Simanta Nandi

Classics Others

4.0  

Simanta Nandi

Classics Others

মহাকর্ষ বলের অজানা গল্প

মহাকর্ষ বলের অজানা গল্প

5 mins
587


আপেল খসে পড়ার ঘটনা নিউটনকে মহাকর্ষ বলের ধারণা দেয়নি :


১৬৬৬ সালের ২১শে মার্চ। লন্ডনের রয়েল সোসাইটিতে মাধ্যাকর্ষণ নিয়ে লিখেছিলেন বিজ্ঞানী রবার্ট হুক (Robert Hooke)। তার এক বছর আগে রবার্ট হুক মাইক্রোগ্রাফিয়া (Micrographia) নামে একটা বই প্রকাশ করেন এবং তিনি "মাধ্যাকর্ষণ "কে একপ্রকার "আকর্ষণধর্মী" বল নামে উল্লেখ করেন। কয়েকমাস পর জিওভানি বোরেলী (Giovanni Alfonso Borelli) নামের অপর আরেকজন বিজ্ঞানী মাধ্যাকর্ষণ বলকে "আকর্ষণধর্মী" উল্লেখ করে একই দাবি জানান। সেসময় হতে আনুমানিক ৫০ বছর পূর্বে ( অর্থাৎ আইজাক নিউটনের জন্মেরও আনুমানিক ৩০ বছর পূর্বে) কেপলার নামে আরেকজন বিজ্ঞানী মহাকাশে ঘূর্ণায়মান গ্রহ সমূহের গতিপথ নিয়ে গবেষণা করবার সময় "মাধ্যাকর্ষণ" ব্যাপারটাকে নিশ্চিত করেন। বিজ্ঞানী কেপলারের এই হাইপোথিসিস মহাকর্ষ বলের ধারণা দিতে সক্ষম হলেও সেসময় এর সঠিক কোন ফর্মূলা দিয়ে যেতে পারেননি। কেপলারের মতে " দুটি বস্তুর মধ্যবর্তী দূরত্ব বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে এই মাধ্যাকর্ষণ জনিত আকর্ষণ বলও কমতে থাকবে"। যেটাকে গাণিতিক ভাষায় আমরা ইনভার্স' ল (Inverse Law) নামে চিনি। কিন্তু আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে ইসমাইল বুলিয়াডাস (Ismael Bullialdus) নামে আরেক বিজ্ঞানী ১৬৪৫ সালের দিকে এসে বললেন " যদি মাধ্যাকর্ষণ নামে কোন বল (force) সত্যিই থেকে থাকে তবে সেটা দূরত্বের ব্যস্তানুপাতিক না হয়ে দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক নিয়ম মেনেই চলবে। ইসমাইল বুলিয়াডাস ছিলেন বিজ্ঞানী ক্রিশ্চিয়ান হাইগেন্স এর বন্ধু এবং গ্যালিলিও গ্যালিলি সহ কোপার্নিকাসেরও একজন সক্রিয় সমর্থক। বিজ্ঞানী ইসমাইল বুলিয়াডাস মাধ্যাকর্ষণ নিয়ে গড়া কেপলারের হাইপোথিসিসকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে গেলেও যখন বুলিয়াডাসের কাছে সূর্যকে কেন্দ্র করে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে গ্রহ সমূহের ঘুরে চলার কারণের ব্যাখা জানতে চাওয়া হয় তখন তিনি বিপরীত বর্গীয় সূত্রের বিপক্ষে চলে যান এবং নিজেই নিজের দেয়া সঠিক ধারণাকে বাতিল করে দেন। তাই আজও বিপরীত বর্গীয় সূত্রের প্রথম ধারণাদাতা হিসেবে ইসমাইল বুলিয়াডাসকেই ধরা হয়ে থাকে । যাইহোক ১৬৬৬ সালে রয়েল সোসাইটিতে বিজ্ঞানী রবার্ট হুকের দেয়া বক্তব্যতে হুক যা বলেছিলেন সেটা ঠিক এরকম :

"a system of the world very different from any yet received. It is founded on the following position.

(1) That all the heavenly bodies have not only a gravitation of their parts to their own proper center, but they also mutually attract each other within their spheres of action.

(2) That all bodies having a simple motion, will continue to move in a straight line unless continually deflected from it by some extraneous force, causing them to describe a circle, an ellipse or some other curve.

(3) That this attraction is so much the greater as the bodies are nearer. As to the proportion in which those forces diminish by an increase of distance. I own I have not discovered it ... "

অনুবাদ : বিশ্ব জগতের এই সিস্টেমটা আমরা যা জানতে পেরেছি সেটা থেকে ভিন্ন। ইহা এমনসব নিয়ম মেনে চলে :

(১) প্রতিটা বস্তুই তার কেন্দ্র বরাবর নিজের সকল অংশকে আকর্ষণ করে। শুধু তাইনা। একটা বস্তু অন্যান্য সকল বস্তুকেও আকর্ষণ করে।

(২) বাহ্যিক বল প্র‍য়োগ না করলে একটা গতিশীল বস্তু সোজা পথে চলতে থাকবে এবং এর উপর বল প্রয়োগ করা হলেই কেবলমাত্র তা বৃত্তাকার, উপবৃত্তাকার বা আঁকাবাঁকা পথে চলবে।

(৩) বস্তুরা কাছাকাছি আসতে থাকলে তাদের মধ্যে এই আকর্ষণ বাড়তে থাকবে এবং বস্তুদ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব বাড়তে থাকলে মাধ্যাকর্ষণ বল কমতে থাকবে যা আমি নিজেও এখনো আবিষ্কার করতে পারিনি ... "।


.

তাহলে দেখা যাচ্ছে রবার্ট হুক ১৬৬৬ সালে মাধ্যাকর্ষণ সম্পর্কে বেশ ভালোই একটা ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে ১৬৭৪ সালে এসেও হুক বলেছিলেন " এই মাধ্যাকর্ষণ মূলত কোন নিয়ম মেনে চলে সেটা আমি এখনো ব্যবহারিকভাবে বের করতে পারলাম না "। পরবর্তীতে ১৬৮৭ সালে নিউটন তার "প্রিন্সিয়া " বইয়েতে মাধ্যাকর্ষণের একটা সূত্র সংযোগ করেন। যে সূত্র রবার্ট হুকের ধারণার সাথে মিলে যায় এবং ১৬৪৫ সালে দেয়া ইসমাইল বুলিয়াডাসের সেইসেই বিপরীত বর্গীয় নীতির ভিত্তিতেই গড়া। এরপর তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয় রবার্ট হুক এবং নিউটনের মধ্যে । হুক দাবী করেন উনি ১৬৭৯ সালে নিউটনকে চিঠি লিখে মাধ্যাকর্ষণ নিয়ে তার গবেষণালব্ধ ধারণা জানিয়ে ছিলেন, এমনকি এই "আকর্ষণ বল" বিপরীত বর্গীয় সূত্র মেনে চলতে পারে বলেও নিউটনকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন। নিউটনের প্রিন্সিপিয়া প্রকাশের পর ক্রিশ্চিয়ান হাইগেনও আলাদাভাবে একই দাবী করেন যে মাধ্যাকর্ষণের নিয়মের ব্যাপারে উনিও নিউটনকে তাই জানিয়েছিলেন। তবে আমার মতে মাধ্যাকর্ষণের ধারণা আইজাক নিউটনের জন্মের ৩০ বছর পূর্বেই বিজ্ঞানী কেপলারের মাথাতে এসেছিল। এটা অস্বীকার করবার কোন রাস্তাই নেই। তাছাড়া ১৬৬৬ সালে রবার্ট হুক ও জিওভানি বোরেলী মাধ্যাকর্ষণ বলকে "আকর্ষণধর্মী" হিসেবে দাবি করেন এ ঘটনাও অসত্য কিছু নয়। স্যার আইজাক নিউটন উনার মহাকর্ষ সূত্র ইসমাইল বুলিয়াডাসের বিপরীত বর্গীয় সূত্রকে অবলম্বন করে সাজিয়েছিলেন কিনা সেটা প্রমাণ করা কঠিন। তবে আইজাক নিউটন ১৬৮৭ সালে প্রকাশিত "প্রিন্সিপিয়া" বইয়ের ৩ নম্বর ভলিউমে এসে মাধ্যাকর্ষণের ধারণার জন্য জিওভানি বোরেলী, কেপলার এবং ইসমাইল বুলিয়াডাসকে ক্রডিট প্রদান করেন এটা স্পষ্ট । শুনলে হয়তবা অবাক হবেন যে স্যার আইজাক নিউটনের মৃত্যুর পর তাঁর বুকশেল্ফ ঘাটতে থাকলে ১৬৪৫ সালে বিজ্ঞানী বোরেলীর হাতে লেখা সেই বই সেখান থেকে উদ্ধার হয়। স্যার আইজাক নিউটন মারা যাবার ঠিক ২৫ বছর পর (১৭৫২ সালে) নিউটনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু উইলিয়াম স্টাকেলি আইজাক নিউটনকে নিয়ে একটা জীবনী লিখেন। সেখানে প্রথমবারের মতো উনিই আপেল পড়ার কাহীনিটি উল্লেখ করেন, যা আজ লোক মুখে প্রচলিত । স্টাকেলির মতে আপেল পড়ার ঘটনাটি ঘটে ১৬৬৬ সালের দিকে, যখন নিউটনের বয়স ১৮ বছর। স্টাকেলির দাবি স্যার আইজাক নিউটন উনাকে নিজ মুখেই আপেল পড়ার সেই মজার ঘটনাটি বলেছিলেন। এবং এখান থেকেই নাকি নিউটন মাধ্যাকর্ষণ জনিত আকর্ষণ বলের ধারণা লাভ করেছিলেন ! তবে আজ যাই বলুক না কেন, বিজ্ঞানী নিউটনের বয়স যখন মাত্র দুই বছর (অর্থাৎ ১৬৪৫ সালে) তখনি বিজ্ঞানী ইসমাইল বুলিয়াডাস (Ismael Bullialdus) মাধ্যাকর্ষণের বিপরীত বর্গীয় নিয়মের ধারনা দেন এটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। অতএব এটা অনেকটা জোর দিয়েই বলা যাই যে মহাকর্ষ বলের ধারণা গাছ থেকে আপেল খসে মাটিতে পড়ার দৃশ্য দেখে নিউটন পাননি। আপেলের এ গল্প খোসগল্প বা মনগড়া গল্প হলেও হতে পারে।


রেফারেন্স :

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Inverse-square_law

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Johannes_Kepler

https://www.numericana.com/fame/bio.htm

https://tallbloke.wordpress.com/2013/03/06/ismael-bullialdus-finder-but-not-keeper-of-the-inverse-square-law-of-gravitation/

https://www.theguardian.com/science/2010/jan/18/issac-newton-apple-web


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics