সি য়া

Horror Crime

3  

সি য়া

Horror Crime

মৃত্যু যখন গভীরে

মৃত্যু যখন গভীরে

4 mins
269



সেদিন অফিস থেকে বেরোতে বেরোতে সাড়ে নটা বেজে গেলো। বেসরকারি কর্পোরেট অফিসের খুব সাধারণ টাইমিং এটা। আজ ভেবেছিল একটু তাড়াতাড়ি কাজ সারার কিন্তু লাস্ট মোমেন্টে কাজ এসে পড়ায় যথারীতি দেরিই হয়ে গেলো। বছর ত্রিশের নীলা, নীলাঞ্জনা ঘোষ এখন পুরদস্তুর কলকাতার মেয়ে , জন্মসূত্রে যতই বহরমপুরের মেয়ে হোক না কেন ! চাকরী সূত্রে দমদমের একটা বাড়ীতে ভাড়া থাকে । একার জীবন দিব্বি কেটে যাচ্ছে । বাড়ি থেকে বিয়ের জন্য জোরাজুরি যে হয়নি তা নয় তবে নীলা এদিকে এসে জোর বাঁচা গেছে । অফিস থেকে বেরিয়ে অ্যাপ ক্যাব বুক করল । তখন দশটা বেজে গেছে অলরেডি । রাস্তা ফাঁকাই ছিল তাই বাড়ি ফিরতে কোন অসুবিধা হয়নি পনে এগারোটার মধ্যেই ঘরে ঢুকে গেলো জামা কাপড় ছেড়ে স্নান সেরে ফ্রিজে রাখা খাবারগুলো গরম করে খেতে বসলো । আগামীকাল অফ ডে তাই ঘুমনোর বেশি তাড়া নেই । খেয়ে দেয়ে ল্যাপটপ অন করলো একটা ভালো ওয়েব সিরিজ দেখবে বলে ঠিক করলো । সকালে রান্নার মাসি এসে রান্না করে দিয়ে যায়, নিজের কাজ বলতে খাওয়া, ঘুম, গান শোনা আর বই পড়া । দিব্বি কাটে জীবন । ওয়েব সিরিজ দেখতে দেখতে প্রায় আড়াইটে বেজে গেলো । শুতে যাবার আগে মোবাইলে একটা মেসেজ “ক্যান উই বি ফ্রেন্ডস ?” এত রাতে ঘুমের বদলে মেসেজ আসলে মনটা অন্য দিকে চলে যায় । নীলাও পাল্টা উত্তর দিলো “হু আর ইউ ?” মেসেজের উত্তরের অপেক্ষা করতে করতে নীলা ঘুমিয়ে পড়লো । সকালে উঠে প্রাতঃ ক্রিত্য সেরে বারান্দা থেকে দুধের প্যাকেট আর খবরের কাগজ নিয়ে ঘরে আসলো । চা বানিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে আয়েশ করে খবরের কাগজটা খুলতে যাবে ঠিক সেই সময় কলিং বেল; রান্নার মাসি এসেছে । আবার খবরের কাগজ নিয়ে বসতে যাবে মোবাইল ফোনটা কেঁপে উঠলো । ছুটির দিনে মোবাইলের শব্দ ভালো লাগেনা তাই ভাইব্রেশনে রাখে। “নিউ মেসেজ” , “কাল ঘুমিয়ে পড়লে? “ দেখেই পিত্তি জ্বলে গেলো । “কে হে হরিদাস পাল ?” মেসেজ না করে ডাইরেক্ট ফোন করলো । ওপাশ থেকে যান্ত্রিক মহিলা কণ্ঠস্বর “দিস নাম্বার ডাজ নট এগজিসট !” “ধুস ! যতোসব উটকো ঝামেলা” একরাশ বিরক্তি নিয়ে র‍্যাক থেকে একটা বই বের করলো । আবার মেসেজ , “জানি তুমি ফোন করবে, কিন্তু ফোনে তো আমায় পাবেনা, দেখা করবে নীলা ?” চমকে উঠলো নীলাঞ্জনা। থতমত খেয়ে গেলো তারপর বলল, “আমাকে চেনেন ?” ওপাশ থেকে একটা ঠাণ্ডা হাওয়ার মত কথাগুলো কানে এসে লাগলো যেন “আমি সবাইকে চিনি, ইহকাল ...... পরকাল সব । “ নীলার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠাণ্ডা রক্তস্রোত বয়ে গেলো। রান্নার মাসি কখন যে রান্না সেরে দরজা টেনে দিয়ে চলে গেছে খেয়ালই করেনি । দরজা আটকে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলো । সারাদিন আর কিচ্ছু ভালো লাগছে না ।


               পরের দিন আবার অফিসের জন্য তৈরি হল। সেদিন একটা মিটিং ছিল তাই তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেল । বেলা দেড়টার দিকে অফিস থেকে বেরিয়ে হাঁটছিল আপন মনে, মাথায় ঘুরছিল আগের দিনের মেসেজগুলো । ভাবতে ভাবতে আবার সেই ফোন, “আমি বলছি নীলাঞ্জনা “। চমকে গেলো শুনেই । ওপাশ থেকে সেই পুরুষ কণ্ঠস্বর আবার বলে উঠলো “চমকে গেলে নীলা? কাল থেকে আজ পর্যন্ত কিছু মনে পড়লো?সত্যিই কি মনে পড়ছেনা নাকি মনে করতে চাইছ না ? ঠিকাছে তাহলে আমি বলি, তুমি শোনো ? “ একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “সেদিন খুব কষ্ট হচ্ছিলো জানো ! অপমানে শরীর জ্বলে যাচ্ছিলো, তুমিও সেদিন প্রতিবাদ করোনি । শেষ হয়ে যাবার আগে অনেক ডেকেছিলাম তোমায়, তুমিও শোনোনি । যদি শুনতে আজ এভাবে তোমাকে বিরক্ত করতাম না।“ বলেই ফোনটা কেটে গেলো।


           গতরাতের সেই মন খারাপের রেশ তাকে টেনে নিয়ে গেলো স্মৃতির চিলেকোঠায়। মনে পড়ে যায় প্রকাশের কথা...............

বহরমপুরের কথা মনে পড়ে যায়। “পাশের বাড়ির ছেলে, নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান। নীলাঞ্জনার স্কুলে আসা যাবার পথে দেখা হতো একটা ঝুপড়ি চা-এর দোকানে বসে অবাক চোখে দেখতো তার স্বপ্নের রাজকন্যাকে, মুখে কিছু না বললেও নীলা বুঝতে পেরেছিল তার মনের ভাব তাই একদিন স্কুলে না গিয়ে লুকিয়ে দেখা করেছিলো কাটরা মসজিদের এক কোনায়...... কৈশোরের বন্ধুত্ব বেশিদিন আটকে থাকতে পারেনা, এটাও থাকেনি। প্রেম আসে ওদেরও জীবনে। উচ্চবিত্ত আর নিম্নবিত্তের প্রেম হয়না সে তো জানা কথাই। এদের ক্ষেত্রেও তাই হল । নীলার বাবার লোকজন গভীর রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেয়। পরের দিন স্কুলের রাস্তায় প্রকাশকে দেখতে না পাওয়ায় ছুটে যায় ওদের ভাঙা বাড়ির ভিতর কিন্তু কেউ ছিলোনা সেখানে, যেন কর্পূরের মত উবে গেছে মানুষগুলো! কাউকে জিগ্যেসও করতে পারছেনা প্রকাশের কথা।“


           সেইদিন রাতে রুমে ফিরে নীলা কি করেছিলো সেটা জানা যায় ক’দিন পরে। দুদিন বাইরে বেরোতে না দেখে নীলার বাড়িওয়ালা পুলিশে খবর দেয়, দরজা ভেঙে ঢুকে নীলাকে বুকে ছুরি বসানো অবস্থায় পাওয়া যায়, পোস্টমর্টেম রিপোর্টে সুইসাইড বলে ধরা পরেনি……… তবে কে খুন করলো? অফিস কলিগ, বাড়িওয়ালা প্রত্যেকে জানে নীলার কোন বয়ফ্রেন্ডও নেই তবে কি হল ? কারণ তো সেই বহরমপুর। প্রকাশের ভাঙা বাড়ির ভিতর টেবিলের উপরে রাখা ময়লা ফট ফ্রেমের ছবিটা হাসছে আর বলছে নাহয় “অমীমাংসিতই থাকুক নীলার মৃত্যুটা……… এসো নীলা, আর কেউ আমাদের কিচ্ছু করতে পারবেনা”। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror