মোচার তরকারি
মোচার তরকারি
পরিমলবাবু আজকে বাজার করতে যেতে বড্ড লজ্জা পাচ্ছেন । কিন্তু এই গতকালকেও তার বাজার করার সুখ্যাতি প্রতাপপুর গ্রামে সর্বজনবিদিত ছিল । আজকে এমন কি হলো যে তিনি চোরের মতোন চুপিসারে বাজার সারতে চাইছেন ? খুঁজে খুঁজে অচেনা মুখের দোকানিদের থেকে আনাজপাতি কিনতে চাইছেন ? আসলে তিনি চাইছেন না যেন কেউ বলুক , 'কিহে মাষ্টার আজকে এতো কম করে বাজার কেন ? বাড়ির সব খবর ভালো তো ? ' তিনি উত্তরে কি করে সত্যি কথাটা বলবেন যে তার একমাত্র ছেলে আজ থেকে পৃথক হয়ে গেছে । অবশ্য দোষটা উনার ছেলের একার নয় , সে তিনিও বোঝেন । বৌমা যবে থেকে বাড়ি ঢুকেছে শ্বাশুড়ীর সঙ্গে খটমট লাগিয়েই রেখেছে । গতকাল বৌকে শাসন করছে না বলে বিমলকে দু'কথা শুনিয়ে ফেলেছেন পরিমলবাবু । আর তাতেই ছেলে বৌমার পৃথক হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত । বৌমা এ বাড়ির বৌ হয়ে এসেছে আজ থেকে প্রায় বছর সাত আট আগে । দুটো নাতি নাতনিও হয়েছে এই কয়দিনে । একজনের বয়স ছয় , অন্যজনের চার । সেই নাতি নাতনির এটা সেটা খাওয়ার বায়নাক্কা পরিমলবাবুই হাসিমুখে সামলে এসেছে এতোদিন । কিন্তু আজ তারাও পৃথক !
পরিমলবাবু উদাসভাবে দুই বৃদ্ধ বৃদ্ধার প্রয়োজন মতো বাজার করছিলেন । হঠাৎ চোখ পড়ে গেল বেশ বড়ো সাইজের প
াকা কলার একটা মোচার দিকে । হাতটা মোচা কেনার জন্য নিশপিশ করতে লাগল । এই মোচার একটা তরকারি তার স্ত্রী এতো সুন্দর বানায় যে বাপ ছেলেতে আঙুল চেটে খায় । কিন্তু তার ছেলে বিমল কি আর তার মায়ের হাতের রান্নাটা আজকে খাবে ? কয়েক বার পায়চারি করে কি ভেবে মোচাটা অবশেষে কিনেই ফেললেন তিনি ।
খেতে বসে পরিমলবাবু আড়চোখে খেয়াল করলেন তার স্ত্রী একটা বড়ো বাটিতে মোচার তরকারিটা বেশ খানিকটা তুলে নিয়ে মিটকেসে সরিয়ে রাখলেন । দৃশ্যটায় বুকে একটু কষ্ট পেলেন পরিমলবাবু । স্ত্রীকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না । চুপচাপ খেয়ে উঠে পড়লেন ।
সন্ধ্যের দিকে আড্ডাটা কিছুতেই জমল না পরিমলবাবুর। 'শরীরটা আজকে খুব একটা ভালো করছে না' বলে তাড়াতাড়ি বাড়ী চলে এলেন । ঘরে ঢুকতেই যাবেন একটা দৃশ্য দেখে তাকে থমকে যেতে হলো । ঘরের একটা কোনে বিমল উবু হয়ে বসে কিছু খাচ্ছে । বিমলের মা তার কাছটিতে বসে সস্নেহে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে । হাতে মোচার তরকারি তুলে রাখা বাটিটা । চোখটা আপনা আপনিই ভিজে গেল পরিমলবাবুর । আবার আড্ডার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন । আজকের দ্বিতীয় রাউন্ডের চায়ের বিলটা তিনি একাই দেবেন ।