মনোবল
মনোবল


নিত্যদিনের স্বামীর দেওয়া উপহার স্বরূপ দু'একটা চড়থাপ্পর আর অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ সুমিত্রার কাছে যেন জলভাত হয়ে গেছে।তবুও স্বামীসেবা থেকে সে সরেনি।সারাদিন রাজমিস্ত্রির কাজ শেষে রোজগারের টাকা দিয়ে মদ খেয়ে এসে বৌ এর সাথে দুর্ব্যবহারের মধ্যেই যেন সে পৌরুষত্ব খুঁজে পায়।বাবা মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ারও কোন পথ নেই।কারন ভালোবেসে রাজমিস্ত্রী নরেরের সাথে সে ঘর ছেড়েছিলো।
ভ্যানে করে বাড়ি বাড়ি তরকারি বিক্রি করে বেড়ায় তপন।মাঝেমধ্যে সুমিত্রা তার কাছ থেকে তরকারি কেনে।একদিন সুমিত্রার দোরগোড়ায় এসে ঘরের ভিতর থেকে নরেনের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজের আওয়াজ তার কানে আসে।তরকারি কিনতে সেদিন আর সুমিত্রা বেরোয়না।পরদিনও সুমিত্রা তরকারি কেনেনা।সেদিন তপন সব্জি বিক্রি করে ফেরার পথে সুমিত্রার ঘরে ঢোকে।দেখে জ্বরে অসার হয়ে সুমিত্রা পরে আছে।খুব মায়া হয় তার।সে খাটের কাছে দাঁড়িয়ে তার মাথায় হাত দেয়।লাল দুটি চোখ মেলে সে তপনের দিকে তাকায়।
তপনের এনে দেওয়া ওষুধে সুমিত্রা একটু সুস্থ্য হতেই তপন তাকে তার স্বামীর কথা জিজ্ঞাসা করে।সুমিত্রা জানায় তিনদিন আগে তাকে মারধর আর গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে আর ফেরেনি।তপন সুমিত্রার দুটি হাত ধরে বলে,'ঠিক তোমার মত আমার একটা দিদি ছিলো।বছর খানেক আগে দু'দিনের জ্বরে সে আমায় একা ফেলে চলে গেছে।মা বাবাকে তো সেই ছোট্টবেলায় হারিয়েছি।দিদিই আমার সব ছিলো।এখন আমি সম্পূর্ণ একা।খুব কষ্ট হয় দিদির জন্য।তোমার মধ্যে আমি আমার দিদিকে খুঁজে পাই।যাবে তুমি আমার সাথে? দুই ভাইবোন মিলে একসাথে থাকবো।'সুমিত্রা তপনের মাথাটা ধরে কপালে একটা চুমু খেয়ে বলে,'সারাজীবন দিদিকে খাওয়াতে পড়াতে পারবি তো?'তপন নীচু হয়ে সুমিত্রার পা দুটি ধরে বলে,'তোমার পা ছুঁয়ে কথা দিলাম আমি সারাজীবন তোমার সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তোমার আদরের ছোট ভাইটি হয়েই থাকবো।চলো দিদি আমরা বেরিয়ে পড়ি।'