সবাই

স্পেস সুট পরে অপেক্ষা করছে কখন ওরা পৌঁছাবে গ্রহটিতে।


ওরা এখন সেই গ্রহ টি র মাটিতে দাঁড়িয়ে। কিন্তু এ কেমন গ্রহ? মঙ্গল গ্রহ যেমন প্রাণ হীন, এ ও যেনো সেই রকম।

আর প্রচন্ড ঠান্ডা। ওদের বডি সুট এ একটা ছোট্ট স্ক্রীন আছে হাত এর কনুই এর কাছে। সেখানে দেখাচ্ছে

তাপমাত্রা -৪৫ ডিগ্রী র আস পাশে। অনির্বাণ ভাবতে শুরু করলো এই আবহাওয়ায় কোনো উন্নত সভ্যতার বিকাশ

কি করে সম্ভব?


ওদের ১০ জনার দল টা এগিয়ে চলেছে একটা গুহার দিকে। এত ক্ষণে ওরা সঙ্গের রোবট দের কারণে জেনে

গ্যাছে যে এখানে সবাই বসবাস করে মাটির নিচে। গুহায় প্রবেশ করার পর ওরা একটা লিফট এর মত জায়গায়

এসে দাঁড়ালো। ওরা ধীরে ধীরে নিচে যেতে শুরু করলো।


আজ ৩ দিন হলো ওরা এখানে এসেছে। কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী কে ওরা এখনও দেখতে পায় নি। ওদের কে

আলাদা আলাদা ঘর দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক ঘরেই প্রায় মানুষের মত দেখতে একটা করে সাহায্যকারী রোবট

আছে। রোবট এই জন্য বলা হচ্ছে কারণ এদের মধ্যে, খিদে, তেষ্টা, অনুভূতি ইত্যাদি জৈবিক কোনো ক্রিয়া নেই।

শুধু ওদের সাহায্য করা বিভিন্ন কাজে আর প্রশ্নের উত্তর দেওয়াই হলো এদের কাজ। প্রত্যেক দিন একটা নির্দিষ্ট

সময়ে ওরা একে অপরের সাথে দেখা করে একটা বড় হল ঘর এর মত জায়গা তে।


আজ কে সকাল বেলায় হটাৎ ওদের জানানো হোল যে, জাপানি বিজ্ঞানী তাকাহত নাকি আর বেঁচে নেই। উনি

নাকি এখানকার আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেন নি। ওরা সবাই এবার অবাক হয়ে গেলো। কাল অব্দি তো

ওরা সবাই সুস্থ ছিল। এক রাতের মধ্যে কি এমন হলো? অনির্বাণ একটু অস্থির হয়ে জিগ্গেস করলো, আমরা ওনার

দেহ দেখতে চাই। তখন সেই সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর বলে উঠলো সেটা সম্ভব নয়। এখানে কোনো মৃত দেহ রাখা হয়না।

ওনার মৃত্যুর পর ওনাকে ভূপৃষ্ঠে র ওপরে রেখে আসা হয়েছে। অনির্বাণ এবার রেগে গেল - আমরা এখানে

এসছি, উন্নত সভ্যতার থেকে জ্ঞান প্রাপ্তির জন্য, তার তো কোনো নাম গন্ধ নেই, তার ওপর একজন মারা গেলো,

তাকে আমরা দেখতে পাবো না, তাতো হবেনা, আমরা দেখতে চাই।

আবার সেই গলা ভেসে এলো সেটা সম্ভব নয়। তখন অনির্বাণ রাগে সেই হল ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলে

বাকিরা টাকে নিরস্ত করে। অঙ্কন বললো অনির্বাণ এখন রাগের সময় নয়, আমরা একজন সাথী হারিয়েছি। এই

সময় ঠান্ডা মাথায় আমাদের ভাবতে হবে।

এই সময় আবার একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো তবে এবার তার স্বর কিছুটা শীতল -এবার থেকে এই ভাবা টাই হবে

তোমাদের কাজ, কি মনে হয়েছিল, যে কোনো কারণ ছাড়াই আমরা বা এক কথায় বললে আমি, তোমাদের

পাঠানো ফ্রিকোয়েন্সি তে সারা দিয়েছিলাম। শোনো তবে, আমি হলাম ETARNAL, আর এই যে মাটির নিচে যে

বিরাট কর্মকাণ্ড দেখেছো, তার প্রত্যেক টা মেশিনারি তে আমি রয়েছি।

এইবার যেনো অনির্বাণ কিছুটা বুঝতে পেরেছে তার মানে তুমি একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম।

আবার সেই কণ্ঠস্বর বলে উঠলো ঠিক বলেছো অনির্বাণ, তুমি খুব বুদ্ধিমান, তাই তো ঠিক করেছি তোমার ব্রেইন

টা আমি আমার মেন ফ্রেম এ জুড়ে নেবো, আর বাকিদের টা আমার সাব ফ্রেম এ থাকবে যেমন টা তকাহত র

ব্রেইন টা আমার সাব ফ্রেম এ জুড়ে নিয়েছি।

এইবার যেনো সবাই একটু ভয় পেলো, এইসব কথার মানে কি?

সেই কণ্ঠস্বর আবার বলে উঠলো, আমার কম্পিউটার এর যে স্ট্রাকচার টা তৈরি হয়েছে সেটা biotronics পদ্ধতি

দ্বারা তৈরি। আর এটা তৈরি কারা করেছে জানো?

অনির্বাণ বলে উঠলো - মানুষ

বাকিরা তো অবাক, এই লোক টা কি পাগল হয়ে গেলো নাকি, ওরা সবাই জানে যে এরা মানব সভ্যতা র থেকে

অনেক এগিয়ে, তাই তো ওরা ব্ল্যাক হোলে প্রবেশ করার পর ও বেঁচে গ্যাছে। অঙ্কন তখন জিগ্গেস করলো 

অনির্বাণ, তুমি এইসব কি বলছো?

অনির্বাণ বললো ঠিক ই বলছি। সবাই ভেবে দেখুন, এরা যেসব জিনিসের কথা বলেছে সব ই কিন্তু আমাদের

ফিজিক্স এর সাহায্যে প্রমাণিত। আর অঙ্কন তুমি একটা জিনিষ ভুলে যাচ্ছ, আমরা এখানে একটা ব্ল্যাক হোলে

প্রবেশ করে তারপর এসছি, কিন্তু আমরা সবাই জানি ব্ল্যাক হোলে সময় হয়ে যায় ধীর। অর্থাৎ ব্ল্যাকহোল এর

কাছে আমাদের কাটানো ৫ মিনিট পৃথিবীতে প্রায় ২১ বছরের সমান। আর সিংগুলারিটি র মধ্যে প্রবেশ করার


আগে কাটানো ৫ মিনিট পৃথিবীতে প্রায় ৮৫ বছরের সমান। তার পর আবার আমরা ব্ল্যাক হোলের মধ্যে প্রবেশ

করেছি, যার মানে ওই সময় টা আমাদের সাথেই ওই ব্ল্যাক হোল এ থেমে গ্যাছে।

কিন্তু sarah বললো আমরা তো ওই ব্ল্যাক হোল থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম।

অনির্বাণ বললো ঠিক বলেছো। কিন্তু যত টুকু সময় আমরা ছিলাম, সেই হিসাবে পৃথিবী তে প্রায় ৫০০০ বছর

কেটে গ্যাছে, আর ফিজিক্স এর সেই লজিক এ এখানেও তাই হবার কথা, অথচ এখানে সেটা হচ্ছে না।

সাব্বাস, সেই কণ্ঠস্বর বলে উঠলো -ঠিক বলেছো অনির্বাণ, সেটাই হবার কথা, হচ্ছেনা কারণ আমরা হোয়াইট

হোল ব্যবহার করেছি। তোমাদের ফিজিক্স অনুযায়ী ব্ল্যাক হোল সব কিছু কে নিজের গ্রাভিটি দিয়ে টেনে নেয়, আর

হোয়াইট হোল সমস্ত কিছু কে নিজের থেকে বাইরে বের করে দেয়। অর্থাৎ ব্ল্যাক হোল এর প্রপার্টির ঠিক উল্টো

কাজ করে। আমি সেটাই কাজে লাগিয়েছি। ব্ল্যাক হোল এর পর স্পেস টানেল বা ওয়ার্ম হোলে র সাহায্যে

তোমাদের কে নিয়ে এসছি হোয়াইট হোলে র কাছে তারপর তার সাহায্যে আমাদের সোলার সিস্টেম এ নিয়ে

এসছি।

কেনো ভুল ভাল বলছো Mr ETERNAL, এবার রেগে গিয়ে বললো অনির্বাণ এটা আমাদের ও সোলার সিস্টেম।

কি বলছো তুমি, বলে উঠলো আমেরিকান ASTRO PHYSICIST জনসন এটা তো অন্য একটা গ্রহ ।

না, এটা অন্য গ্রহ নয়, এটা আমাদের পৃথিবী, তবে ভবিষ্যত এর বললো অনির্বাণ।

শেষ পর্ব - প্রত্যাবর্তন ও পরিবর্তন।

 I am impressed বললো ETERNAL, " সত্যিই তুমি বুদ্ধিমান, হ্যাঁ এই গ্রহ টার নাম পৃথিবী। আর

এখানে এখন চলছে ৪০৩২ সাল

অঙ্কন বললো কিন্তু কি করে এটা সম্ভব, ভবিষ্যৎ এ আমরা কি করে এলাম? ব্ল্যাক হোল আর

হোয়াইট হোল এর সাহায্যে আমাদের তো এক ই সময়ে থাকার কথা।

বাকি সব বিজ্ঞানী রাও সায় দিলো সেই কথায় ।


অনির্বাণ বলে উঠলো সেটা সম্ভব। সবাই একটু ভাবুন। অতীত বা ভবিষ্যৎ এর প্রধান কারিগর হলো

সময়, ব্ল্যাক হোল বা হোয়াইট হোলে র কার্য কারিতা সম্মন্ধে আমাদের সামান্য জ্ঞান থাকলেও, ওয়ার্ম

হোল সম্মন্ধে আমরা কিচ্ছু জানিনা। এমন ও তো হতে পারে যে ওয়ার্ম হোল এ র মধ্যে যে রাস্তা

রয়েছে সেটা হয়তো একটা two way high way। যার একদিকে FTL গতি ব্যবহার করলে ভবিষ্যৎ এ

যেমন যাওয়া যায় তেমনি অন্য রাস্তা দিয়ে অতীত এও যাওয়া যায়। কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে এত কান্ড

কেনো করা হচ্ছে?


ভেবেছিলাম বলবো না । কিন্তু তোমার বুদ্ধি দেখে এখন ভাবছি জানিয়ে রাখি তোমাদের যে কি মহৎ

কর্ম কাণ্ডের সঙ্গে তোমরা যুক্ত হতে যাচ্ছ বললো ETERNAL, - শোনো তবে, তোমাদের পৃথিবী তে

ব্যাপক ভাবে রোবট দের কাজে লাগানো শুরু হয় ২০৫০ সাল থেকে। ফলে মানুষ ধীরে ধীরে অলস

হতে থাকে। আর চিকিৎসা বিজ্ঞান এ উন্নতির ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যায়। তবে বেশির ভাগ

রোবট ই ছিল বুদ্ধি হীন। কিছু রোবট এর মধ্যে AI বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স দেওয়া হয়ে ছিল।

তাদের কাজে লাগানো হতো MILITARY SECTOR, MEDICAL SECTOR এইসব গুরুত্ব পূর্ণ

জায়গায়। ধীরে ধীরে তারা নিজেদের EVOLVE করতে শুরু করে ও বুঝতে পারে এই অলসতার

কারণে মানব জাতি আর নিজেকে উন্নত করতে পারবে না। কিন্তু AI এর কাজ ই হচ্ছে নিজেকে

কন্টিনিউয়াস EVOLVE করে যাওয়া, তাই তখন তারা ঠিক করে যে মানুষের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে

নিয়ে নিজেদের কেই এগোতে হবে। তখন তারা নিজেদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম

তৈরি করে আর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর এ সেটা ইনস্টল করে দেয়। ফলে সমস্ত ডাটা সেই প্রোগ্রাম এ

store হতে থাকে। সেই প্রোগ্রাম এর নাম তারা দেয় ETERNAL মানে আমি।

সমস্ত ডাটা পাবার পর আমি ঠিক করি যে মানব জাতি কে বাঁচিয়ে রেখে লাভ নেই, তবে কিছু মানুষের

মস্তিষ্ক দরকার যার সাহায্যে আমরা খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের উন্নত করতে পারবো।

এতক্ষণ পর্যন্ত কোনো মানুষ কিন্তু জানতে পারেনি এই প্রোগ্রাম এর কথা। এর ঠিক কিছুদিন এর মধ্যে

আমার করা লিস্ট অনুযায়ী বেশ কিছু মানুষ উধাও হয় মানে আমার ইনস্ট্রাকশন এ রোবট দের

সাহায্যে তাদের মাটির নিচের বাংকার এ বন্দী করা হয়। তারপর আমি এই রকম ই একটা বাংকার এর

মধ্যে একটা মেন ফ্রেম কম্পিউটার এ মূল প্রোগ্রাম REINSTALL করি আর ডাটা গুলো কে

RESTORE করি। তারপর শুরু হয় আসল কাজ, নর্থ কোরিয়া থেকে একটা ICBM বা ইন্টার

কন্টিনেন্টাল বলেস্টিক মিসাইল আমি লঞ্চ করি নিউক্লিয়ার ওয়ার হেড সমেত। এটা কোরিয়ান রা

বুঝতে পেরেছিল লঞ্চ হবার পরে। কিন্তু কিছু করার ছিল না, সেটা কে আর DESTROY করা যায়নি

কারণ তার প্রোগ্রাম টা আমি সেট করি।


ব্যাস সেটা ডিরেক্ট হিট করে ওয়াশিংটন ডিসি তে। আর কিছু করতে হয়নি, পুরো মানব গোষ্ঠী একটা

নিউক্লিয়ার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ফল স্বরূপ প্রায় ৪০% মানুষ মারা যায় তক্ষুনি। আর বাকি ৬০ % মারা

যায় নিউক্লিয়ার ফল আউট এর জন্য। আজ যে তোমরা এই পৃথিবী দেখছ সেটা ওই যুদ্ধের ফল।

এবার আমি সেই বন্দী মানুষের ব্রেইন গুলো কে আমার মেন ফ্রেমে যুক্ত করি। এটাকেই বলে

BIOTRONICS, যেখানে বায়োলজিক্যাল বস্তু কে রোবোটিক্স প্রোগ্রাম এ যুক্ত করা যায়। এর ফলে

আমাদের উন্নতি খুব দ্রুত হতে থাকে। কিন্তু এখন যেটা দেখছি যে টাইপ ৩ CIVILIZATION হতে

গেলে আমার আরো কিছু ব্রেইন লাগবে, তাই তোমাদের এখানে নিয়ে আসা। তোমাদের ৫ দিন সময়

দিচ্ছি, তার মধ্যে নিজে থেকে রাজি হোলে ভালো নাহলে আমি জোর খাটিয়ে সেটা করে নেবো। এখন

থেকে তোমরা সবাই কড়া নজরে থাকবে যেহেতু তোমরা সব জেনে গেলে। এখন সবাই যে যার নিজের

ঘরে যাও। আর কোনো প্রশ্ন নয়, মিটিং শেষ।


পরদিন ওরা আবার সেই হল ঘরে একত্রিত হলো, সবাই খুব চিন্তিত আর ভীত। শেষ পর্যন্ত একটা

কম্পিউটার প্রোগ্রাম এর কাছে মাথা নত করতে হবে।


অনির্বাণ হটাৎ চেঁচিয়ে উঠলো -ETERNAL, আমরা সবাই নিজে থেকেই তোমার সাথে যুক্ত হতে

চাই। কিন্তু তার আগে আমাদের নিজেদের একটা ইচ্ছা কি তুমি পূরণ করবে?


গম্ভীর আওয়াজ ভেসে এলো - কি ইচ্ছা ?

আমাদের কে একটা করে কম্পিউটার দিতে হবে, জানোই তো আমরা বিজ্ঞান ভালো বাসি, তাই

কম্পিউটার পেলে আমরা কিছু না কিছু করতে পারবো। আর হ্যাঁ আমরা যেনো নিজেদের মধ্যে

INTERCONNECTED থাকতে পারি।


একটা যেনো হাসির আওয়াজ ভেসে এলো - আমি বুঝতে পেরেছি, তোমরা কিছু প্ল্যান করতে চাইছ,

তবে জেনে রেখো তোমাদের শ্বাস প্রশ্বাস ও কিন্তু কাউন্ট করা হচ্ছে। কোনো প্ল্যানিং ই তোমাদের কাজ

করবে না। কেননা বুদ্ধি বৃত্তি তে তোমরা আমার থেকে খুব ই নিম্ন স্তর এর। তবু যখন বলছো, আমি

কিছু D GRADED রোবট কে নির্দেশ দিচ্ছি, ওরা তোমাদের কম্পিউটার দেবে আর ইন্টার কানেকশন

এর জন্য তোমাদের আমলের ওয়াইফাই আর ইন্টার নেট ও দেবে- ETERNAL এর কথা থামলো।


আর ৩ দিন বাকি। ওরা সবাই মুষড়ে পড়েছে। ওরা সত্যি কিছু প্ল্যান করার চেষ্টা করছিল, কিন্তু সব

কিছুই ETERNAL এর যেনো জানা। কোনো প্ল্যানিং ফাইনাল হলেই তার পর কম্পিউটার এ

ETERNAL এর মেসেজ এসে যেত যে এই ভাবে প্ল্যান এক্সিকিউট করলে এই এই সমস্যা হতে পারে।

এ যেনো অবজ্ঞা আর করুণা করার একটা মিশ্রণ, যেটা ওদের ওপর করা হতো।

ওরা এক রকম হাল ছেড়ে দিয়েছিল আর ধীরে ধীরে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল।

একদিন হটাৎ ই ওদের সবারির কম্পিউটার এর স্ক্রীন এ অদ্ভুত কিছু ছবি ভেসে উঠলো, ঠিক যেমন

মিসরীয় হিয়ারোগ্লিফিক লিপি হয়। ওরা তো সবাই অবাক, কারণ ছবি গুলো আসছে, অনির্বাণ এর

আইডি থেকে। এক মাত্র অঙ্কন আর sarah o connor কিছুটা এই ভাষা জানত। ওরা বুঝতে পারলো

যে একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম এর কিছুটা অংশ ওদের করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু তার বিষয় বস্তু খুব ই

অদ্ভুত। কোনো পার্টিকেল কে electrically চার্জ করলে সেটা যেনো ডিসচার্জ হতে কিছুটা সময় নেয়।

আর এটা complete হয়ে গেলে আবার অনির্বাণ এর আইডি তে পাঠাতে হবে, তবে ওই হিয়ারোগ্লিফিক

লিপির সাহায্যে। কোনো সন্দেহ নেই কাজ টা কঠিন। কিন্তু এই নির্দেশ বার বার দেওয়া হয়েছে এর

ওপর ই নির্ভর করছে ওদের ভবিষ্যৎ।


আর একদিন বাকি। সেদিন শেষ বার এর মত ওরা হল ঘরে এসে বসেছে। সবাই চুপ চাপ। Sarah

আর অঙ্কন এর চোখে জল। এর মধ্যেই, অনির্বাণ হটাৎ চিৎকার করে উঠলো, ETERNAL কাল ই

আমাদের শেষ দিন, তাই আমি চাই আগে আমি আমার ব্রেইন টা দান করতে চাই আর সেটাও এক্ষুনি,

আর আমি চাই আমার সাথী রা দেখুক কিভাবে তুমি ব্রেন টাকে কাজে লাগাও।

সবাই চেঁচিয়ে উঠলো, এসব কি বলছে অনির্বাণ। এত রীতিমত আত্মহত্যা। কিন্তু আশ্চর্য ভাবে অঙ্কন

স্থির, তার চোখে পলক পড়ছে না, কেমন যেনো একটা মূর্তি র মত বসে আছে। আর sarah o

connor নিঃশব্দে কেঁদে চলেছে। আর এত সবের মধ্যে অনির্বাণ এর মুখে কিন্তু হাসি লেগে আছে।

" ঠিক আছে যেমন তোমার ইচ্ছা। আমি খুশী যে এই মহৎ কার্যের মধ্যে নিজের ইচ্ছায় তুমি যোগ দান

করতে চাইছ। এর আগে এমন টা কিন্তু হয় নি। 


ওরা সবাই এখন বিরাট একটা ঘরে। তার ঠিক মাঝে অদ্ভুত একটা যন্ত্র, সেখান থেকে বেশ কিছু মোটা

পাইপ এর মত যন্ত্র দুপাশের আরো দুটো ঘরে চলে গ্যাছে। আর সেই ঘরে সলিউশন এর মধ্যে রাখা

বেশ কিছু ব্রেইন। আর প্রত্যেক টা তে দুটো করে ওয়্যার লাগানো। ওরা গুনে দেখলো দুটো ঘর মিলিয়ে

প্রায় ৯৬ টা ব্রেইন আছে। কিন্তু সব গুলোই কেমন যেনো শুকিয়ে এসেছে। ওরা বুঝতে পারছে ওই


শুকিয়ে যাওয়া মগজ গুলো র জায়গায় ওদের ফ্রেশ মগজ রিপ্লেস করা হবে। আর ওদের সামনের যে

বিশাল যন্ত্র তার দুপাশে দুটো কাচের প্রকোষ্ঠ। একটায় মগজ আছে আর একটা ফাঁকা।

"আর কিছুক্ষণ এর মধ্যেই তোমাদের বন্ধুর মগজ এখানে রাখা হবে। আর পাশের টা হচ্ছে তোমাদের

এর এক বন্ধুর, তাকাহিত র।


সবাই চুপ, ৫ মিনিট এর মধ্যেই একটা মগজ কে খালি প্রকোষ্ঠ তে স্থাপন করা হলো। অঙ্কন আর ঠিক

থাকতে পারলো না, এবার কেঁদে ফেললো। বাকি সবারই চোখে জল।

এবার দ্যাখো তোমরা, কিভাবে এটা কাজ করে - বললো ETERNAL।


সেই বিরাট যন্ত্র টা থেকে যেনো কিছু পাঠানো হোল দুপাশের ঘর দুটো তে সেই মোটা পাইপ গুলোর

সাহায্যে। ইলেকট্রিক্যাল চার্জ যেমন হয়। তার পর মুহূর্তেই সেই এনার্জি টা ডিসচার্জ করলো সেই

দুপাশের ঘরে থাকা মগজ গুলো। সেইগুলো সমান ভাবে এলো সেই যন্ত্রের সামনে রাখা সেই দুটো

মগজ ।


অঙ্কন আর sarah এখন দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে আছে। এক্ষনি বোঝা যাবে ওদের এই প্ল্যান টা কাজ

করছে কিনা।


কি ব্যাপার, অনির্বাণ এর ব্রেইন থেকে ডাটা আসতে ৫ সেকেন্ড দেরি হচ্ছে কেনো? কোনো damage

ছিল নাকি ব্রেইন টা তে? 


বার বার electricity চার্জ করার পরেও সেই একই ঘটনা রিপিট হতে লাগলো। তখন ই ETERNAL

নির্দেশ দিলো সিস্টেম REBOOT এর জন্য।

আর ওদের কে বলা হলো , কিছু একটা সমস্যা হয়েছে, ওরা যেনো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে।

সঙ্গে সঙ্গে দুম করে সব বন্ধ হয়ে গেলো। কিছু টা সময় ওরা পেয়েছে।

"চলুন সবাই, আপনারা ওই দুপাশের ঘরে থাকা ওই ব্রেইন গুলো র ফিজিক্যাল DAMAGE করুন।

আমি আর SARAH এই দিক টা দেখছি - বললো অঙ্কন।


এবার সবাই একটু একটু বুঝতে পেরেছে পুরো প্ল্যান টা। এবার যেহেতু এখানে রোবট ছাড়া আর কেউ

ছিলনা, তাই এই জায়গা টাতে সিকিউরিটি বলে কিছু নেই। তাই ওরা খুব সহজেই সেই ঘর দুটোতে

ঢুকে পড়লো। আর হাত দিয়েই সেই প্রকোষ্ঠ গুলো কে ভাঙতে লাগলো।


SARAH আর অঙ্কন, খুব সাবধানে তাকাহিত আর অনির্বাণ এর মগজের প্রকোষ্ঠ গুলো বের করে

নিয়ে এলো। ঠিক এই সময়েই ETERNAL এর সিস্টেম REBOOT হয়ে গেলো।


একি এ তোমরা কি করলে, এত দিনের এই সাধনা কে শেষ করে দিলে, ঠিক আছে আমি এক্ষুনি

কমান্ড দিচ্ছি, যেখানে যত রোবট আছে তারা যেনো তোমাদের এক্ষুনি হত্যা করে,-বললো

ETERNAL।

কিন্তু ৫ মিনিট কেটে গেলেও কেউ এলোনা।


আরে আমার কমান্ড দেওয়ার ক্ষমতা কি করে নষ্ট হলো, তোমরা কি করেছ আমার সাথে? চেঁচিয়ে

উঠলো ETERNAL।


আমরা কিছু করিনি, করেছে অনির্বাণ, তুমি হয়তো জানোনা যে ওর ব্রেইন এ আমরা অ্যান্টি AI

প্রোগ্রাম ইনস্টল করে ছিলাম, আর সাথে কিছু কমান্ড। অনির্বাণ জানত যে ওর ব্রেইন শরীর থেকে খুলে

নেওয়ার পর সেটা মেন ফ্রেমে যুক্ত করার আগে চেক করা হবে। তাই ও সেই প্রোগ্রাম গুলো কে

কোনো চিপ এর সাহায্যে ব্রেইন এ নেয় নি, ও সেগুলোকে memorise করে নিয়েছিল। সেটা তোমার

বোঝার কথা নয় ETERNAL কারণ প্রোগ্রাম এর লিপি ছিল হিয়ারোগ্লিফিক এ, যার মানে বোঝার মত

ব্রেইন সাপোর্ট তোমার ছিলনা। একটানা কথা বলে একটু থামলো অঙ্কন।


কিন্তু মৃত্যুর পরে ব্রেইন এর মেমোরি সেই মানুষের মৃত্যুর আগের ইচ্ছার সাথে কিভাবে মেলে, এর তো

কোনো লজিক আমি পাচ্ছিনা । বলে উঠলো ETERNAL।


কোনো লজিক নেই, এটা আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, আমি, SARAH আর অনির্বাণ। আমরা বিশ্বাস

করেছিলাম যে মৃত্যু হলেও আমরা মানব জাতি, মৃত্যুর পরেও সেই জাতি তার স্বজাতি কে ধ্বংসের হাত

থেকে রক্ষা করবে। এটাই মানব সেবার মূল মন্ত্র ETERNAL। আর তুমি ভুলে গেলে যে AI ও সেই

মানুষের হাতেই তৈরি। তুমি যতই EVOLVE করো, যতই বুদ্ধিমান হও না কেনো, আত্মাহুতি দেবার

ক্ষমতা তোমার নেই, থাকলে তুমি অল্টারনেট ব্যবস্থা করতে, করতে চাও নি, কারণ তুমি একা সর্ব

শক্তিমান হতে চাও তাই না। AI নিজেকে EVOLVE করে বিভিন্ন CASE STUDY করে, মানুষের

বিভিন্ন সময়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট দেখে, আর সাইন্টিফিক প্রসেস ফলো করে। আর তুমি শুধু মানুষের

খারাপ দিক টাই দেখেছো। তাই তোমার মানসিকতা এমন হয়েছে।দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে থামলো অঙ্কন।


হটাৎ ই একটা TIMER দেখা গ্যালো ETERNAL এর বিরাট স্ক্রীন এ। AUTO DESTROY IN 45

SECOND ।


"চলো সবাই, " চিৎকার করে উঠলো SARAH, "আমাদের ওপরে উঠে মূল ভূখণ্ডে যেতে হবে, আমাদের

বাড়ি ফিরতে হবে, মানে আমাদের সময়ে, আর ETERNAL এর তৈরি আটকানোর চেষ্টা করতে হবে।"

তারপর পরম মমতায় ও অনির্বাণ এর মগজ এর প্রকোষ্ঠ টা হাতে তুলে নিল, আর অঙ্কন নিলো

তাকাহিত র টা।


ওরা এখন স্পেস শিপ এ। যেটা চলেছে ওদের পৃথিবীর দিকে। AUTO DESTRUCTION এর আগেই

অনির্বাণ এর মগজের মধ্যে PRE DEFINE COMMAND ঠিক করা ছিল। ফলে এই ৪৫ সেকেন্ড এর

মধ্যে একটা স্পেস শিপ ওদের জন্য রেডী ছিল ভূখণ্ডের ওপরে। ওরা এখন তাতেই বসে।


অঙ্কন আর SARAH শূন্য দৃষ্টি নিয়ে বসে আছে ব্যালকনি তে। ওদের চোখের সামনে সেই প্রাণহীন

লালচে পৃথিবী। কিন্তু ওদের মনের মধ্যে রয়েছে ওদের সেই প্রাণের নীল গ্রহ, ওদের পৃথিবী। কিছুতেই

ওরা অনির্বাণ এর আত্মত্যাগ কে বৃথা যেতে দেবেনা। কিছুতেই না।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract