মীরার ডায়রির পাতা থেকে
মীরার ডায়রির পাতা থেকে
![](https://cdn.storymirror.com/static/1pximage.jpeg)
![](https://cdn.storymirror.com/static/1pximage.jpeg)
কত না আপন,আহা কি মায়ার বাঁধন এত অভিমান,চুপচাপ নীরব অপমান।
মীরা তার বাল্যকালের সাথীকে আট বছরপরে কাছে পেল,খুব খুশি দুজন দুজনকে কাছে পেয়ে।তাদের চোখে এখন নতুন আলো নতুন স্বপ্ন,যে তারা একসাথে কলেজ যাবে,দুজনেই একে অপরের সময়ের সাথী হয়ে থাকবে।মীরা স্বভাবে খুবই চটপটে চঞ্চল,আর হাসিখুশি- সবাইকে ভালোবাসতে জানে,কিন্তু খুব জেদী স্বভাবের,ঠিক তার উল্টো স্বভাবের হলো মীরার সাথী লীলা।তারা একই গ্রামে বাস করতো।একই সাথে কলেজ টিউশন যাতায়াত করে খুব মজাতেই কাটছিল তাদের জীবন।কলেজে বসে তারা দুজন প্রায়ই একটা একাকিত্বে ডুবে থাকা ছেলেকে দেখতো।মীরা তাকে নিয়ে লীলার সাথে সমালোচনা করতো।হঠাৎ একদিন তারা দুজনেই অবাক,ওই একাকিত্ব থাকা ছেলেটা টিউশনেও উপস্থিত।তারা দুজন তখন আরকি চুপচাপ টিউশনেই মন দিলো।
আস্তে আস্তে সবার সাথেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো মীরার,প্রথম বর্ষ পেরিয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পা পড়লো মীরার।কয়েকজন ভালো বন্ধু হলো,কিন্তু সেই একাকীত্ব ভরা ছেলেটার সাথে এখনও তেমন বন্ধুত্ব হয়ে ওঠেনি। দ্বিতীয় বর্ষের মাঝে এসে মীরা সেই একাকীত্ব ছেলেটির ফোন নাম্বার নিলো এক বন্ধুর কাছ থেকে।একটা জরুরী বিষয়ের জন্যই ফোন করা,আর ধীরেধীরে বন্ধুত্বের অংশীদার।
শুরু হলো, সব বন্ধুদের মধ্যে সেই এগারো টাকার sms এর খেলা আর বিভিন্ন সময়ে মিসড কল দেওয়ার বাজি। খুবই হৈ হুল্লোড় আর হাসিখুশিতেই কাটতে লাগলো মীরার নতুন বন্ধুদের সাথে কলেজ জীবন।মীরা সকল বন্ধুদের মধ্যে কলেজে সেরা নম্বর পেয়ে মাস্টার দের সকলের বাহবা নিয়ে তৃতীয় বর্ষে পা দিল।
তৃতীয় বর্ষটা মীরার আরো জনপ্রিয় হয়ে গেলো কলেজ বা টিউশন সবাই তার সাথে আপন বন্ধুর মতো মিশতে শুরু করলো,আর মীরাও বেশ ভালো ভাবেই দেখতোএটাকে।
হঠাৎ একদিন মীরা টিউশন পড়তে এসে অসুস্থ হয়ে পড়ে যায়,তখন সব বন্ধু বান্ধবীরাই তাকে বেঞ্চে শুইয়ে জল দেওয়া হাওয়া করা এসব করতে থাকে,এসব করতে থাকে ।এই সময় সেই একাকীত্ব ছেলেটা বেশী চিন্তিত আর অস্থির লাগছিলো,লীলা তাকে বলে।
এরপর থেকে সব বন্ধুরা আরো ভালোবাসতে শুরু করলো মীরাকে,সবাই একে অপরের পিছনেলাগা,ঝগড়া হাসিঠাট্টা এসব রোজের মজার কারবার হয়ে দাঁড়ালো।
বন্ধুদের সাথে রাত জেগে জেগে sms করা যেন একটি বিশেষ প্রাপ্তির অনুভূতি।মীরা এবং তার সাথীদের সবারই তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা খুবই কাছে এল,এমন সময় সেই একাকীত্বে থাকা ছেলেটি মীরার কাছেই শুনতে পেল মীরাকে দেখতে এসছে আর বিয়ে হবে দুই দিনের মধ্যেই।সেই রাতে সেই একাকীত্বে থাকা ছেলেটি মীরাকে ভালোবাসার কথা বলে দিল,মীরাতো হতবাক বুঝতে পারছে না কি বলবে।
মীরা বন্ধুদের নিয়ে এরকম কিছুই ভাবেনি কখনও,কারন মীরার জীবনে ভালোবাসা নিয়ে অন্যরকম মনোভাব ছিল তখন।মীরা অন্য একজনকে চাইত,এবং তাদের সম্পর্কে বিচ্ছেদ হয় কিছু দিন আগেই।হতবাক মীরা তখন সেই একাকীত্বে থাকা ছেলেটির সাথে সঙ্গ দিতে শুরু করলো,আর শর্ত রাখলো যে আমরা এটা কিন্তু টাইমপাস করছি আমাদের দুজনের মধ্যেই,কেউ যদি ছেড়ে দেয় তাহলে অন্যজন কিছু বলতে পারবেনা।
এই করতে গিয়ে কখন যে তারা আলাদা জগতে চলে গেল বুঝতেই পারলো না। এখানেও মীরার সাথে ছেলেটির কোনো মিল ছিল না বল্লেই চলে।ছেলেটি গম্ভীর শান্ত ,লোকের সাথে কথা বলতো না ,বললেই চলে; খুব মেজাজী স্বভাবের, যদিও খুব সহজে কেও বুঝতে পারবে না, একঘেয়ে স্বভাবের।তবুও মীরার কেন যে তাকে এত ভালো লাগতো কে জানে,আর এই ভাবে কথা বলতে বলতে মীরা কখন যে তাকে পাগলের মতো ভালোবেসে ফেলেছে, সে নিজেও বুঝতে পারেনি।কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হল,রোজ পরীক্ষার আগে দেখা করতে আসতো মীরার ভালোবাসার পাগল ছেলেটি।পরীক্ষার ফল বেরোলো কলেজ শেষ, মীরার সাথে পাগলটার দেখা বন্ধ হয়ে গেল বললেই চলে।
তখন তারা রোজ রাতের পর রাত দিনের পর দিন ফেসবুকে চ্যাটিং করে পুরোনো স্মৃতি আর নিত্যনতুন গল্প,সারাদিনের কোনো কিছুই বাকি থাকতো না বলতে দুজনেরই।মীরার জেদের কারনে একদিন সেই পাগল আসলো মীরার বাড়ি,মীরা তার খুশি কিভাবে প্রকাশ করবে বোঝাতে পারেনি।
কিছুদিন পর মীরার সেই পাগল চলে গেল বাইরে ,ক্যারিয়ারের প্রস্তুতির জন্যে,এবং মীরাও কেরিয়ারের নতুন অধ্যায় নিল।তারা দূরে ছিল,তবুও খুব সুখেই ছিল।দেখা না হলেও তাদের মনে হত না যে তারা একে অপরের থেকে দূরে।
এদিকে লীলার বিয়ে হয়ে গেল,এখন মীরার যাতায়াত এর সাথীও চলে গেল,আর নিজেকে খুবই একাকীত্বে ডুবে যেতে দিল চুপচাপ,,,,তবুও এই কথাটি তার পাগলকে বলে ওঠেনি ভুল করেও ।