Suva Chakraborty [ অগ্নিদ ]

Romance Tragedy Classics

4.2  

Suva Chakraborty [ অগ্নিদ ]

Romance Tragedy Classics

মৃত্যুপত্র

মৃত্যুপত্র

5 mins
754


মৃত্যুপত্র


২৬শে জানুয়ারী, ২০১২ । সময় তখন সন্ধ্যে ৬টা বেজে ৪৫ মিনিট । দক্ষিনেশ্বর মন্দিরে পুলিশের জিপের লাইন , ও ঘাটে পুলিশের ভিড় । ঘাটের চারিপাশ একটা দড়ি দিয়ে ঘেরা । কি হয়েছে , কেন এই পুলিশ ? তা জানার জন্যে লোকের ভিড়, বালি ব্রিজ , ও ঘাটের চারিপাশ থেকে সব লোক দেখছে , কি ব্যাপারটা ! কৌতুহলী সব চোখ, - মানুষের পরস্পরের দিকে ।

অফিসার মল্লিকবাবু , সিনিয়র কাঞ্চনবাবুর দায়িত্বে এই কেস । ওপরওয়ালা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে । তবে কেসটা একটু জটিল । কাঞ্চনবাবু মলিকবাবুকে জিগ্যেস করলেন , - লাশটা পাওয়া গেছে কি?

- না স্যার , তবে ডুবুরি পাঠানো হয়েছে , দেখা যাক কি হয় !

কেসটা হল এই রকম - গতকাল , অর্থাৎ ২৫ তারিখ , বরানগর থানায় একটি মেয়ে আসে এবং এসেই একটি ছেলের নিখোঁজ হবার রিপোর্ট লেখায় । দুজনের মধ্যে সম্পর্ক বলতে তারা হল প্রেমিক-প্রেমিকা । গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৪ তারিখ তাদের দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয় । মেয়েটির অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়ে যাবার দরুন মেয়েটি ছেলেটাকে ছেড়ে যাবার কথা বলে । এটা শোনার পরই ছেলেটি রাগ করে বাড়ি চলে যায় । বুধবার সকালে মেয়েটি ছেলেটির তরফ থেকে একটি চিঠি পায় এবং ভয় পেয়ে থানায় এসে রিপোর্ট করে । ২৪ ঘন্টা পর যখন ছেলেটিকে খুঁজে পাওয়া গেলো না, তখন চিঠিতে উল্লিখিত স্থান , অর্থাৎ এই দক্ষিনেশ্বরে পুলিশ কর্মীদের এই বন্দোবস্ত ।

তন্ন তন্ন করে ঘাট খোঁজ করা হল । খানিক পর, যখন ঘড়িতে সময় প্রায় ৮টা, তখন ডুবুরিদের চিৎকার শোনা গেলো । একটা বড়ো কিছু ওরা পেয়েছ । পরে দেখে সেটা বোঝা গেলো সেটা একটা লাশ । বডি তুলে আনার পর ডাক্তার ও ডাকা হয়েছিল । ডাক্তার পরীক্ষা করে বললেন, লাশটির ১ দিন হতে এখনো ১ ঘন্টা দেরি ।

মল্লিকবাবু বললেন - দেখুন স্যার এই কেস আমার মনে হয় প্রেম সম্বন্ধীয় । আত্মহত্যার এক জটিল প্রমাণ ।

সাব ইন্সপেক্টর শশাঙ্কবাবুকে ডেকে বললেন - মিস দাস কে খবর দিন ।

এদিকে কাঞ্চনবাবুকে লাশটিকে পোস্টমর্টেমের জন্যে পাঠিয়ে দিলেন । প্রায় আধ ঘন্টা পর দারোগা মেয়েটিকে নিয়ে হাজির হল । - দেখুন মিস দাস, একটা লাশ পাওয়া গেছে । বডি থেকে শনাক্ত করার কোনো জিনিস পাওয়া যায় নি । আমরা অনুমান করছি, সেই লাশটি সেই ছেলেটির, যার নিখোঁজ হবার রিপোর্ট আপনি লিখিয়েছিলেন । লাশটিকে পোস্টমর্টেমের জন্যে পাঠানো হয়েছে । আপনি হাসপাতালে আমাদের এক অফিসারের সাথে যান । লাশটি প্রথম সেখানেই নিয়ে যাওয়া হবে ।

মিস দাস সেই চিঠিটা আবার পড়তে লাগলেন !

-

প্রিয়তমা রিমা,

আজ সন্ধ্যেতে তোমার কথা ভারি মনে পড়ছে । এই ব্রিজ থেকেই দেখা যায়, ওই যে গাছগুলি ; আঁধো অন্ধকারে, শীতের ঠান্ডা হাওয়াতে ; ওই কি তোমার ঘর? হয়ত বা ! কেন পড়ছে মনে তোমার কথা বলতে পারো? হয়ত বা শেষবার ! হয়ত বা জ্বালানো বন্ধ হবে আজ !

মা নেই, বাবা আছে । ছেলেবেলা থেকে লেখার সখ, তাই মা বলতেন - " ছেলে আমার লেখক হবে ! " যদি হতে পারতাম? আমার বাবার অবশ্য এসব পছন্দ হত না । তাই মা যাবার পর লেখার সখটাও গেল হারিয়ে ।

মার একটা কথা এখন খুব মনে পড়ছে । মা বলতেন - " যেদিন আমি থাকবো না, তখন বুঝবি ! এ জীবন তো একাই রে বাপ্ ! " এটা শুনেই মা কে জড়িয়ে ধরতাম ! বলতাম - " চুপ করো তো মা ! "

কিন্তু বৃথা এ বাক্যব্যয় । মা সেই গেল । আর তারপর তুমি এসে গেলে কোথা দিয়ে, হঠাৎ করে ভালোবেসে ফেললে । সত্যি ভালোবাসা একটা জিনিস বটে !

এই হৃদয় তব তোমার ওগো

নিঃশ্বাসের' শেষ ।

এতকাল ভালোবেসে তোমারে

কাটিল যে বেশ ।

আজি ; শীতের কোলে

ভাসিয়াছি মোর

প্রেম যুগলের স্বর্গ-কোলে

কাটিয়া ঘনঘোর !

শেষ ঝিরঝির বৃষ্টির কোল

শীতল' বাদল ।

সর্বস্বহারা হইয়া শেষে

আজি হইয়া অমর

এই প্রেম-যুগল ।

নাচিয়া চিত্ত ও মন ।

সকলি হেথা যুগল-দ্বয়ের

শেষ হইল এ-ক্ষন ।

মনে রাখিয়া সকল পল

মৃত্যুর কোল _

যেন নিদ্রা সম দোল !

মোদের জীবন ' যেন

উন্মত্ত - প্রেমময়

মায়াময় ॥


এটাই আমার শেষ কবিতা ! জানি কবিতা তোমার পছন্দের বিষয় নয়, তবু লিখলাম ! চললাম ! ভালো থেকো ।

ইতি

হতভাগা সমর


27শে জানুয়ারি, সকাল 10 টা । মিস দাসের বাড়িতে পুলিশ । এই প্রশ্ন শুধু আমার আপনার নয় । এ প্রশ্ন সকলের । তদন্ত তো মিটেই গিয়েছিলো, তবে আবার পুলিশ কেন? রাতে কি কিছু হল আবার?

মল্লিকবাবু ও শশাঙ্কবাবু মিস দাসের ঘরে কিছু খুঁজছেন যেন ! বড়ো ঘরে মিস দাসের মা, বাবা বোন এক দিকের কোণে দাঁড়িয়ে রয়েছে ! সবাই কাঁদছে ! ডান দিকের সোফাটার পাশে বিছানা, এবং বাঁ দিকের মেঝেতে পড়ে রয়েছে একটা লাশ । লাশের মুখে সাদা গ্যাঁজলা বেরিয়ে আছে । স্পষ্টতই বোঝা যায় যে মিস দাস আত্মহত্যা করেছেন ।

মল্লিকবাবু ও শশাঙ্কবাবুর অল্প খোঁজাখুঁজিতেই মিস দাসের হাতের মুঠো হতে এক চিঠি পাওয়া গেল । হাতের লেখা মিস দাসের এবং সব শেষে লাশটা পাঠানো হল পোস্টমর্টেমে ।

- প্রিয় সমর

তুমি যেখানেই থাকো বা চলে যাও না কেন? একা যেতে পারো না । আজ তোমার লাশ দেখে বমি করে ফেলেছি, ভাবি নি তো বলো আমার জীবিতাবস্থায় তোমার মৃতদেহটিকে নিজের চোখের সামনে এরকমভাবে দেখতে হবে ! ভেবেছিলাম তুমি অন্যকোথাও যাবে, কিন্তু বেঁচে থাকবে ! শ্বাস নেবে !

তুমি একা কোথাও যেতে পারো না । আমাদের ভালোবাসা একসাথে নিয়ে । তুমি তোমার মা কে হারিয়েছ, আর আমি আমার মাকে পেয়েও মনে হয় আমার মা নেই গো ! আজ 3 বছর হলো তোমায় ভালোবেসেছি, সোমবার একটু অভিমান হয়েছিল, তা বলে এইরকম? আমিও ঠিক করলাম তোমার সাথেই যাব । যদি সংসার করি তোমার সাথেই করব, তা স্বর্গেই হোক বা নরকে !

ইতি

রিমা

চিঠি পড়া শেষ হলে মল্লিকবাবু মাথা তুলে একবার মিস দাসের বাড়ির লোকের সাথে কথা বললেন । সবাই তো কেঁদেই অস্থির ! কিছুক্ষন ঠান্ডা হবার পর মল্লিকবাবু সবাইকে নিয়ে থানায় চলে গেলেন ।

কাঞ্চনবাবু ও মল্লিকবাবু জীবনে অনেক কেসের সমাধান করেছেন, কিন্তু এইরকম কেস এই প্রথম ! ভালোবাসা যে এতো কঠোর হতে পারে তা কি তাঁরা জানতেন? দুজনের জন্যে তৈরী এই যে অদৃষ্টের লিখন তা আর যাকেই শেষ করুক, ভালোবাসাটাকে মেরে ফেলতে পারে নি । একজন গেলে আর একজনও যাবে - এই তো নিয়তি !


সমাপ্ত...


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance