Gopa Ghosh

Romance

5.0  

Gopa Ghosh

Romance

মনিদিপা

মনিদিপা

5 mins
480


মনি টেবিলটা মুছতে মুছতে নিজের মনেই বকবক করে যাচ্ছিল।

"এত বড় ছেলে হয়েছে আর নিজের টেবিল টা ঠিক মতো গুছিয়ে রাখতে পারে না"

ও ওর ভাই বিশাল এর কথা বলছিল। কিন্তু খাটে বসে থাকা বিশাল এর সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নিজের মোবাইলটা টেবিলে রেখে মনির মাথায় একটা চাটি মেরে হাসতে হাসতে বারান্দায় চলে গেল। এবার মনির চিৎকার আরো বাড়লো

"তোকে কতবার বলেছি আমার মাথায় মারবি না, কথা শুনিস না কেন বলতো?"

বিশাল এবার খুব জোরে হেসে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল কিন্তু দিপা ঢুকতেই বলে উঠলো

"নে এবার দুই বন্ধুতে গোটা পাড়ার চর্চা করতে বসে যা, আর তো কোন কাজ নেই তোদের"

দিপা জানে এটা মনি আর বিশালের রোজকার ব্যাপার। তাই সে নিয়ে আর কোন কথা না বলে ও মনির হাতটা ধরে টেনে এনে খাটে বসিয়ে বলে,

"শোন মনি আজ বিকেলে তোকে আমার সাথে একটা জায়গায় যেতে হবে"

"কোথায়?"

"সমর আজ ওর জন্মদিনের পার্টিতে আমাকে আর তোকে নেমন্তন্ন করেছে"

এটা বলেই ও ব্যাগ থেকে নিজের মোবাইলটা বার করে সমর কে ফোন করে

"সমু মনিকে তুমি বলে দাও কেননা জন্মদিনটা তোমার তাই তোমারই বলা ঠিক"

মনি আর কোন কথা বলার সুযোগই পায় না। তবে নেমন্তন্ন যাওয়ার জন্য একটা হালকা আনন্দ তো ওর মনে হচ্ছিল ই।

দিপা আর মনি বলতে গেলে ল্যাংটো বেলার বন্ধু। মনি দের বাড়িতেই একটা ঘরে দিপাড়া ভাড়া থাকতো। তখন তাদের অবস্থা খুবই খারাপ ছিল , মানে নুন আনতে পানতা ফুরানোর মত অবস্থা। অবশ্য এখন অবস্থাটা ঠিক উল্টো হয়ে গেছে। দীপার বাবার নতুন ব্যবসাটা যতই ফুলে-ফেঁপে উঠতে লাগলো দীপার মায়ের অহংকার টাও ঠিক ততটাই বেড়ে উঠতে লাগলো। ওরা এখন পাশের পাড়ায় খুব বড় একটা বাড়ি কিনেছে। মনি আগে প্রায়ই যেত কিন্তু শেষের কয়েকবার কাকিমার ব্যবহারটা ঠিক ভালো লাগেনি ।অবশ্য এটা মনি, দিপাকে কখনোই জানতে দেয় নি কারণ মনি জানে দীপা ওকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসে। কখনো কখনো এই নিয়ে দীপা আর ওর মায়ের মধ্যে মনোমালিন্য হয়ে যায় তবু দীপা মনির বাড়িতে আসবেই, ওকে কেউ রুখতে পারবে না। তবে মনির মা দিপাকে নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ করে।

দীপার একটা স্বভাবই মনির ভালো লাগেনা সেটা হল কারো সাথে ওর সম্পর্ক খুব বেশিদিন টেকে না মানে বয়ফ্রেন্ড। এই সোমু বলে ছেলেটা মাস ছয়েক ওর সাথে মিশছে । এর আগে বরুণ বলে একটি ছেলে দিপাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসতো কিন্তু দিপার ওই এক স্বভাব বেশিদিন কাউকে ওর ভালো লাগে না । আসলে প্রেমের সম্পর্কটাকে দীপা খুব হালকা ভাবে নেয়।

সেদিন সমুর কথামতো দীপা মনিকে নিয়ে বারাসাতে সোমুর এক বন্ধুর বাড়িতে গেল । কথা ছিল ওই বন্ধুর বাড়িতেই সোমুর জন্মদিনের পার্টিটা হবে কিন্তু সেখানে অনুষ্ঠানের কোনো আয়োজন না দেখে মনির মনটা কু গাইল। ও বারবার সমুকে ফোন করতে বলছিল দিপাকে। তবে দীপা

ও বার বার ট্রাই করেও সোমুকে ফোনে ধরতে পারছিল না। ওরা বাড়ির ভেতর একটা সোফায় বসে সমুর আসার অপেক্ষা করছিল। সমুর বন্ধু সৈকত সেই যে ওদের বসতে বলে কোথায় চলে গেল আর ফিরে এল না।

"দীপা বরং আমরা আজ চলে যাই, কেননা সমু হয়তো কোন কাজে আটকে গেছে প্লিজ তুই পরে কথা বলে নিস"

মনি উঠে দাঁড়িয়ে দীপার হাতটা ধরে তুলতে যায় এমন সময় সমুর গলা

"সরি আমার আসতে একটু দেরি হয়ে গেল"

"এটা কি ভদ্রতা সমু আমরা প্রায় এক ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি"

দীপার গলায় অভিমানের সুর।

আরো তিনজন ছেলে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ওদের কথা শুনছিল সেটা মনি এখন লক্ষ্য করল। এবার দিপা ও যেন একটু অপ্রস্তুত বোধ করলো

"সমু আজ আমরা বাড়ি চলে যাই তোমার সাথে পরে কোন একদিন দেখা করে নেব"

দীপার এই কথায় সমু বেশ জোরে হাসতে থাকে। মনি বোঝেনা এতে হাসার কি আছে। তাও আর কথা না বাড়িয়ে ও ব্যাজ্ঞান তুলে দীপার হাতটা ধরে একটা আলতো করে টান দেয়। কিন্তু সমু এসে দিপার আর একটা হাত ধরে আবার সোফায় বসিয়ে দেয়। এবার মনির বুকটা ধড়াস করে ওঠে। ও ভালো করেই বুঝতে পারে ওরা খুব বড় বিপদের মধ্যে পড়ে গেছে। কিন্তু এখন বুঝতে দিলে ওরা আরও বেশি বিপদে পড়বে এটা মনি বেশ বুঝতে পারছিল। হঠাৎ খুব শরীর খারাপের ভান করে মনি সোফায় বসে পড়ে। এবার সমুর বাইরের মুখোশটা খুলে পড়ে।

"কি হলো দীপা তোমার বন্ধুর? ওকে কি কোন সেবা করতে হবে, আমি এইরকম অসুস্থ অনেক মেয়েকে সেবা করে ভালো করে দিয়েছি"

এবার দীপা স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারলো ছেলেটার আসল স্বরূপ। কিন্তু তখন আর পালিয়ে আসার কোনো পথ নেই।

"আমাকে একটু ঠান্ডা জল দিতে পারো কেউ?"

মনি খুব কাতর কণ্ঠে অনুরোধ করছিল।

সোমু মুচকি হেসে একজন ছেলেকে ফ্রিজ থেকে একটা জলের বোতল বের করে আনতে বললো।

"আমি একবার বাথরুমে যাবো"

মনির কাতর কণ্ঠের অনুরোধ

"এই কালু তুই বাথরুমের সামনে দাড়িয়ে থাকে, খুব সেয়ানাগীরি করছে মনে হচ্ছে"

সমুর কথায় ছেলেটা বাথরুমের সামনে দারোয়ানের মত দাঁড়িয়ে থাকলো। মনি কিন্তু ওড়নার পেছনে লুকিয়ে মোবাইলটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে ছিল। খুব তাড়াতাড়ি বিশাল কে কিছুটা জানিয়ে পুলিশকে খবর দিতে বললো।

মনি বাথরুম থেকে বেরুতেই কালু বলে ছেলেটা ওকে পিছন থেকে ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে একটা ঘরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এবার দিপার আর মাথার ঠিক থাকলো না। হাতির পাশে একটা বড় ফুলদানি তুলে ছুড়ে মারল কালুর দিকে। আর সত্যিই ওটা কালুর মাথায় লেগে কালু ছিটকে পড়ল বেশ কিছুটা দূরে। সমু আর দুটো ছেলে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গেল সেই সময়। কালুর কাছে গিয়ে নাকের নিচে হাত দিয়ে সোমুনবলে উঠলো

"কালু মারা গেছে, এটা কি করলে দীপা?"

দীপা আর মনি প্রায় পাথর হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়েছিল কিন্তু মনি বুঝেছিল ওদের এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা উচিত নয়। দীপার হাতটা ধরে এক হ্যাচকা টান মেরে বলল

"চল আর এখানে থাকা ঠিক নয়"

সমুরা কালু কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় ওরা দুজনে ছুটে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে পারল।

সোজা থানায় ঢুকে দুজনেই হাঁপাতে থাকে। থানার ডিউটি অফিসার পাল বাবু ওদের বসতে দিয়ে একজনকে বলল

"বংশী এদের জল দে তো"

দুজনে জল খেয়ে একটু বসে অফিসার কে সব বলতে আরম্ভ করলো। তবে ঘটনার শেষে দীপা বলার আগেই মনি বলে উঠলো

"ফুলদানীটা আমি ছুঁড়ে ছিলাম, আর সেটা লেগেই কালু মৃত্যু হয়েছে"

"না না স্যার মনি মিথ্যে কথা বলছে কারণ ফুলদানীটা আমি ই ছুঁড়ে ছিলাম, কালু বলে ছেলেটার মৃত্যু জন্য আমি একাই দায়ী"

দীপার গলা এবার বেশ জোর হয়।

দীপার মা জোরে এক ধমক দিয়ে দিপাকে বলে

"মিথ্যে কথা বলে কেন বন্ধুকে বাঁচাতে চাইছিস?"

দীপা মায়ের কথার কোন উত্তর না দিয়ে পুলিশ অফিসার পাল বাবুর দিকে তাকিয়ে বলে

"স্যার বিশ্বাস করুন মনি ফুলদানিটা পড়ে নিও ওটা আমি ছুঁড়ে ছিলাম তাই যা সাজা হয় সেটা আমাকে দিন"

এবার মনি আর চুপ করে থাকতে পারে না

"দীপা কেন মিথ্যে কথা বলছিস তুই কি জানিস না মার্ডার কেসের সাজা কি হতে পারে?"

"আমি সব জানি তাই যে অপরাধ করেনি তাকে সাজা দিতে চাইছি না"

পুলিশ অফিসার পাল বাবু খুব অবাক হয়ে চেয়ে থাকে মনি আর দীপার দিকে। এমন বন্ধুত্ব এখনো আছে?

এবার পাল বাবু বলার পালা।

"আমি দুজন অফিসার কে বারাসাতের ওই বাড়িতে পাঠিয়ে ছিলাম ওরা এসে খবর দিল কালু বলে ছেলেটা মাথায় আঘাত পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল কিন্তু মারা যায়নি, আর ওরা তোমাদের নিয়ে যে কাজ করতে যাচ্ছিল তাতে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এটা সবাই করবে"

দীপা উঠে এসে মনিকে জড়িয়ে ধরে হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে। সেদিন থানায় সবার চোখেই জল এসেছিল এমনকি পাল বাবুর চোখও চিকচিক করে উঠেছিল।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance