Atrayee Sarkar

Inspirational Others

4  

Atrayee Sarkar

Inspirational Others

মহান প্রভু তুমি

মহান প্রভু তুমি

9 mins
749


যে গল্পটা লিখতে চলেছি, সেই গল্পটা পড়লে সত্যিই নয়ন জলে ভরে যায়,,, হৃদয় কেঁপে ওঠে যন্ত্রণায়। 

অবতারকে কখনো ই ভোলা যায় না। সে আমি আজ চিনিই তাকে বা কাল। যেদিন বুঝব তিনি কে, তারপরই আর ভুলতে পারবো না তাঁকে। সবচেয়ে আনন্দ পাওয়া যায় ঈশ্বরের মধ্যে। অন্য যাই করবো, ব্যথা, বেদনা আসবেই।

বড়দিনের কথা মনে পরে? এই দিনটা আমাদের সকলের প্রিয় দিন। হিন্দু, মুসলিম, সিখ সকলেরই।

আলো দিয়ে সাজাই, চকলেট, গিফ্ট কিনে আনন্দ করি। কিন্তু ভাবি না ২৫ এ ডিসেম্বর কার জন্মদিন। তাকে মনেও করি না সেরম।

২৫ ডিসেম্বর যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন। যা আমাদের অঢেল আনন্দ দেয়। কিন্তু যীশু খ্রীষ্ট কি করেছেন একবার ও কি কেউ পড়ে? না। সবার মনে ভাসে, অতো বড় বাইবেল এখন পড়ে কি করব। বোর হয়ে যাব।

ওনার জীবনি শুনেছি। যীশু খ্রীষ্ট ক্রশে মারা গেছেন ছাড়া আমরা আর কিছুই জানি না। 


চলুন তাহলে একজন দেবতার কথা এবার শুনি। 


মরিয়ম,,,,, যোষেফ নামক এক ধার্মিক ব্যক্তির বাগদত্তা ছিলেন৷ যখন তিনি শুনলেন যে মরিয়ম গর্ভবতী, তখন তিনি জানতেন যে শিশুটি তাঁর দ্বারা নয়৷ তিনি মরিয়মকে অসম্মানিত করতে চাইলেন না, তাই তিনি ঠিক করলেন যে তাকে গুপ্তভাবে বিবাহবিচ্ছেদ পত্র দেবেন৷ তাঁর তা করবার পূর্বেই, এক স্বর্গদূত এলেন আর তাকে স্বপ্নে কথা বললেন৷

স্বর্গদূত বললেন, “যোষেফ, মরিয়মকে বিবাহ করে তাকে স্ত্রী রূপে গ্রহণ করতে ভয় কর না৷ তাঁর গর্ভের শিশুটি পবিত্র আত্মার দ্বারা উৎপন্ন হয়েছে৷ সে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেবে৷ তাঁর নাম রেখো যীশু (যার অর্থ হল, যীহোবা বা সদাপ্রভু উদ্ধার করেন), কেননা তিনি লোকেদের পাপ থেকে উদ্ধার দেবেন৷”

তাই যোষেফ মরিয়মকে বিবাহ করলেন আর তাকে তার স্ত্রী রূপে ঘরে নিয়ে গেলেন, কিন্তু তাঁর সাথে একসাথে শুলেন না যতদিন না তিনি শিশুটির জন্ম দেন৷

মরিয়মের জন্ম দেওয়ার দিন যখন কাছে এলো, রোমান সাম্রাজ্য সকলকে তাঁদের পূর্বপুরুষদের এলাকায় জনগণনার জন্য যেতে বলল৷ যোসেফ আর মরিয়মকে বহু দূরের যাত্রা করতে হয়, তাঁদের বাসস্থান নাযারেথ থেকে বৈৎলেহমে যেতে হবে কেননা তাঁদের পূর্বপুরুষ ছিল দায়ূদ যার বাসস্থান ছিল বৈৎলেহম৷

যখন তাঁরা বৈৎলেহমে পৌঁছাল তখন সেখানে থাকার কোনো জায়গা তাঁরা পেল না৷ একটি জায়গা তাঁরা পেল সেটা হল পশুদের থাকার জায়গা৷ শিশুটির জন্ম সেখানেই হয় আর তাঁর মা তাকে পশুর খাওয়ার পাত্রে শুইয়ে দেন কেননা তাঁদের কাছে তাঁর জন্য কোনো বিছানা ছিল না৷ তাঁরা তাঁর নাম রাখলেন যীশু৷

সেই রাতে, কিছু মেষপালক ধারে কাছের ময়দানে তাদের মেষদের চরাছিলেন৷ হঠাৎ, এক উজ্জ্বল স্বর্গদূত তাদের কাছে আভির্ভূত হন আর তাতে তাঁরা ভয় পায়৷ স্বর্গদূত তাদের বললেন, “ভয় পেয় না, কেননা আমার কাছে তোমাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে৷ সেই খ্রীষ্ট, প্রভুর জন্ম বৈৎলেহমে হয়েছে!”

“যাও শিশুটির অনুসন্ধান কর আর তোমরা তাকে একটি কাপড়ে পেচানো আর পশুদের খাওয়ার পাত্রে শুয়ানো পাবে৷ হঠাৎ, আকাশ ঈশ্বরের স্তুতি গান গাওয়া স্বর্গদূতের দ্বারা ভরে গেল, যারা বলছিল, “ঈশ্বরের মহিমা স্বর্গলোকে হোক আর তার অনুগ্রহ প্রাপ্ত লোকেদের উপর পৃথিবীতে শান্তি হোক৷

মেষপালকেরা শীগ্রই পৌছালো সেই জায়গায় যেখানে যীশু ছিলেন আর তাঁরা তাকে পশুদের খাওয়ার পাত্রে শুয়ানো পেল, যেমনটি স্বর্গদূত তাঁদের বলেছিলেন৷ তাঁরা খুবিই উৎসাহিত হল৷ মরিয়মও খুব আনন্দিত ছিলেন৷ মেষপালকেরা মাঠে ফিরে এলেন যেখানে তাঁদের মেষরা ছিল, যাকিছু তাঁরা শুনেছিল আর দেখেছিল তার জন্য ঈশ্বরের স্তুতি করল৷I

রাজা হেরোদের সময়, পূর্ব দেশসমূহ থেকে পন্ডিতরা এসেছিলেন আকাশে একটি অস্বাভাবিক তারাকে অনুস্বরণ করে৷ তাঁরা অনুভব করেছিলেন যে এর অর্থ হল যে ইহুদিদের এক নতুন রাজা জন্ম নিয়েছেন৷ তাই, তাঁরা এক বিরাট দূরত্ব যাত্রা করেছিলেন এই রাজার দর্শন করতে৷ তাঁরা বৈৎলেহমে এসে বলেন -" ইহূদিদের যে রাজা জন্মেছেন, উনি কোথায়? কারণ পূর্বদেশে আমরা ওনার তারা দেখেছি, তাই আমরা ওনাকে প্রণাম করতে এসেছি।"

এই কথা শুনে হেরোদ রাজা প্রচন্ড রেগে যান। তিনি পন্ডিতদের কাছ থেকে জেনে নেন কখন ওনারা তারা দেখেছিলেন। পরে তাঁদের বৈৎলেহমে পাঠিয়ে দিয়ে মিথ্যে কথা বললেন-" তোমরা গিয়ে বিশেষ করে সেই শিশুর অন্বেষণ কর,, পরে দেখা পেলে আমায় ও জানিয়, আমিও গিয়ে প্রণাম করে আসব।"

হেরোদ রাজা চাইছিলেন, বাচ্ছাটাকে পেলেই, তার গলা কেটে মেরে ফেলবে ও।

রাজার কথা অনুযায়ী ওনারা চলে গেলেন। তারাটাকে দেখতে পেয়ে তাঁরা আনন্দিত হল। আর সেই গৃহ খুঁজে বের করলেন যেখানে যীশু ও তাঁর অভিভাবকরা ছিলেন৷ ভূমিষ্ঠ হয়ে ওনারা যীশুকে প্রণাম করলেন এবং ওনাকে স্বর্ণ, কুন্দুর ও গন্ধরস উপহার দিলেন।

পরে তাঁরা যেন হেরোদের কাছে ফিরে না যায়, স্বপ্নে এই আদেশ পেয়ে অন্য পথ দিয়ে নিজেদের দেশে চলে যান।

ওনারা চলে যাওয়ার পর, যোসেফ একদিন স্বপ্নে দেখেন , ঈশ্বরের এক দূত এসে বলছে-" ওঠো, শিশুটি আর তাঁর মাকে নিয়ে মিসরে পালিয়ে যাও, আর যতদিন না আমি বলবো এখানে আসবে না। হেরোদ শিশুটাকে বধ করবার জন্য, তাঁর সন্ধান করছে। "

তখন যোসেফ উঠে রাতবিরেতেই যীশু ও মেরিয়ম কে নিয়ে মিসরে পালিয়ে যায় এবং হেরোদের মৃত্যু পর্যন্ত সেখানে থাকলেন।

   পরে হেরোদ যখন দেখলেন যে তিনি পন্ডিতদের কাছে তুচ্ছকৃত হয়েছে, তখন মহাক্রদ্ধ হয়ে গিয়ে দুই বছর ও তার চেয়ে কম বয়সের যতো বাচ্ছা ছিল বৈৎলেহমে তাদের মেরে ফেললেন।

হেরোদের মৃত্যুর পর যোসেফ একদিন স্বপ্নে দেখে ঈশ্বরের একজন দূত এসে বলছে-" ওঠো, শিশুটা আর তাঁর মাকে নিয়ে ইসরায়েলে ফিরে যাও, কারণ যারা যীশুর প্রাণ নাশ করবে ভেবেছিল, তারা মরে গেছে।"

যোসেফ তখন যীশু ও মেরিয়ম কে নিয়ে ইসরায়েলে আসলেন। কিন্তু যখন তিনি শুনলেন হেরোদের সন্তান আর্খিলায় নিজের বাবার পদে যিহূদিয়াতে রাজত্ব করছেন, তখন উনি ভয় পেলেন এবং স্বপ্নে আদেশ পেয়ে গালীল নামে এক দেশে চলে গেলেন। সেখানে নাসরত নামে এক নগরে গিয়ে থাকলেন।

পরে যীশু বড়ো হয়ে গিয়ে,,, নিজের বাবাকে পরিত্যাগ করে চলে যান। উনি গালীলে ভ্রমণ করতে থাকেন এবং লোকেদের সমাজ-গৃহ নিয়ে উপদেশ দিলেন। রাজ্যের সুসমাচার শুরু করলেন এবং লোকেদের সব রোগ ও পীড়া ভালো করে দিলেন। মৃগীরুগি, পক্ষঘাত লোক সকলে ওনার কাছে আসত, আর উনি তাঁদের সুস্থ করে দিতেন।

যীশু স্ব-ইচ্ছায় মানুষ হয়ে এসেছিলেন । তিনি নিজেকে নত করে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে এসেছিলেন । তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান ছিলেন তথাপি পাপী মানুষের জন্য মর্তে আগমন করেছিলেন।

  এরপর গালীল, দিপকার, যেরুজালেম, যিহূদিয়া থেকে ওনার কাছে বহু মানুষ আসতে থাকেন। উনি সকল মানুষকে নিয়ে পাহাড়ে উঠে তাদের শিক্ষা দিতে শুরু করেন।


" ধন্য সে মানুষ যে একে অপরের সাথে মিলিয়ে দিচ্ছে, কারণ তাঁরা ঈশ্বরের সন্তান ।

ধন্য যারা শোক করে,, কারণ তাঁরা সান্ত্বনা পাবে।

ধন্য যারা আত্মাতে দীনহিন,, কারণ তাঁরা স্বর্গরাজ্যে যাবে ।

ধন্য যারা মৃদুসিল, কারণ তাঁরা দেশে থাকার অধিকার পাবে।

ধন্য যারা ভক্ত,, কারণ তাঁরা ঈশ্বরের দর্শন পাবে।"

আমি ধার্মিকদিগকে নয়, পাপীদিগকে ডাকতে এসেছি । ঈশ্বর আপনার আমার পিতা হতে চান। তিনি চান যেন আমরা তার সন্তান হই। তিনি অপেক্ষা করে আছেন কখন আমরা তাঁর কাছে আসব। "

 যদি কেউ অন্যায় কাজ করে, কাউকে অত্যাচার বা হত্যা করে, সে পাপী হয়ে যায়। স্বর্গ রাজ্যে সে খুবই তুচ্ছ হয়ে যায়।  যখন কেউ খুবই ভালো কাজ করে, তখন সে মহান হয়ে যায়।

 অহংকার করা খুবই অন্যায়। কেউ যদি তোমায় ব্যথা দেয়, তুমি প্রতিশোধ নিতে যেও না। কারণ এতে তুমি কোন শান্তি পাবে না। বরং আরো মনে কষ্ট বেরে যাবে।

মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবে। চেনা, অচেনার কথা ভেব না। মানুষকে যদি উপকার করতে পারো, তখন দেখবে তাদের খুশিতেই তুমি অনেক আনন্দ পাচ্ছ।

জাত, ধর্ম নিয়ে বিচার করোনা। কারণ সবই ঈশ্বরের অবদান। আল্লাহ্, ঈশ্বর, God, সবকিছুই একজনকেই বোঝায়, ভগবান। ভগবানকে আমরা সবসময় ডাকি। "

প্রত্যেক বছর, ইহুদিরা নিস্তারপর্ব পালন করত৷ শতাব্দী পূর্বে ঈশ্বর তাদের পূর্বপুরুষদের মিশরের দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন এটা হল সেই উৎসব৷ প্রায় তিন বছর ধরে যীশু তার প্রচার ও শিক্ষা কার্য আরম্ভ করেছিলেন, যীশু তার শিষ্যদের বলেছিলেন যে তিনি যেরুশালেমে তাদের সাথে এই নিস্তারপর্ব পালন করতে চান, আর বলেন যে তাকে সেখানে হত্যা করা হবে৷

যীশুর একজন শিষ্যের নাম ছিল যিহুদা৷ প্রেরিতদের টাকার থলি রাখার দায়িত্বে যিহুদার ছিল, কিন্তু তার টাকাপয়সার প্রতি লোভ ছিল আর সে থলির থেকে প্রায়ই চুরি করত৷ যীশু আর শিষ্যদের যেরুশালেমে পৌছাবার পর, যিহুদা ইহুদি নেতাদের কাছে গেল আর টাকার পরিবর্তে যীশুর সাথে প্রতারণা করার প্রস্তাব দিল৷ সে জানত যে ইহুদি নেতারা যীশুকে খ্রীষ্ট মানত না আর তারা যীশুকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছে৷

ইহুদি নেতারা, যারা মহাযাজকের দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিল, তারা যীশুকে প্রতারণা করার জন্য যিহুদাকে তিরিশটি রুপার মুদ্রা দিল৷ এসব ঘটল যেমনটি ভাববাদীরা বলেছিল৷ যিহুদা রাজি হল, মুদ্রা গুলো নিল আর চলে গেল৷ সে সুযোগ খুঁজতে থাকলো যীশুকে তাদের কাছে ধরিয়ে দিতে৷


জেরুজালেমে, যীশু নিস্তারপর্ব তার শিষ্যদের সাথে পালন করলেন৷ নিস্তারপর্বের ভোজের সময়, যীশু কিছু রুটি নিলেন আর তা ভাঙ্গলেন৷ তিনি বললেন, “এটা নাও ও তা খাও৷ এ হল আমার শরীর, যা তোমাদের জন্য দেওয়া হয়েছে৷ এমনটা কর আমাকে স্বরণ করার জন্য৷” এই ভাবে, যীশু বললেন যে তার

শরীর তাদের জন্য বলি করা হবে৷

তারপর যীশু একটি কাপ তুললেন আর বললেন, “এটার থেকে পান কর৷ এটা হল আমার রক্ত নতুন নিয়মের যা তোমাদের পাপের জন্য ঢালা হয়েছে৷ প্রতিবার তোমরা এর থেকে পান করে আমাকে স্বরণ কর৷”


তারপর যীশু তার শিষ্যদের বললেন, “তোমাদের মধ্যে একজন আমাকে প্রতারণা করবে৷” শিষ্যরা অবাক হল, আর জিজ্ঞেসা করল কে এমন করবে৷ যীশু বললেন, “যে ব্যক্তিকে আমি এই রুটি দেব সেই হল আমার প্রতারক৷” তারপর তিনি সেই রুটি যিহুদাকে দিলেন৷

যিহুদা রুটি নেওয়ার পর, শয়তান তার ভিতর প্রবেশ করল৷ যিহুদা চলে গেল আর ইহুদি নেতাদের সাহায্য করল যীশুকে ধরতে৷ এটি ছিল রাতের বেলা৷

খাবারের পর, যীশু ও তার শিষ্যেরা জৈতুন পর্বতের দিকে গেলেন৷ যীশু বললেন, “তোমরা সকলে আজ রাতে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে৷ এ লেখা রয়েছে, ‘“আমি মেষপালককে আঘাত করব আর সকল মেষরা ছিন্নভিন্ন হবে৷”’

পিতর বললেন, “যদিও সকলে ছেড়ে পালাবে কিন্তু আমি তা করবই না!” তারপর যীশু পিতরকে বললেন, “শয়তান তোমাদের সকলকে চায়, কিন্তু আমি তোমাদের জন্য প্রার্থনা করেছি, পিতর, যেন তোমার বিশ্বাস শেষ না হয়৷ যদিও, আজ রাতে, মোরগ ডাকবার পূর্বেই, তুমি তিনবার অস্বীকার করবে যে তুমি আমায় জানো না৷

পিতর তারপর যীশুকে বললেন, “আমি মরে গেলেও, আপনাকে আমি অস্বীকার করব না!” অন্য সকল শিষ্যেরাও তেমনটাই বলল৷

তারপর যীশু তার শিষ্যদের সাথে গেৎশিমানী নামক এক জায়গায় গেলেন৷ যীশু তার শিষ্যদের প্রার্থনা করতে বললেন যেন তারা প্রলোভনে না পরে৷ তারপর যীশু একা প্রার্থনা করতে গেলেন৷I

যীশু তিনবার প্রার্থনা করলেন, “হে আমার পিতা, যদি সম্ভব হয়, তবে অনুগ্রহ করে আমাকে এই কষ্টের কাপ থেকে পান করতে দেবেন না৷ কিন্তু লোকেদের,,, পাপ থেকে উদ্ধারের যদি অন্য কোনো পথ থাকে, তবে আপনারই ইচ্ছে পূর্ণ হোক৷” যীশু খুবিই কষ্টে ছিলেন আর তার ঘাম রক্তের ফোটার মত ঝরছিল৷ ঈশ্বর এক দূতকে পাঠিয়েছিলেন তাকে সাহস দিতে৷

প্রত্যেকবার প্রার্থনার পর, যীশু তার শিষ্যদের কাছে ফিরে আসতেন, কিন্তু তারা প্রতি বার ঘুমিয়ে পরত৷ যখন তিনি তৃতীয়বার ফিরে এলেন, যীশু বললেন, “উঠ! আমার প্রতারক এখানে এসেছে৷”

যিহুদা ইহুদি নেতাদের, সৈন্যদের আর এক বিরাট ভিড়ের সাথে এলো৷ তারা তলোয়ার আর হাতিয়ার সঙ্গে এনেছিল৷ যিহুদা যীশুর কাছে এলো আর বলল, “মঙ্গলবাদ হে গুরু,” আর তাকে চুম্বন করলো৷ এটি ছিল সংকেত ইহুদি নেতাদের জন্য যে কাকে ধরতে হবে৷ তখন যীশু বললেন, “জিহুদা, চুম্বন দিয়ে তুমি আমায় বিশ্বাসঘাতকতা করলে?”

যখন সৈন্যরা যীশুকে ধরল, তখন পিতর তার তলোয়ার বের করল আর মহাযাজকের এক চাকরের কান কেঁটে দিল৷ যীশু বললেন, “তলোয়ার দুরে রাখো! আমি আমার পিতার কাছে স্বর্গদূতেদের সৈন্য চাইতে পারি আমার রক্ষার্থে৷ কিন্তু আমাকে যে আমার পিতার আজ্ঞা পালন করতে হবে৷” তারপর যীশু চাকরটির কান পুনরায় জুড়ে দেন৷ যীশুর গ্রেফতারের পর, সকল শিষ্যরা পালিয়ে যায়।

তিনি জগতে এসেছিলেন। জগত তাঁর দ্বারাই হল। কিন্তু জগত ই তাকে চিনতে পারল না। তাঁকে ক্রশ দিল।

যিশুকে ধরে নিয়ে যাওয়া হল রোমান গভর্নর পন্টিয়াস পিলেটের কাছে। কিন্তু দীর্ঘ কথা বলার পরও তাঁর কোনো দোষ দেখতে পেলেন না তিনি। এদিকে জনতা রীতিমতো ফুঁসছে। তাঁদের দাবি, যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হোক; বদলে ছেড়ে দেওয়া হোক বারাব্বাসকে। যে বারাব্বাস একজন নিষ্ঠুর খুনি ছিলেন। শেষে জনতার দাবিই মানা হল। যিশুর মৃত্যুদণ্ডের কথা শোনালেন পন্টিয়াস।

এরপর শুরু হল অকথ্য অত্যাচার। চাবুক দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হল যিশুকে। তারপর মদ্যপ রোমান সেনারা তাঁর মাথায় পরিয়ে দিল কাঁটার মুকুট। অবশেষে সময় এলে, রক্তাক্ত অর্ধমৃত যিশুর কাঁধে তুলে দেওয়া হল ক্রুশকাঠ। যাতে লেখা ছিল, ‘নাজারেথের যিশু, ইহুদিদের রাজা’। গোটা রাস্তা কোনোক্রমে টানতে টানতে নিয়ে যান তিনি। রক্ত ঝরছে, সারা শরীর ঘেমে যাচ্ছে; আর জোর নেই।


কিন্তু তাঁর পিতা যে অপেক্ষা করছেন! জেরুসালেম সীমানার বাইরে গলগথ পাহাড়ে অপেক্ষা করছে বধ্যভূমি। দুই হাতে আর পায়ে পেরেক বেঁধা হল। মোট ছয় ঘণ্টা ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন যিশু। ধীরে ধীরে আকাশ অন্ধকার করে মৃত্যু নেমে এল। যিশুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল সেই বাক্য, “হে পিতঃ, এরা জানে না কী অন্যায় করছে। তুমি এদের ক্ষমা করে দিও।” গোটা তল্লাট কেঁপে উঠল ভূমিকম্পে; যিশুর দেহেও তখন প্রাণ নেই।


যীশু খ্রিস্ট ৩৩ বছর ধরে পৃথিবীতে জীবন কাটানোর জন্য আসেননি।

যে মানুষ তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে গেছিল তাদের রক্ষা করার জন্য যীশু খ্রীষ্ট এসেছিলেন, তাই যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন,  "আমি ধার্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকে ডাকতে এসেছি । ঈশ্বর আপনার আমার পিতা হতে চান। তিনি চান যেন আমরা তার সন্তান হই। তিনি অপেক্ষা করে আছেন কখন আমরা তাঁর কাছ আসব। "

মনে করা হয়, যেদিন মারা গিয়েছিলেন, সেটি ছিল শুক্রবার। আর তাই আজও গোটা পৃথিবী জুড়ে পালিত হয় ‘গুড ফ্রাইডে’। কিন্তু ‘গুড’ কেন? এখানেই বলা যেতে পারে একটি লাইন- ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান।’ যিশু নিজের ওপরই পৃথিবীর যাবতীয় দুঃখ, কষ্টের বোঝা নিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে তিনি সেগুলোকেও যেন নিয়ে যান। আমাদের ভালো করে যান।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational