রাঙামাটি
রাঙামাটি
নিউকোচবিহারে,প্রথম মেয়েটির সাথে দেখা,আমি জানলার পাশের সিটে বসে বাইরে স্টেশনের পরিবেশদেখছিলাম, বাইরে মেয়েটির দাদা ও একজন বায়স্ক লোক(দেখে মনে হল জেঠু হবে হয়তো) আগে উঠলো আর তাদের পিছনে মেয়েটা।
ডান হাতে কালো ডিজাইন করা কালো শুতো,মালা প্যাচানো যেগুলো প্রয়জনের থেকে বেশিই ছিলো, বাম হাতে বড়ো একটা কালো হাতঘড়ি।কালো শার্ট আর জিন্স পড়া ,
শার্টের কলারের পাশ দিয়ে গলায় পড়া কতগুলো লাল হলুদ শুতো উকি মারছিল। দেখতে ফর্সা,দাঁত গুলো আঁকাবাঁকা আর চোখের মধ্যে একরকম মায়া মায়া ভাব ছিল।
মেয়েটা ট্রেনে উঠবার সময় আমার দিকে কেমন একদৃষ্টিতে তাকিয়ে উঠল,অবশ্য এর আগে কোনো মেয়েই মনে হয় আমার দিকে ওভাবে তাকায়নি।
যাইহোক দেখে মনে মনে ভাবছিলাম যে ভগবান ওকে আমার সিটে আসতে বলো প্লিজ। আর এই ব্যাপারে ভগবান ঠিক তাই করলেন। আমি উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায় বসে আর মেয়েটি এসে আমারই সামনের সিটে এসে বসলো।আমিতো এদিকে মনে মনে খুশি হয়ে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুর করলাম। আর মেয়েটি তখন ওর দাদা আর জেঠুর সাথে এটা ওটা নিয়ে কথা বলছিল। মোবাইলের সাউন্ড কমিয়ে দিয়ে ওদের কথা শুনে বুঝলাম যে ওরা হয়তো ঘুরতে এসছে, কোথায় কোথায় যাবে এসব নিয়ে কথা হচ্ছিল।আর এসবের মাঝে আমাকে অনবরত আঁর চোখে দেখছিল।
আমিও তাই ওরদিকেই তাকাচ্ছিলাম কিন্তু পড়ে ও এমন ভাবে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল যে আমার মুখটা লজ্জ্বায় ঘুরে গেল।
এভাবে চলতে চলতে ওর দাদা আমার পাশে সিট ফাঁকা পেয়ে বসলো,আর মেয়েটি আমার অপজিট সিটে।
এরপর ফালাকাটা স্টেশন আসলো সেখান থেকে অন্য একটা মেয়ে ও তার বাবা আমাদের সিটে এসে বসলো।
ধীরে ধীরে তার সাথে এই মেয়েটির দাদার বেশ সখ্যতা জমে উঠলো। আর ওরা সবাই বিভিন্ন টপিকে আলোচনা করতে থাকলো ,আর আমি কানে হেডফোন লাগিয়ে গানশুনতে থাকলাম আর সেই মেয়েটিকেই দেখতে থাকলাম।
আর মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে জাস্ট হেসে ফেলত আর চোখ নামিয়ে নিতো জোর করে ।
এভাবে চলতে থাকল njp আসার আগে পর্যন্ত।
NJP আসতেই ওদেরজেঠু অন্য কামরা থেকেএসে বললো যে ওরা কি আজ দার্জিলিং ঘুরতে যাবে নাকি।তাহলেএখানেই নেমে পরতে হবে ।
ওরা দাদা আর বোন মিলে ঠিক করলো ,ওরা আজ বর্ধমান যাবে মাসি বাড়ী ।এরপর ওর জেঠু চলে গেল,কিন্তু আমাদের সিটে আসলো কিছু বুদ্ধিজীবি।একজন ৭০ ঊর্ধ রাজনৈতিক নেত্রী ও তার সঙ্গীরা।
ওরা ট্রেনে উঠেই ওদের জ্ঞানের ভান্ডার খুলে জ্ঞান বিতরণ শুরু করলো ,আমি বুঝতে পারলাম যে মেয়েটি এত জ্ঞান সহ্য করতেপারছে না ।
দেখি মেয়েটির পাশে ওরা এটাওটা বলছে ,আর ও আমারদিকে তাকিয়ে আছে।হঠাৎ যেই চোখে চোখপড়ে গেলো ওমনি জোর করে ঘাড় ঘুরিয়ে নিতে হলো,যদি ওর দাদা দেখে ফেলে।
এদিকে মেয়েটার দাদা ফালাকাটা থেকে যেই মেয়ে উঠেছে তার সাথে গল্পে জমে গেছেএকদম।
এদিকে আমরা দুজনই শুধু হেডফোন লাগিয়ে বসে বসে গানশুনছি। সত্যি,ওই জায়গায় শুধু আমাদের দুজনেরই কানে হেডফোন ছিল।
রাত ৮টা হবে, মেয়েটি তখন ফেসবুক খুললো আর এটা ওটা দেখছিল।
জ্ঞানী লোকগুলো বলতে শুরু করলো ,তোমাদের সারাদিনে তো শুধু একটাই কাজ,,,,মোবাইল টেপাটেপি।
মনেমনে খালি বলছি অমুকের বাচ্চা শালা ,তুই ট্রেনে বসে কোন দাদুর কী গুনছিস।
কী..বলবো!.. মেয়ের বয়সী মেয়ে,তাদের দেখে শালারা কেমন টাচি হয়ে বসে আছে ।পুরো রাস্তা শালা মেয়েটার পাশে থেকে নড়ল না।
মালদা আসায় সব বুদ্ধিজীবী নেমে গেলেন,আর মেয়েটির দাদা তখনএকটু বাইরেগেল খাবার আনতে ।এদিকে মেয়েটি এখন একটু বেশি সাহস পেয়ে যেই আমার কাছে এসে বসবে,এরকম সময়ে কথা থেকে একটা অমুকের ছেলে এসে বসলো আমার পাশে।।
কি বলবো...!বয়স্ক লোক। বসেন আর কি..!একটা ছেলেরভাগ্যের চাকা ঘুরবে ঘুরবে করছে ,এটাও আপনার সহ্য হয় না।
যাইহোক আমি বাড়ি থেকে আনা টিফিন বের করলাম আর খেতে শুরু করলাম। মেয়েটার দাদাও রুটি তরকারি ন
িয়ে আসলো।কিন্তু ওরা সবটা না খেতে পেয়ে আমাকে বললো খাবো নাকি। আমি না করলাম(বাড়ি থেকে বের হবার সময়ই দাদা বলেছিল যে আজকাল ট্রেনে ড্রাগ ইউজ করে সব নিয়ে উধাও হয়েযাচ্ছে )
এভাবে মেয়েটির দাদার সাথে আমার কথা বলা শুরু হলো। কথা শুনে মনে হলো ও প্রথম যাচ্ছে বর্ধমান। আবার ভাবলাম যে এটাওর ন্যাকামো হতে পারে।আর যাইহোক ট্রেনে অপরিচিত কাউকেই বিশ্বাস করা ঠিক না।
এদিকে মেয়েটি হা করে আমার দিকে তাকিয়ে,দেখলাম বাকি যাত্রীরাও আমাদের দুইজনকে দেখছে ,ভাবছে হচ্ছেটা কী এসব।
ধীরেধীরে রাত বাড়তে লাগলো আর সবারই
চোখ বন্ধ।
মেয়েটির দাদাতো পাশের একজনের গায়ে হেলান দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে, এত ঘুম।
আর এদিকে দুজনই শুধু জেগে আছে; আর তাদেরকানে হেডফোন।
সত্যি বলছি এর আগে কোন দিনই জেগে জেগে ট্রেনে যাতায়াত করিনাই। আর রাতে আমি যেভাবেই থাকি না কেন ঘুমোবই।
কিন্তু এই রাত টায় আমার চোখে একফোঁটাও ঘুমের দেখা নেই। বিকাল ৩.৩০ থেকে ভোর ৪.১৫ পর্যন্ত মেয়েটা যতক্ষন ছিল আমি দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি।
এটা অন্য কারো কাছে সাধারণ ব্যাপার হলেও আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা।
এখন রাত বাড়ছে আর আমরা দুজনেই শুধু জেগে,দুজনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে।মেয়েটা এর মধ্যে মধ্যে চোখবন্ধ করে মিটমিট চোখে দেখার চেষ্টাকরছে যে আমিএখনো ওর দিকে তাকিয়েআছি নাকি।
আমিও আর কি তাকিয়েই থাকলাম ওর দিকে।
এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর আমার পাশে বসা সেই বয়স্কলোক উঠে চলে গেল।
আর মেয়েটা তখন আমার পাশে এসে বসলো।আর আমি তখন একদম পাশে থেকে একে অপরকে দেখছি ।
আমার মনে কত প্রশ্ন তখন গলা অব্দি উঠে আসছে।
জিগ্গেস করলাম" ফেসবুকে কোন নামে আছ"
নাম বললোঃ
তারপর ও আমাকে জিজ্ঞেস করলো "তোমার বাড়ী কি বটতলার পাশে ?"
আমি অবাক হেসে বললাম "না, কেন ?"
মেয়েটি বলল "তোমাকে হয়তো আগে কোথায় দেখেছি।তুমি কী এর আগে পশ্চিমমেদিনীপুরে গেছ??
আমি বললাম , না যাই নি,কিন্তু তোমাকেও কেমন চেনাচেনা লাগছে।কোথায় যেন দেখেছি।
মেয়েটি হাসলো,আমাকে বললো "তুমি কোথায় যাচ্ছ ?"
আমি বললাম " তুমি কোথায়,,,?
বর্ধমান মাসী বাড়ী ঘুরতে।
বললাম ভালোই ঘোরাঘুরি করছ,কিসের ছুটি,
সে বললো HS exam শেষ,তাই আজ মাসি বাড়ী ঘুরে তারপর বাড়ী।
বললাম বাড়ী কোথায়
বললো রাঙামাটি,মেদিনীপুর
এরপরআমি আমার মোবাইলটা অন করে আমার ফোননাম্বার টিপতে লাগলাম ওকে দেখিয়ে।
ও হঠাৎ দেখি ওর FB খুলে মেসেঞ্জারে গিয়ে একজনের মেসেজ খুলে কি দেখাতে চাইলো বুঝলাম না।আবার হোয়্যাৎস্যাপ খুলে দেখালো কোন একটা ছেলে তাকে সেলফি পাঠিয়েছে সাথে লাভ সাইন।
এরমাধ্যমে ও হয়তোকিছু বোঝাতে চাইছিল আমাকে,বাট আমি একদম বুঝিনি,আর বুঝতেও চাই না ওসব
এসব হয়ে যাবার পর মেয়েটি মোবাইল সুইচ অফ করে আমার পাশে বসে থাকলো,আর আমি কোন দুঃখে জানিনা ,জানলাটা ধরে মধ্যরাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।
এভাবে আস্তে আস্তে বর্ধমান এর আগের স্টেশন গুলো চলে আসছে, ওর দাদা ব্যাগ নিয়ে গেটের সামনে।
মেয়েটা এখনো আমার পাশেই ঘেসে বসে আছে দুজনের মুখে কোনো কথা নেই,তবু মনে হয় কত কথা হয়ে যাচ্ছে ,কত কথা বাকী।
আর বাকিলোক গুলো শুধু আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে।
বর্ধমান স্টেশন আসলো,মেয়েটার দাদা ওকে আবার ডাকলো,ওর কেমন যেন অনিচ্ছুক ভাবে উঠে আমার দিকে তাকিয়েই
নেমেগেল ।
আর আমি জানলার দিকেই তাকিয়েথাকলাম,আর ভাবলাম যে ঘরে গিয়েই ফেসবুক খুলেই ওকে ফ্রেন্ডরিকোয়েস্ট পাঠাবো।
কিন্তু ফেসবুকে অনেক খোঁজ এখনো করে যাচ্ছি,কিন্তু তার দেখা পাচ্ছি না। এই করতে গিয়ে শেষে রাঙামাটি আর মেদিনীপুরের ম্যাপ মুখস্ত হয়ে গেল প্রায়।